পক্ষ নিন! সুস্পষ্ট পক্ষ নিন!

সৌমিত দেব

 




লেখক গদ্যকার ও চিত্রনাট্যকার।

 

 

 

 

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় নামটা তো বর্তমানে সকলেরই জানা৷ কারণটাও জানার মতোই বটে। উনি এই বছর অর্থনীতি শাখায় নোবেল পেয়েছেন। একজন নোবেলজয়ী ভারতীয়, যিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেছিলেন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ তা এহেন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা কিনা শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে দেশের গর্ব, তা যে প্রায়শই খবরের মূলস্রোতে থাকে এটাই তো স্বাভাবিক৷ থাকেও, তবে অন্য কারণে৷ আর সেই কারণগুলো এমনই যে ‘লেখো ক্রোধ… লেখো ঘৃণা…‘ শীর্ষক একটি ক্রোড়পত্রে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে৷ সেই বিশ্ববিদ্যালয় গত ৫ই জানুয়ারি ক্ষমতার মদতপুষ্ট গুন্ডারা, রাতের অন্ধকারে মুখ ঢেকে ঢুকে, মেরে ছাত্রী, ছাত্র, শিক্ষক সকলের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এক অন্ধ ছাত্রকে অকথ্য মারধর করা হয়েছে কারণ তার ঘরের দেওয়ালে আম্বেদকারর ছবি ছিল। আর শুধু ওইদিনই না, বা শুধু ওই সময়েই না, বরং আজ জেএনইউ, কাল যাদবপুর, পরশু জামিয়া মিলিয়া, তরশু হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটি…. ‘ধারা’ অব্যাহত৷

জেএনইউয়ের ঘটনাটার পর অনেককে বলতে শুনলাম, অন্য খেলা আছে৷ এটা আইওয়াশ যাতে করে ‘বড়’ কিছু ঘটানোর সময় সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া যায়৷

অর্থাৎ কী দাঁড়াচ্ছে? না শিক্ষক শিক্ষার্থী পেটানো কোনও ‘বড়’ ব্যপার নয়! আর যদিও বা সেই ধারণাটিকে সত্যি বলে ধরেওনি তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে না, ‘বড়’ ঘটনার থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া জন্য যখন তখন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গুন্ডা ঢুকিয়ে পিটিয়ে দেওয়া যায়! কারণ এটা তো এখন ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা! ওই যে বললাম আজ জেএনইউ, কাল যাদবপুর, পরশু জামিয়া মিলিয়া, তরশু হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটি… তারপর একদিন আপনার কলেজ! আপানার সন্তানের স্কুল। আপনার প্রিয়তম মানুষটির বিশ্বাবিদ্যালয় বা আপনার বাড়ি। যেখানেই চিন্তা আর বোধের চাষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেটাকে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যাওয়া চাষিদের মতো মরে যেতে বাধ্য করো৷ এটাকে মাস্তানি বলে৷ গাজোয়ারি বলে৷ ইস্কুলে যেমন শক্তিশালী বাচ্চা বাকিদের দাবিয়ে রাখে, টিফিন খেয়ে নেয় জোর করে, অযথা ল্যাং মেরে ফেলে দেয়, নিজের হোমটাস্ক করিয়ে নেয় তেমন।

এবার ভাবুন সেই ছেলেটার হাতেই ইস্কুলের সব ক্ষমতা তুলে দেওয়া হল৷ সে কী করবে? প্রথমত তার যোগ্যতা নেই৷ তাই সে তার মতো আরও কিছু বুলি জোগাড় করবে, এবং গোটা ইস্কুলের ওপর দাপিয়ে বেড়াবে৷ চার পিরিয়ড ধরে টিফিন রাখবে। ফলে এক বড় অংশ তার দলে চলে যাবে। পড়াশুনো হবে ঘন্টার মাথা। আর যারা এই দলের বিরুদ্ধে যাবে তাদের পিটোনো হবে৷ ইস্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। মনিটর যারা পড়াশুনো করতে চাইবে তাদেরই ডিটেইন করিয়ে রাখবে৷

প্রশ্ন করার আগে জিভ ছিঁড়ে নাও৷ অধিকার চাওয়ার আগে হাত ভেঙে দাও। যখন আপনার হাত কাটা হবে তখন প্রতিবেশীরা ভাববে, যাক বাবা আমার হাত তো কাটেনি, এমন কী হাততালিও দিয়েছিল৷ কারণ মনে করে দেখুন আপবার প্রতিবেশীর জিভটা যখন ছিঁড়ে নেওয়া হচ্ছিল তখন আপনিও তাই করেছিলেন। যাক বাবা আমার জিভ তো ছেঁড়েনি।

একবার ভাবুন সেই ইস্কুলে আপনার কাছের একজনও পড়ে, পড়াশুনোটা করতে চায়। ভাবুন। ভেবে, পক্ষ নিন।

রেগে উঠুন।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4658 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...