চারটি কবিতা
ইউটোপিয়া
বেড়াতে যাওয়ার গল্পে আমি নেই, আমি তো কবেই
তোমার হাঁয়ের মধ্যে ঢুকে গেছি, ভরসন্ধেবেলা
পাহাড় দেখাবে বলে নিয়ে গেলে, জঙ্গল দেখাবে বলে,
যেখানে গাছের গন্ধ, পাতা মাড়ানোর সেই পায়ে
আমি নেই, আমি তো সকল নিয়ে
বসে আছি, সর্বনাশ, চতুরঙ্গে এসেছিলে যখন, যেভাবে
তোমার খোলামকুচি দাঁতে আটকে তোমার ত্রিফলা
জিভে বিঁধে রক্ত নাকি গর্ভস্রাব গড়িয়ে পড়ার দিনে
ঢকঢক গেলাচ্ছ জল, জলের মন্দিরে বসে
হাওয়ার স্বপক্ষে তর্ক করছ, রবিবাসরের সেই
গনগনে মালসাভোগে আমি নেই, আমি তো শনির
কুলকুণ্ডলিনী গায়ে জড়িয়ে ঘুমোতে চলে গেছি
আমি তো স্বর্গের দিকে অনিবার্য তৃতীয় নরক
অধিকরণ
কেমন আরামে দেখো শুয়ে আছি এই সাতসকালে
দুধের বদলে মধু, মধুর বদলে দুধ চেটে খাচ্ছি
দুপায়ের ফাঁকে রাখছি বর্ণচোরা করণ কারক
কেমন আয়াসে এই মরশুমি আঙুর আজ
খসে পড়বে… অসভ্যতা যতদূর নিয়ে যেতে পারে
তোমাকে ভেতরে নেব… কথার ভেতরে, আর…
চুলের ভেতর থেকে বেড়ালছানার মতো
বের করে আনব তাকে, যে হসন্ত ভুলে যায়,
য-ফলা র-ফলা দিয়ে দাঁত মাজে, যার ঘেমো মোজা
এঘর ওঘর করে, অধিকরণের গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে
কেমন আজব এই কেরামতি, জলের ওপর থেকে
কারা যে লাফিয়ে পড়ে… ‘রোহিণী’ ‘রোহিণী’ বলে
কারা যে আকাশে ওঠে, পাক খায়, ফের নেমে আসে!
নাগরদোলার চাকা ঘুরছে তো ঘুরছেই…শুয়ে আছি…
দুধের বদলে মধু, মধুর বদলে দুধ, দুপায়ের ফাঁকে
নাটবল্টু বাচ্চা, তার কামটের মতো সাদা হাসি
ব্যাধি
ধর্মের ষাঁড়ের মতো খেপে উঠলে
যত বলি, এসব বুজরুকি দিয়ে ভাত মাখো,
অর্থহীন খোঁপা বাঁধো, খুলে রাখো মাংসাশী স্বভাব
সামনেরও পেছন আছে, পেছনেরও সামনে আছে চোখ
অস্বীকার করবে বলে কী যে খোঁজো নিজেই জানো না
পালকের নীচে যাকে পাখি ভাবো, সে তোমার মায়া
মায়া এক ব্যাধি, তাকে ঠোঙা ভেবে ফাটিয়ে ফেলেছি
গতকাল, নাকি গতজন্মে আজ মনেই পড়ে না
ছেনালি শিখিয়ে গেছে সত্যবতী নাকি সত্যভামা
রথের চাকার মতো কিছু একটা ঘুরে যায় নাব্যতার দিকে
কারা বলে তুমিই মহান আর গণতন্ত্র বলে কিছু নেই
তোমাকে খেপিয়ে দিয়ে হুক্কাহুয়া করে ওরা কারা
হেঁয়ালি
পাহাড়। শব্দের ঢাল। আমাদের বেয়াড়া সুজন
হাপুস। খিদের ধর্ম। কালো তীর্থ যমুনাপুলিনে
রাক্ষস। তোমাকে খায়। তুমি মানে মাংসছাড়া হাড়
আধার। সমতা দাও। নদীরক্ত মোছো নীলাচলে
সারিগান। গেয়ে চলি। এ পোড়াকপাল জানে দোষ
দেহতত্ত্ব। নির্বিকল্প। সমাধি নিয়েছি ভুঁই ফুঁড়ে
যোগাযোগ। ঘটে যায়। সহজে সাধন যদি হয়
সরোবর। ধর্মবক। মীমাংসা সাজানো আছে জিভে
আজান। ধূপের ধোঁয়া। তবু এই অনর্থ প্রলাপ
অসবর্ণ। মাঙ্গলিক। যে যার যুক্তির ঘরে খিল
ত্রিতাল। প্রলয়শব্দ। নাচে জন্ম নাচে মৃত্যুভয়
তর্কাতীত। এই তর্ক। হেঁয়ালি বোঝে না অপ্রণয়