সালাহ ওমরের কবিতা

সালাহ ওমরের কবিতা : সোহেল ইসলাম

সোহেল ইসলাম

 

সালাহ ওমরের জন্ম মিশরে। কিন্তু শরীরে যে রক্তের প্রবাহ, তা প্যালেস্তাইনের। নিজেকে প্যালেস্তানীয় সমাজকর্মী বলে মনে করেন। ১৯ বছর ধরে ইজরায়েলীয় অত্যাচারের মুখোমুখি। প্রতিবাদও করে চলেছেন ১৯ বছর ধরেই। পড়াশোনা আন্তর্জাতিক আইন নিয়ে। তিনি চান, রিফিউজি ক্যাম্পে বন্দি মানুষগুলোর আওয়াজ আন্তর্জাতিক আদালত অবধি পৌঁছাক।

প্রতিবাদ বলতে বোঝেন কবিতা লেখা। মাত্র আট বছর বয়সে মাহমুদ দারবিশের কবিতা পাঠ। তারপর থেকেই কবিতার প্রেমে। তাঁর মতে, আবেগকে এক জায়গায় আনতে পারলে যে বিস্ফোরণ ঘটে তার নাম কবিতা। তিনি বিশ্বাস করেন অত্যাচারীর অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী শব্দ।

এক জায়গায় তিনি বলছেন, মহাত্মা গান্ধির বইয়ে পড়া এক উক্তি (পৃথিবীকে পরিবর্তিত দেখতে চাইলে, আগে নিজের মধ্যে সেই পরিবর্তন দেখা জরুরি) তাঁকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, কবিতাকে শক্তিশালী অস্ত্রের মত ব্যবহার করতে শিখিয়েছে।

সালাহ ওমরের কবিতা

১.

এখানে সত্তরের কথা হচ্ছে
মানুষেরা ঘরছাড়া,
হিংস্র নেকড়ের দল
তাদের ছিঁড়ে খাবে বলে
বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, বাদ যাচ্ছে না কেউই

মানুষ কেন এই দাসত্ব মেনে নেবে
কেন মেনে নেবে পরাধীন জন্মভূমি

আমি বিশ্বাস করি
নিশ্চয় কেউ আসবে
যে ভয় সরিয়ে রেখে
ঘুরে দাঁড়াতে শেখাবে একদিন

 

২.

হয়ত আমরা সবাই মারা পড়ব
তবুও এ লড়াই থামার নয়
সবে তো পতাকায় লেগেছে ঢেউ
এরপর মানুষের মধ্যেও ঢেউ ছড়াবে

আমাদের জন্য নিষিদ্ধ উচ্চারণ ‘আজাদি’
কিন্তু পাথর, পাথরের দেয়াল, কাঁটাতার
ওদের চিৎকারেও যে আজ ‘আজাদি’
শুনুন, ভুলে যাবেন না
ইতিহাসেও মাফ নেই

অন্যায় ও অত্যাচারীর

 

৩.

আজ আমাকে বলতে দিন:
প্রিয় বর্ডার প্রহরী,
শুনেছি নতুন লেন্স আনিয়েছেন
রাইফেলটাকে সাজিয়েছেন মজবুত করে
শেষ পর্যন্ত পারবেন তো
সব শিশুগুলোর মাথা উড়িয়ে দিতে?
স্বপ্নগুলোকে ঝাঁঝরা করে দিতে?

শুনলাম আজ পাঁচজনকে নিশানা করেছেন
গতকালও খতম করেছেন দুজনকে
এভাবেই মারতে থাকুন
একদিন নিশ্চয় দেশ আপনাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেবে,
মেডেলে লিখে দেবে ‘পরমবীর’

দুনিয়া মনে রাখবে না
কত জনকে হত্যা করেছেন
কিন্তু আমি কী করে ভুলে যাই

খাতা ভর্তি নামগুলোকে?

প্রতিটা হত্যার পর আপনার নারকীয় হাসি?
কারও সঙ্গেই তা ভাগ করে নিতে পারব না

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে আসবে অন্ধকার
শুরু হবে বোম্বিং
আপনার গলা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি
আমি এ চিঠি শেষ করে যেতে পারব না
দুনিয়ার হাতে তুলে দিয়ে যেতে পারব না আপনার কারনাম

 

৪.

এত অন্ধকার
আমরা হারিয়ে যেতে বসেছি মা

এত ভড়ংধারী লোক চারপাশে
এদের এত ক্ষমতার লোভ
আমার মন উঠে গেছে
কাকে বিশ্বাস করব?

একটুও মনুষ্যত্ব কোথাও বাকি নেই আর
সব কর্পূরের মত উবে গেছে

ন্যায়পরায়ণের বিশ্বে
প্যালেস্তাইন, ইয়েমেন, সিরিয়ার শিশুরা
শৈশবের পোষাক খুলে
মৃত্যুর রেসে নামছে
ভবিষ্যৎ বলে কিছুই থাকল না ওদের
মা, দোয়া কোরো
আমরা যেন জেদ নিয়ে লড়ে যেতে পারি
এই ঘৃণ্য দলদলের থেকে
আল্লা যেন মুক্তি দেন আমাদের

নরপিশাচগুলো হাতে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করল
যুদ্ধে নামাল
পবিত্র ভূমিকে বানাল গণকবরের দেশ

দোয়া কোরো মা
আমরা যেন
কাফেরদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারি

আমিন

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...