পাঁচটি কবিতা
কাপলফ্রেন্ডলি ঈশ্বর
জ্বরের মধ্যে জ্বর আরও আরও আতপ্ত হল
অচেতন মায়ের পাশে সচেতন শিশু
পড়ে ফেলল হ্যারি পটার, ডিমেন্টরস কিস
তার মনে প্রথম কি আরোপিত ডিপ্রেশন এল?
সুদূর বঙ্গে কেউ জানতে পারল মাধ্যমিকে নাকি
“অভাগীর স্বর্গ” আসবেই। ক্যাঙ্গালির বাবা খুব নির্লিপ্তভাবে কাটবে গাছ
“ক্যাঙ্গালি নির্লিপ্ত থাকবে না।” সন্তান নির্লিপ্ত থাকবে না
ইমেইলে উত্তর আসবে না। ইমেইলে উত্তর আসবে না
অথচ সে দেগে দেগে বড় বড় করে লিখে যাবে
“ইওর্স সিন্সিয়ারলি”, “ইওর্স ট্রুলি”, “ফেইথফুলি”
নানান কেজো কথায় সেটিই স্বকীয় পরকীয়া
তার ভর ব্ল্যাকহোলের, সমস্ত সত্তা উলটিয়ে
গুটিয়ে লিখবে তাকে “আপনারই ট্রুলি, ফেইথফুলি”
কাপলফ্রেন্ডলি হোটেলের ম্যানেজার
আড়চোখে দেখে বলবে বাসব— “এঁদের,
পাশাপাশি ঘর দাও” কাপলফ্রেন্ডলি স্বর্গের
ঈশ্বর বলবেন
“তোমাদের পাশাপাশি জ্বর দেব”
“পরিপূরক কামনা দেব”
সমুদ্রের পাশেও ওহে বাল্যপ্রেম তোমাদের
টলটলে জল এক পুল দেব আর
রাধা ও কৃষ্ণের সেই অসামাজিক প্রেমের মাঝখানে
একটি বাছুর শান্ত শুয়ে থাকে, রাধা জল দেয়
রাধা খড় দেয়, রাধা কেষ্ট, কিছু গার্হস্থ্য আসে
সমুদ্রশহরের অনেক কুকুর লেজ নেড়ে
তাদের গাড়ির পিছে ছুটে ছুটে বিস্কুট চায়
জ্বরের মধ্যে জ্বর বাড়ে
পারস্পরিক
বান্ধবীরা বলেছিল ব্যবহার করে নেবে সে নাকি আমাকে
দরজা খুলে দিয়েই আড়চোখে দেখি
ভীষণ রোমশ হাত, শীতের চাদর
এবং লাজুক চোখ, মেলাতে পারে না
মার্শমেলোর মতো ঠোঁট, কামড়ালে ফের ফেঁপে ওঠে
দীর্ঘকায়, বহুক্ষণ দৌড়োনো যায়
অলিভের তেল লেপে দেওয়া যাবে খড়ি ওঠা পায়ে
উম কি গভীর ক্ষত বুকের মধ্যে
গর্তে ঢুকে শীতঘুম দেব
উপরে থাকবে কিছু ঝুপঝুপ মাটির দেয়াল
উঠব না যতক্ষণ সূর্য আবার
নানান প্রকোষ্ঠে ঘুরে কর্কটের কাছে ফিরে আসে
বান্ধবীরা বলেছিল সে নাকি আমাকে
ব্যবহার করতে এসেছে!
হিংসুপানি
একটা পাখি, আমার পাখি,
খুঁজতে খাঁচা ঝাপটে ডানা আসে
আমার হাতে গড়ায় দানা, কার স্মৃতিতে বিন্দু গড়ায় গালে
অন্যমনে খাওয়াই পাখি, খায় সে তবু স্বাদ মেটে না বুঝি
ইচ্ছে যে তার আমার মনে মশলাপ্রবণ হিংসে হয়ে থাকে
হিংসে নাকি লিটমাসেরই নীল
যায় যদি সে অন্য কোনও ডালে
হয়তো আমার খেয়াল হবে পরে
খেয়াল হবে পাতা ঝরার কালে
মনে হবে সোয়ালো সে পৌঁছল তো উষ্ণ সরোবরে?
এইটুকুনি শীতের সুহৃদ তাকে,
ধার ছিল যা ফেরত দেবার থাকে
এক যে পোষা, সবার পোষা, গলির রাজা, আমার কাছে চায়
কখন আমি বাজার যাব, আনব কিনে লালচে সে বকলশ
কখন আমি গলার লোমে হাত বোলাব? পরাব গলায়?
তাই সে চলে অন্য কোনওখানে
আড়চোখে তার যন্ত্রণা। কে মানে?
হিংসে যদি বুনব তবে তার
থাকবে কোনও মানস সোয়েটার
অন্যমনে পশম বুনে রাখি,
কার স্মৃতিতে বিন্দু গড়ায় গালে
চাঁদের কাছে মুখ উঁচিয়ে কাঁদা
হিংসে যখন ফেরত আসে আহা
বুমেরাঙের মতন বুকে লাগে
হয়তো তখন আদর দেব নেমে
এইটুকুনি রাতের সুহৃদ তাকে,
ধার ছিল যা ফেরত দেবার থাকে
কাল ফের জমাট হবে আগুন তুমি
বিগলিত তরল হরি কমণ্ডুলে
তোমাতে ঠোঁট খুঁজি আর কীই বা খুঁজি
তোমাকে দ্রবণ প্রিয় মাধ্বী দিয়ে
কিছুটা বহন করি সুযোগ বুঝি
কাল ফের জমাট হবে আগুন তুমি
কাল ফের পরবে বোতাম, বুকপকেটে
আজ তাই হাওয়ার মতো ঘুরছি ঘরে,
সকালে মাথার কাছে থাকবে রাখা
একটা ছোট্ট মালা, আধেক ছেঁড়া
কিছু কি হয়েওছিল? বিস্মরণে
আমাদের একটি অতীত ধাঁধায় থাকা
মাটিতে শবের সাথ, শবের বিকাশ
আমরা যারা ভারতবর্ষের পোকা
ইটের তলায় পাথরের তলায় থাকি
রগুড়ে সরকার আমাদের ইট তুলে দিয়েছে
আর দেখতে হয়?
পিলপিল পিলপিল করে
অন্ধ কীট বেরোচ্ছে সারি দিয়ে
পায়ে উঠে পড়ছে
কামড়াচ্ছে
বিভ্রান্ত মরছে
নমো নমো প্রিয়তম
লোহার বাঁধানো বুট
শান্তভাবে, আস্তে আস্তে
রসিয়ে রসিয়ে
বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে দাও পিষে
না দেখেই
সামনে মাইক
আর কিছু পোকা যারা রোদ্দুরে তোমার প্রজাতি
সুরের লহরী ছোটে, মিত্রোঁ, মিত্রোঁ
ভীষণ অচ্ছে দিন, মিত্রোঁ, মিত্রোঁ
আরোহেই এমন পকড়
মাটিতে শবের সাথ, শবের বিকাশ
‘কাল ফের জমাট হবে আগুন তুমি’।খুব ভালো। আশায় রইলাম!