আউটস্ট্যান্ডিং প্লেয়ার এবং ম্যানেজার ছিলেন প্রদীপদা

ভাস্কর গাঙ্গুলি

 

 

 

 

 

 

 

তখনও আমি বড় ক্লাবে খেলা শুরু করিনি, ময়দানে নিয়মিত খেলা দেখতে যেতাম, প্রদীপদা সেইসময় ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন৷ প্রদীপদাকে প্রথম কাছ থেকে দেখি ১৯৭৫ সালে। তিনি তখনও ইস্টবেঙ্গলের কোচ। আর আমি সবে মোহনমাগানে খেলা শুরু করেছি। ৭৫ সালে সেই কুখ্যাত আইএফএ শিল্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে চার গোল খেলাম, প্রদীপদা তখন আমার অপোনেন্ট। এরপর ৭৬ সালে আমি ইস্টবেঙ্গলে যাই, সাতাত্তরে রাজ্যদলে খেলার সুযোগ পাই, তার পরেই জাতীয় দলের ডাক এল, টুর্নামেন্ট খেললাম, ৭৮ সালে এশিয়ান গেমস খেললাম। এসব পেরিয়ে ক্লাব লেভেলে এসে আমার সঙ্গে প্রদীপদার সরাসরি যোগাযোগ ঘটে ৭৯ সালে, যখন উনি আবার ইস্টবেঙ্গলের কোচ হয়ে ফিরে এলেন।

আমি আমার খেলোয়াড় জীবনে প্রচুর কোচের অধীনে খেলেছি। বড় মাঠে আমার প্রথম কোচ ছিলেন অরুণ ঘোষ। তারপর অমল দত্ত। অরুণদা, অমলদা আমাকে দিনের পর দিন প্রচুর গোলকিক প্র‍্যাকটিশ করিয়েছেন। ৭৯ সালে প্রদীপদা আমাদের কোচ হয়ে আসার পর একটানা চার-পাঁচ বছর ওঁর আন্ডারে খেলেছি, ক্লাব লেভেলে খেলেছি, ভারতীয় দলেও খেলেছি। কোচ হিসেবে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তো বড় বটেই, কিন্তু একজন ম্যানেজার হিসেবে আমি তাঁকে আরও উঁচু জায়গায় রাখব। কী করে বড় টিমের খেলোয়াড়দের কনট্রোল করতে হয় ও তাঁদের সেরা খেলা বের করে আনতে হয়, সেটা প্রদীপদা খুব ভালো জানতেন। প্রদীপদার ম্যান ম্যানেজমেন্ট ছিল বিশ্বমানের৷ যেকোনও বিষয় নিয়ে প্রদীপদা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারতেন। খেলাধূলাই হোক, কি গানবাজনা, কি সিনেমা-সংক্রান্ত আড্ডা, প্রদীপদার নানা বিষয়ে বিস্তর পড়াশোনা ছিল। আজ প্রদীপদা আমাদের মধ্যে নেই, ওঁকে নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। আমার মনে হয় বেঁচে থাকাকালীন ওঁকে নিয়ে আরও আলোচনা করার দরকার ছিল। প্রদীপদা যতদিন সক্ষম ছিলেন, ওঁকে যদি ঠিকভাবে ভারতীয় ফুটবলের স্বার্থে ব্যবহার করা হত, আমাদের দেশের ফুটবল আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত বলে ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা। দুঃখজনক, তা করা হয়নি।

শেষদিকে, প্রদীপদার সঙ্গে অনেকবার দেখা করতে গিয়েছি। এমন প্রাণবন্ত, দিলদরিয়া, আড্ডাবাজ এবং ফুটবল অন্তপ্রাণ একজন মানুষ শেষের দিকে অসুস্থতার কারণে চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা যারা পুরনো প্রদীপদাকে দেখেছি, তাদের পক্ষে এই মানুষটাকে দেখা কষ্টকর ছিল।

প্রদীপদা খেলোয়ার হিসেবেও আউটস্ট্যান্ডিং ছিলেন। আমরা যারা ওঁর শেষ দিকের খেলা দেখেছি, কোচ হিসেবে ওঁর বল মুভমেন্ট দেখেছি, বা ময়দানে ওঁর খেলার কথা বড়দের মুখে শুনেছি, আমরা সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ। ইতিহাস প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অসামান্য ফুটবলার ও বিশ্বস্তরের ম্যানেজার হিসেবে চিরকাল মনে রাখবে৷

 


সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...