দিপ্র হাসান
আমার কাজ মেয়েটাকে হেল্প করা। ওর এক বন্ধু আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল খুন বিশেষজ্ঞ বলে। বলেছিল, ইনি অত্যন্ত চমৎকার আইডিয়া জেনারেট করতে পারেন। তোকে এমনভাবে খুন করবেন যে সবাই ভাববে আত্মহত্যা। মেয়েটা খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলেছিল– ইয়েস, এমন লোকই তো চাই।
মেয়েটার মা বাবা দুইজনই অন্য কারও সাথে সেক্স লাইফ লিড করছে। ঘরে একটা সোমত্ত মেয়ে থাকার পরও ওদের আচরণে কোনও রাখঢাক নেই। অগাধ সম্পদ। তাই সারাক্ষণ সেক্স ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকলেও প্রবলেম নেই। কিন্তু মেয়েটার সমস্যা হচ্ছে। বাসায় বন্ধুদের আনতে পারে না। আনলেই জেনে যাবে ওর মা বাবা সম্পর্কে। ফলে ওর সাথে ওরা বাজারি মেয়ের মতো আচরণ করবে। আরও একটা কারণ অবশ্য আছে, বন্ধুদের বলেছিল ওর মা বাবা খুবই ভাল!
ধীরে ধীরে হতাশা পেয়ে বসে মেয়েটাকে। তা থেকেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত! বন্ধুদের জানাতেই তারা কনগ্রাচুলেট করল। একজন বলল, জীবনে কাউকে আত্মহত্যা করতে দেখিনি। তোরটা দেখব। চাস কি ফেসবুকে লাইভও করব। ওহ্ ভাবতেই দারুণ ভাল লাগছে!
কিন্তু সমস্যা একটা আছে। সিদ্ধান্ত নিলেও আত্মহত্যা করতে খুব ভয় পাচ্ছে মেয়েটা। ‘নিজেকে নিজে হত্যা! ওহ মাই গড! ভাবতেই হাত পা হিম হয়ে আসে।’ সুতরাং একজন খুনির খোঁজ পড়ল, যে কারও কোনও সন্দেহের উদ্রেক না ঘটিয়েই খুন করবে তাকে।
ওর এক বন্ধু আমার বিসর্জন গল্পটি পড়ে এটাকে সত্য ভেবেছিল। সেই কারণেই আমার কাছে নিয়ে এসেছিল বান্ধবীকে। মেয়েটা আমার হাত ধরে বলেছিল, প্লিজ আমাকে খুন করেন। বিনিময়ে যা চান পাবেন।
পরিচয়ের পরপরই মেয়েটিকে নিয়ে নিরিবিলিতে বসে প্ল্যান করলাম। প্ল্যান হল পাহাড় থেকে নামা। সবাই পাহাড়ে উঠে রেকর্ড করে। তুমি নেমে রেকর্ড করবা। তবে পদ্ধতিটা ভিন্ন। হেঁটে নামবা না, লাফিয়ে নামবা। হাতে থাকবে শুধুই একটা ছাতা। অন্যরা ভাববে রেকর্ডের পিছনে ছুটে মারা গেছ। আসলে তো তুমি মৃত্যুর পিছনেই ছুটছ।
প্রতিটি এটেম্পটের সময়ই ক্যামেরায় ভিডিও করা হবে। এতে বন্ধুরাও খুশি। সম্ভব হলে মিডিয়াকেও সাথে রাখা হবে। মৃত্যু বা রেকর্ড দুই ক্ষেত্রেই দারুণ কভারেজ পাবে।
আমাদের প্রথম এটেম্পট হিমছড়ি পাহাড় থেকে লাফিয়ে নিচের রাস্তায় নামা। বড় এবং মজবুত একটি ছাতা হাতে মেয়েটা পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে। বন্ধুদের মোবাইলে ফেসবুকে লাইভ হচ্ছে। কয়েকটা মিডিয়ার ক্যামেরা রেকর্ড করছে সব। ছাতাটা ধীরে ধীরে মেলা হল। ছাতার হাতল শক্ত করে ধরে আছে মেয়েটি। কানে কানে বললাম, প্রথম এটেম্পটেই মরতে নেই। কয়েকটা সফল ডাইভের পর মরলে লোকে দুর্ঘটনা বলে মেনে নিবে নইলে আমাকে খুনি সাব্যস্ত করে জেলে পাঠিয়ে দিবে!
দুই বছর পর বিশ্বের সর্বোচ্চ তেরটি শৃঙ্গ থেকে ছাতা হাতে লাফিয়ে নামার রেকর্ড করে মেয়েটি স্বীকার করল তার এ পথে আসার কারণ ছিল আত্মহত্যা করা। কিন্তু ভুল লোকের পাল্লায় পড়ে এতগুলো রেকর্ড হয়ে গেল। তবে ওই লোকের জীবন হেল করার আগে আপাতত আত্মহত্যা করার ইচ্ছে নেই!
পরদিন পত্রিকায় একটি ছবি এল। সেখানে দেখা যাচ্ছে ওর বন্ধুরা আমাকে কুরবানির গরুর মতো সাজিয়ে সেল্ফি তুলছে!