উত্তাল ভারত— এবার এনআরআইসি-প্রকল্পের কবরস্থান হতে চলেছে

অশোক মুখোপাধ্যায়

 

দীর্ঘ সাত দশক ধরে বিদেশি বিতাড়নের নামে চলা অসমিয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী বাঙালি তাড়াও আন্দোলন নানা প্রক্রিয়ায় বর্তমান বিজেপি সরকারের হাতে কী পরিণতি লাভ করেছে, তা আজ সকলেই জানেন। বাংলাভাষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অসমিয়াভাষীদের আশঙ্কা ছিল যে প্রয়োজনীয় অনুপাত হারিয়ে রাজ্যের সরকারি ভাষা হিসাবে অসমিয়া আর থাকবে না। এই আশঙ্কাকে দূরীভূত করার বদলে দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেস এতে ইন্ধন যুগিয়েছে। বিজেপি এই আশঙ্কাকে মূলধন করে সেখানে অবিলম্বে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করে বিদেশিদের চিহ্নিত করবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অসম গণপরিষদের সঙ্গে জোট করেই সরকারে জিতে এসেছে। এবং সেই অনুযায়ী তারা কাজ করেও দেখিয়েছে। ১৯ লক্ষাধিক মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছে, তাদের এখন ভবিষ্যত অনিশ্চিত। অসমের বিভিন্ন জেলায় বন্দিশিবির তৈরি হয়েছে। সেখানে এই নাগরিকত্ব অপহৃত মানুষদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর একটা পচাগলা বুর্জোয়া ব্যবস্থায় যে কোনও বন্দিশিবিরের অবস্থা যা হওয়ার কথা, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মৃত্যুর হাতছানি এখন বিপুল সংখ্যক মানুষের সামনে। একে একে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।

অসমে কাজটি করে ফেলতে সক্ষম হয়ে এবং দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় ফিরে এসে এখন বিজেপি সরকার হুমকি দিচ্ছে, তারা সারা দেশেও এনআরআইসি করে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিভিন্ন রাজ্যকে এই মর্মে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তারা যেন রাজ্যে অন্তত একটা করে বন্দিশিবির তৈরি করতে শুরু করে।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের মধ্যেও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পরিচয় হারানোর আশঙ্কায় দলিল খুঁজতে গিয়ে অসহায় বোধ করে ইতিমধ্যেই কুড়ি জনের মতো লোক আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাচক্রে তার মধ্যে কৃষ্ণনগরের একজন বিজেপি সমর্থকও আছেন।

সেই আতঙ্কের পরিবেশেই লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ হয়ে গেছে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ২০১৯। তাতে হিন্দুদের (এবং সেই সঙ্গে বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, খ্রিস্টানদেরও) সুযোগ দেওয়া হয়েছে নাগরিকত্বের পরিচয় বর্জন করে বাংলাদেশ পাকিস্তান অথবা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে “শরণার্থী” বলে নিজেদের ঘোষণা করতে। তাতে খুশি হয়ে নাকি বিজেপি সরকার ৫-৬ বছর পর তাদের সবাইকে নাগরিক বানিয়ে দেবে! ওরা ভেবেছিল, এইভাবে মুসলমানদের থেকে বাকিদের আলাদা করে দিয়ে সারা দেশ জুড়ে একটা ধর্মীয় বিভাজন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে মুসলিম বিদ্বেষে দেশের জনগণকে ভাসিয়ে দিতে। আর, কায়দা করে ওদের “অনুপ্রবেশ” থিসিসকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে।

সারা দেশ জুড়েই এর বিরুদ্ধে উত্তাল প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করলে উপরোক্ত মতলবেই দিল্লির মোদি-পুলিশ তাদের উপর নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে আনে। তারই প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশের সর্বত্র এনআরআইসি এবং সিএএ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ছাত্রযুব জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদে সামিল হয়।

 

[১] দলিল সমাধি

প্রশ্ন হল, কেন এই সর্বাত্মক বিক্ষোভ? এক বিরাট সংখ্যক জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির বিরুদ্ধে। কী সেই আতঙ্ক? নাগরিক বলে নিজেকে দাবি করতে হলে এমন কিছু দলিল সরকারকে দেখাতে হবে যা তারা দেখাতে পারবেন না বলে ভয় পাচ্ছেন? এটা বোঝার জন্য অসমের ঘটনা আর একবার সবাইকে বুঝে নিতে হবে।

অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে নিজের নাম নথিভুক্ত করার জন্য যে কোনও ব্যক্তিকে দুটি চাহিদা পূরণ করতে বলা হয়েছিল। নিজের নাম অথবা পূর্বপুরুষ-এর নাম যদি নিচে লেখা “এ” তালিকায় থাকা, ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ মধ্যরাতের আগে জারি করা কোনও দলিলপত্রে থাকে (যা দিয়ে অসমে বাসস্থান প্রমাণ করা যাবে):

(১) ১৯৫১ সালের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি; অথবা,
(২) ২৪শে মার্চ, ১৯৭১সালের মধ্যরাত পর্যন্ত জারি করা নির্বাচক তালিকা; অথবা,
(৩) জমি বা ভাড়াটিয়া-র দলিল; অথবা,
(৪) নাগরিকত্ব শংসাপত্র; অথবা,
(৫) স্থায়ী বাসিন্দা-র শংসাপত্র; অথবা,
(৬) উদ্বাস্তু নিবন্ধনকরণ-এর শংসাপত্র; অথবা,
(৭) পাসপোর্ট; অথবা,
(৮) জীবনবিমা; অথবা,
(৯) সরকার দ্বারা জারি করা কোনও লাইসেন্স; অথবা,
(১০) সরকারি চাকরি/নিয়োগ সংক্রান্ত শংসাপত্র; অথবা,
(১১) ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিসের একাউন্ট; অথবা,
(১২) জন্ম প্রমাণপত্র; অথবা,
(১৩) বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষাগত শংসাপত্র; অথবা,
(১৪) আদালতের দলিল, সমন।

এছাড়াও আরও দুটি নথিপত্র, যেমন, (১) বিবাহিত মহিলার ক্ষেত্রে সার্কেল আধিকারিক বা গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব দ্বারা জারি করা শংসাপত্র ( ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ-এর আগে অথবা পরে কোনও সালে); এবং (২) ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ-এর আগে জারি করা রেশন কার্ডকে সহায়ক প্রামাণ্য নথি হিসেবে বিবেচিত হবে, যদি সেটি ওপরের তালিকাভুক্ত যে কোনও একটি নথির সঙ্গে জমা দেওয়া যায়।

যদি ওপরে উল্লেখিত নথিপত্রগুলির কোনওটিতেই আবেদনকারীর নামের উল্লেখ-এর পরিবর্তে তার পূর্বপুরুষ, যথাক্রমে পিতা অথবা মাতা, অথবা পিতামহ অথবা পিতামহী ইত্যাদির নামে থাকে তাহলে দ্বিতীয় চাহিদার প্রশ্ন আসবে। সে ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে তার পূর্বপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক প্রমাণ করার জন্য নীচে লিখিত “বি” তালিকাভুক্ত নথিপত্র দাখিল করতে হবে:

(১) জন্ম প্রমাণপত্র; অথবা,
(২) জমির দলিল; অথবা,
(৩) বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়-এর শিক্ষাগত শংসাপত্র; অথবা,
(৪) ব্যাঙ্ক/জীবনবিমা/পোস্ট অফিসের নথি; অথবা,
(৫) বিবাহিত মহিলার ক্ষেত্রে সার্কেল আধিকারিক বা গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব দ্বারা জারি করা শংসাপত্র; অথবা,
(৬) নির্বাচক তালিকা; অথবা,
(৭) রেশন কার্ড; অথবা,
(৮) আইনগতভাবে গ্রাহ্য যে কোনও নথিপত্র।

প্রাথমিকভাবে যে সব মানুষরা এই চাহিদা পূরণ করতে পারেননি তাদের নাম নাগরিকপঞ্জিতে নেই। প্রথম দফায় যে ৩৯ লক্ষকে বিদেশি চিহ্নিত করা হয়েছিল, চূড়ান্ত তালিকায় তার মধ্যে ১৯ লক্ষ নাগরিককে অ-নাগরিক বলে দাগানো হয়েছে। এদের আপাতত বিদেশি ট্রাইবুনালে আবেদন করতে হবে। সেখানেও যদি উপযুক্ত পরিচয়পত্র দেখাতে না পারে, তাদের সরকারি মরণ শিবিরে চালান করা হবে।

এবার কয়েকটি কথা বলা দরকার:

যে কোনও মানুষের এই তালিকা দেখে প্রথমে মনে হবে, বা, খুব ভালো ব্যবস্থা তো। এতগুলো দলিলের অপশন দেওয়া হয়েছে, তাহলে আর মন্দ কী?

না, সত্যিই মন্দ হত না, যদি প্রথমেই একটা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না থাকত।

যখনই ১৯৭১-কে প্রমাণপত্র দেবার কালরেখা হিসাবে বলে দেওয়া হল, এবার ভেবে দেখুন: [ক] সেই সময় কত জন ভারতীয়র হাতে এত সরকারি কার্ড বা কাগজ ছিল? জমির দলিল থাকতে পারে যারা কোনও না কোনওভাবে জমির মালিক শুধুমাত্র তাদেরই। যারা উদ্বাস্তু হয়ে এসেছিলেন, তাদের কাছে জমির দলিল থাকার প্রশ্নই নেই। [খ] এমনকি, রেশন কার্ডও শুধু সেদিন কেন, আজও কোটি কোটি লোকের নেই। [গ] ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেনের অভ্যাস ১৯৮০-র দশকের আগে এদেশে প্রায় ছিলই না। আজও ডাক্তার উকিল বাড়িওয়ালা প্রমুখ চেক-এ টাকা নিতে চান না। [ঘ] বাড়িভাড়ার দলিল কবে শুরু হয়েছে এবং এখনও কতটা দলিল দিয়ে চলে সকলেই জানেন। [ঙ] জীবন বিমা, পোস্ট অফিসে টাকা জমানো ইত্যাদি ১৯৭১-এর আগেকার উদ্বাস্তুদের পক্ষে বাস্তবে প্রায় সম্ভবই ছিল না। [চ] দাঙ্গার পরিবেশে যারা রাতারাতি ঘর ভিটেমাটি হারিয়ে চলে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশের পক্ষে বাস্তবে সেই সময়সীমান্তে এসে কাগজ সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল না [ছ] বাস্তবে জন্মের শংসাপত্র, বিবাহের শংসাপত্র বাধ্যতামূলক হয়েছে এই শতাব্দ থেকে। ১৯৭১ তো কোন ছার! [জ] গোড়ার দিকে উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশই স্কুলে (কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রশ্নটা আপাতত ধরছি না) যাওয়ারও সুযোগ পায়নি; সুতরাং সেই কাগজপত্র হাতে থাকার প্রশ্নই নেই। [ঝ] ভোটার তালিকায় কীভাবে নাম ওঠে এবং কাটা যায়, ভুক্তভোগীরাই একমাত্র জানেন। এমনিতে তার কারণ কার্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অসমের ক্ষেত্রে যে বহু কাল আগে থেকেই এই ব্যাপারে এনআরসি মনোভাব নেওয়া হয়েছে সকলেই জানেন।

অর্থাৎ, সরকারিভাবে এই নির্ণায়কগুলি তৈরি করাই হয়েছে এমনভাবে যাতে টার্গেট উদ্বাস্তু বাঙালি জনগণের একটা বিশাল অংশের কেউই এগুলো পূরণ করতে না পারে।

আমার মতে, যারা এই সব দলিলের দু একটাও দিতে পারছে, তাদেরই বরং কবে এসেছে বলে সন্দেহ করা যেতে পারে। আন্দাজ করা যেতে পারে, তারা এসেই এই জাতীয় কিছু না কিছু দলিল হাতে সংগ্রহ করেছে এবং করার সামর্থ্য তাদের আছে। ফলে তারা আগে-ভাগে জেনেশুনে তৈরি হয়েই এসেছে।

স্বভাবতই, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও যদি এই রকম সব দলিল চাওয়া হয়, এবং সেই দলিলকে যদি পঞ্চাশ বছর আগেকার হতে হয়, একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ যে তা দেখাতে পারবে না, সে কথা বলাই বাহুল্য। প্রবল আতঙ্ক তাই ঘিরে ধরেছে সাধারণ মানুষের মনে।

 

[২] আইনের জিলিপি

১৯৫০ সালে প্রবর্তিত ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকত্ব সম্বন্ধীয় নীতির আলোকে ১৯৫৫ সালে প্রথম নাগরিকত্ব আইন চালু হয়। তারপর বেশ কয়েকবার সেই আইন সংশোধন হলেও তাতে বিরাট কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি। কিন্তু ২০০৩ সালে বাজপেয়ি সরকারের আমলে তাতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধন বিষয়ক নতুন আইন চালু করা হয়। সেই সময় দেশের অধিকাংশ মানুষ তো দূরের কথা, কংগ্রেস সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলি তার দিকে কোনও মনোযোগ দেয়নি। অন্য দিকে বিজেপি জোটের অন্তর্ভুক্ত তৃণমূল নেত্রী তখন, বিলটির বিরোধিতা করা তো দূরের কথা, সিপিএম-এর কট্টর বিরোধিতায় লোকসভার ভেতরে রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ এবং ভুয়ো ভোটারের এক “ভয়াবহ চিত্র” তুলে ধরে অনেক হইচই করেছিলেন। এই সব কাণ্ডের ফলে বিজেপি-র কাজ অনেক মসৃণভাবে এগিয়েছে।

এবার এই আইনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে এনপিআর (জাতীয় গণপঞ্জি) তৈরির কাজ শুরু হবে। তার মধ্য দিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সরকারি প্রতিনিধিদের তথ্য সংগ্রহ করার কথা। অনেকটা সেন্সাস বাবদ জনগণনা প্রক্রিয়ায়, যা ২০২১ সালে শুরু হবে। এই এনপিআর-এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা একে জনগণনা থেকে স্বাতন্ত্র্য দান করেছে।

সমস্ত ব্যাপারটার দিকে নজর দিলে একটা জিনিস খুব পরিষ্কার হয়ে আসে। সঙ্ঘ পরিবারের যে দীর্ঘদিনের অ্যাজেন্ডা, ভারতবর্ষ থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে বা একেবারে প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে গিয়ে স্রেফ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আর অন্তর্নিহিত হিংসার মনোভাবের জোরে এক হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, তারা ভাজপা সরকারের মাধ্যমে যখন যতটুকু সময় সুযোগ পেয়েছে সেই দিকে এক পা এক পা করে এগিয়েছে। ধীর পদক্ষেপে। প্রায় জিম করবেটের কুমায়ুনের চিতার মতো। নিঃশব্দে। দাঙ্গা করে মুসলিম জনসংখ্যা হ্রাস করা যে অসম্ভব এ তারা গুজরাতের দাঙ্গার পরে বুঝে গেছে। ফলে এমন একটা রাষ্ট্রীয় প্যাঁচকল বানাতে চেয়েছে, যেখানে এই কাজ সহজ হয়ে যাবে। অসমে ওরা এই ব্যাপারে একটা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছে। তার ভিত্তিতেই ওরা সারা দেশে এগোতে চায়। কিন্তু আপাতত মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা। এবং সারা দেশের বাঙালি জনগোষ্ঠী।

আরও একটা কারণ রয়েছে। প্রায় তিরিশ বছর ধরে চেষ্টা করেও, বহু গ্রেপ্তার, খুন, নির্যাতন করেও, ছত্তিসগড় নিয়ামগিরি ইত্যাদি আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্য/এলাকা থেকে তাদের উচ্ছেদ করে সেই সমস্ত জমি জঙ্গল খনি আদানি বেদান্তদের হাতে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবাদ প্রতিরোধ সংগ্রাম চলছেই। এনআরআইসি এবং সিএএ ওদের হাতে এরকম একটা সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। কাগজ নেই বলে বসতি থেকে উঠিয়ে দিয়ে আদিবাসীদের দণ্ডকারণ্য ধরনের ঘেটোতে পাঠিয়ে দিয়ে বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলি মুক্ত করে ফেলা যাবে!

এই সব উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের আইনের সাহায্যে বিজেপি সেন্সাস প্রক্রিয়ার সঙ্গে এনপিআর এবং এনপিআর-এর সঙ্গে নাগরিক পঞ্জিকরণের কাজকে জুড়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে বর্তমান রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি পয়সায় প্রতিদিন যে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তাতে তিনি রাজ্যবাসীকে ভুল তথ্য এবং মিথ্যা পরামর্শ দিচ্ছেন। সত্যটা জানার জন্য নাগরিকত্ব নির্ধারণ ও নাগরিক পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত এই আইনের তিন ও চার নং ধারায় কী বলা হয়েছে দেখে নেওয়া ভালো: “(4) The Central Government may, by an order issued in this regard, decide a date by which the Population Register shall be prepared by collecting information relating to all persons who are usually residing within the jurisdiction of Local Registrar.

(5) The Local Register of Indian citizens shall contain details of persons after due verification made from the Population Register.

4. Preparation of the National Register of Indian Citizens.-(I) The Central Government shall, for the purpose of National Register of Indian Citizens, cause to carry throughout the country a house-to-house enumeration for collection of specified particulars relating to each family and individual, residing in a local area including the Citizenship status.” এর ফলে দেশের যে কোনও রাজ্যে এনপিআর-এর নামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করার সময় জনসাধারণের কোনও কোনও অংশকে সন্দেহজনক বলে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা থাকছে। কেউ আপনাকে এসে বলবে না, আপনি সন্দেহজনক। কিন্তু আপনার যে তথ্য জমা পড়বে, আধিকারিকের মনে হলে সরকারি খাতায় সেখানে আপনার অগোচরেই বসে যাবে একটা টিক চিহ্ন।

জেনে রাখুন: “(4) During the verification process, particulars of such individuals, whose Citizenship is doubtful, shall be entered by the Local Registrar with appropriate remark in the Population Register for further enquiry and in case of doubtful Citizenship, the individual or the family shall be informed in a specified proforma immediately after the verification process is over.

(5) (a) Every person or family specified in sub-rule (4), shall be given an opportunity of being heard by the Sub-district or Taluk Registrar of Citizen Registration, before a final decision is taken to include or to exclude their particulars in the National Register of Indian Citizens.

(b) The Sub-district or Taluk Registrar shall finalize his findings within a period of ninety days of the entry being made, or within such reasonable extended time for which he shall record the reasons in writing.”

অর্থাৎ, এর পর সন্দেহজনক পরিবার এবং/অথবা ব্যক্তিদের অফিসে ডেকে পাঠানো হবে এবং অফিসারের সন্দেহভঞ্জন করার মতো দলিল দস্তাবেজ চাওয়া হবে। আর এইখানেই রয়েছে এক মস্ত ফাঁকির কারবার। কিসে কিসে সন্দেহ হতে পারে এবং তা নিবৃত্ত করার জন্য কী দলিল চাওয়া হবে, তা প্রায় পুরোটাই সেই সেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের উপর নির্ভর করবে। যেমন, ১৯৫১ সাল থেকে আপনি অথবা আপনার পিতামাতা ভারতে বসবাস করছেন, এটাও প্রমাণ করতে হতে পারে। যদি বা পিতামাতার বসবাসের প্রমাণ দিতেও পারেন (যা এই ২০২০ সালে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার), আপনি যে সেই পিতামাতার সন্তান তারও সন্দেহমুক্ত প্রমাণ দেওয়ার প্রশ্ন আসতে পারে। নামের বানানে, ঠিকানায়, জন্ম তারিখে একেবারে সঠিক হতে হবে সব কিছু।

আপনার অত পুরনো জন্ম শংসাপত্র থাকার কথা নয়। আপনি হয়ত স্কুলের একটা মার্কশিট, স্কুল ফাইনাল/উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে দেখাতে গেলেন। সন্দেহ হলে আপনাকে বলা হবে, এই কাগজের রাহুল ঘোষ আর আপনি রাহুল ঘোষ যে একই ব্যক্তি কী করে বোঝা যাবে? আপনাকে আবার একটা দলিল আনতে ছুটতে হবে। দলিল থেকে দলিল— আপনি দৌড়তেই থাকবেন। কেননা, আপনাকে প্রমাণ করতেই হবে, আপনি, অথবা আপনার পিতা বা মাতা, কিংবা, আপনার পিতামাতা উভয়েই ১৯৮৭ সালের আগে ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন। হিন্দু না মুসলমান না নাস্তিক, বাঙাল না ঘটি— এখানে বিচার্যই হবে না।

পূর্ববঙ্গ থেকে আগত হলে আপনি হয়ত দলিল খোঁজার ঝামেলায় না গিয়ে ভাবলেন, সরকার যখন বলছে, আমি নিজেকে না হয় শরণার্থীই ঘোষণা করি। যদি এনপিআর-এ আপনি নিজেকে শরণার্থী বলেন, এনআরআইসি প্রক্রিয়ায় গিয়ে আপনি আর নিজেকে নাগরিক বলে দাবি করতে পারবেন না। নাগরিক হিসাবে আপনি এখন যা যা সরকারি সুযোগসুবিধা পান, সব হাতছাড়া হয়ে যাবে। এবার আপনাকেই প্রমাণ দিতে হবে, আপনি ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসাবে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্তান থেকে ভারতে অবৈধভাবে এসেছেন এবং শরণার্থী হতে চান। মুখের কথায় এনআরআইসি এবং সিএএ-র চিঁড়ে ভিজবে না! অর্থাৎ, যে দলিলসমাধি থেকে বাঁচতে চেয়ে আপনি “শরণার্থী” হলেন, সেই দলিলচক্রেই আবার আপনাকে ওরা ঠেলে দেবে।

আবার, যাঁরা বলছেন, এনপিআর আটকালে এনআরআইসি আটকে যাবে, তাঁরাও বিষয়টাকে ধরতে পারেননি। পরস্পর সম্পর্কিত হলেও এই দুটো স্বতন্ত্র প্রক্রিয়া, একটা আটকাতে পারলেও অপরটা আটকে যাবে না। প্রথমত, যদি সে সুযোগ পায়, অন্য উৎস থেকে আপনার আমার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নেবে। দ্বিতীয়ত, এনপিআর আটকানোর দ্বারাই একদল স্বতঃই সন্দেহভাজন তালিকায় চলে যাবে। এলাকা, রাস্তা, পাড়া ধরে ধরে। সুতরাং, লড়াইটাকে এনআরআইসি প্রক্রিয়ার জায়গায় গিয়ে প্রতিরোধক রূপ দিতে হবে।

সচেতন পাঠক লক্ষ করলে দেখতে পাবেন, ২০০৩ সালের প্রণীত এই আইনটি এত জটিল ধারা-উপধারা কণ্টকিত করে মুসাবিদা করা হয়েছে যে অধিকাংশ অফিসার এর কোন কোনটা কোন ক্ষেত্রে বা কার উপর প্রযোজ্য বুঝতে হিমসিম খেয়ে যাবেন। সিএএ ২০১৯ সম্পর্কেও একই কথা খাটে। ফলত তাঁরা যে যার সুবিধা অনুযায়ী এর থেকে সহজ কিছু ফর্মুলা বের করে নেবেন এবং তার ভিত্তিতে কাজ করবেন। সেই আধিকারিক যদি অন্য রাজ্যের হন এবং বাংলা বা স্থানীয় ভাষা না জানেন, তাকে তার (হিন্দি) ভাষাতেই সংশ্লিষ্ট নাগরিককে বোঝাতে হবে। আবার যারা আইনের লড়াই লড়ে নিজের অধিকার রক্ষা করতে চাইবেন, তাদেরও নিজেরা আইনের ধারা-উপধারার জঙ্গলে কিছুই ভালো করে না বোঝার ফলে উকিলদের উপর অসহায় হয়ে নির্ভর করতে হবে। অসমে যে কী হয়েছে, এই আইনের ধারাগুলি খুলে পড়লেই অর্ধেক পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এর সঙ্গে যদি দেশের মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক মনোভাব জিইয়ে রাখা যায়, যার জন্য বিজেপি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাহলে কাজটা তাদের জন্য আরও সহজ হয়ে যাবে।

 

[৩] আমাদের কাজ

ভারতের এই অভিবাসন সমস্যার সঙ্গে, বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে এই মুহূর্তে এক দেশ থেকে অন্য দেশে উদ্বাস্তু ও শরণার্থী চলাচলের যে নানারকম সমস্যার উদ্ভব দেখা যায়, তার কোনও মিল নেই। তিন পুরুষ আগে আমাদের দেশ ছিল একটাই। স্বাভাবিক রাজনীতির পরিণতিতে স্বাধীনতা এলে এরকম একটি অনুপ্রবেশের সমস্যার উদ্ভবই হত না। কিন্তু কিছু স্বার্থান্ধ পুঁজিপতি-গ্রুপের বাজার ভাগবাঁটোয়ারার কোন্দল এবং কংগ্রেসের নেহরু প্যাটেল, জনসঙ্ঘের শ্যামাপ্রসাদ, মুসলিম লিগের জিন্নাহ্‌ প্রমুখ একদল কুচক্রী রাজনৈতিক নেতার সাম্প্রদায়িক মনোভাব সেই একটাই দেশকে প্রথমে দু টুকরো, পরে তিন টুকরো করে এই সমস্যার জন্ম দিয়েছে। তাহলে এই যে দেশভাগের জন্য এই সব মানুষরা বা তাদের পূর্বপুরুষরা কোনওভাবেই দায়ী নয়, দায়ী নেহরু প্যাটেল শ্যামাপ্রসাদ জিন্না প্রমুখ রাজনীতিবিদরা, তাদের অপরাধের দায়ভার কেন এই সব নিরপরাধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে? আসলে এরা তো আদি অবিভক্ত দেশেরই এক অংশ থেকে পরিস্থিতির চাপে অন্য অংশে এসে বাসস্থান পেতেছিল।

এই অবস্থায় মানবিকতার দাবি, যদি নাগরিকত্ব আইন করতেই হয়, তাহলে দেশের প্রতিটি বিদ্যমান নাগরিককে স্বীকৃতি ও পরিচয়পত্র প্রদান করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। তার দিন সীমা হবে, যেদিন সরকার সেই মর্মে কাজ শেষ করছে। সেই কাজ হয়ে গেলে তার পর থেকে প্রয়োজনে সে কারও কাছে প্রমাণপত্র চাইতে পারে। সেই দিনের পরে যারা এই দেশে আসবে বলে দেখা যাবে, তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। যা সে দেয়নি, তা সে চাইবে কেন? এই চাওয়ার মধ্যে জবরদস্তি আছে। পরিকল্পিতভাবে সে একটা বিশাল সংখ্যক মানুষকে উদ্বৃত্ত করতে চায়, তাদের কষ্টার্জিত সামান্য জমিভিটে থেকেও উচ্ছেদ করতে চায়, অন্য কাউকে বিনি পয়সায় দেবে বলে।

এই মুহূর্তে দেশের প্রতিটি বামপন্থীদলের সৎ, বিপ্লবনিষ্ঠ কর্মী সমর্থকদের উচিত, যার যার দলের নেতাদের স্বপ্রবৃত্ত হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে এতদ্‌সংক্রান্ত মামলায় অংশ নেওয়া এবং এই উপরোক্ত দাবি তোলার জন্য চাপ দেওয়া। তারা যে সাধারণ মানুষের পক্ষে, এটা প্রমাণ করার একটা সুযোগ রাষ্ট্র তাদের দিচ্ছে। সুযোগটা তারা গ্রহণ করুন। সিপিআই (এম) দল (তাদের ওয়েবসাইটে) যে দাবি তুলেছে, “কোনও প্রকৃত ভারতীয়কে যেন বিদেশি চিহ্নিত না করা হয়”— সেটা আসলে কংগ্রেস বা বিজেপি-র মতো বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ন্যাকা-ন্যাকা দাবি। তারা বলবে: ঠিকই তো। সাড়ে তিন কোটি লোকের মধ্যে মাত্র উনিশ লক্ষকে সনাক্ত করা হয়েছে, বাকি “প্রকৃত” ভারতীয়দের তো বিদেশি বা বহিরাগত ধরা হচ্ছে না!

না! শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের পক্ষ থেকে দাবি তুলতে হবে: তোমরা আগে “আজকের তারিখে” নাগরিকত্ব পরিচয়পত্র দাও। তারপর অনুপ্রবেশ আটকাও। দেশের মাটিতে যে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের একজনকেও তুমি হীন ষড়যন্ত্র করে এক কথায় কটা কাগজের অভাবে বিদেশি বলে দিতে পারো না।

অবশ্য এই সাহস বা সদিচ্ছা এইসব সর্বভারতীয় বামদলগুলির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আছে কিনা, তা নিয়ে গভীর সন্দেহ হয়। কর্পোরেট স্বার্থে কংগ্রেস বা বিজেপি-র মুখপাত্র হতে এরা এখন দু পা বাড়িয়েই বসে আছে। এই কঠিন সময়ে দায়িত্ব তাই কর্মী সমর্থকদেরই নিতে হবে।

যখন সারা দেশে এফডিআই এফআইআই ইত্যাদি নাম দিয়ে বিদেশি পুঁজিকে লাল কার্পেট পেতে স্বাগত জানানোর ধূম পড়ে গেছে, তখন দেশেই বসবাস করা একদল মানুষকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করার যুক্তি কতটা? ছত্তিসগড়ের অ্যালুমিনা ওড়িশার লোহা বাংলার কয়লা যদি বিদেশি কোম্পানি তুলে নিয়ে যায়, তাতে অসুবিধা নেই, কিন্তু এক কালের অবিভক্ত দেশের এক খণ্ড থেকে অন্য খণ্ডে আসা মানুষের দুটো পাতি কাগজ নেই বলে তাড়ানোটা যুক্তিযুক্ত হয়ে উঠছে?

দেশের প্রধানমন্ত্রী সহ এক গুচ্ছ বিশাল মাপের বিজেপি নেতার শিক্ষাগত শংসাপত্র জাল বলে আজ প্রায় নিঃসংশয়ে প্রমাণিত। স্মৃতি ইরানি ২০১৪ সালে স্নাতক থাকার পর ২০১৯-এর নির্বাচনে এসে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ হয়েছেন! নির্বাচন কমিশনের কাছে এরকম জলজ্যান্ত মিথ্যা তথ্য জমা দিয়েও তাদের কিন্তু মন্ত্রিত্ব যাচ্ছে না! সেই দেশে কোন কাগজের মূল্য কতটা সহজেই অনুমান করা যায়। যারা রাফায়েল লেনদেন সংক্রান্ত মাত্র দুবছরের পুরনো নথি হারিয়ে ফেলে, কিংবা আসলে দুর্নীতি ধরা পড়ার ভয়ে লুকিয়ে ফেলে, তাদের জনগণের কাছে একটাও পুরনো নথি চাওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার থাকতে পারে না।

আমরা এত কাল অনেক কষ্ট করে রোদে পুরে জলে ভিজে একের পর এক ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ডিজিটাল রেশন কার্ড করিয়েছি। কোনও কার্ডই কেউ আমাদের ঘরে এসে পৌঁছে দিয়ে যায়নি। তখন নানারকম দলিলপত্র সরকারের দরবারে পেশ করেছি। সেই সব দলিলের ভিত্তিতেই এবার আমাদের বিনা শর্তে নাগরিক পরিচয়পত্র দিতে হবে। এটা আমাদের দাবি এবং ন্যায্য অধিকার। আমাদের ঘোষণা করতে হবে, আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে উপরোক্ত কার্ডগুলির বাইরে আমরা কোনও অফিসারকে আর কোনও দলিলই দেখাতে যাব না।

বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে করে সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে, অযথা আতঙ্কিত হবেন না। আপনার যদি সরকার প্রদত্ত উপরোক্ত কার্ডগুলি থাকে সঙ্গে রাখুন। এর বাইরে আর কোনও দলিল খুঁজতে যাবেন না। আপনি এই মাটিতে জন্মেছেন, দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করেছেন, এখানেই লেখাপড়া করেছেন, এখানেই চাকরিবাকরি করেছেন। এই দেশেই আপনার সন্তানদের মানুষ করেছেন। আপনার এখানে থাকাটা কোনও দুদিনের অতিথিশালার মতো ব্যাপার নয়। কয়েকটা ভোটের অঙ্কের তারতম্যে যারা আজ থাকলেও কাল থাকবে কিনা ঠিক নেই, তাদের সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক নোংরা লক্ষ্য পূরণের জন্য কলকব্জা বনে গিয়ে আত্মসম্মান খুইয়ে নিজেকে ছোট করবেন না! অসমে যেমন এক লক্ষ গোর্খা জনগোষ্ঠী অনাগরিক ঘোষিত হওয়ার পরও বলেছেন, তাঁরা কোনও বিদেশি ট্রাইবুন্যালে নিজেদের জন্য তদ্বির করতে যাবেন না, আমাদেরও সেই রকম আত্মমর্যাদা ভিত্তিক সৎসাহস দেখাতে হবে।

একশ তিরিশ কোটি ভারতীয়কেই হয় ওদের অনাগরিক বানিয়ে বন্দিশিবিরে নিয়ে যেতে হবে। নয়ত গোটা দেশকেই একটা মস্ত বন্দিশিবির বানাতে হবে। আর আসলে এই মাটিতেই ওদের এনআরআইসি কুপ্রকল্পকে চিরতরে কবরে শোয়াতে হবে। আসুন, এই চুনোতি আমরা সকলে মিলে গ্রহণ করি।

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ক্ষমা করুন, আপনার কথাকেই সামান্য পরিবর্তন করে ঘোষণা করতে চাই:

ভারতের মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...