শৈলেন সরকার
লেখক ঔপন্যাসিক, গল্পকার। প্রাক্তন শিক্ষক।
ভদ্রলোক রামমন্দিরবিষয়ক রায় দিলেন ৯ নভেম্বর ২০১৯ সালে। রায়ে মূল্য দেওয়া হল হিন্দু ভাবাবেগের পৌরাণিক বিশ্বাসের। রায় গেল কট্টর হিন্দু ধর্মান্ধদের হয়ে লড়াই করা আরএসএস-এর ও বকলমে বিজেপির পক্ষে। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের বেশিরভাগ বিচারপতির মত নিয়েই রায় হল। বিচারপতিদের বেঞ্চের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। না, এই রায়ের উপর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র জয় নির্ভর করেনি, তা আগেই হয়ে গেছে। ৫৪২ আসনের লোকসভায় বিজেপির সদস্য সংখ্যা এখন ৩০৩। আর এনডিএ-র ৩৫৩। বিজেপি এখন যা খুশি করতে পারে। সে কাশ্মির থেকে ৩৭০ তুলে কাশ্মিরের অজানতে তাকে টুকরো করে মূল কাশ্মিরকে রাষ্ট্রপতি শাসিত এলাকা করতে পারে। মুসলিমদের হিন্দুদের সমমর্যাদা থেকে নামিয়ে সিএবি পাশ করিয়ে সিএএ করতে পারে। অনায়াসে বাঙালিদের দেশভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। নির্ভয়ে গরুর কুঁজে সোনা খুঁজে পেতে পারে।
কিন্তু এই সব কিছুর জন্যই একজন এ এন রায় কিংবা রঞ্জন গগৈ খুঁজে পেতে হয়। কিন্তু চাইলেই তো আর পাওয়া যায় না। দরকারে ফাঁদ তৈরি করো, আর ফাঁদে না ফেলতে পারলে— ।
তা হলে সুপ্রিম কোর্টের সেই ১৯৭৩ সালে হওয়া প্রধান বিচারপতি এ এন রায়ের কথাই আগে একটু বলে নেওয়া যাক। ১৯৬৯ সালে বিচারপতি হন সুপ্রিম কোর্টের। আর প্রধান বিচারপতি হন ১৯৭৩ সালে। তাঁর কথায় ওটা নাকি ছিল মাত্র দু ঘন্টার সিদ্ধান্ত। অন্তত তিনজন সিনিয়র বিচারপতিকে টপকে তাকে প্রধান করা হয়েছিল। কিন্তু সন্দেহপ্রবণ মানুষেরা অবশ্য বিখ্যাত কেশবানন্দ ভারতী মামলার কথা বলেন। যেখানে ১৩ সদস্যের বেঞ্চ নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিয়ে সংবিধানের ভিত্তির পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু বিচারপতি রায় তার বিরুদ্ধে ছিলেন। অনেকের মতে, পরে যে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ক্ষমতায় রাখতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় এড়াতে জরুরি অবস্থা জারি করবেন, নাগরিক অধিকার কাড়ার জন্য ৪২তম সংবিধান সংশোধনী আনবেন, নিজের প্রধানমন্ত্রী পদটাকে যে কোনও রকম প্রশ্নের বাইরে রাখতে চাইবেন, সেই ইন্দিরা ১৯৭৩ সালেই একেবারে ঠিকঠাক মানুষ খুঁজে পেয়েছিলেন। সারা বিচারপতি জীবন অজিতনাথ রায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই সুসম্পর্ক একেবারে খোলাখুলিই বজায় রেখেছিলেন। না, তিনি অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের অন্য দুই প্রধান বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র বা বাহারুল ইসলামের মতো রাজ্যসভার সদস্যপদ পাননি বা নেননি। এই রঙ্গনাথ মিশ্র বা বাহারুল ইসলাম দুজন সেই ছ বছর আগে পরে যা-ই যাক, গিয়েছিলেন সরাসরি একটি রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের হয়ে। পরে অবশ্য গেলেন আর একজনও, তিনি রঞ্জন গগৈ। বিজেপি অবশ্য একটু ঘোমটা রেখেছে, গগৈকে পাঠান হয়েছে রাষ্ট্রপতির কোটায়।
এবার এক রোমাঞ্চকর কাহিনিতে আসা যাক। বি এইচ লোয়া সিবিআই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। বিখ্যাত ‘সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো হত্যা মামলা’র বিচার চলছিল তাঁর কোর্টে। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে হৃদরোগে মারা যান। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর ‘ক্যারাভান ম্যাগাজিন’ মৃত বিচারপতি লোয়ার পরিবারের মানুষজনের একটি সাক্ষাৎকার ছাপে। এবং তাতে তাঁরা বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে। বলা হয়, বিচারপতি লোয়া বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মোহিত শাহের দিক থেকে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন। এমনকী লোয়ার বোন এমন অভিযোগও তোলেন যে, তাঁর তরফ থেকে বিচারের রায় প্রভাবিত করার জন্য ১০০ কোটি টাকার ঘুষের প্রস্তাব ছিল। কোন বিচারের রায়? হ্যাঁ, সেই সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো হত্যা মামলার রায়। কংগ্রেস অভিযোগ করে এই বিচারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিচারপতি লোয়া আরও যে দুজন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন, তাঁদেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। একজনের মৃত্যু হয় ছাদ থেকে নীচে পড়ে, অন্যজনের ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে। মনে রাখতে হবে, এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন বর্তমানে ভারতের দোর্দণ্ডপ্রতাপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। এবং বিচারপতি লোয়ার আগে এই বিচারের ভার ছিল বিচারপতি উতপাতের উপর। শুনানি চলছিল এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসাবে নাম ওঠা অমিত শাহের এই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া নিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ছিল, এই শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি বদলি করা যাবে না। কিন্তু বিচারপতি বদলি হল। এবং তা হল বিচারপতি উতপাতের রায় ঘোষণার আগের দিন। প্রসঙ্গত শুনানি চলাকালীন বিচারপতি উতপাত অভিযুক্ত অমিত শাহের অনুপস্থিতির জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সুতরাং বদলি। আনো অন্য বিচারপতি। এবং পরবর্তী বিচারপতি বি এইচ লোয়া ও তাঁর মৃত্যু।
এই মৃত্যু নিয়ে জনস্বার্থ মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। এবং এই ঘটনায় প্রসঙ্গত উঠে আসে রঞ্জন গগৈ-এর নাম। ১২ জানুয়ারি বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আরও চারজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে নিয়ে এক অভুতপূর্ব সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল তখনকার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র বিচারালয়ের সংহতি বিপন্ন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিচারের বিচারপতি ঠিক করার ক্ষেত্রে তিনি সিনিয়রিটির মর্যাদা না দিয়ে নিজের পছন্দের মর্যাদা দিচ্ছেন। এবং এই প্রসঙ্গে তাঁরা বিচারপতি বি এইচ লোয়ার মৃত্যু নিয়ে ওঠা জনস্বার্থ মামলা শোনার জন্য ঠিক করা বিচারপতির প্রসঙ্গ তোলেন। মনে রাখতে হবে সুপ্রিম কোর্টের তখনকার বিচারপতি দীপক মিশ্রের অবসরের পর প্রধান বিচারপতি হয়ে আসবেন এই ‘বিপ্লবী’ মনোভাবাপন্ন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তাঁর হাতেই আসবে রাফায়েল মামলা। আসবে ঝুলে থাকা অযোধ্যা মামলা। সুতরাং করতে হবে কিছু একটা। অর্থাৎ যেভাবে বিচারপতি লোয়াকে প্রভাবিত করার জন্য লোয়ার বোনের অভিযোগ অনুসারে ১০০ কোটি টাকার ঘুষের প্রসঙ্গ উঠে আসে। বা তারও অনেক আগে ১৯৭৫ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি জগমোহনলাল সিন্হা। পরবর্তীকালে ইন্দিরা গান্ধির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী রাজনারায়ণের আইনজীবী শান্তিভূষণ জানিয়েছিলেন, সেই রায়ের অনেক পরে গল্ফ খেলতে গিয়ে বিচারপতি জগমোহনলাল সিন্হা তাঁকে জানিয়েছিলেন, হ্যাঁ, তাঁকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছিল। এলাহাবাদ কোর্টের বিচারপতি মাথুর তাঁর কাছে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির ব্যক্তিগত চিকিতসক ডাঃ মাথুরের এক বার্তা নিয়ে তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন। বলা হয়েছিল রায় ইন্দিরা গান্ধির পক্ষে গেলে বিচারপতি জগমোহনলাল সিন্হাকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি করে পাঠান হবে। (হিন্দুস্তান টাইমস, অনলাইন ২৬ জুন, ২০১৫)
হ্যাঁ, কী হল তারপর সেই বিচারপতি লোয়া মৃত্যুরহস্য মামলার? মামলার তারিখ পড়ল ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮-তে। ২০১৮ তারিখের ১৯ এপ্রিল বিচারপতি ওয়াই এস চন্দ্রচূর জানালেন, মৃত্যুটা ছিল স্বাভাবিক। এবং অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু এরপর কী হল সেই সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো হত্যা মামলার? অমিত শাহেরই বা কী হল? লোয়া পরবর্তী বিচারকের রায়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান অমিত শাহ্।
এবার রঞ্জন গগৈ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত এক ঘটনা। ২০১৯-এর ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের এক জুনিয়র কোর্ট সহকারী ও এক সময়ের রঞ্জন গগৈ-এর অফিসের কর্মী সুপ্রিম কোর্টের বাইশ জন বিচারপতির কাছে এক অভিযোগপত্র পাঠান। সেখানে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ দিনের পর দিন কোভাবে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন তার বিবরণ থাকে। মেয়েটি জানায়, সে কাজে যোগ দিয়েছিল ২০১৪ সালের মে মাসে। এবং তাঁর উপর যৌন নিপীড়ন শুরু হয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিচারপতির বাড়ি সংলগ্ন অফিসে যোগ দেওয়ার পর। পরে তাঁকে ওই অফিস থেকে বদলি করা হয়, ও অবশেষে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারিয়েটের তরফ থেকে জানান হয়, মেয়েটি ওই অফিসের অস্থায়ী কর্মী ছিল, এবং যখন সে সেখানে কর্মরত ছিল সে সময় বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর সঙ্গে তাঁর সংস্পর্শ হওয়ার কথা নয়। এবার সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি ইন-হাউস কমিটি নির্বাচন করে তাঁর হাতে অনুসন্ধানের ভার দেয়, সেই কমিটি যথারীতি অভিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে ক্লিন-চিট দেন ও মহিলার অভিযোগকে বিচারপতির সম্মানীয় অতীতকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস হিসাবেই বর্ণিত করেন। মেয়েটির আরও অভিযোগ ছিল যে, তাঁকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনবার বদলি করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও আনা হয়, শুধু তাই নয়, তাঁর স্বামীকেও দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে বদলি করে দেওয়া হয়। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান করছে সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত ইন-হাউস এক কমিটি ও তাঁকে ক্লিন চিট দিচ্ছে— এমন খেলা-খেলা বিচারের রায়ের কিছুদিন পরেই আবার মেয়েটিকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়, আর মেয়েটির স্বামীকেও তাঁর আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় বিচারপতি জানিয়েছিলেন, এক বৃহৎ শক্তি তাঁর অফিসকে নিষ্ক্রিয় করতে চাইছে। তাঁর অভিযোগমতো কে ছিল সেই বৃহৎ শক্তি? প্রসঙ্গত এই মহিলার প্রধান বিচারপতি গগৈ-এর বিরুদ্ধে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই যৌন নির্যাতনের বিচার করলেন অভিযুক্ত নিজেই এবং বিস্ময়করভাবে বিচারে ওই মহিলা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে মিথ্যে অভিযোগ এনেছেন বলে রায়ের পর সেই মহিলা কিন্তু চাকরি ফিরে পেলেন। তাঁর পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে বলা হল। মহিলার স্বামীও তাঁর পুরনো জায়গা ফিরে পেলেন। কিন্তু মহিলার আনা যৌন হয়রানির অভিযোগের নিষ্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করা বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর সেই বিপ্লবীয়ানা উধাও হল। মহিলার সেই যৌন হয়রানির অভিযোগকে কি তাহলে কোনও কাজে লাগানো হল? বা মহিলার সেই অভিযোগ কি সাজানো ছিল? বিচারপতি লোয়ার বোনের অভিযোগমতো তাঁর দাদাকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চাওয়া হয়েছিল, ঘুষ না খেতে চাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হল। বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর ক্ষেত্রে এখানে মৃত্যু হল অবশ্য এক বিপ্লবীয়ানার।
মনে রাখতে হবে ২০১৯-এর এপ্রিল-মে জুড়ে চলবে লোকসভার সাধারণ নির্বাচন।
কংগ্রেসের রাহুল গান্ধি রাফায়েল চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ২০১৭-এর গুজরাট বিধানসভার নির্বাচনের সময়। ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে নির্মলা সীতারামন জানান রাফায়েল চুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ জাতীয় নিরাপত্তার কারণে জানান যাবে না। ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান দুই কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থের জন্যই চুক্তির সব কিছু জানানো যাবে না। ২০১৮-র এপ্রিলে রাহুল গান্ধি মোদির বিরুদ্ধে ৪৫,০০০ কোটি টাকা চুরির অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগমতো এই চুরি উনি করেছেন রিলায়েন্সের এক ভাই অনিল আম্বানিকে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। এবার আসছে রঞ্জন গগৈ-এর পালা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রাফায়েল নিয়ে একটি রিট পিটিশন শুনতে রাজি হল। মনে রাখতে হবে ২০১৯-এর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভার নির্বাচন। রাফায়েল ৪৫,০০০ টাকার চুরির কথা মানুষ ক্রমশ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আবার বিভিন্ন সংস্থার করা সমীক্ষায় বিজেপি-র নির্বাচনের ফলেও তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রাফায়েল নিয়ে কোনওরকম তদন্তের সম্ভাবনা নাকচ করে কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্লিন-চিট দিয়ে দিল। অথচ কি সরকার কি কোর্ট কারও কাছেই রাফায়েল সম্পর্কিত ক্যাগ বা পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির কোনও রিপোর্ট ছিল না। তাহলে? সরকার কি তা হলে প্রতারণা করল কোর্টকে? এ বিষয়ের শুনানি আর নির্বাচনের আগে হতে পারেনি। হয়েছে পুলওয়ামা-বালাকোট নিয়ে নির্বাচনী বিপর্যয় এড়িয়ে উগ্র-জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফেরার পর। বলা যায় শুধু পুলওয়ামা-বালাকোট নয়, বিজেপিকে সাথ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ও। রাফায়েল নিয়ে বিজেপি তখন কোনঠাসা। দেশের মানুষ তখন রাহুলের অভিযোগ বিশ্বাস করছে। অথচ কংগ্রেসের চাওয়া রাফায়েল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১৪ ডিসেম্বরের রায়ের পুনর্বিবেচনা হল লোকসভা নির্বাচন ছাড়িয়ে ঠিক এক বছর পর ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯-এ।
এবার বিরাট গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি-র ফেরার পর বিচারব্যবস্থার শুধু সরকারকে সাথ দেওয়ার পালা। এবার লক্ষ্য আরএসএস-এর বহুকালের সেই উগ্র মুসলিম-পাক বিরোধী সাম্প্রদায়িকতার ওপর ভিত্তি করে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের ভিত বানানো। নভেম্বরের মধ্যেই আসবে অযোধ্যা মামলার রায়। আসবে কেরল কোর্টের সবরীমালা মন্দির নিয়ে রায়ের পুনর্বিবেচনা, রাফায়েলের রায়ের পুনর্বিবেচনা। আসবে রাহুল গান্ধির ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান ফৌজদারি অপরাধের তুল্য ঘোষণা দেওয়া। এবং অবশেষে তাঁর অবসর ও পুরস্কারস্বরূপ লক্ষ্মীলাভ। রাজ্যসভার সদস্যপদ পেলেন রঞ্জন গগৈ। পেলেন রাষ্ট্রপতির কোটায়। কিন্তু কর্তার ইচ্ছেয় কর্ম বলে কথা। কর্তা চাইলে মারে কে?