বিজয় বোস
অফিস থেকে ফিরে ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে ফেলে সবার আগে কাচের স্লাইডিং জানালাটা খুলে দেয় নীহারিকা। তারপর ধপাস করে শরীরটা খাটে ছুড়ে ফেলে। এরপর আলতো করে চোখ বুজে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকে। শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে আসা হালকা হাওয়া শরীরে মাখে। বাতাসের ঘ্রাণ নেয়। বিশুদ্ধ বাতাস সারা শরীরে মাখা ওর প্যাশন। তাই বারো তলায় ফ্ল্যাটটা নিয়েছে ও। নিচের কোলাহল থেকে অনেক উঁচুতে। দূষণ থেকে কিছুটা দুরে, ওজোনস্তরের খানিকটা কাছে। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর হালকা পায়ে জানালার সামনে দাঁড়ায়। নিচের শহর দেখে। রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা গাড়ি, দূরের ফ্ল্যাটের ঝিকমিকে আলো, ঝলমলে পার্ক। কিন্তু সবই খুব সাইলেন্ট। গ্রাউন্ড ফ্লোরের শব্দ একতলা দোতলা তিনতলা অতিক্রম করতে করতে হাঁপিয়ে গিয়ে নীহারিকার দরজায় যখন পৌঁছয়, তখন তার মধ্যে আর সার থাকে না। সে শান্ত হয়ে যায়। সেই শান্ত বাতাসের সঙ্গেই কিছুক্ষণ কথা বলে নীহারিকা। এরপর একটা শাওয়ার নেয়। তারপর বাণীকে এককাপ গ্রিন টি দিতে বলে হালকা করে একটা গান চালিয়ে ব্যালকনিতে বসে। আট বছরের চাকুরি জীবনে এই নিয়মের ব্যতিক্রম একদিনও হয়নি। অবশ্যই বর্ষা আর খুব শীত বাদ দিলে। বাণী গ্রিন টি দিয়ে গেলে মোবাইলে একবার মেলগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেয়। যদি কিছু খুব জরুরি থাকে তাহলে মোবাইল থেকেই রিপ্লাই করে দেয়, না হলে মেল থেকে লগ আউট করে মোবাইলটা পাশে রেখে সেদিনের জন্য কর্পোরেট জীবন থেকে ছুটি নিয়ে নিজের পার্সোনাল মোবাইলটায় অনলাইন হয়। ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি ইত্যাদি।
দিতির মেসেজটা আজকে সবার আগে চোখে পড়ল নীহারিকার। ফেসবুকে করা— ‘হোয়াটস্যাপে আজ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’
সারপ্রাইজ!
হোয়াটস্যাপ খোলে নীহারিকা। এখানে ওদের কলেজের একটা গ্রুপ আছে— ‘স্টিল ইয়ং’। প্রতিদিন প্রায় দেড়শো দুশো করে মেসেজ আসে গ্রপে। অর্ধেক ও পড়ে, বাকি চোখ বোলায়। মজার কিছু জোকস দেখে, মাঝেসাঝে ভিডিও। আজকে স্পেশাল আবার কি? গ্রুপে আজকে প্রায় একশো মেসেজ। মেসেজগুলোয় চোখ বোলাতে আরম্ভ করতেই থমকে গেল ও। আর হঠাতই ফিরে গেল প্রায় বারো বছর আগের একটা বিকেলে। সামনের দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে হতে যত ওর সামনে সেই বিকেলটা স্পষ্ট হতে লাগল তত ও অনুভব করল শিরশিরানি। হাতে পায়ে শিরদাঁড়ায়।
দিতি একটা নম্বর অ্যাড করেছে, আর তাতে সবাই লিখেছে— ‘ওয়েলকাম টু দ্য গ্রুপ ত্রিদিব।’
ত্রিদিব এখন কেন এল ওর লাইফে? ও তো সবকিছু মোটামুটি গুছিয়েই এনেছিল।
–‘এক্সকিউজ মি’।
কলেজের গেটে ঢোকার মুখে নীহারিকা তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে তাকে ডাকছে। প্রায় পাঁচ এগারো হাইট। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চোখে একটা রিমলেস চশমা। দেখেই বোঝা যায় পাওয়ার নেই, শুধু স্টাইল মারার জন্য পড়া। এই এক হয়েছে এখন লেটেস্ট ফ্যাশন। ‘কহো না প্যার হ্যায়’ রিলিজ করার পর ছেলেগুলোর যে কি হল, সবাই নিজেকে হৃতিক রোশন ভাবতে শুরু করেছে। জিম করে বাইসেপ বানানোর দিকে যত উৎসাহ। সঙ্গে ট্রিম করা দাড়ি আর কারণে অকারণে একটা করে রিমলেস ফ্রেমের চশমা। অবশ্য ও আর কাকে কী বলছে, বছর দুয়েক আগে ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ রিলিজ করার পর কাজল স্টাইলে ছোট করে চুল কেটে যখন বাড়িতে পৌঁছেছিল মা প্রায় মূর্ছা যায়। বাবা ওই ছোট চুলেই খুব কায়দা করে গ্রিপ করে মুঠি ধরে উত্তম মধ্যম দিয়েছিল। তারপর থেকে অবশ্য ও আর চুল ছোট করেনি। শুধু কি ও, ছেলেগুলোও কি কম শাহরুখ খানকে নকল করত? ‘কুল’ লেখা লকেট, ছোট স্কিন টাইট টি শার্ট, হাতে ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড। আর কারও নাম রাহুল হলে স্কুলে কলেজে তার কদর ও কেতা ছিল দেখার মতো। তবে হৃতিক এখন ইন। আর এই ছেলেটাকেও নতুন স্টাইলে খুব একটা খারাপ লাগছে না।
–বলুন।
–আপনি প্রিয়াঙ্কাদের ক্লাসে পড়েন না?
–কোন প্রিয়াঙ্কা?
–প্রিয়াঙ্কা দাস। বাঘাযতীনে বাড়ি।
–হ্যাঁ, কেন?
–একটা চিঠি ওকে দেওয়ার ছিল। আপনি একটু ওকে দিয়ে দেবেন প্লিজ?
–ও, মানে আমি পায়রা? মেসেঞ্জার?
–না, মানে একটু দিয়ে দিতে পারলে ভালো হয়।
ছেলেটা একটু ক্যাবলা হাসি হেসে বলল।
নীহারিকা দেখল ছেলেটা একটু আমতা আমতা করছে। টেনশনে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে।
–আমি কেন দেব? আপনি নিজেই তো দিতে পারেন।
–না মানে, আমি দিলে যদি মুখের সামনে ছিঁড়ে ফেলে, কষ্ট হবে। তার থেকে যদি আড়ালে ছিঁড়ে ফেলে তো কষ্ট হবে, কিন্তু অতটা হয়তো হবে না।
–বুঝেছি। সাজেগোজে হৃতিক হলেও টেনশনে কার্তিক হয়ে গিয়ে ঘাবড়ে ঘ হয়ে বসে আছেন, তাই তো? দিন চিঠিটা, দিয়ে দেব। কী নাম বলব?
–ইকোনমিক্স কোচিঙের ত্রিদিব বললেই বুঝবে।
নীহারিকা উচ্চ মাধ্যমিক পাস্ করে দক্ষিণ কলকাতার একটি নামকরা কলেজে কমার্স নিয়ে পড়তে ঢুকেছে এই বছর। সবে তিন চার মাস হয়েছে, তবে এর মধ্যেই নতুন কলেজের প্রেমে পড়ে গিয়েছে ও। বন্ধুবান্ধব, আড্ডা, হৈ হুল্লোড় সঙ্গে লেক, গড়িয়াহাট, দক্ষিণাপণ, নজরুল মঞ্চের সোশ্যাল, সাউদার্ন এভিনিউ-এর বুলেভার্ড, সব মিলিয়ে কলেজ জীবন জমজমাট। একটা ছোট বন্ধু গ্রুপও হয়েছে। দিতি, শর্মিষ্ঠা, প্রিয়াঙ্কা, অভিজিৎ, সায়ন আর ও। আজ সবাই মিলে মেনকায় ম্যাটিনি শোয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। তার মধ্যে এই চিঠি।
‘এই নাও রাজকন্যা, তোমার জন্য রাজপুত্র পায়রার মাধ্যমে প্রেমবার্তা পাঠিয়েছে।’ নীহারিকা ক্লাসে ঢুকে প্রিয়াঙ্কার হাতে চিঠিটা ধরিয়ে দিয়ে বলল।
‘হায়’, নাটকীয় ভঙ্গিমায় বুকে হাত রেখে প্রিয়াঙ্কা বলল– ‘কোন রাজপুত্র গো পায়রা? কোন দেশে তার বাস? কী তার নাম?’
–কুমার ত্রিদিব গো রাজকন্যে। সেই সুদূর তারাতলা প্রদেশে, যেখানে তুমি অর্থনীতি নামক অর্থহীন একটা বিষয় পড়তে যাও, সেই কোচিং রাজ্যে তার বাস।
‘ও ওই চশমাধারী হৃতিকরূপী কার্তিকটা?’ হেসে উঠল প্রিয়াঙ্কা। ‘যে খালি আমতা আমতা করে। ওর থেকে তো ডালহৌসি-আমতা রুটের কন্ডাক্টার কম আমতা আমতা করে।’
নীহারিকা হাসতে হাসতে বলল— ‘হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস, কার্তিকই বটে। আমাকে একটা চিঠি দিতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে যা অবস্থা হল, তুই সামনে থাকলে যে কী করে বুঝতেই পারছি।’
–কাটা, এখন বল শো টাইমিং কটায়?
–কিন্তু ও যে রিপ্লাই এক্সপেক্ট করছে।
–আমি সময়মতো রিপ্লাই দিয়ে দেব। তুমি সেই রিপ্লাই নিয়ে উড়ে যেও পায়রা।
নীহারিকা চিঠি নিয়ে উড়ে গেছিল। বাস্তবিকই উড়ে যাওয়া যাকে বলে। নীহারিকার ব্যাগের ভেতরের কোনও গোপন চিঠি অটোড্রাইভার দেখতে পেয়েছিল কিনা ও জানে না, কিন্তু সেদিন অটোওয়ালা ওকে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে ফেলেছিল দক্ষিণাপণের গেটের সামনে। সকালে প্রিয়াঙ্কা ওকে ফোন করেছিল– ‘এই শোন্, তুই কলেজে আসবি আজকে?’
–হ্যাঁ আসব। ডিজির ক্লাস আছে। কেন?
–ওসব ক্লাস ফ্লাস করতে হবে না, তুই রিপ্লাইটা নিয়ে ত্রিদিবের সঙ্গে দেখা করবি আজকে। আমি আড়াইটার সময় ওকে দক্ষিণাপণের সামনে আসতে বলেছি। ও বলেছে থাকবে।
–পাগল নাকি? আমি এসব ঝামেলায় নেই। তোর ম্যাও তুই সামলা গে যা।
–ধুস ভুলভাল বকিস না। আজ অভির সঙ্গে ডেট দেওয়া আছে, লেকে মিট করব। তারপর অভি বলেছে বাইকে করে ঘোরাবে। আর আইসক্রিম খাওয়াবে।
–তুই পুরো দু নম্বরি মহিলা। নিজে মুখে না বলতে পারবি না বলে বাহানা করছিস।
–প্লিজ প্লিজ এই কাজটা করে দে। কথা দিচ্ছি বাদশার চিকেন রোল খাওয়াব।
নীহারিকা চিঠিটা নিয়ে যখন দক্ষিণাপন পৌঁছল তখন প্রায় পুরো আকাশ কালো তেরপলে ঢাকা। এইখান থেকে দিগন্ত বলতে যেটুকু দেখা যায় তাতে মনে হচ্ছে সাদা কাগজে জল ঢেলে কেউ যেন এক পোচ কালো রং টেনে দিয়ে গেছে আকাশের বুক চিরে, আর সেই কালো রং পাতার জল চুইয়ে নিচে মাটির দিকে নেমে আসছে। এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। নীহারিকাও দ্রুত গতিতে পা চালাল। ক্লাস কাট মেরে এসব হ্যাপা, তারপর যদি বৃষ্টিতে ফেঁসে যায়। ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই ও ছেলেটাকে দেখতে পেল। কী যেন নাম বলেছিল? হ্যাঁ মনে পড়েছে।
–হাই ত্রিদিব।
–হেলো। কেমন আছেন?
–আমি ভালো। আপনি?
–ভালো আছি। আপনি এখানে?
নীহারিকা একটু ঘাবড়ে গেল। তার মানে প্রিয়াঙ্কা কিছুই বলেনি যে চিঠি নিয়ে কে আসবে? কি বজ্জাত মেয়ে রে বাবা! দেখা হোক একবার, মজা টের পাওয়াবে ওর। ও নিজে এবার একটু আমতা আমতা করে বলল— ‘না মানে, প্রিয়াঙ্কা আমাকে এখানে আসতে বলল তোমার সঙ্গে দেখা করতে। ও কিছু একটা চিঠি দিয়েছে তোমাকে।’
হঠাৎ করে ঘাবড়ে যাওয়ার একটা মস্ত সুবিধে আছে, ফরম্যালিটিগুলো মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়। ঘাবড়ে গিয়ে নীহারিকার ত্রিদিবকে আপনি বলার ফরম্যালিটিটা কখন যে দুম করে উধাও হয়ে গেল ও নিজেও বুঝতে পারল না।
‘ও আচ্ছা’। ত্রিদিব একটু থেমে বলল— ‘তোমার কাছে কি আছে চিঠিটা?’
নীহারিকা ব্যাগ থেকে চিঠিটা ওর হাতে দেওয়ার পর বুঝতে পারল ওদের দুজনের মধ্যেই আপনি বলার ফরম্যালিটিটা বৃষ্টির আগে আসা ঝোড়ো হওয়ার সঙ্গে বাতাসে খেলে বেড়ানো একটা চিপসের প্যাকেটের মতো উড়তে উড়তে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে।
ও দেখল ত্রিদিব চিঠিটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। তবে কি প্রিয়াঙ্কা চিঠিতে অনেক কিছু লিখেছে? একটা না বলার জন্য এত লেখার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা নয়। ও নিজে যখন আবিরকে না বলেছিল তখন শুধু ‘না’ শব্দটাই ব্যবহার করেছিল।
বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর একসময় ত্রিদিব একটু মুচকি হেসে বলল— ‘আমার কেস ক্লোসড।’
‘না বলেছে?’ নীহারিকা না জানার ভাব দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল।
–ইয়েস, বাট তোমাকে এতদূর কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি।
–না ইটস ওকে। রাদার আয়াম সরি, আমি তোমার জন্য লাকি নিউজ নিয়ে আসতে পারলাম না।
–প্লিজ ডোন্ট বি। আমারই ব্যাড লাক।
নীহারিকার এবার সত্যিই কষ্ট হল ছেলেটার জন্য। আর প্রিয়াঙ্কার ওপর রাগ। বলিহারি যাই, কে একটা বলল বাইকে করে ঘুরতে নিয়ে যাবে আর আইসক্রিম খাওয়াবে, অমনি ড্যাং ড্যাং করে যেতে হবে? ছেলেটাকে দেখে খারাপ তো মনে হচ্ছে না, না বলার মতো তো নয়ই। ও নিজেই এবার সিচুয়েশন একটু হালকা করার জন্য বলল— ‘এককাপ কফি খাবে?’
‘সরি?’ ত্রিদিব অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দিল।
নীহারিকা বলল— ‘যদি অসুবিধে না থাকে তো এককাপ কফি খাওয়া যেতে পারে?’
–হ্যাঁ যেতেই পারে। কোথায় যাবে বলো?
–কোথাও না, এই সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই।
সামনে পুজো। দক্ষিণাপণে এই সময় কর্মব্যস্ত সময়। তার মধ্যে আজকে বোধহয় মধুসূদন মঞ্চে কিছু একটা অনুষ্ঠান আছে, তাই অন্যদিনের তুলনায় ভিড়টা একটু বেশি। ত্রিদিব একটা চাওয়ালাকে ডেকে দুটো কফি নিল।
–সরি তোমার নামটাই জানা হয়নি।
–আমার নাম নীহারিকা। তোমার তো ত্রিদিব।
–হ্যাঁ। তোমার বাড়ি কোথায়?
নীহারিকা কিছু উত্তর না দিয়ে হঠাৎ উল্টো দিকে ঘুরে গেল। সিঁড়িতে মনি কাকিমা। সর্বনাশ! একবার দেখলে কে কি কেন ওসব কিছু না জিজ্ঞেস করেই সারা আত্মীয়মহলে খবর ছড়িয়ে দেবে যে, মিমি দক্ষিণাপণে কলেজ কাট মেরে একটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে।
‘নীহারিকা আমি কি তোমায় ভুল কিছু বললাম?’ নীহারিকার হঠাৎ দিক পরিবর্তনে ত্রিদিব ঘাবড়ে গেল।
‘না, তুমি সামনে এসো।’ পেছন না ঘুরে বলল ও।
‘কী হল? তুমি অমন করে হঠাৎ ঘুরে গেলে?’ ত্রিদিব সামনে এসে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল।
–আমার এক কাকিমা পেছনে। অফ হোয়াইট ঢাকাই পরে। দেখতে পেলে রক্ষে থাকবে না। তুমি এক কাজ করো, তুমি সিঁড়িতে বসে পড়ো।’
–কেন?
–যা বলছি তাই করো।
ত্রিদিব সিঁড়িতে বসতেই নীহারিকা ব্যাগ থেকে একটা ছাতা খুলে ত্রিদিবের পাশে বসে পড়ল। মনি কাকিমাকে আড়াল করতে এক ছাতার নিচে দুজনে।
আর ঠিক সেই মুহূর্তে এক ফোটা দু ফোটা করতে করতে দিগন্তের দিকে ধেয়ে আসা মেঘটা থেকে বৃষ্টিটা নেমেই পড়ল।
নীহারিকার আজ কাজে আর মন বসল না। দুটো মিটিং ক্যানসেল করল, একটা কল পোস্টপোন করল। ডেস্ক থেকে বারে বারে দৃষ্টি চলে যাচ্ছিল আকাশ থেকে নেমে আসা মেঘের দলের ওপর। ঘন, মিশকালো, যেন একদল ঘোড়া ক্ষুর ছুটিয়ে ধেয়ে আসছে ওরই দিকে। ওর মনে হল মেঘের যদি কোনও নাম রাখা যেত তাহলে ও তার নাম রাখত অতীত। যে এসে নিয়ে যাবে ওকে সেই দিনগুলোয়। পরক্ষণেই মনে হল, সেই গ্রাস বড্ড যন্ত্রণার। আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরোতেও পারবে না, বসের একটা ট্র্যাকার নিয়ে আপডেট দেওয়ার আছে। অফিস শেষ না হওয়া অবধি সেই যন্ত্রণাটা নিয়েই বসে থাকতে হবে। ও জানালা দিয়ে দেখতে লাগল মেঘটা ক্রমশ ওদের অফিসের মাথায় এসে পড়ল। দিতিকে ফোন করল ও— ‘তুই ওকে কেন অ্যাড করেছিস?’
–কাকে?
–ন্যাকামো মারিস না।
–বারে, কলেজের ছেলে কলেজের গ্রুপে অ্যাড করব না?
–দেন আই উইল লিভ দিস গ্রুপ। আমি চাই না আমার নম্বর ওর কাছে থাকুক। আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গো ব্যাক টু মাই পাস্ট।
–পাগলামো করিস না নিহার।
–আয়াম নট জোকিং দিতি।
–আমি পরে এই নিয়ে কথা বলব তোর সঙ্গে, এখন আমার ক্লায়েন্ট মিটিং আছে। আমি রাখছি।
নীহারিকার ইচ্ছে হল ফোনটা ছুড়ে ফেলে দেয়। বাইরে তাকিয়ে দেখল সেই ঘোড়ার ক্ষুরের আঘাতে কালো ধোয়া হয়ে ওঠা মেঘটা একদম ওর মাথার ওপর চলে এসেছে। ওর মনে হল একটু পরেই হয়তো ওর মাথায় ভেঙে পড়বে আর ওকে নিয়ে যাবে দশ বছর আগেকার দক্ষিণাপণের সিঁড়িতে।
নীহারিকা ডানদিকে একটু চেপে বসল। বাঁদিকে ছাটটা আসছে। ওর এই ছাতাটা একজনের মতোই কিন্তু মনি কাকিমার নজর থেকে বাঁচতে দুজনে কোনওরকমে আঁটোসাঁটো হয়ে বসে। এটা বর্ষার শেষ, কিন্তু তাতেও মাটির গন্ধটা স্পষ্ট। সঙ্গে ও আরেকটাও অচেনা গন্ধ পেল, যেটা আগে কখনও পায়নি। ঘাম, সিগারেট আর পারফিউম মেশানো একটা মাদকের গন্ধ।
‘আমরা কি শেডের তলায় গিয়ে দাঁড়াতে পারি? তুমি তো ভিজে যাচ্ছ।’ ত্রিদিব বলেছিল।
‘না, উঠলেই কাকিমা দেখে ফেলবে।’ নীহারিকা জবাব দিয়েছিল।
–কিন্তু বৃষ্টি তো বাড়ছে, এবার তো সিঁড়ি দিয়ে জল গড়াবে। তুমি এক কাজ করো, সোজা ওঠো, আমরা মেন্ গেটের দিকে যাই, তারপর তোমাকে বসে তুলে দিই।’
নীহারিকা না করেনি। থ্রি ফোল্ডের একটা ছোট্ট ছাতায় ওরা প্রায় গা ঘেষাঘেষি করে এগিয়ে গিয়েছিল গেটের দিকে। তারপর বাস স্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ। বাস আসতেই নীহারিকা একটা ছোট্ট বাই বলে উঠে গিয়েছিল বাসে। ওঠার সময় ত্রিদিবের চশমায় বৃষ্টির ছাঁটের জল বিন্দুকে উপেক্ষা করে দেখেছিল এক জোড়া ভেজা পায়রা, ওর মনে হয়েছিল যেন কিছু একটা বার্তা নিয়ে ওর দিকেই উড়ে আসার জন্য ছটফট করছে।
বার্তা নিয়ে ত্রিদিবের পায়রা উড়ে আসেনি, ওই ছুটে গিয়েছিল তারাতলার ইকোনমিক্স কোচিংয়ে। আস্তে আস্তে ত্রিদিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে লাগল। শুধুমাত্র কোচিং ফ্রেন্ডের ট্যাগলাইনে আটকে না থেকে ওরা গভীর বন্ধু হয়ে উঠল। তুমি বলার ফরম্যালিটিটাও আরেক বিকেলে এক কালবৈশেখীর হাওয়ায় উড়ে গিয়ে ততদিনে তুই হয়ে গেছে। কখনও কোচিং কাট মেরে নিউ আলিপুরে একসঙ্গে ভেলপুরি, কখনও বা ট্রামে চেপে বেহালা-জোকা-বেহালা— নীহারিকার একদিন মনে হল এবার ত্রিদিবকে প্রপোজটা করে ফেলতেই হবে। এবং সেটা পরেরদিনই, কোচিং শেষ হয়ে যাবার পর।
আগেরদিন রাতে নীহারিকার ঘুম হল না। সারারাত বিছানায় এপাশ ওপাশ করল। ত্রিদিবের জন্য একটা কার্ড কিনেছিল ও। তাতে একটা কবিতা লিখেছিল। সারারাত ভেবেছিল ত্রিদিবের পছন্দ হবে তো কবিতাটা? না হলে ও ঠিকই করে রেখেছিল একটা কিস করবে ওকে। সবার দ্বারা তো কবিতা হয় না, তবে কিসটা হয়তো ওর দ্বারা হবে।
পরেরদিন সকালে ও কনফার্ম হওয়ার জন্য একটা ফোন করল ত্রিদিবকে– ‘আজকে আসবি তো?’
সারা কোচিং ক্লাস জুড়ে ইকোনমিক্স নীহারিকার মাথার কয়েকশো হাত ওপর দিয়ে গেল। কোচিং শেষে ত্রিদিব আস্তে করে ওকে ডাকল– ‘সাইডে আয়। কথা আছে।’
নীহারিকার বুক ধড়ফড় করতে শুরু করল। মনে হচ্ছিল ওর বুকের ভেতর একঝাঁক পায়রা দাপাদাপি করছে। এতটাই যে দু একটা ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসে ফড়ফড় করে এদিক ওদিক উড়ে গেলেও আশ্চর্য হত না। ত্রিদিব কি তবে বুঝতে পেরে গেছে ও কী বলতে চায়?
‘একটা কথা বলব?’ ত্রিদিব বলল।
নীহারিকার প্রায় দমবন্ধ হয়ে আসছে। কিছু কিছু অব্যক্ত কথাও কি তবে দমবন্ধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়? ও জিজ্ঞেস করেছিল– ‘কী?’
–প্রিয়াঙ্কা আজ আমায় প্রপোজ করেছে, কোচিং আসার আগে। আমি কি করব বুঝতে পারছি না। আমি যখন ওকে প্রপোজ করেছিলাম ও তখন ডিনাই করেছিল। এখন আমার কি ডিনাই করা উচিত?
একেকটা সময় যখন পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায় তখন নিজেকে খুব হালকা মনে হয়। মনে হয় কোনও টান নেই, কোনও ডেস্টিনেশন নেই। কোথাও যাবার নেই। আবার সেই একই সময়ে নিজের পা দুটোকে এতটাই ভারী লাগে, মনে হয় যেন কেউ শক্ত শেকড়ে আঁকড়ে রেখে দিয়েছে। পালাবার ইচ্ছে থাকলেও উপায় যে নেই। নীহারিকারও তাই মনে হচ্ছিল। ও পালতে চাইছিল। মনে হচ্ছিল বসন্তের এই হাওয়া, নিউ আলিপুরের এই গলি, জোকা রুটের ওই ট্রামের সিট্ দুটো, ওর ব্যাগের ভেতরে ত্রিদিবের জন্য কেনা কার্ড, তাতে লেখা কবিতা, সব মিথ্যে। সব সব মিথ্যে। এমনকি এই মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে জীবনটাও মিথ্যে। কিন্তু ও পালতে পারছিল না। শুধু কান্নাটাকে কোনওরকমে চেপে ও বলেছিল– ‘তুই যা ভালো বুঝবি।’
ত্রিদিব তার চাতকের মতো অপেক্ষা করে থাকা প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেওয়াটাকেই ভালো বুঝেছিল। নীহারিকা আস্তে আস্তে সেই ছায়াপথ থেকে সরে এসেছিল। তারপর একসময় হারিয়ে গিয়েছিল সময়ের ছায়াপথে। কলেজ থেকে বেরিয়ে চার্টার্ড একাউন্টেন্সি নিয়ে পাশ করার পর ও চলে গিয়েছিল মুম্বাই। তারপর কিছুদিন গুরগাঁওয়ে থাকার পর আবার ব্যাক টু কলকাতা। রাসবিহারীতে নিজের পৈতৃক বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বারো তলায় লেক ফেসিং একটা ফ্ল্যাট নিয়েছিল সাদার্ন এভেন্যুতে। বাকিদের কাছে ওটা ইনভেস্টমেন্ট হলেও, ও জানে ফ্ল্যাটটা আসলে তিরিশ অতিক্রান্ত অবিবাহিতা একটি মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাড়িতে অশান্তি এড়ানোর জন্য।
ব্যালকনি থেকে নীহারিকা উঠে পড়ার ঘরে এল। পুরনো বইয়ের তাক ঘেঁটে তেরো বছর পুরনো একটা গ্রিটিংস কার্ড বের করে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে খুব কাঁদল। তারপর একবাটি স্যালাড খেয়ে শুয়ে পড়ল। ফোন সুইচড অফ থাকায় সে রাতে ও ত্রিদিবের মেসেজ পেল না।
‘কেমন আছিস নিহার? আমি জানি তুই আমাকে ভুল বুঝবি, কিন্তু আমি তোকে কোনও একপ্ল্যানেশন দেব না। শুধু তোকে হার্ট করার জন্য খুব সরি।’
‘আমি তোর সঙ্গে অনেকবার কন্ট্যাক্ট করার চেষ্টা করেছি, বাট পারিনি।’
‘যদি বন্ধু বলে মেনে থাকিস কোনওদিন তাহলে প্লিজ ফরগিভ মি, অ্যান্ড দেখা কর।’
টুং টুং করে পরপর অনেকগুলো মেসেজ ঢুকল নীহারিকার মোবাইলে। কী চাই ত্রিদিবের? প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে যে দু বছরের মাথায় ব্রেক আপ হয়ে গিয়েছিল সে খবর ও দিতির কাছ থেকে পেয়েছিল। কিন্তু ও ছুটে যায়নি ত্রিদিবের কাছে। হয়তো অভিমানে, হয়তো বা অন্য কোনও কারণে। সেটা ও নিজেও জানে না।
‘ওহ কম অন নিহার, দেখা করতে চাইছে তো দেখা কর না।’ দিতি বলল। দিতির কাছে ও কোনও কথা লুকায় না। আজও ত্রিদিবের মেসেজের কথাগুলো বলেছিল নীহারিকা। ‘দেখা করলেই তো আর প্রেম করতে হবে না। জাস্ট পুরনো ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখা কর।’
–আর আমার যন্ত্রণাগুলো?
–যন্ত্র আর যন্ত্রণা দুটোতেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরচে পড়ে যায়। বুঝেছিস পাগলি?
ও মেসেজ ব্যাক করল— ‘কোথায় দেখা করবি?’
অনেকদিন বাদে দক্ষিণাপণে এল নীহারিকা। এখন তো আর শপিং করতে আসাই হয় না, সবই অনলাইন। আর তাছাড়া মাঝখানের অনেকটা সময় ও বাইরে ছিল। আজ প্রায় আট বছর বাদে এখানে এল। আর এত বছর বাদে ত্রিদিবকে চিনতে পারল এক দেখাতেই।
‘কেমন আছিস নিহার?’ নরম গলায় বলল ত্রিদিব।
‘ভালো, তুই?’ নীহারিকা লক্ষ করল ত্রিদিব আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে। চুলের কায়দাটা একই আছে, আর দাড়িটাও সেই হৃতিক মার্কা। শুধু চশমায় রিমলেশের চারিপাশে একটা ফ্রেম বসেছে।
–বদলাইনি। কফি খাবি?
আজকে আবার মেঘটা ঘোড়া সেজে ধুলো উড়িয়ে ছুটে আসছে। আবার মনে হচ্ছে আকাশে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে আর বাচ্চারা ক্যানভাসে জলরঙে পোচ লাগিয়েছে। সময়ের সঙ্গে মানুষ বদলে যায়, কফি কাপ বদলে যায়, দক্ষিণাপণের সিঁড়িগুলো বদলে যায়, শুধু মেঘেরা বোধহয় সময়কে একই জায়গায় ধরে রাখার ঠিকে নিয়ে রেখে দেয়।
–আজকে কারও চিঠি আনিসনি আমার জন্য?
নীহারিকা হালকা হাসল– ‘চিঠির প্রতি তোর একটা বায়াসনেস আছে। সবার চিঠি কি তুই পড়িস?’
কথাটায় যে ঠেস ছিল সেটা ত্রিদিব বুঝতে পেরে বলল– ‘তুই সেদিন কোনও চিঠির কথা বলবি বলছিলি, আমিই বুঝতে পারিনি।’
‘ডাজন্ট ম্যাটার। মোর দ্যান টেন ইয়ার্স নাও।’ নীহারিকা কফিতে চুমুক দিল।
–তুই কী বলতে চেয়েছিলি আমি সেটা অনেক পরে রিয়েলাইজ করেছিলাম। কিন্তু তখন অনেক লেট হয়ে গেছে। প্রিয়াঙ্কা তখন আমার লাইফে জাঁকিয়ে বসেছে। আমি তখন না পারছি থাকতে না পারছি বেরোতে। পরে আমার মনে হয়েছে ওর সঙ্গে আমার রিলেশন ব্রেকাপ হওয়ার একটা কারণ বোধহয় তোর আমার থেকে দূরে চলে যাওয়া।
–এখন একথা আসছে কেন। আমরা তখন অনেক ছোট ছিলাম, ইমম্যাচিওর্ড। তখন যার যেটা মনে হয়েছে করেছে। সেটা নিয়ে এতদিন পরে তো কথা বলার কোনও মানে নেই। বেশ করেছিস প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে প্রেম করেছিস, এতে খারাপ লাগার কি আছে?
–আমি তোকে হার্ট করতে চাইনি। আর সেই কথাটাই তোকে বলব বলে ওয়েট করছিলাম। এতদিন ধরে তোর মুখোমুখি হওয়ার স্কোপ পাইনি। আজ সামনাসামনি বলতে পেরে খুব হালকা লাগছে। আমাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ।
বৃষ্টিটা এক দু পা করে আসতে আসতে একেবারে যখন দোরগোড়ায় এসেই পড়ল নীহারিকা তখন ছাতাটা খুলল। আরেকটু চেপে বসল ত্রিদিবের পাশে। ‘বিয়ে করেছিস?’
–না, তুই?
–ওই জন্যই চান্স মারতে চলে এলি বল। যদি ফ্রি থাকি?
–বিয়ে করলেও চান্স মারতে আসতাম।
–জানোয়ার, তুই সত্যিই পাল্টাসনি।
–আজকেও কি তোর কোনও কাকিমা মাসিমা আছে এখানে?
–থাকতে পারে।
–ভয় করছে?
–সেদিনও করেনি।
–তাহলে আড়াল করে বসেছিলি কেন সেদিন?
নীহারিকা কিছুক্ষণ থেমে বলল— ‘তোকে চুমু খাব বলে। শুধু সাহস করে বলতে পারিনি সেদিন।’
এরপর নীহারিকা উপলব্ধি করল ওর ঠোঁট দুটোয় ভীষণ জ্বালা। কথা বলতে গিয়েও পারছে না, সেলোটেপের জায়গায় শক্ত করে আটকে বসে আছে ত্রিদিবের ঠোঁট। বৃষ্টির যে বেগ বাড়ল, আশেপাশ যে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে এল, বৃষ্টির ছাঁটে যে ওদের জামাকাপড় ভিজে প্রায় চুপচুপে হয়ে গেল, সেসব ওরা কিছুই বুঝতে পারল না।
নীহারিকা জিজ্ঞেস করল— ‘একটা কথা বলব?’
–বল।
–তোকে তেরো বছর আগে বলব ভেবেছিলাম। সময় আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। হয়তো সময়ও সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল।
–কী কথা?
–কলেজে পড়ার সময় আমি কবিতা লিখতাম। কিন্তু এটার পর আর লিখিনি। এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। কারও জন্য একটা গ্রিটিংস কার্ডে লিখেছিলাম, কিন্তু সেই কার্ডটা তাকে কোনওদিন আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি।
‘আর দিতেও হবে না, শুধু শুনিয়ে দে।’ ত্রিদিব বলল।
নীহারিকা একটু মিষ্টি হেসে নিজের মাথার ওপর থেকে ছাতাটা সরিয়ে বৃষ্টি ভিজতে ভিজতে বলল—
‘আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে কালো
লাজের সঙ্গে আজ করেছি আড়ি,
মেঘ তুমি আজ হও আরও জমকালো
আজকে আমি যাব তাহার বাড়ি।
ঘ্রাণ নেব তার কলার চাপা গলার
মুখ লুকোব বোতাম ছেঁড়া জামায়,
ঠোঁট ফুলাব অভিমানের সুরে
মেঘ নিয়ে যাও সেইখানেতে আমায়।
তোমায় দেব আমার চোখের সব
চোখের হাসি কিংবা চোখের জল,
আমার কথা বলব না আজ নিজে
সেই কথা মেঘ বলবে অনর্গল।
আমার কথা বলবে মেঘের জল।’