শ্যাম থাপা
প্রদীপদাকে নিয়ে অনেক বলেছি এই কদিনে। অনেক কাগজেও লিখেছি। যে কথাটা আগেও বলেছি আবার বলছি, প্রদীপদার মতো একজন মোটিভেটরকে খুব মিস করব। উনি কত বড় ফুটবলার ছিলেন সবাই জানেন। কলকাতার মুখ, ভারতীয় ফুটবলের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। জাতীয় প্রতিযোগিতার পাশাপাশি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে। সাফল্য পেয়েছেন প্রচুর। বহুবার এশিয়ান গেমসের পাশাপাশি প্রতিনিধিত্ব করেছেন অলিম্পিক গেমসে। রোম অলিম্পিকে গোল করেছেন সর্বোচ্চ স্তরের দলের বিরুদ্ধে। দেশের সর্বকালের সেরা কয়েকজন ফুটবলারের মধ্যে তিনি খুব ওপরের দিকেই থাকবেন।
ফুটবলার হিসেবে এত সাফল্যও ম্লান হয়ে গেছে কোচ প্রদীপদার কাছে। আমি ওঁকে এত কাছ থেকে দেখেছি, মিশেছি বলে সব কিছুই জানি। ফুটবলার ও কোচ এই দুই দিক দিয়ে তাঁর মতো জায়গায় পৌঁছতে কোনওদিন কেউ পারবে না এটা হয়ত বলা ঠিক নয়, তবে এটা বলতে দ্বিধা নেই, বহু বহু বছর পরপর এই পর্যায়ের ক্রীড়াপ্রতিভা উঠে আসে। ওঁর ভোকাল টনিক তো সুপরিচিত। উনি একজন পারফেক্ট মোটিভেটর। আজ ভারতে বিদেশি কোচেদের রমরমা। বেশ কিছু ক্লাবকে সাফল্যের সঙ্গে ট্রফি দিচ্ছেন তাঁরা। তবু, তাঁরা কতটা মোটিভেটর? তাঁরা মূলত অনুশীলন, পোজিশনিং, পাসিং ইত্যাদির উপর জোর দিলেও মোটিভেশনে কোনওভাবেই কিন্তু প্রদীপদার জায়গা নিতে পারেননি। আমি নিজে দেখেছি প্রদীপদা কিভাবে প্লেয়ারদের মাঠের প্র্যাকটিসের পরেও নিজের বাড়ি ডেকে এনে বোঝাতেন, মোটিভেট করতেন। ধমক দিতেন, আবার বন্ধুর মতো মিশতেন।
আমাকেও বহুবার ভুল করলে বুঝিয়েছেন। জড়িয়ে ধরেছেন। আমি যতদিন বাঁচব, উনিই আমার কাছে আমার ফিলোজফার, গডফাদার, ফ্রেন্ড সবকিছুই। আমার জীবনে এই মানুষটার ঋণ আমার পক্ষে কোনওদিনই ভোলা সম্ভব নয়।
সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত