দুটি কবিতা
পথের শেষ কিংবা শুরু
১.
ছাতাপড়া দুঃখী, মেধাবী অলিগলির ভিতর
পাক খেয়ে, মুঠোহাত চিবুকের নীচে চেপে
কতই বা মেপে দেখবে তার জমা জল,
কোথায় কখন কার চৌকাঠে অলৌকিক সন্ধে নেমে
ঢুকে পড়েছিল
টেলিফোনে, বিষাদে আর রোজকার ছায়াতরঙ্গে
কী ভাবে তৈরি হয়েছিল প্রথম গান
নীলনদে শেষ স্নান, তোয়ালের আঁশ— সে কি ধারাবাহিক
পথে এসেছিল!
ভাবতে ভাবতে তৈরি হচ্ছে তোমার-আমার স্মৃতিরেখা
বিধিলিপির মতো, সে পথে টেরিয়ে তাকাচ্ছে কেউ
আমাদের পদশব্দ ডুবে যাচ্ছে অনিচ্ছুক ঘোড়াদের ডাবায়,
উল্টে পাল্টে দেখছ স্বপ্নযান, ছোটদের ভূগোল, বিজ্ঞান…
২.
প্রতিটা বাক্যই সৎ আর শেষ মনে হয়
তারপর ফের শুরু করি তোমার আঁচিল থেকে,
পাড়ার ঘুগনির খুরি, টায়ার পাংচার আর হাতচিঠি থেকে…
দ্যাখো, কী ভাবে ভেঙে যাচ্ছি আমি আর চুপসে ছোট হয়ে
শুয়ে পড়ছি তরঙ্গের ভিতর
রোদ-জল কী ভাবে ঢেকে রাখছে সব না দেখা রং
পথের শেষ আর দেখা হবে না জেনে
যে লোকটা গুটিয়ে নিচ্ছে আজকের মতো চিন্তার পসরা,
তারই খনন খোঁচা দিচ্ছে, ধাক্কা মারছে রাতের
এই বানানো বাতাস……
কবিতাবলয়
১.
সভাঘর, স্থির চিত্র, মাথাভাঙা বারুদ আর মধু
আলাপ, সংযোগ, রাগ, কবিতার শতচ্ছিন্ন কথা
আটকে যাচ্ছে, বুঝে গেছ ঘেঁটে ঘেঁটে, হাঁটুর উপর
যে জড়ুল
পৃথিবীর অনেকেই দেখবে না, তবু
ছাতাপড়া দেয়ালেরা এর বেশি শিল্প বলেনি…
যা বলেছ বাইরের, যার দৃশ্য খুব প্রবাহিত
যার শব্দ ভেদীরূপ, যে প্রশ্নে অবিচল নেতি
তার স্বপ্ন, শ্লোকগুলি পীড়িত অক্ষরে টুকে রেখো
২.
যা কিছু, লেখার মতো, এভাবে লিখছি আমি, শেষে
যেন ধার কমে যায়, লেখাদের, পরীদের ভেজানো ডানার
সঙ্গীত ভেসে আসে। বড় ঠাকুমার
কোল ঘিরে ফিরে আসে নাতিপুতিদের আলো, ধারাপাত
যার খুব পাশ ঘেঁসে পুরোনো নদীটি বাঁক নিল
ডুবে যাওয়া পাহাড়ের দিকে
৩.
যেখানে আমরা থাকি, সেখানে কোথাও নেই
মহাজগতের মেলা। ভিতর বাহির জুড়ে কেবল পাহারা
যাতে অবক্ষয় ধীরে নামে, বালি খুব তপ্ত না হয়
পায়ে যাতে সেঁক লাগে মধুরের, যাতে কোনও ত্রিভুজের
অতিকায় বাহুগুলি আলিঙ্গনে রাখে এই জড়োসড়ো,
ভয় ও সঙ্কেত রাখে, বেঁচে থাকা দিনরাতগুলো
হাওয়ার ঝাপটায়, শেষমেশ
বাড়িওলাদের ফাঁকা উঠোনেই পালক ঝরায়…
সেই খেলা। কতকাল আগে
ভূগোল ক্লাসে তাকে আবিষ্কার করি
মেঘ আর গ্লেসিয়ারে, জনবিস্ফোরণের রোষে, রেকারিং
ডেসিমেলে, তারায় তারায়
কতবার কতদিন দেখা হয় বাজার ও সেমিনার, সুলভে, শৌচালয়ে,
মুচকি হাসি ও মোচড়েতে,
পরীক্ষাকেন্দ্রের ছাদে, চোখে ঝলোমল মুক্তো
হাতে পাথরের ফুল, ডানাগুলি খুব নতমুখ!
তারপর একদিন নেমে আসি সিঁড়ি বেয়ে
চিলেকোঠা, ইতিহাস, প্রাসঙ্গিক থাকে