প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী
২০০০-এর ৮ই মার্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের বান্ধবীকে সদ্যই আগের দিন জীবনসঙ্গী হিসাবে পেয়ে বোলপুর থেকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসে বাতানুকূল কামরায় চেপে বসেছি। হঠাৎ গুঞ্জন। শান্তিনিকেতনের ‘মোহর’ কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঐ কামরাতেই তোলা হল, গুরুতর অসুস্থ, যাচ্ছেন কলকাতায় চিকিৎসার কারণে। গেলেন বটে, ফিরে আর এলেন না আশ্রমকন্যা তাঁর আলয়ে। অনন্তের যাত্রাপথে প্রথম পর্বের সেই সঙ্গের অনুষঙ্গ আজও জারিত করে এক অব্যক্ত বিষণ্ণতায়। আশ্রয় খোঁজে যাদুকণ্ঠে— ‘বাজে করুণ সুরে…’।
আশ্রমিক ঘরানায় নিষ্ঠ মোহরকণ্ঠের ব্যাপ্তি নিঃসন্দেহে আমাদের নাগরিক শ্রবণে বিশিষ্ট মাত্রা আনে, আমরা, অর্থাৎ যারা উদাত্ত সুচিত্রা-দেবব্রতয় স্বাচ্ছন্দ্য টানতেই অভ্যস্ত সাঙ্গীতিক ইমেজারি রচনায়। অন্যদিকে পাঁচমিশালি নগরযাপনের অনিবার্য প্রবণতায় বিবিধ ক্ষেত্রে চারণ কখনও কখনও প্রণোদিত করে ক্ষেত্রের অধিক্রমণে ক্ষেত্রান্তরে প্রতিষ্ঠার আয়েশি ভাবনায়। কণিকা কণ্ঠশিল্পী হিসাবে আমাদের হৃদয়ে প্রোথিত রবীন্দ্রগানেই। তথাপি একটি বইতে মুদ্রিত দুর্লভ এক ছবি চেতনায় নড়িয়ে দিল তেমনই প্রবৃত্তি, ১৯৮৪-র মাঝামাঝি সময়ের যে ছবিতে ফ্রেমবন্দি কণিকা, সবিতা ও সলিল চৌধুরীর সঙ্গে। আসলে ছবির অনুষঙ্গে প্রথমে মন ভিজল পুরনো এক ইতিহাসে। পাঁচের দশকের শুরুর দিকে সঙ্গীতকার হিসাবে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সলিল দুটি বাংলা আধুনিক (বেসিক) গান ‘আমার কিছু মনের আশা, কিছু ভালোবাসা’ এবং ‘প্রান্তরের গান আমার মেঠো সুরের গান আমার’ নিয়ে এইচএমভি-র তরফে একটি ৭৮ ইপি রেকর্ডের প্রস্তাব কণিকার কাছে পেশ করলে তিনি সানন্দে অনুমতি দেন। মোহরের স্মৃতিচারণাতেই জানা যায়, টেস্ট রেকর্ডিং-এর যাবতীয় বিধিবদ্ধ কার্যক্রমও সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। চূড়ান্ত রেকর্ডিং-এর আগে আগাম ইঙ্গিত ছাড়াই সলিলের ওপর বজ্রপাত নিয়ে এল কণিকার চিঠি। তিনি লিখছেন, শান্তিনিকেতনের কিছু গোঁড়াপন্থী আশ্রমিক বাদ সেধেছেন কণিকার এই ‘অন্যধারা’র গান গাওয়ায়। এমনকী, প্রচ্ছন্ন হুমকিও ছিল, সলিল চৌধুরীর মতো ‘কমিউনিস্ট’-এর গান জনসমক্ষে গাইলে হয়তো তাঁকে শান্তিনিকেতনও ছাড়তে হবে। আজীবন রাবীন্দ্রিক আশ্রমচেতনায় সিক্ত মোহর এই দুটি গান গাওয়ার ‘অপরাধে’ এত দূর মূল্য দিতে স্বভাবতই রাজি নন। তাই কুণ্ঠিতচিত্ত কণিকা চিঠির শেষে বেদনার্ত তাঁর গাওয়ার অপারগতায়।
আসলে ঘটনাক্রমের ধারা বোধহয় নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল কয়েক বছর আগেই। ’৪৩-এর মন্বন্তর-পীড়িত লক্ষ ক্ষুধার্তের শহুরে রাজপথে সামান্য ফ্যানের প্রত্যাশী মিছিলে বিপন্ন সলিল গণনাট্যের মঞ্চেই লিখে ফেলেছিলেন ‘সেই মেয়ে’, যে গান আদপে রবীন্দ্রনাথের ‘কৃষ্ণকলি’-রই সিক্যুয়েল… প্রবল রাষ্ট্রসঙ্কটে নান্দনিক প্রত্যুত্থানে। রবীন্দ্রনাথের গানে প্রাক্-দুর্ভিক্ষ গ্রামবাংলার নিস্তরঙ্গ কৃষিজীবনের যে চিত্রকল্প গ্রাম্যনারী কৃষ্ণকলির বারোমাস্যায় বিধৃত, মন্বন্তরজনিত দুর্যোগে শিকড়চ্যুত সেই নারীকেই উত্তরকালের সলিল প্রতিস্থাপিত করেছিলেন নগরের পথে পথে মৃত্যুমিছিলের হাহাকারে। গণনাট্যের মঞ্চেও সলিল সুচিত্রাকে দিয়ে গাওয়াতেন পর পর ‘কৃষ্ণকলি’ ও ‘সেই মেয়ে’, সম্ভবত ইতিহাসের পারম্পর্যে সময়ের আর্থ-সামাজিক সংকটকে স্পষ্টমাত্রায় তুলে ধরতে। কিন্তু ১৯৫০-এ সুচিত্রা মিত্রের কণ্ঠে ‘সেই মেয়ে’ রেকর্ডবন্দি হয়ে বাজারে বেরোলে, শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথপুত্র স্বয়ং রথীন্দ্রনাথ তৎকালীন শান্তিনিকেতনের মাটিতে রেকর্ডের একটি ডিস্ক প্রকাশ্যে ভেঙে শ্লাঘাবোধ করেছিলেন, অন্তত রবীন্দ্র ঐতিহ্য রক্ষিত হল! দূর্ভাগ্যজনক, এক বিশেষ চিত্রকল্পের অনুষঙ্গ যে অপর চিত্রকল্পের উত্তরণে পূর্বসূরীর প্রতি উত্তরপ্রজন্মের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনেরই সমার্থক, প্রাজ্ঞ আশ্রমবাসীরা তা অনুভবের ব্যর্থতায় ঘটনাটিকে প্যারোডির বাঁধা ছকেই ফেলে দিয়েছিলেন! আসলে চূড়ান্ত প্রাতিষ্ঠানিক মনোবৃত্তির বাঁধা গতের ছকে আটকানো কিছু ধারণার বাইরে গিয়ে খানিক উদার আকাশের ভাগীদার হওয়া হয়তো শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক যাপনের ঐতিহ্যে সম্ভবপর ছিল না। আর ছিল না বলেই ‘সেই মেয়ে’-র মতো সৃষ্টিধর্মী সঙ্গীত তাঁদের দৃষ্টির পরিসরে রবীন্দ্র-বিকৃতিরই নামান্তর ছিল। তাছাড়া অপ্রিয় হলেও এ কথা বাস্তব যে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার সরকারী অনুমোদনের প্রক্রিয়া তখন প্রশাসনিক স্তরে সক্রিয়। প্রবল কমিউনিস্ট বিরোধিতায় অবতীর্ণ তৎকালীন নেহেরু সরকারের কাছে সমদৃষ্টিভঙ্গিগত বার্তা পৌঁছে দেওয়াও হয়তো ছিল আশ্রমবাসীদের দায়। বিতর্ক থাকবে এ প্রসঙ্গে। বিশেষত শান্তিনিকেতনের সনাতন ঐতিহ্যের সমর্থকদের তরফে। তবু সে যা হোক। কারণ সে প্রসঙ্গ ভিন্ন।
কিন্তু আন্দাজ করি, ক্রোধের উন্মেষ সেই সূচকেই হয়তো বা। অথবা হয়তো একজন কমিউনিস্টের রাজনৈতিক বিশ্বাস আশ্রমিক দৃষ্টির পরিসরে ব্রাত্য। ‘যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন/সেইখানে মোর চিত্ত যাবে কেমনে’— সর্বহারার প্রান্তিকে পৌঁছোনোর এ আকুলতা বিশ্বজনীন। তার জন্য কমিউনিস্ট হওয়ার প্রয়োজন স্বয়ং গুরুদেব অন্তত অনুভব করেননি। এমনকী ‘রাশিয়ার চিঠি’-র প্রসঙ্গের উত্থাপনে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ প্রশ্রয়ের উল্লেখও এক্ষেত্রে তেমন প্রয়োজনীয় কিছু নয়। দেশকাল নির্বিশেষে যাঁর সৃষ্টি চিরায়তই মানবমুখী, নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক মতবাদের মানদণ্ডে তাঁর মূল্যায়ন সর্বতই বাতুলতা। সে বিতর্ক বরং মুলতুবি থাক। তবে রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই ১৯৩৮-এ যেখানে কণিকা নীহারবিন্দু সেনের কথা ও হরিপদ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে তথাকথিত কিছু ‘আধুনিক গান’ রেকর্ড করেছিলেন বা পরবর্তীকালে মোহরকণ্ঠে অতুলপ্রসাদের ‘পাগলা মনটা রে তুই বাঁধ’ কিম্বা ‘মোরা ফুলে ফুলে নাচি দুলে দুলে’-এর মতো গানের ওপরও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞার কোপ পড়ে না, সেখানে সলিল চৌধুরীর আপাত নিরীহ ‘বেসিক’ গানের রেকর্ডে শান্তিনিকেতনী এই অনীহা কেন ? প্রশ্ন উঠে যায় বৈকি। আর সমস্যার শিকড়ে নামতে গেলে বেরিয়ে আসতেই পারে কিছু অপ্রিয়কথন। ’৩০-এর দশকে কতিপয় বামপন্থী বুদ্ধিজীবী কর্তৃক গুরুদেবকে ‘বুর্জোয়া কবি’ আখ্যায় হয়তো এই বৈরীভাবাপন্ন মানসিকতার সূত্রপাত। ১৯৬১-র রবীন্দ্র-শতবর্ষে সে ভুলের প্রায়শ্চিত্তে কমিউনিস্টরা আন্তরিকতা দেখালেও ’৪০-এর শেষার্ধে দুই মেরুর এই টানাপোড়েন হয়তো যথেষ্টই সক্রিয় ছিল। তাছাড়া প্রকৃতির ক্রোড়ে সমাহিত শান্তিতে বেড়ে ওঠা শান্তিনিকেতনের যে আপন বিশিষ্টতা, সেই মানসলোকে ভারতীয় রাজনীতিতে ঝোড়ো হাওয়ার দিশারী কমিউনিস্টদের জঙ্গি রাজনৈতিক পথ অনিবার্যভাবেই ছিল পরিত্যাজ্য। অন্যদিকে কলকাতার শহুরে ব্রাহ্ম সংস্কৃতির সঙ্গে শান্তিনিকেতনের আদর্শগত দূরত্বও তো সর্বজনবিদিত। কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কুড়ি বা তিরিশের দশকে উঠে আসা কিছু উজ্জ্বল নাম, যেমন সুশোভন সরকার, চিন্মোহন সেহানবীশ প্রমুখ, তো আদপে বর্ধিষ্ণু ব্রাহ্ম পরিবারেই লালিতপালিত। সার্বিক অর্থে যাবতীয় এই সমস্যাবলীকে মাথায় রেখেও বাধ্যতই বিতর্ক উঠতেই পারে, বঙ্গ-শিল্পসংস্কৃতির চিরায়ত অধিষ্ঠানে রাজনীতির কষ্টিপাথরেই কি তবে শিল্পের এই ভালোমন্দ বিচার? সে কি নিজ ঐতিহ্যেরই পরিপন্থী নয়? প্রসঙ্গত মনে পড়ে যায় সলিলেরই একটি গানের কিছু গোছানো শব্দচয়ন—
…শিল্পী মোদের পিতা
কল্পলোকের সিঁড়ি মোরাই
বস্তুলোকের চিতা
কে কী কেন কবে কোথায়
প্রশ্ন মোদের বালাই।।…
সম্ভবত শিল্পের লজিকে শৈল্পিক উৎকর্ষের মূল্যায়নে শিল্পবহির্ভূত কিছু স্তর এভাবেই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় শিল্পীর যথার্থ মূল্যায়নে। অতিশয়োক্তি মনে হলেও বলতেই হয়, প্রাতিষ্ঠানিকতার এই চাপ কোথাও যেন তাত্ত্বিক স্তরে মিশে যায় রাষ্ট্রিক হেজিমনির স্তরে। ছিদ্রান্বেষী ইতিহাসবোধ ঘা দেয় চেতনার গহীনে, যেখানে পাঁচের দশকের শেষদিকে ম্যাকার্থিজমের ক্ষমতার দম্ভে পল রবসনকে স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়; ১৯৭২-এ ডেনমার্কে নিষিদ্ধ হয় জন লেননের ‘ইমাজিন’ সাম্যবাদে ঝোঁক আর খ্রিষ্টিয় আদর্শের বিরোধিতার নিদানে; অথবা যোয়ান বায়েজের ‘বাংলাদেশ’ দীর্ঘদিন অচ্ছুৎ থাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রান্তরে। সংকট শিল্পীর অস্তিত্বে না প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গিগত দেউলিয়াপনায়— সে প্রশ্নও নিরন্তর খোঁচা দিয়ে যায় বৈকি। কারণ, কালজয়ী সৃষ্টি তাৎক্ষণিক পাঁচিল অতিক্রমে শেষপর্যন্ত কিন্তু ভেসেই থাকে সময়ের স্রোতে… প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সাধারণ শ্রোতার হৃদয়ে। সলিলের সৃষ্টিও তার ব্যতিক্রম নয়, অন্তত ভাবীকালের শ্রোতার গ্রহণযোগ্যতার মানদণ্ডে।
#
‘প্রান্তরের গান আমার’ আপাত বিষণ্ণ সুরের আবহে খরাপ্রবণ দহনে ফসলহারার বেদনার্তি। হয়তো শব্দবন্ধের ফাঁকে ফাঁকে প্রছন্ন ব্যঞ্জনায় সমসাময়িক আবর্তে গীতিকারের বিশ্বাস-মননের পথভ্রষ্ট হতাশা উঁকি দেয়। রেবা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, গণনাট্যের সাংস্কৃতিক দল আসাম থেকে প্রত্যাবর্তনে ট্রেনভ্রমণে সলিল গানটি বাঁধা সম্পূর্ণ করেন। সময়টা ১৯৪৮। নবলব্ধ ‘স্বাধীনতা’য় রাষ্ট্রযন্ত্রের কশাঘাতে দিকভ্রান্ত ভারতীয় কমিউনিস্টের স্বপ্নপূরণের সংগ্রামের শেষে স্বপ্নভঙ্গে চূর্ণ হৃদয়। অথবা হয়তো সমকালের একমাত্র অবলম্বন ‘গণনাট্য’-র প্রাতিষ্ঠানিক চাপে ক্রমাগত হতাশার বলয়। কিম্বা দুইয়েরই মোহনাজনিত বেদনা। তথাকথিত জাগতিক প্রাপ্তিসমূহের সর্বজনীন উল্লাসের মাঝে অপ্রাপ্তির বিচ্ছিন্নতাবোধে দগ্ধ প্রকৃতির হাহাকারেই আশ্রয় এ গানের মূল উপজীব্য। তথাপি শিল্পসৌকর্যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে এ গান চেতনায় উথলে দেয় মানবিক আবেগ— বিচ্ছিন্নতা বা ব্যর্থতার। প্রান্ত থেকে দিগন্তে যার ব্যাপ্তি ক্রমশ ঘনিয়ে তোলে মেঘ মনের কোণে, শ্রাবণধারার ব্যাকুল প্রত্যাশায়। এমন মেদুর আবহ নির্মাণে তিনিই তো যোগ্যতম, যে মোহর প্রতিনিয়ত আমাদের সিঞ্চিত করেন—
দূরে কোথায় দূরে দূরে
আমার মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে…
শিল্পধর্মে দায়বদ্ধ সলিল তাই তো তাঁকেই বেছেছিলেন মেঠো প্রান্তরের আঙিনায় যন্ত্রণার দিগন্তে সুরবর্ষণে। বাধ সাধল জাগতিক হিসেবনিকেশ, যা সময় থেকে সময়ান্তরে শিল্পের কণ্ঠরোধে উন্মুখ— কখনও তা পর্যবসিত চ্যাপলিনের মার্কিন ভূমিত্যাগে, কখনও বা জর্জ বিশ্বাসের ব্রাত্যজনীয় অনুভবে।
অবশ্য কল্পিত ক্ষেত্রান্তরে ক্ষেত্রকে মিলিয়ে দেওয়ার সেই অভ্যাসে এমন বিধিনিষেধ খাটে না। যদিও জানি, পরিবর্তিত শিল্পী উৎপলা সেনের কণ্ঠে ‘প্রান্তরের গান’ যথেষ্টই মর্যাদা পেয়েছে বাংলা গানের ইতিহাসে চিরকালীন আসনে। সলিল জিতেই গেছেন সেখানে শিল্পের গণমুখী প্রত্যয়ে। তথাপি কখনও কখনও ‘মন খারাপ করা বিকেল’-এ পিপাসার্ত শ্রবণপথ ভাবনার সেই স্তরে বিলীন হতে চায়, যেখানে মোহরকণ্ঠে সিঞ্চন-অভিলাষী মন—
…মেঘলা দিনের স্বপন আমার
ফসলবিহীন মন কাঁদায়
প্রান্তরের গান আমার, মেঠো সুরের গান আমার
হারিয়ে গেল কোন বেলায়…
চিরকালীন এই অপ্রাপ্তি এক অনির্বচনীয় তৃপ্তির পরিসরও এনে দেয়। না-হওয়া গানের হয়ে ওঠা রসাস্বাদনের কল্পিত আঙিনায়।
ছবিঋণ – লেখক