আমরা তারা চিনতাম

আমরা তারা চিনতাম | বিশ্বদীপ চক্রবর্তী

বিশ্বদীপ চক্রবর্তী

 

পাড়াটা তখনও এদিক ওদিক মাথা তুলছে। কোনও ছকে বেঁধে নয়। যখন যেমন, যার যেমন। গলুদের ইট বের করা একতলা বাড়ির পাশেই মিত্রদের একলাফে দোতলা। ঝন্টুদের শুধু প্লাস্টার, সুমুদের বাড়িতে হলদে পোঁচ, কায়দা করে বাদামি বর্ডার। কোনও বাড়িই ঠিক থেমে নেই, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কলেবরে বাড়ছে। তাই ভাড়া বাঁধা থাকত এখানে ওখানে। লিন্টনের ঢালাই, জলছাদ, রামশরন মিস্ত্রি দৈনন্দিন জীবনের চেনা শব্দগুচ্ছ। ঢালাইয়ের লোহার রড বেঁকিয়ে গোল চাকা বানিয়ে দিত মিস্ত্রিকাকুরা। আর একটা বেঁকানো লোহার রড দিয়ে ঠেলে ঠেলে আমাদের গোল্লাছুট। ইট বের করা রাস্তার দুপাশে ঢিবি করা বালি সুড়কির পাহাড়ের পাশ কাটিয়ে চাকাটাকে চালিয়ে রেস দেওয়া বেশ কায়দার ব্যাপার। তখনও সাইকেল জোটেনি, তাই এই একচাকাতেই আমোদ। সাইকেল নিয়ে ঘুরত বাবলাদা, গোপালদারা। ওরা সাইকেল চালিয়ে কোনও বাড়ির ঝুলবারান্দার নিচে হঠাত হঠাত হেঁড়ে গলায় গেয়ে উঠত, চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি। চাঁদেরা তবু উঁকি না মারলে ইটের পাঁজায় সাইকেল হেলান দিয়ে গুনগুনাত, আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা…

জীবনের ধ্রুবতারা খোঁজার সময় তখনও আমাদের হয়নি। কিন্তু আমরা রাতের আকাশের তারা দেখার খেলাটা খেলতাম। সারাদিন ধুন্ধুমারের শেষে সন্ধ্যে বেলায় বইয়ের অক্ষরগুলো পিঁপড়ের সারি হয়ে গুটিগুটি হাঁটা দিতে চাইত। একমাত্র ভরসা ছিল সন্ধ্যাবেলার লোডশেডিং। হলদে আলো নিয়ে টিমটিম করে হ্যারিকেন জ্বলত, কিন্তু সাপ্তাহিক দুই লিটার কেরোসিনের রেশনে রোজ রোজ হ্যারিকেন জ্বালিয়ে পড়ার আয়োজন হয় না। তাই আলো নিবলেই হ্যারিকেনের সলতে বুঁজিয়ে সবাই হই হই করে ছাদে। ছাদ থেকে ছাদে হাসিরা স্রোতস্বিনী হত। ছাদের আলসে ধরে মা মাসিমাদের কথা চালাচালি, মাদুর বিছিয়ে হাতপাখা নিয়ে বাবারা। আমাদের জন্য ছাদে ছাদে হল্লা জুড়ে এক লম্বা খেলার মাঠ। তারা দেখাটা সেই খেলাগুলোর মধ্যে একটা।

এই খেলাটা অনেকটা আমি যা দেখি তুই তা দেখিসের মত শুরু হয়েছিল।

এই বাবলা, আমি একটা ভালুক দেখছি তুই দেখতে পাচ্ছিস?

নেড়া ছাদের লক্ষণরেখার ভিতর থেকে গলুর ঘোষণা, আমি একটা দু হাত তোলা গাছ দেখলাম, তুই?

এইরকম সময়ে কোনও একদিন ঝন্টুর বাবা ওদের ছাদ থেকে বলে উঠেছিল, তোরা সপ্তর্ষি চিনিস?

আমরা চুপ।

তখন জেঠু ওদের ছাদ থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আমাদের চেনালেন। আমরা চিনলাম মারীচ, বশিষ্ঠ, পুলস্ত্য, পুলহ, অত্রি, অঙ্গিরা, ক্রতু।

মিত্রকাকুদের ছাদ থেকে ঝুনু গুনতির ভুল ধরিয়ে দিল, ওখানে যে আটটা তারা জেঠু, আর একটা দেখছি।

ওরে মেয়ে, তোর চোখের জোর খুব বেশি রে। ঠিক ধরেছিস, আর একটা তারা আছে, অনুজ্জ্বল। ভাল করে না দেখলে ঠাহর হবে না। ওর নাম অরুন্ধতী। দেখেছিস কেমন বশিষ্ঠর পাশ ঘেঁষে রয়েছে? ও যে বশিষ্ঠ মুনির স্ত্রী।

ওটা কি ছোট তারা?

বশিষ্ঠ মুনির বউ তো। একটু ছোট হতেই হবে, তাই না? বলে হা হা করে হেসেছিল জেঠু।

তবে আমাদের সবচেয়ে চেনা তারা ছিল সন্ধ্যাতারা। অবশ্য সন্ধ্যাতারা তো আসলে গ্রহ, ফাঁকেতালে তারাদের দলে নাম ভিড়িয়েছে সেটা আমরা ততদিনে জেনে গেছিলাম। খেলতে খেলতে যখন মাঠে অন্ধকার নেবে আসত, তার একটু আগেই টুপ করে আকশের এক কোন থেকে উঠে সন্ধ্যাতারা দিন গুটানোর জানান দিত। সূর্য ডুবলেও আমাদের খেলা শেষ হত না তো। ডুমো ডুমো অন্ধকার নেবে আসছে তখন, মাঠের ধারে ড্রেনের পাশে ছোট ছোট ঝোপের উপর মশা ভনভন করছে, আমরা তখনও কিরি খেলছি।

মাঠে যতক্ষণ সূর্যধোয়া আলো থাকত তখন খেলতাম ক্রিকেট। সুমুর ব্যাট আর উইকেট ছিল। বাকি সবাই চাঁদা করে টেনিস বল কিনে আনতাম। গলু বেশির ভাগ দিন বল কেনার চাঁদা দিতে পারত না, তাই ও শুধু ফিল্ডিং করতে পেত। গলু দুই দলের হয়েই ফিল্ডিং করত। ওদিকে সুমুকে সবার আগে ব্যাট করতে দিতে হত। টিম করার সময় সবাই তাই সুমুকে চাইত, কারণ ও যে টিমে থাকবে, সেই টিম আগে ব্যাট করবে। আর ওপেন করবে সুমু।

এরকম অনেক নিজস্ব নিয়ম ছিল আমাদের ক্রিকেট খেলায়। বল খুব জোরে হলে ব্যাটসম্যান নো ডাকতে পারত। বোলারকে সব কটা উইকেট দেখিয়ে তবে ব্যাটসম্যানকে ব্যাট হাতে দাঁড়াতে হত। বল কারও বাড়ির পাঁচিল ছাড়িয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকে গেলে খুঁজে আনার দায়িত্ব ব্যাটসম্যানের। আর যদি বল মাঠের পাশের নর্দমায় গিয়ে পড়ত, তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে আউট। শুধু আউট নয়, তাকেই নর্দমা থেকে বল তুলে নিয়ে গিয়ে জলে ধুয়ে খেলার যোগ্য করতে হত। সুমুকেও। নোংরা নালাটা আমাদের মাঠের ডান দিকে পড়ত, ফিল্ডিং সাইড কখনও কোনও ফিল্ডার রাখত না অফ সাইডের বাউন্ডারি সামলাতে। তবু তেমন তেমন লোপ্পাই বল পেলে পেটানোর লোভ তো মানুষের হয়ই। প্রতিদিনই ওই নোংরা নালায় বার তিনেক বল পড়ত। জলে ধুয়ে ঘাসে মুছে আমরা আবার খেলতে লেগে যেতাম।

নালায় পড়া বল ধোওয়ার জন্য আমরা যেতাম টিকলুদের বাড়ি। টিকলুর মা মগে করে জল ঢালতে ঢালতে বলত, কি আজকেও সিমাইটা ফেলেছে? সিমাই মানে সুমু। টিকলুর মা সবাইকে এমনিভাবে ডাকত। সুমুকে সিমাই, অতুলকে তুলতুলি, পুটুকে পটলা, ঝন্টুকে ঝন্টাই, আমাকে তবলা। এই নামে আমাদের আর কেউ ডাকত না, শুধু মুখভরা পানচেবানো টিকলুর মা। হয়তো আর কেউ আমাদের এমনি করে ভালবাসত না। আমাদের সবাইকে এমন ভালবাসার নাম দেওয়া মাসিমার নাম আমরা কেউ কোনও দিন জানিনি। পাড়ার সব মহিলাদের মত টিকলুর মাকেও আমরা মাসিমা বলে ডাকতাম, অন্য কোনও আদরের নামও দিইনি। ঝুনু আসার আগে অবধি। ঝুনু প্রথম বল ধুতে গিয়ে বলেছিল, মাসিমনি আর একটু জল দাও, এদিকে একটু পাঁক লেগে আছে এখনও। টিকলুর মার পান খাওয়া দাঁতে কি আরও বেশি আলো ঝলকে ছিল তাতে? মনে নেই। যেটা খুব জ্বলজ্বল করে মনে পড়ে সেটা হল লাল পাড় বুটিদার সাদা শাড়ি আটপৌরে করে পরা টিকলুর মার রেডিওতে ক্রিকেটের ধারাবিবরণী শোনা। শুধু ইডেনে টেস্ট ম্যাচ হলেই না, রঞ্জি ট্রফিরও সব ম্যাচ চলত ব্যাটারি চালিত বড় রেডিওতে। রান্না করতে করতে খেলা শুনত মাসিমা। গাভাসকারের খুব ভক্ত। চোখে তারার ঝিকমিক তুলে বলত, বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান! ক্রিকেটদুনিয়ার নক্ষত্র। গাভাসকার বাউন্ডারি মারলে একফালি বারান্দায় দৌড়ে এসে খুন্তি নাড়িয়ে নাড়িয়ে চার দেখিয়ে যেত মাসিমা। গাভাসকার নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছালে আমাদের খেলা বন্ধ করিয়ে ডেকে নিত বারান্দায়। টিকলুকে বলত, টিকলাই সবাইকে একটা করে বিস্কুট এনে দে। থিন অ্যারারুট বিস্কুট হাতে কালো বর্ডার দেওয়া লাল সিমেন্টের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমরা এক এক রান করে গাভাসকারের সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া শুনতাম। সেঞ্চুরি হলে গাঁদাফুল আর বেলপাতার গন্ধমাখা নারকেলের নাড়ু।

এখন মনে পড়লে ভাবি টিকলুর মা নিজে কি কোনওদিন ক্রিকেট খেলেছিল? শুনতে কেন এত ভালবাসত? কথাটা যে আমাদের মধ্যে কোনওদিন ওঠেনি তা নয়। সারাদিনের সব খেলার শেষে যখন আমরা গোল হয়ে পা ছড়িয়ে বসতাম, মাথার উপরে মশারা চাক বেঁধে ভনভন করত, অন্ধকার নেবে আসা বাড়িগুলো থেকে শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসত, সেরকমই একদিন সুমু বলেছিল বোধহয়, মাসিমা কি ক্রিকেট খেলেছে কখনও?

ধুর! মেয়েরা আবার ক্রিকেট খেলে নাকি? পুটু হাত উল্টে বলেছিল।

মেয়েদের আর ছেলেদের খেলাগুলো আলাদা সেটা আমরা জানতাম। মেয়েরা কিতকিত, দারিয়াবান্দা এইসব খেলে আর ছেলেরা ফুটবল, ক্রিকেট আর আলো কমে এলে কিরি। এইসব সত্যিগুলো উলকিকাটা ছিল আমাদের মনে।

এইরকম একদিন মাসিমার রেডিওতে মেয়েদের খেলার ধারাবিবরণী এল। মাসিমার কাছ থেকে আমরা শুনলাম নতুন কিছু নাম। শান্তা রঙ্গস্বামী, ডায়না এদুলজি এইসব। ওরাও চার মারে, বোল্ড আউট করে শুনে মাথার অনেক উপর দিয়ে একটা অবাক হাওয়া উড়ে গেছিল। কিন্তু রেডিওর ভিতর থেকে জলজ্যান্ত মানুষ হয়ে আমাদের মনে গজাতে পারেনি। প্রথম ক্রিকেট খেলা মেয়ে দেখেছিলাম প্রমিতা বৌদি বিয়ে হয়ে আমাদের পাড়ায় আসার কিছুদিন পর।

আমরা মাঠে খেলছিলাম। এমন সময় মানসদা আর প্রমিতাবৌদি রিক্সা করে বাড়ির পথে। ব্যাট করছিল ঝন্টু, আমার হাতে বল। হঠাত দেখি রিক্সা থামিয়ে প্রমিতাবৌদি নেবে এল। এই ঝন্টু, ওইভাবে ব্যাট ধরেছিস কেন?

আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে বৌদি গটগট করে আমাদের মাঠের মাঝামাঝি চলে আসছিল। আমি রান আপ থেকে দৌড় থামিয়ে হাঁ করে দেখছিলাম। মানসদা তখনও হাসি হাসি মুখে রিক্সায় বসেছিল, আমার মনে আছে।

ঝন্টু আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ব্যাট করে। তাকে বৌদি বলল, তোর খেলা আমি দেখেছি জানালা দিয়ে। তোর চোখ ভাল, ব্যাটে বলে লাগাস ঠিকঠাক। কিন্তু ঠিক করে স্ট্যান্স নিলে আরও ভাল খেলতে পারবি। আর ব্যাট ধরাটা বদলাতে হবে তোকে।

প্রমিতাবৌদি পাড়ায় বিয়ে হয়ে এসেছে তখন মাস ছয়েক, ওদের বাড়িটা মাঠের থেকে একটু তেরছা মতন। বৌদি আমাদের খেলা দেখত জানতাম না তো। আমরা হাঁ করে চেয়েছিলাম। বৌদি শাড়িটা কোমরে আঁট করে জড়িয়ে ঝন্টুর কাছ থেকে ব্যাটটা নিয়ে নিল। বৌদির চোখদুটো উত্তেজনায় চকচক করছিল, যেমন স্কুলের টিফিনে বাদামীরঙা হজমিগুলি হাতে পাওয়ার মুহূর্তে আমাদের লোভার্ত চাউনি।

দ্যাখ এইভাবে রাখবি দুটো পা, মাঝে একটু ফাঁক থাকবে– বলতে বলতে পায়ের অবস্থান বোঝাতে বৌদি শাড়িটা হাঁটুর কাছে তুলে নিয়েছিল, যুবতীপায়ের সুডৌল গোছ দেখে শিরশিরানি হবার বয়েস ধরছে তখন আমাদের। বৌদি এক ঝাঁক বাচ্চাকে তখনও বোঝাচ্ছিল, দ্যাখ হাতটা রাখবি ব্যাটের হ্যান্ডেলের এইখানে, অনেক বেশি জোর থাকবে তোর মারে।

আমরা হাঁ করে শুনছিলাম। পুটু বলল, তুমি ক্রিকেট খেলেছ নাকি বৌদি?

আমাদের দিকে তাকিয়ে এবার হাসল বৌদি। বেলা পড়ে আসা সূর্যের আলো ঝলকালো দাঁতে। কপালে চন্দনের ফোঁটার মত ঘাম নিয়ে বৌদিকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছিল তখন, বৌভাতের রাতের থেকেও। আমি তো ক্যাপ্টেন ছিলাম রে কলেজ টিমের। বম্বেতে শুধু গাভাসকার না, মেয়েরাও ক্রিকেট খেলে। বুঝলি ছোঁড়া? তারপর কোমর বেঁকিয়ে, চুলের গোছা ভুরুর উপর থেকে সরাতে সরাতে আমায় বলল, এইবার বল কর দেখি।

মানসদা এতক্ষনে রিক্সা থেকে হাঁক পাড়ল, মিতা দেরি হয়ে যাচ্ছে যে। মার বেস্পতিবারের পূজার সময় হয়ে এল। মানসদা ব্যাঙ্কে চাকরি করে। প্রমিতাবৌদিও, পাড়ার একমাত্র চাকরি করা মেয়ে।

মানস, একটু দেখিয়ে দিয়ে যাই ওদের! এই বলাই চটপট বল কর দেখি। মনে আছে এই কথায় আমি আরও চমকে উঠেছিলাম। তখনও বাঙালি বাড়িতে বরকে নাম ধরে ডাকার রেওয়াজ শুরু হয়নি। কিন্তু খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে বৌদি মানস বলে ডেকেছিল।

আমি দৌড়ে দৌড়ে এসে বল করলাম, বৌদি এক পা এগিয়ে এসে অফ ড্রাইভ করতেই বলটা মাটি ঘেঁসে ছুটতে ছুটতে সোজা নর্দমায়। অফ সাইডের বাউন্ডারিতে আমাদের ফিল্ডার থাকে না, তাই আটকানোর প্রশ্নই ছিল না।

এমা, তোদের বলটা নষ্ট হয়ে গেল, কী হবে?

বৌদি ঝন্টুর হাত থেকে ব্যাট নিয়ে নিয়েছিল, সেটা ওর মোটেই পছন্দ হয়নি। সে গম্ভীর মুখে বলল, আউট!

কেন, আউট কেন? খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল বৌদি।

নর্দমায় গেলেই আউট, আর যে মারবে তাকেই বল ধুয়ে আনতে হবে।

মিতা তুমি আসবে কি? ধুপ কাঠি না নিয়ে যাওয়া অবধি মা পুজো শুরু করতে পারবে না। মুখ দেখে মনে হল, দাঁড়িয়ে থাকলে মানসদা হয়তো এইসময় ঘোড়ার মত পা ঠুকত।

বল ধুতে হবে শুনে বৌদি প্রথমে একটু ঝটকা খেলেও সামলে নিয়ে ঝন্টুর হাতে ব্যাট ফেরত দিতে দিতে বলল, তাহলে আমিও ধুয়ে দিচ্ছি। জল কোথায় রে?

আমি বললাম, থাক বৌদি। আমি ধুয়ে নিচ্ছি।

না, তোদের যেরকম নিয়ম তেমনি হবে। রিক্সার দিকে ফিরে এবার গলা ছেঁড়ে চেচাল বৌদি, এই শোনো, তুমি বাড়িতে ঢুকে যাও। আমি ওদের বলটা উদ্ধার করে আনি। এটুকু হেঁটে চলে যাব।

এখনকার মানসদা আর একটু আগের ঝন্টুর মুখটা অনেকটা একরকম লাগছিল। চোখের সাদাটা কম, ভুরুর উপরে কপালের চামরা একটু কুঁচকান। ঝন্টু দাঁড়িয়ে ছিল তাই কোমরে দুহাত রাখা ছিল। মানসদা থলি হাতে রিক্সায়, হাতটা দুই পায়ের মাঝে গোটান।

রিক্সাটা টুংটুং আওয়াজ তুলে ভটচাজ বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

ভাল করে বলটা ধুয়ে দিতে দিতে ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে হেসেছিল বৌদি, দেখে নিলি তো কিভাবে ব্যাট ধরতে হয়, এইভাবে ধরলে হাতটা অনেক ফ্রি হয়ে যায়। আমি আরেকদিন সময় করে এসে তোদের দেখিয়ে দেব। বৌদির চোখেমুখে খুশি ঝিকমিক করতে দেখেছিলাম।

ঝন্টু মুখ গোঁজ করে সেদিন দাঁড়িয়ে থাকলেও বদলে নিয়েছিল ওর ব্যাট ধরাটা, খেলছিলও আগের থেকে ভাল। কিন্তু বৌদি আর আসেনি।

বরং ঝুনু এল একদিন। এই, আমাকে খেলতে নিবি?

তখন আমরা সবেমাত্র দিনের খেলা শেষ করে পিচের ধার ঘেঁষে গোল হয়ে বসে আছি। ঝন্টু ওর ছোটকাকুর সিনেমার ম্যাগাজিন থেকে জিনাত আমনের একটা ছবি কেটে এনেছিল। পকেট থেকে বের করে ভাঁজ খুলে দেখাচ্ছিল। আমাদের তখনও হিন্দি সিনেমা দেখার বয়েস হয়নি। রেল স্টেশানে লাগানো পোস্টারে এর ছবি দেখেছি, পুজোর সময় মাইকে গান শুনেছি দম মারো দম। কিন্তু এইভাবে হাতের মুঠোয় জিনাত আমনের ছবি, কাগজের ভাঁজ জিনাতের খোলামেলা বুকের উপর দিয়ে তেরচা করে চলে গিয়েও আমাদের সেরকম দমাতে পারেনি। গলুটা ঝুঁকে পড়ে দেখে বলল, এমা, কিরকম দুদু বের করে রেখেছে। বাড়িতে কিছু বলে না?

সবার মধ্যে মুখে হাত চাপা হাসি সংক্রামিত হল। ঝন্টু গম্ভীর মুখে বলেছিল, একি আমাদের এই ধ্যাধধেরে গোবিন্দপুরের মেয়ে? এস্টার বুঝলি, বোম্বাইয়ের তারকা!

এরকম শনশনি পরিস্থিতিতে ঝুনু। লাল ফুলফুল ছাপের হাঁটুছাড়ানো ফ্রক, পায়ে কেডস, বেড়াবেনুনি দোলানো ঝুনু দুই কোমরে হাত দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে। ঝুনুকে আমরা দেমাকি ভাবতাম। ওর বাবা বড়লোক, রোজ রিক্সা করে স্টেশনে অফিসের ট্রেন ধরতে যায়। তার চেয়েও বড় কথা ঝুনুর বাবা মাথায় বাদামি রঙের পরচুলা পরে। আমাদের পাড়ায় অনেকের মাথা জোড়া টাক ছিল, কিন্তু কেউ তো পরচুলা পরে বাচ্চা সাজত না। মিত্রবাড়িটা একটু অভিজাত ছিল, তিনতলা বাড়িটা লম্বা চওড়ায় পাড়ায় মাথা উঁজিয়ে থাকত।

ঝন্টু তাড়াতাড়ি হাতের কাগজ পকেটে চালান করে গম্ভীর মুখে বলল, মেয়েরা ক্রিকেট খেলে না।

লেখা আছে কোথাও? ঝগড়ুটে মোরগের মত ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলেছিল ঝুনু।

মার রেডিওতে মেয়েরা খেলে কিন্তু। দূর আকাশে মেঘের চূড়ায় চোখ রাখা ছিল টিকলুর।

আমাদের খেলার নিয়ম আমাদের মত, তোর রেডিওর খেলায় কি নর্দমায় বল পড়লে আউট হয়? টিকলুকে পাহাড়ের চূড়া থেকে এক ঝটকায় আমাদের এক চিলতে খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনল ঝন্টু।

নর্দমায় বল ফেললে আমি ধুয়ে দেব।

সবারটা? একটু নড়েচড়ে বসেছিল সুমু।

ইস, আমার বয়ে গেছে। জিভ ভেঙিয়েছিল এবার ঝুনু।

তাহলে হবে না।

আমার বাবা কালকে আমাকে এক ডজন বলের একটা বাক্স কিনে দিয়েছে।

এইবার মাঠে একটু নিস্তব্ধতা। আমরা টেনিস বলে খেলতাম, একেকটার দাম দশ টাকা। সপ্তাহে অন্তত দুটো বল লাগে, হারিয়ে গেলে আরও বেশি। বারোটা বলের লোভ কিছু কম নয়। আমরা নিজেদের মধ্যে একটু গুজগুজ করলাম। গলু একটু বেশি উত্তেজিত। কারন বল কিনতে না হলে, ওকেও আর শুধু ফিল্ডার হয়ে থাকতে হবে না। পুটু বুক ঠুকে বলেছিল, খেলুক না। ওকে এক বলে আউট করে দেবো। টিকলু অবশ্য সতর্ক করে দিল, স্কুলে ছেলে আর মেয়েদের একসঙ্গে দৌড় ছিল। ঝুনু জিতে গেছিল কিন্তু। পুটু দমল না, ধুস! আগে তো ব্যাটে বলে লাগাক, তারপরে তো দৌড়াবে।

ফ্রিতে বারোটা বল পাওয়ার লোভ সামলানো আমাদের জন্য মুশকিল ছিল।

ঝন্টু বলল, ফ্রক পড়ে খেলবি কি করে?

ব্যাপারটা সন্ধির দিকে এগোচ্ছে বুঝে ঝুনু বলল, আমার প্যান্ট আছে, মামাবাড়ি গেলে পরি।

পরদিন এক বাক্স বল হাতে, সাদা ফুলকাটা শার্ট আর নীল সাদা ডোরাকাটা ফুলপ্যান্ট পড়ে ঝুনু খেলতে এল। বারোটা বল এক সঙ্গে এনেছে, আর এক বলে তো আউট হবেই সেই খাতিরে ঝুনু ওর দলের হয়ে প্রথম ব্যাট করতে এল। কিন্তু পুটু ওকে এক বলে আউট করতে পারল না। ঝুনু ব্যাটে বলে লাগিয়েও দিল আর তার পরে যখন ছুটল, দেখে মনে হল হরিণ দৌড়াচ্ছে।

ঝুনু আমাদের দলের নিয়মিত খেলুড়ে হয়ে গেল। শুধু তাই নয় মাস খানেকের মধ্যে ঝন্টুর থেকেও ভাল ব্যাট চালাতে শুরু করল। আর সেখানেই হল মুশকিল।

আমরা মাঝে মধ্যেই অন্য পাড়ার সঙ্গে ম্যাচ খেলতাম। ঝন্টু নেতাজি স্পোর্টিঙের সঙ্গে ম্যাচ ঠিক করে এল। শনিবার দুপুর দুটোয়, এক ইনিংসের ম্যাচ। সমস্যা হল ঝুনুকে নিয়ে। এই কদিনেই আমরা বুঝে গেছি যে ও ক্রিকেটটা ভাল খেলে। ব্যাটিং করে ঝন্টুর থেকেও ভাল। সব চেয়ে বড় কথা এই কদিনেই ঝুনু আমাদের দলের মাতব্বর মতন হয়ে গেছে। প্রথমে বল এনেছিল, তারপর একটা এসজি লেখা চকচকে নতুন ব্যাট। তাই ম্যাচ থেকে ওকে বাদ দেওয়াও কঠিন। কিন্তু ছেলেদের টিমে একটা মেয়েকে কীভাবে নিয়ে যাই?

আমরা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছিলাম।

টিকলু বলল, ওকে বলে দ্যাখ না মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে নিতে, অনেকটা ছেলে ছেলে লাগবে।

ঝুনুর কমনীয় মুখটা শুধু চুল ছেঁটে ছেলে ছেলে লাগবে বলে মেনে নিতে পারছিলাম না। তবে আমাদের স্কুলের পিলুকে মনে করলাম, ছেলে হলেও ওকে তো কেমন মেয়ে মেয়ে লাগে। এমন হতেই পারে তো।

হ্যাঁ, তোকে বলেছে! বুকের বলদুটো কোথায় যাবে?

আমাদের বয়েস তখন তেরো চোদ্দ। শুধু টিকলুর পনেরো। ঝুনুরও চোদ্দ হবে হয়তো। বুক উঠতে শুরু করেছিল, মেয়ে বলে জানান দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এই তোরা কী বলছিস রে? ধপ করে এসে বসল ঝুনু।

আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিলাম। পুটু বলল, নেতাজি স্পোর্টিঙের সঙ্গে শনিবার ম্যাচ আছে। খেলবি?

লাফিয়ে উঠল ঝুনু, খেলব না?

ওরা যদি মেয়ে বলে বারণ করে?

তোরা নিতে চাস না আমাকে? চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করেছিল মেয়েটা। যেন আমাদের মনের ভিতরটা মাপছিল।

খেলব ওদের মাঠে, ওরা যদি ছেলেদের দলে মেয়ে রাখতে না দেয় তখন কী করব?

ঘাসের শিষ তুলে দাঁতে কাটছিল ঝুনু। ভাবছিল। শোন, আগে থেকে কিছু বলিস না, একেবারে গিয়ে হাজির হব। তখন যা হওয়ার হবে।

ওরা কিন্তু জিজ্ঞেস করেছিল। আমতা আমতা করে বলেছিল ঝন্টু।

কী জিজ্ঞেস করেছিল?

না মানে ওদের অনেকে দেখেছে তুই আমাদের সঙ্গে খেলিস। বলছিল, দেখিস আবার ওটাকে টিমের সঙ্গে নিয়ে আসিস না।

ওটা মানে? চকলেট বোমের সলতে আগুনে ফড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়াল ঝুনু, তারপর ফেটে পড়ল। তোদের সঙ্গে খেলি আর আমাকে ওরা এটা ওটা বলে ডাকবে, তুই কিচ্ছু বললি না?

নাকের পাটা ফুলে উঠেছিল ঝুনুর, মুখটা আষাঢ়ের মেঘের মত থমথমে। যা, খেলব না আমি আর তোদের সঙ্গে। ভেড়ুয়া কোথাকার!

গটগট পায়ে মাঠ পেরিয়ে চলে যাচ্ছিল ঝুনু।

ঝুনু প্রথম যখন খেলতে চেয়েছিল সে ছিল অন্যরকম। ওকে কে কী বলল, তখন আমাদের কী যায় আসে। কিন্তু এখন ও আমাদের দলের একজন। ছড়ানো ছিটানো তারাগুলো অদৃশ্য রেখায় এমন জুড়ে গেছে কে ছেলে কে মেয়ে আমরা ভুলেও যেতে শুরু করেছিলাম। গলু পিছন পিছন দৌড়ে গেল কালপুরুষের কুকুরটার মত। আমরা যদিও বসেই রইলাম, কেউ আটকাইনি গলুকে। গলু ঝুনুর হাত ধরে টানল। এই ঝুনু, তোকে ছাড়া আমরা খেলব না কি? তুই হলি আমাদের গাভাসকার।

তিন সত্যি? ঝুনুর গলায় ভাদুরে বৃষ্টি মাথায় করা ব্যাংটা তখনও ঘড়ঘড় করছিল।

কালী মায়ের দিব্বি, তোকেই আমরা ক্যাপ্টেন করে নিয়ে যাব।

বল কেনার পয়সা না দিতে পারার লজ্জাটা কেটে গিয়ে গলুর আজকাল বেশ কথা ফুটছে মুখে। আমরাও সেভাবে আপত্তি করতে পারিনি। যে সবচেয়ে ভাল ব্যাট করে সেই তো ক্যাপ্টেন হয়, নাকি?

রবিবার দুপুরবেলায় তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আমরা ম্যাচ খেলতে গেলাম। গেলাম মানে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়। নেতাজি স্পোর্টিঙের মাঠের ধারে আমাদের মত নর্দমা নেই।

ওদের মাঠটা আমাদের চেয়ে বড়। যদিও একটু দূরে দূরে ঘাস ফুঁড়ে মাটি মুখ বাড়িয়েছে, শীতের রোদে মাখা মাঠটা দেখেই আমরা খেলার জন্য চনমন করে উঠেছিলাম। নেতাজি স্পোর্টিঙের ছেলেরা মাঠে নেবে প্র্যাক্টিস করছিল। ঝন্টু ম্যাচ ঠিক করেছিল, তাই আগে আগে গেল। ঝুনুটা তড়বড়ে, সঙ্গে লাফাতে লাফাতে সেও। আমরা পিছন পিছন।

ওদের ক্যাপ্টেন সিধু ঝুনুকে দেখে খুব উৎসাহিত হয়ে টেরছা চোখে তাকিয়েছিল, তোদের স্কোরার বুঝি?

ঝুনু টরটর করে উঠেছিল, কেন রে? আমি কেন মাঠের ধারে বসে থাকব?

সিধু একটু থতমত খেয়ে বলেছিল, তাহলে কি আম্পায়ার?

গলু ততক্ষণে পৌঁছে গেছে। বলল, আমাদের ক্যাপ্টেন।

নেতাজির ছেলেদের মধ্যে একটা হাসির রোল উঠল। তোদের ক্লাবের নাম বদলে গেছে নাকি রে?

আমরা স্বরস্বতীপূজা করতাম, ক্লাবের নাম বালক সঙ্ঘ। সেটা নিয়েই খোঁচা।

শোন গতবার গোহারা হেরেছিলি। তোদের কোন ইজ্জত নেই, মাউগ্যাপনা কর। কিন্তু আমাদের চারদিকে ম্যাচ খেলে বেড়াতে হয়। যেদিন কিতকিত খেলতে যাব, তোদের এই ক্যাপ্টেনকে সঙ্গে রাখিস।

না রে কবাডি, একেবারে জাপটে ধরে টিপে দেব। সদ্য গোঁফ গজানো যে ছেলেটা বলেছিল, তাকে আমি চিনি না। কিন্তু আর সবাই খিকখিক করে হেসে উঠল।

ঝুনু ভীষন রেগে গেছিল। মুখ লাল করে বলল, বাড়িতে মা বোন নেই, এমনভাবে কথা বলিস?

তুইও বাড়িতে থাকলে বলতাম না।

আর একটা ছেলে ফুট করে বলে উঠল, একটা মালের সঙ্গে তোরা এতগুলো ফিট হলি কী করে রে?

এবার ঝন্টু ব্যাট হাটে তেড়ে গেল। এই শালা, একদম ফালতু কপচাবি না, মেরে মাথা ফাটিয়ে দেব।

এই ঢ্যামনা, বিচিতে খুব রস হয়েছে না, কেলিয়ে আটা পাকিয়ে দেব একদম। বলেই সেই গোঁফ ওঠা ছেলেটা ঝন্টুর উপরে লাফিয়ে পড়ল। ঝন্টু মাটিতে, ছেলেটা ওর উপরে। ডান হাত দিয়ে ঝন্টুর গলা টেপার চেষ্টা করছে, আর ঝন্টু মাথা সরাতে সরাতে মাটিতেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এমন চললে কি দাঁড়াত বলা যায় না, কিন্তু ঝুনু ছেলেটার পিছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল চড় মারতে শুরু করে দিল আর ছেলেটা হকচকিয়ে ঝন্টুকে ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। একটা মেয়ের সঙ্গে মারপিট করা ঠিক হবে কি না ভাবছিল হয়তো, কিন্তু ঝুনু সেই সুযোগ দিল না। অ্যাই ঝন্টু, উঠে পড় তো। এই ভেড়ুয়াগুলোর সঙ্গে খেলব না আমরা, ভয় পেয়েছে যদি আমি ওদের হারিয়ে দিই। ঝুনুর গলায় তেজ ছিল, সঙ্গে হিসহিসানি। যদিও ভেড়ুয়া বলাটাই ওর কাছে গালাগালির চূড়ান্ত, গলার তেজ আর চোখের আগুনে সেটাই নেতাজির ছেলেগুলোর জন্য গুগলি হয়ে গেছিল।

ঝুনুর পিছন পিছন লাইন দিয়ে আমরা নেতাজি স্পোর্টিঙের মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে পড়লাম। ম্যাচ হল না, মাঝখান থেকে কিরকম বিশ্রী একটা ঝগড়া হয়ে গেল।

শীতের রোদ পিঠে নিয়ে আমরা ফিরছিলাম। ঝুনুর মুখ থমথম করছিল। আমাদেরও মুখ গোমড়া।

এই সময় টিকলু বলে উঠল, মা কী বলে জানিস ঝুনু? দূর থেকে ভাবলি বুঝি অরুন্ধুতী বশিষ্ঠর থেকে কমজোরি! আসলে দুটো তারাই সমান, কেউ কারও থেকে কম যায় না। একে অপরকে পাক মেরে যখন যেটা সামনে আসে সেটাকেই বড় মনে হয়।

তুই মাসিমনিকে জিজ্ঞেস করেছিলি বুঝি?

মাথা ঝাঁকাল টিকলু।

ঝুনুর মুখে হাসি ফুটল এবার। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ম্যাচ হয়নি তো কী হয়েছে, দুপুর রোদে দুটো টিম বানিয়ে খেলব এখন। তাতেও কম মজা হবে না।

কমবেশি আমরা সবাই তারা চিনতে শিখছিলাম।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...