সম্যক ত্রাসের বিপরীতে: প্রতি-বেদন

রাজদীপ্ত রায়

 



লেখক গদ্যকার ও ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক।

 

 

 

গড়পড়তা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে আশৈশব ঝাড়া আপ্তবাক্যে বড় হওয়ায় ইহকালে প্রেমকে ভেবে এসেছি উত্তমকুমার। আর হিংসাকে মুগ্যাম্বো। সাক্ষাৎ ভিলেন যার কোনও কিছুই অনুমোদনযোগ্য নয়। এক্কেবারে সাদামাটা সহজ বাইনারি হিসেব। কোনও দো-আঁশলা নেই। অথচ আজকের ভারতবর্ষে রাগ, দ্বেষ, হিংসা জাতীয় অনুভবগুলিকে এমন সাদামাটা মোটেও থাকতে দেওয়া যাচ্ছে না বা হচ্ছে না। সৌজন্যে, বর্তমান শাসক দলের আদ্যোপান্ত অগণতান্ত্রিক আচরণ। হৃদয়ের দুর্মর ফাসিবাদী বাসনা।

যা ঘটছে চারপাশে, তাতে করে এক অদ্ভুত কারণে মাঝে মধ্যে বিপন্ন লাগছে। ধর্মান্ধ শাসকের আক্রমণের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে গলায় উঠে আসছে রাগ, দ্বেষ, ঘৃণা। ছিঁড়ে, ছুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে ঘাতকের হাত। পরক্ষণেই বাদ সাধছে মুক্ত মানবিক শিক্ষা অর্জিত ইতিহাসবোধ। বুঝতে পারছি যে ধর্মীয় মৌলবাদী চরমপন্থী হিংস্রতাকে কখনওই একই তীব্রতার হিংস্রতা দিয়ে যুঝে নেওয়া সম্ভব নয়। উচিতও নয়। নইলে হিংস্রতার আদিম খেলা পালটাবে কী করে! কিন্তু দীর্ণ যে হই স্ববিরোধী আবেগ উতরোলে, সে যন্ত্রণা অনস্বীকার্য হয়ে ওঠে ইদানিং স্বদেশের সহজ চর্যায়। রাষ্ট্রীয় মদতে এই আমাদের সাম্প্রতিক অস্তি-উদ্বেগ; আমাদের অনন্য আবাস কাহন।

নাগরিক মনে সম্যক ভাবে ত্রাস তৈরি করে নব্য ফাসিবাদী রাষ্ট্রের অনায়াসে সন্ত্রাসবাদী সেজে উঠবার ক্লান্তিহীন কুনাট্যে হিংসারহিত দিন যাপনের সামান্য চেষ্টাই দিনে দিনে কষ্টকল্পনা বলে মনে হচ্ছে। মানতে না চাইলেও হিংসা তার অনুমোদন আদায় করে নিচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী ভাবধারায় পুষ্ট গুণ্ডাদের হাতে সন্তানসুলভ ছাত্রদল বা শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্যগুলি বারবার ফিরে আসছে আর প্রশ্নটাকে গুলিয়ে তুলছে। অন্তরের তাগিদেই। বাঁচার তাগিদে। সমস্ত রাগ আর ঘেন্না একদলা থুতুর মতো নির্বিকার সমাধিতে যাওয়া ধূর্ত রাষ্ট্রনায়কের মুখে ছুঁড়ে দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, ছিঃ!

চারপাশের তাণ্ডব দেখে হিংস্রতার ধারণাকে আর ভালো/খারাপের বাইনারি পরাভবে বেঁধে রাখতে মন চাইছে না। প্রতিবাদে নয়, কিন্তু প্রতিরোধে মান্যতা দিতে ইচ্ছে করছে হিংস্রতাকে। শরীরী, সন্ত্রাসী হিংসার আদলে নয়। ভাবনার, চেতনার, যুক্তির, তত্ত্বের সবিভ প্যাশনে আমূল পেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে অভাগী গণতন্ত্রের কলঙ্ক কৈলাস। মনে পড়ছে তথাগত কথন। তার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রামকৃষ্ণ উবাচ। মার খাওয়া প্রাণীকে ফোঁস করবার প্রণোদনা দিয়ে তার সাথে জুটে যেতে ইচ্ছে করছে বিদ্রোহী খেলায়। আর যত সেসব ইচ্ছে হচ্ছে, বাড়ছে, মাথাচাড়া দিচ্ছে ঘরে বসা ছা-পোষা মনের গহীন কুঠুরিতে, ততই বিপন্ন হয়ে পড়ছি হিংসা-চরিত্রের মুগ্যাম্বো রূপ-মোচন দেখে। ভেবলে যাচ্ছি এই ভেবে যে, হিংসাকে তবে এতকাল যে আখাম্বা ভিলেন বলে দেখানো হল, আর প্রেমকে নদের নিমাই, সে তাহলে ধাপ্পা! এমনটা তো মোটেও নয়। সবটাই কেমন যেন ঘোর লাগা সময়ের সার্কাসের খেলা। ওই একরত্তি ছাত্রীটার রক্তে ভেজা মুখটা মনে পড়ছে, মনে পড়ছে ঐশী ঘোষের সমপদবীধারী বঙ্গনেতার বিষাক্ত বয়ান, আর মনের ভেতর ভারী হচ্ছে সময়ের জ্বালা ধরা বিপন্ন রাত। প্রতিরোধের বুকজ্বালা। প্রতিশোধের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। অস্ত্রে নয়। তর্কে। তত্ত্বে। ভাষায়। আর, আন্তর্জাতিক মানবিকতায়।

সোজা কথায়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস চালানো হলো তার আতঙ্ক কিছুতেই নিশ্চিন্তে থাকতে দিচ্ছে না। সবটাই হল বা হচ্ছে সুশৃঙ্খলভাবে, প্রায় জ্যামিতিক অনুমানের আরোহী সূত্র মেনে। প্রথমে সংশোধনী আইনের নামে নাগরিকত্বের মতো বিষয়কে সম্পূর্ণ অকারণে ধর্মীয় পরিচিতির সঙ্গে জুড়ে দিয়ে খেলা হল ধর্মান্ধ বিভাজনের তাস। দেশ উত্তাল হল। ধরপাকড়, অত্যাচার নামিয়ে আনা হল। শুরু হল প্রায় হলোকস্ট “প্রোগ্রম”। যেভাবে হয়েছিল নাৎসি জার্মানিতে। আগুনের ফুলকি পড়ল যাদবপুর, আলিগড় বা জামিয়া মিলিয়ার মতো নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। প্রাথমিক অ্যাজেন্ডায় জামিয়াকে নির্বাচিত করা হল। পুলিশ লেলিয়ে পেটানো হল। জমল না। নতুন বছরের শুরুতেই নিয়ম করে ‘পাকিস্তান’, ‘পাকিস্তান’ বলে খানিক চেঁচিয়ে নিল সরকারের সবচাইতে উঁচু দাঁড়ে বসা টিয়া ও ভাঁড়।

এরপর চোখ পড়ল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। চোখ আগেও ছিল। কিন্তু এখন সময় আরেকটু রক্তাক্ত। চারপাশে জ্বলছে দেশ। অর্থনীতির নাভিশ্বাস উঠে গেছে আগেই। “আচ্ছে দিন”-এর জুমলা-চিরাগ নিবেছে ভোর রাতে। কিন্তু তবুও, শুধু “ভজ গৌরাঙ্গ”র সুরে আর আড়ে “ভজ পাকিস্তান” আর “ভজ সন্ত্রাস” হেঁকে বিপুল ভোট বৈতরণী যে পার করে ফেলতে পারা গেছে, সে সত্য তো অস্বীকার করার নয়। কাজেই, সাধু সন্ত ডেকে দলীয় বৃহস্পতি তুঙ্গে আছে বলে নির্ধারিত হয় আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের ওপর আঘাত নেমে আসে মুখ ঢাকা রাতের অন্ধকারে। প্রশাসনের সক্রিয় মদতে। যে প্রশাসনের আচরণ মানুষের চাইতে আজ্ঞাবাহী প্রাণীর সঙ্গে বেশি তুলনীয়। সেখানে দলদাসের অপরাধবোধটুকুও নেই। আছে শুধু সারমেয়সুলভ লালাসিক্ত লাঙ্গুল আস্ফালনের মৌল অভ্যেস।

সবরকম আক্রমণের জন্য কেন বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনকে বেছে নেওয়া হচ্ছে সে কারণ আজকে কমবেশি সকলেই জানেন এবং মানেন। দৈনিক তরজায় এই বিজেপি সরকারের চরিত্র লক্ষণকে সর্বাত্মকভাবে ফাসিবাদী বলে চিহ্নিত করছেন প্রায় সকলেই। অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় একে সরাসরি নাৎসি জার্মানির উত্থানের সঙ্গে তুলনা করছেন। অমর্ত্য বলছেন। বলছেন রোমিলা থাপার বা ইরফান হাবিব– সকলেই। আর উলটো দিকে এই ধর্মীয় মেরুকরণের পাণ্ডারা কী বলছে (এদের জন্য সম্মানার্থে ব্যবহার করা ‘আপনি’ বাচক শব্দকে বাহুল্য মনে হয় বলে সে কাজটি থেকে বিরত থাকলাম; সহৃদয় পাঠক/পাঠিকা ক্ষমা করবেন; নির্দয়রা গাল পাড়ুন)? তারা এইসব বিদ্বানদের ন্যক্কারজনকভাবে আক্রমণ, অপমান তো করছেই, সেই সঙ্গে নিশানা করছে ভবিষ্যতের উদারমনা ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ তৈরি করার কারখানা বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে।

তার মানে হরে দরে যেটা দাঁড়াল, এই নব্য ফাসিবাদী মৌলবাদী শক্তি/সঙ্ঘ/সরকার শুধুমাত্র একতরফা ধর্মীয় মেরুকরণই চাইছে এমনটা নয়। তারা চাইছে পষ্টাপষ্টি একটা আড়াআড়ি ভাগ, যেখানে লড়াইটা হবে মূলত ধর্মীয় মৌলবাদ আর সেক্যুলার মানসিকতার মধ্যে। রামরাজ্যের যে কল্পচিত্র সম্মিলিত নির্জ্ঞানে তিল তিল করে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রতিদিন, যে কল্পনায় ব্রাহ্মণ্যবাদ স্বীকৃত সত্য আর মনুবাদী ভারতের উত্থান পাখির চোখ, যেখানে গণতান্ত্রিক সংবিধানের প্রতিটি পৃষ্ঠা বিষবৎ পরিত্যাজ্য, সে ভারত নির্মাণের পথে সবচাইতে বড় অন্তরায় ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদারতাবাদী শিক্ষা-পরিসর। এই নির্ণয় যখন হয়েই যায় তখন নির্মম আঘাত যে নেমে আসবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চত্বরে চত্বরে সে আর বিচিত্র কী। আর যে বিশ্ববিদ্যালয় উৎকর্ষে যত বড়, যত বেশি তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি, সেখানেই ঘন থেকে ঘনতর হবে লাগাতার আক্রমণের ছাঁট। কারণ কাঁটাতার পেরোনো বিশ্বজনীন আন্তর্জাতিকতার বিপরীত মেরুতে অবস্থিত আজকের গৈরিক সন্ত্রাসী উগ্র জাতীয়তাবাদ। কর্পোরেট ক্যাপিটালের দালালিতে অভ্যস্ত অকৃত্রিম মাণিকজোড় শাসক শিরোমণিরা তাদের দেশকে দেউলিয়া করবার মহতী প্রকল্পে সে কথা প্রমাণ করছে বহুবার। বার বার।

এ প্রসঙ্গে অন্য একটা কথা না বললেই নয়। দুদিন আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জঘন্য সন্ত্রাস হল, অনেকেই সে কাণ্ডকে তাদের ছাত্রজীবনে স্বচক্ষে দেখা নানান দলীয় বা রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাইছেন। একদলের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি তীব্র অপরাধবোধে চুপ করে থাকার প্রবণতা। সমর্থিত রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে ঘটা নৈরাজ্য বা মারামারি/সন্ত্রাসের দায় বা অপরাধ বোধে আক্রান্ত। আর অন্যদলের মধ্যে ক্ষীণদৃষ্টি দায়-চাপানো মনোভাব। কিন্তু দুদিকেই যে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে, সে ভ্রান্ত-যুক্তির মায়াজাল সরিয়ে অনেকেই দেখছেন না। বা দেখতে চাইছেন না।

জেএনইউ-এর সাম্প্রতিক ভয়াবহতার সঙ্গে আর পাঁচটা ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া হিংসার ধরণ বা উদ্দেশ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। মানে, সাম্প্রতিক বিজেপির মদতে পুষ্ট অত্যাচারের সঙ্গে বাকি সব দলগুলোর ক্ষমতাদর্পী অত্যাচারের মধ্যে ফারাক আছে বিস্তর। অন্য যে কটা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময়ে নানা রাজ্যে ক্ষমতায় বা বিরোধিতায় আছে বা থেকেছে, তাদের সকলের কাছেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দখলদারি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তা সে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ, আধিপত্য সেখানে একটি countable বা গোণা যায় এমন সূচক মাত্র। অর্থাৎ, যত বেশি প্রতিষ্ঠান আমার দখলে, তত বেশি আমার নিরঙ্কুশ আধিপত্য। ক্ষমতা দখলের বস্তুগ্রাহ্য মডেল অনুসরণ করে নির্ভেজাল পেশীশক্তির সাহায্যে নিজের আওতায় রেখে দেওয়া। সে ব্যাপারটা যে ভীষণই খারাপ এবং নিন্দনীয়, সে নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু এই লালসা এবং ইতিহাসও যে সার্বিক, সে কথাও একই সাথে মানতে হবে। কংগ্রেস অনেক ক্ষেত্রেই এই কাজ করেছে তার সময়ে। ক্ষমতাসীন রাজ্যে বামফ্রণ্ট দখল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। আর তৃণমূল শাসনে শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজকতা, মারপিট তো প্রায় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তৈরির সিঁড়িতে রূপান্তরিত। নিজেদের ছাত্র সংগঠনের লাগামছাড়া আচরণের জন্য নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় থাকা একটি দল বা সরকার কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর সংসদ নির্বাচন করতে পারছে না, এমনটা কে কবে দেখেছে!

সুতরাং, ছাত্রদলে মারামারি বা হিংসা অথবা শিক্ষাক্ষেত্রে অরাজক মারপিট নতুন কিছু নয়। কিন্তু উগ্র ফাসিবাদী মডেল মেনে ঘটানো সাম্প্রতিক হিংস্রতার মৌলিকত্ব এখানেই যে, বাকিদের মতো একটা সংখ্যায় পরিমাপযোগ্য আধিপত্য বিস্তার আজকের ভারত শাসক এবং তাদের প্রসূতি-স্বরূপ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের একমাত্র কাঙ্ক্ষিত উদ্দিষ্ট নয়। এদের উদ্দেশ্য আরও অনেক সুদূর প্রসারী, অনেক গভীর এবং সর্বব্যাপী। লড়াইটাকে শুধুমাত্র শিক্ষাঙ্গন দখলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবার কথা ফাসিস্ত শক্তির দলিলে নেই। সে চাইছে সে যুদ্ধ বিস্তার করে, মাঠটাকে আরও বড় করে ভারতবর্ষ নামক দেশীয় আত্মার সহনশীল উদার স্বরূপটাকেই দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিতে। সেই সমস্ত শিক্ষাঙ্গনকেই এরা নৈরাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলতে চাইছে যারা সেরার শিরোপায় ভূষিত। বিশ্বে স্বীকৃত। যেসব জায়গায় শেখানো হয় ধর্ম-বিভেদ ভুলে মানব-ধর্মের কথা, সংবিধান মান্যতার কথা, মানুষের নাগরিক অধিকারের কথা। আর সমস্যাটাও ঠিক এখানেই।

বাকি সব রাজনৈতিক দল যেখানে একটা quantifiable বা পরিমাপযোগ্য আগ্রাসনের তত্ত্ব মাথায় রেখে অরাজকতা চালিয়েছে, সেখানে ভারতের মুক্তচিন্তার মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কংগ্রেস, বাম দলগুলো বা তৃণমূল কংগ্রেস– এরা কেউই ভারতবর্ষের বহুত্ববাদী চরিত্রের পরিবর্তন চায়নি। যা করেছে, কাঠামোর মধ্যে থেকেই করেছে। কিন্তু বিজেপি নামক দলটির মূল উদ্দেশ্য ভারতীয় সত্তার নতুনতর একদেশদর্শী exclusive রূপ-নির্মাণ। সে কাঠামোটাকেই রাতারাতি বদলে ফেলতে চাইছে। বহুত্ববাদী সংবিধানের পরিপন্থী ভাবাদর্শে নির্ভর করে উগ্র মৌল/মনুবাদী ভারত নির্মাণের যে ফাসিবাদী প্রকল্প রূপায়ণের পথে মাণিকজোড়ের নাগর-নাৎসি নেতৃত্ব, তাদের শিক্ষাঙ্গন দখলের উদ্দেশ্য শুধু quantifiable আধিপত্যের সূচকে মাপার নয়। এরা চাইছে ভারতরাষ্ট্রের গুণগত পুননির্মাণ, গৈরিক সন্ত্রাসের সার্বিক রাজত্ব, a qualified reign of terror।

আর ঠিক এ কারণেই একে প্রতিহত করা এতটা সমীচীন হয়ে পড়েছে। এ মুহূর্তে। সুসংহত, সার্বিক এবং প্রায় সর্বমত সম্বলিত মঞ্চ তৈরি করে দল মত নির্বিশেষে সকলে এক জায়গায় এসে এই কর্পোরেট-লালিত ফাসিবাদী রাষ্ট্রের গৈরিক সন্ত্রাস রোধ করার যে পথ দেখাচ্ছে আলিগড়, যাদবপুর, জামিয়া বা জেএনইউ, তাকে রক্ষা করার দায় আমাদের সকলের। ভারতবর্ষকে রাখতে হবে ভারতবর্ষেই। যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা মানবজমিন বলে ডেকে অভ্যস্ত। গোয়াল ঘর নামে নয়। নিজের স্বার্থে, সন্তানের স্বার্থে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4881 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...