আতঙ্কের দিনরাত্রি

কাজী ফয়জল-নাসের

 

এক

সকাল থেকে পাশের বাড়ির বাচ্চাটার অবিরাম কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল। সামনের পাঁচিলটা নীচু। মা পাঁচিলের ওপর থেকে মাথা উঁচিয়ে জানতে চাইল এত কাঁদছে কেন। উত্তর এল বাড়িতে একটুও দুধ নেই। সকালে সে দুধ ছাড়া কিছুই খেতে চায় না। মা রান্নাঘরে গিয়ে দেখল আমাদের মধু-স্প্রের কৌটোতেও দুধ প্রায় তলানিতে। যেটুকু ছিল, সেটাই মা আমার হাতে ধরিয়ে বলল ও বাড়িতে দিয়ে আসতে। কারফিউ কবে শিথিল হবে তার তো কোনও ঠিক নেই।

দিনটা ছিল এগারোই ডিসেম্বর, ১৯৯২; অবশ্য সেদিনেই সন্ধ্যের স্থানীয় সংবাদে জানা গেল যে আগামীকাল থেকে দুপুর দুটো থেকে পাঁচটা অব্দি কারফিউ শিথিল করা হবে। পাড়ায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। ১২ তারিখ সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু। কিন্তু পাড়ার কোনও দোকানেই কিছু নেই। খবর এল, প্রায় চার কিমি দূরে আকড়ায় কোনও এক চালের আড়তে চাল পাওয়া যেতে পারে। বেলা বারোটা নাগাদ পাড়ার অন্য সাতজনের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম দুটো থলে বগলে নিয়ে। চার কিমি হেঁটে গিয়ে লাইন দিলাম প্রায় একশোজনের পিছনে। কাউকে দশ কেজির বেশি চাল দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কি শান্ত মানুষজন। ভেবেছিলাম হয়ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। আমাকে বোকা বানিয়ে সমস্ত মানুষ শান্তটি হয়ে লাইন দিয়ে সীমিত চাল নিয়ে ফিরছেন। আমরা যখন চাল পেলাম, ঘড়িতে তখন প্রায় সাড়ে চারটে। ফিরতে ফিরতে কারফিউ বলবৎ। বিভিন্ন পাড়ার ভিতর দিয়ে গলিঘুঁজি হয়ে ফিরছি। বাড়ির কাছাকাছি এসে সন্তোষপুর স্টেশন রোড ক্রশ করতে হবে। বুক ঢিপঢিপ করছে। টহল দিচ্ছে মিলিটারি ভ্যান, সাথে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। চড়া গলায় ধমক এল “হাত উপরে তুলে”। পাঁচ পাঁচ দশ কেজি চাল সমেত চার কিমি হেঁটে এসে দুটো শীর্ণ হাত ওপরে তোলা যে কি কষ্টকর, আজও ভুলিনি।

দুই

সমস্ত ঘটনার মূলে কোন সুদূর অযোধ্যায় করসেবকদের হাতে বাবরি মসজিদের ধ্বংসলীলা। ৬ তারিখ ছিল রবিবার। আমি গেছিলাম মিডলটন রো-তে একটা পরীক্ষা দিতে। ফেরার পথে ট্রেনে লোকজনের মুখে শুনলাম খবরে নাকি বলেছে “বাবরি মসজিদকো ভারি নুকসান পঁহুছা”। মেটিয়াবুরুজে আমরা যেখানে থাকি সেই বটতলা মূলত বাঙালি-মুসলমান অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু এলাকার রেডিমেড ব্যবসার কারণে সেখানে প্রায় হাজার দেড়েক মাড়োয়ারির কাপড়ের দোকান, যেখানে কোটি কোটি টাকার সামগ্রী। এই মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই বড়বাজার এলাকায় থাকেন। সকালে গিয়ে সারাদিন ব্যবসা করে আবার সন্ধের মুখে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরতেই দেখি পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা। প্রতিটা মানুষের চোখেমুখে ক্ষোভ ঠিকরে পড়ছে। তখনও বুঝতে পারিনি পরিস্থিতি কতটা ঘোরালো হতে চলেছে।

তিন

সোমবার, ৭ই ডিসেম্বর, সকাল ৯টা। আমি তখন টিউশন করাচ্ছি। হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে সাইরেনের শব্দ। আগে গার্ডেনরীচ শিপবিল্ডার্সে সকাল নটায় সাইরেন বাজত। সে তো বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েক বছর। তাছাড়া সেই আওয়াজ এত জোরে এতদূর পৌঁছত না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইরে রাস্তায় গোলযোগ শুনতে পেলাম। পড়ানো ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় বেরোলাম। শুনতে পেলাম বটতলায় পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চলছে। ছুটলাম সেদিকে। বাড়ি থেকে হাঁটা পথে চার-পাঁচ মিনিটের পথ। গিয়ে দেখি কয়েকশো মানুষ। ইঁট পাথর ছুঁড়ছে ফাঁড়ি লক্ষ করে। ফাঁড়িতে উপস্থিত দুচারজন পুলিশ, আত্মরক্ষার্থে দরজা বন্ধ করে ভিতরে। জানতে পারলাম তার আগেই দুয়েকজন পুলিশ মারধরও খেয়েছে। তা হঠাৎ ফাঁড়ির পুলিশের ওপর রাগের কারণ? মানুষজনের বক্তব্য উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিং-সরকারের পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মসজিদ ভাঙা দেখেছে, সুতরাং এই পুলিশও তার দায় এড়াতে পারে না। এই অদ্ভুত যুক্তি হজম হচ্ছিল না। যতদূর জানতাম ফাঁড়িতে উপস্থিত পুলিশদের অধিকাংশই মুসলমান। এলাকার কিছু বয়স্ক মানুষের উদ্যোগে তাদের সাময়িক শান্ত করা গেল। আমি আর আমার দুয়েকজন বন্ধু একটু দূরে স্কুলের দিকে সরে গেলাম। আধঘণ্টা মতো সব চুপচাপ। প্রচণ্ড থমথমে পরিবেশ। বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। যারা খুলেছিল, তারাও বন্ধ করার মুখে। এমন সময় হঠাৎ প্রচণ্ড জোরে বোম ফাটার মতো শব্দ, মেটিয়াবুরুজের দিক থেকে। সামান্য এগোতেই চোখে পড়ল কালো ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে আকাশে উঠছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা গেল ঘটনা। বটতলা থেকে মেটিয়াবুরুজের দিকে যেতে কাশ্যপপাড়া মোড়ে বেশ কিছু হিন্দু জনবসতি। মোড়ের মাথায় একটা কালী মন্দির। সেখানে ভাঙচুর শুরু হয়েছে। বর্ধিষ্ণু পরিবার রাম কাশ্যপির বাড়িতেও লুঠতরাজ চলছে। রাম কাশ্যপির বেশ কিছু বাস চলত ১২বি রুটে। গ্যারেজে রাখা সেইসব বাসে আগুন লাগানো হয়েছে। তারই টায়ার ফাটার শব্দ। সে কি বীভৎস পরিস্থিতি! আমরা সাহস করে এগোতে গেলাম। কিন্তু তাকিয়ে দেখি কয়েকশো অবাঙালি মুসলিমের দল, হাতে অস্ত্র নিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে। রাস্তায় কোনও হিন্দুর দোকানপাট দেখলেই চলছে লুঠতরাজ। আমাদের বটতলা অঞ্চলের কিছু মানুষজন প্রতিরোধের চেষ্টা চালালেন। বিশেষ করে তদানীন্তন শাসক দলের লোকজন চোখে পড়ছিল। কিন্তু তাদের সংখ্যা সেই জনবলের কাছে নেহাতই মামুলি। সেই দল বটতলায় এসে চোখের সামনে আমাদের প্রিয়জন মেঘনাদ বারিকের দোকান, লালার মুদিখানা, এমন বেশ কিছু হিন্দুর দোকানে যথেচ্ছ ভাঙচুর আর লুঠ শুরু করল।

একেবারে কাছ থেকে দেখলাম এক বাঙালি মুসলিম বন্ধুকে, তাদের সামনে রুখে দাঁড়াতে গিয়ে কাঁধে দেশি রিভলবারের বাঁট দিয়ে আঘাত পেতে। ছুটে এল হিন্দিতে অকথ্য গালাগালি, যাতে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল “কওম কা দুশমন শালে লোগ”। সেই লুটেরাদের সাথে যোগ দিল এলাকার কিছু ধান্দাবাজ ছেলের দল। যে যেভাবে পারল বিস্কুট, দুধের কৌটো, মাখন, পাঁউরুটি, কোল্ড ড্রিংকসের ক্রেট তুলে নিয়ে ছুটছে বাড়ির দিকে। যে কজন পুলিশ ছিল, তারা ফাঁড়িতে অবরুদ্ধ। তবুও আঞ্চলিক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কিছু মানুষের প্রতিরোধে সেই লুটেরার দল আকড়া রোড দিয়ে আর বটতলা পেরোতে পারেনি। আর সব থেকে নিশ্চিন্তির জায়গা ছিল যে এই লুটেরার দল মাড়োয়ারিদের কাপড়ের দোকানগুলোর কোনও ক্ষতি করতে পারেনি।

ইতিমধ্যে মহেশতলার কানখুলি অঞ্চল থেকে শ’পাঁচেক মানুষের বিশাল এক মিছিল আকড়া ফটক ঘুরে বটতলার দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের গন্তব্য মেটিয়াবুরুজ। শাসক দলের লোকজন আর কিছু শান্তিপ্রিয় বয়স্ক মানুষ এলাকা থেকে যত বয়স্ক হাজী ছিলেন তাঁদের যোগাড় করে নিয়ে পথ অবরোধে নামলেন। মিছিল ঘুরিয়ে দেওয়া হল অন্য পথ দিয়ে। সেই মিছিল যদি কাশ্যপপাড়া পর্যন্ত যেত, তবে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল।

দুপুর প্রায় দুটো অব্দি এই বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছিল। মাঝে মাঝেই দূর থেকে, বিশেষ করে গঙ্গার দিকে অবস্থিত হিন্দু-মুসলিম মিশ্র অঞ্চল বদরতলার দিক থেকে ভেসে আসছিল বোমার শব্দ। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে বাড়ি ফিরলাম। ভাত খেয়ে উঠে আড়াইটের স্থানীয় সংবাদে জানলাম কারফিউ জারি হয়েছে। সরকার সেনার সাহায্য চেয়েছে। কলকাতায় সেনা নেমে গেছে। ট্যাংরা-তপসিয়া অঞ্চলেও যথেষ্ট গোলমাল হয়েছে। কিন্তু আমাদের তখন অন্য অঞ্চল নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। নিজের এলাকায় কী হবে সেই চিন্তায় ব্যস্ত। বিকেলেই বটতলা অঞ্চলে সেনা টহল শুরু হয়ে গেল। মাঝে মাঝে তারা পাড়ার মধ্যেও ঢুকছিল। রাম কাশ্যপির বাড়ি লুঠ হওয়ায় শোনা গেল সেই লুটের মালের খোঁজে স্থানীয় পুলিশ সেনা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি খানাতল্লাশি চালাচ্ছে। পাড়ার বয়স্ক মানুষজন বুদ্ধি দিলেন যে যুবকদের রাতে বাড়িতে থাকাটা খুব একটা নিরাপদ হবে না। শোনা যাচ্ছে নাকি রেইডের সময় বাড়িতে যুবকদের পেলেই তারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সেইদিন থেকেই শুরু হল আমাদের অনিশ্চিত রাত্রিযাপন। সাতটার মধ্যে খেয়েদেয়ে সেই শীতের রাতে পাড়ার সমস্ত তরুণ-যুবক মিলে বাড়ির বাইরে কাটানো। মাঝে মাঝেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জিপের শব্দ, আর আমরা দুদ্দার করে বাঁশবাগানের মধ্যে দিয়ে যতটা সম্ভব লোকালয় থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টায় রাত কাটাচ্ছি। এইভাবে প্রায় দশটা রাত ডিসেম্বরের কনকনে শীতে খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হয়েছিল, কী তার কারণ? কী দোষ করেছিলাম আমরা? তার উত্তর আজও খুঁজি।

চার

কারফিউ চলাকালীন দিনের বেলা কাটত পাড়ার মধ্যেই। একমাত্র খোলা দোকান পান-বিড়ির দোকান। পান বা সিগারেট নেই। থাকার মধ্যে বিড়ি। ওখানেই বাঁধা হত বিড়ি। কিন্তু আঁচে সেঁকার সময় দিচ্ছিল না। সেই কাঁচা বিড়িই লোকে কিনছিল। সেখানেও রেশনিং। কাউকে তিনটের বেশি দেওয়া হচ্ছিল না। চার আনায় তিনটে।

মাঝে মাঝেই বুটের শব্দ, দিনের বেলাতেও মিলিটারি মার্চ করতে করতে পাড়ায় ঢুকলেই এক ছুটে সব বাড়ির মধ্যে। কিন্তু আসল উত্তেজনা রাখা ছিল আট তারিখ, মঙ্গলবার দুপুরের জন্যে। বাড়ি ফিরে দুপুরে ভাত ডাল আলুসেদ্ধ খেয়ে মার্ফির ট্রানজিস্টারটা নিয়ে আমি আর বাবা ছাদে উঠেছি। রোদ পোহানো আর স্থানীয় সংবাদ শোনা হবে। হঠাৎ একের পর এক বোমের শব্দ আর সমবেত মানুষের চিৎকার “নারা-এ-তকবির আল্লাহু-আকবর”। তার সাথে শিরদাঁড়া বেয়ে বরফ জলের স্রোত নেমে যাওয়া মসজিদ থেকে মাইকে আহ্বান, “ভাইসব, যে যার নিজের এলাকার মোড়ে মোড়ে অবরোধ তৈরী করুন। ওরা আক্রমণ করেছে”। ছাদ থেকে দেখতে পেলাম পাড়ার মানুষজন বঁটি-ছুরি-কাঁচি-দা, যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। প্রত্যেক বাড়ির ছাদে ইট তোলা হচ্ছে। সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। মাঝে মাঝেই দূর থেকে ভেসে আসছে কয়েক হাজার মানুষের গলায় হুঙ্কার। এরকম চলল প্রায় আধঘণ্টা। পরে জেনেছিলাম এই একই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল প্রায় প্রত্যেকটা পাড়ায় পাড়ায়। কিন্তু সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পুরোটাই সৃষ্টি হয়েছিল সম্পূর্ণ গুজবের ভিত্তিতে। কোথাও কোনও আক্রমণ হয়নি। মানুষের মুখে মুখে আর মসজিদের মাইকিং-এর ফলেই মানুষজন অকারণ সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তবে যাই হোক না কেন, সেই মঙ্গলবার দুপুরের সামান্য কয়েকঘণ্টা আমার মতো অনেকের স্মৃতিতেই যে আতঙ্কের ক্ষত তৈরী করেছিল, তার দগদগে ঘা আজও দেশের যেকোনও প্রান্তে দাঙ্গার খবর পেলে যন্ত্রণা দেয়।

পাঁচ

যেখানে শুরু করেছিলাম আবার সেখানেই ফিরে আসা যাক। আমার পাশের বাড়ির রফিকের যে কোলের শিশুটা সেদিন সামান্য একটু দুধের জন্যে কাতরাচ্ছিল, তার দায়ভার কে নেবে? আমি জানি সেই একই সময়ে হয়ত কাশ্যপপাড়া বা নিকটবর্তী ঘোষপাড়া বা রবীন্দ্রনগরের কোনও বাড়িতে শোভন বা তপনের বাচ্চাটাও ওই একইভাবে খিদের চোটে আছাড় খাচ্ছিল। যে বয়স্ক মানুষটা ওষুধের ওপর বেঁচে থাকেন, তিনি ওষুধ না পেয়ে আরও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেন। কে দায়ী এর জন্যে?

আর সর্বোপরি, আমাদের মতো সাধারণ মানুষগুলো যে মানসিক অস্থিরতার শিকার হল, তাঁদের মনে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি যে চিরকালীন অবিশ্বাসের বীজ বপিত হল সেটাই কি দিনের পর দিন আজও পরম যত্নে জল-হাওয়া পেয়ে মহীরূহ হওয়ার পথে এগোচ্ছে না?

আতঙ্কে মোড়া সেই দশ-পনেরোটা দিন আমাকে যে শিক্ষাটা দিয়ে গেছে তা হল, যে অস্থিরতা বা বিদ্বেষ ওই কদিনে তৈরী হয়েছিল, তার গোড়ায় ধর্ম থাকলেও, সরাসরি ধর্মকে দায়ী আমি করতে পারি না। ধর্মকে হাতিয়ার করে কিছু লুটেরা আর সমাজবিরোধীর দল কয়েকটা দিনের জন্যে সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছিল। আর সেই একইভাবে আজও তারা অবিরাম সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তার সাথে আরও সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছে বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আর রাজনৈতিক রঙে রাঙানো মিডিয়া। আর আমাদের মতো নিরীহ সাধারণ মানুষ তাদের হাতের পুতুল হয়ে সেই বিদ্বেষকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি, জানি না কোন ভবিষ্যতের দিকে, আর ধীরে ধীরে পরবর্তী প্রজন্মের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি এই সমাজকে। বিরানব্বইয়ে পাওয়া যে যন্ত্রণা আমি আজও বয়ে চলেছি, সেই একই যন্ত্রণা আমার মতো অনেককেই আজ পঁচিশ বছর পরেও ভোগ করতে হচ্ছে, কখনও কালিয়াচকে, কখনও নৈহাটিতে, কখনও ধূলাগড়ে আর কখনও বা বাদুড়িয়া-বসিরহাটে। সেই যন্ত্রণার শিকার কোনও হিন্দু বা মুসলমান নন, তাঁরা কিন্তু আমার-আপনার মতো মানুষ। শুধু এইটুকু যদি বুঝতাম।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...