সুজন ভট্টাচার্য
লেখক প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক, কবি।
ভারত সেঞ্চুরি করে ফেলল ৫ এপ্রিল মাঝদুপুরে। করোনা-র প্রকোপে মৃত্যুসংখ্যায়। রাত আটটার মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০০ ছাড়িয়ে গেল। মারা গেলেন আরও পনেরো জন। আর ঠিক এক ঘণ্টা পরেই রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয়ে গেল আতসবাজির রোশনাই, শব্দবাজির হুঙ্কার। কোনও কোনও জায়গায় অত্যুৎসাহীরা নাকি হাতে মোমবাতি কিংবা মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে মিছিলও করে ফেললেন, ‘করোনা-র কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ শ্লোগান সাজিয়ে। বেচারা করোনা যে কী করে সম্ভবত ভেবেই পাচ্ছিল না। লজ্জায় মুখ লুকোবে, নাকি আত্মহত্যাই করবে! বিশ্বের ২০৮টি দেশে করোনা ভাইরাস কমবেশি তার খেল দেখাচ্ছে। কিন্তু এমন জনগণেশি খেল সে নিজেই কোথাও দেখেনি।
মিছিল আর বাজি-র উৎসবের কারণটা কী ছিল? মৃত্যুর সেঞ্চুরি উদযাপন? নাকি আরও কয়েক হাজার মৃত্যু যাতে অতি দ্রুত হতে পারে, তার বন্দোবস্ত করা? বলা মুশকিল। কারণ দেশটা অবতারের নামে চললেও আসলে ভক্তদের লীলাখেলার দেশ। রামায়ণের গল্পকথা রামচন্দ্রের নামে চললেও, জনমানসে আসল ইমপ্যাক্ট ফেলে তাই বানরবাহিনী। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সেবাকার্যে তাই সুগ্রীব-রাজার প্রয়োজন পড়ে না। লেজে সুড়সুড়ি পড়লেই হল। এক লাফে সমুদ্রপার না হোক, বেড়া ডিঙোতে আর অসুবিধে কী? এই সার কথাটা যিনি যত ভাল বোঝেন, তিনি তত বড় দেশনায়ক অথবা ম্যাজিশিয়ান। আর এই মুহূর্তে ম্যাজিক ছাড়া আর কীসের ভরসায় থাকবে আম-জনতা?
হ্যাঁ, এটা ঘটনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইতালি-স্পেন কিংবা বৃটেনের তুলনায় ভারতে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির হার অনেক কম, মৃত্যুহারও কম আক্রান্তের সংখ্যার তুলনায়। তার মানে কি এটাই যে সোনার ভারতভূমে পা রেখেই কোভিড-১৯ ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়েছে? হ্যাঁ, কয়েকটা থিওরি-র কথা শোনা যাচ্ছে। আবহাওয়া ও উত্তাপ, ভাইরাসের মিউটেশন, ভারতবাসীর সাধারণ ইমিউনিটি ইত্যাদি। কোনওটাই এখনও প্রমাণিত নয়। এবং প্রমাণের জন্য একটা দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। তার আগেই দেশ উজাড় হয়ে যেতেও পারে, যদি এমন লীলাখেলা নিয়ম করে প্রত্যেক দু-সপ্তাহ অন্তর ঘটানো হয়। ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে গোটা বিশ্বে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৫ কোটি মানুষ। শুধু ভারতেই সেই সংখ্যাটা ছিল প্রায় দেড় কোটি। জানতেন কি?
কোভিড ভাইরাস আদৌ দুর্বল হয়েছে কিনা, এখনই বলার মত পরিস্থিতি আসেনি। কারণ ভারতে পরীক্ষার হার খুবই কম। এখনও পর্যন্ত মূলত রোগলক্ষণ প্রকাশ পেলেই টেস্টের কথা ভাবা হচ্ছে। মার্চ মাস পর্যন্ত আবার তার সঙ্গে বিদেশ থেকে ফেরা অথবা এমন কোনও মানুষের সংস্পর্শে আসার মাপকাঠি রাখা হয়েছিল। এপ্রিল থেকে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ বিদেশ-সংযোগের মাপকাঠিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন দেশজুড়ে গোটা কুড়ি হট স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে সংক্রমণের সংখ্যার ভিত্তিতে। সেখানে রোগলক্ষণ থাক আর নাই থাক, ব্যাপকহারে টেস্ট করা হবে, এমন সিদ্ধান্তই সরকার নিয়েছেন। ভাল কথা। কিন্তু টেস্ট কিট? সেটা কোথায়? তার বন্দোবস্ত কতটা হয়েছে?
৩০ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছিল ৩৮,৪৪২ জনের। আর ৩১ তারিখ সেই সংখ্যাটা বেড়ে হল ৪২,৪৪০। অর্থাৎ একদিনে টেস্ট হয়েছিল ৩৯৯৮ জনের। তার মধ্যে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন ২৬৯ জন। শতাংশ হল ৬.৭২। ৩১ মার্চ ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬১৬। অর্থাৎ পরীক্ষিত মানুষদের ৩.৮০ শতাংশ ছিলেন আক্রান্ত। আবার প্রতি এক লক্ষ দেশবাসীর মধ্যে পরীক্ষিত মানুষের গড় হার ছিল ৩.২৬। ১ এপ্রিল নিজামুদ্দিনের তবলিগ-ই জামাতির সূত্রে আচমকাই আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার পর ৩ এপ্রিল সরকারি সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়েছে। যদিও সঠিক সংখ্যা এখনও পাওয়া যাচ্ছে না, তবুও দিনে অন্তত ১০,০০০ পরীক্ষা হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে এপ্রিলের প্রথম ৫ দিনে পরীক্ষা হয়েছে ৩২,০০০ জন মানুষের। তাহলে পরীক্ষিত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় ৭৫ হাজার। ৫ এপ্রিল মাঝরাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪২৮৯। সেক্ষেত্রে পরীক্ষিত মানুষদের মধ্যে আক্রান্তের হার হল ৫.৭১ শতাংশ। অর্থাৎ এই শতাংশটা বাড়ল। আর প্রতি ১ লক্ষে পরীক্ষার হার ৫.৬৩। যতক্ষণ না এই হারকে নিদেনপক্ষে ১ শতাংশে অর্থাৎ প্রতি লক্ষে এক হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা না যাচ্ছে, ততদিন সিদ্ধান্ত নেবার মত কোনও তথ্য আমাদের হাতে আসবে না।
করোনা টেস্ট সংক্রমণ ঘটার পর যত দ্রুত জানা যাবে, তার সুফল তত বেশি করে পাওয়া যাবে। প্রথমত যিনি আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হবেন এমনকি রোগলক্ষণ প্রকাশ পাবার আগেই, তার সেরে ওঠার সম্ভাবনা তত বেশি বাড়বে। আবার আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হওয়া মাত্র তাকে কোয়ারান্টাইনে ঠেলে দেওয়া হবে। ফলে তার পক্ষে বেশকিছু মানুষকে নতুন করে সংক্রমিত করার সম্ভাবনা কমবে। আগাম পরীক্ষার সুবিধা এটাই। সম্ভাব্য রোগীকে অনেক আগেই চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে। আবার গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনাকেও কমানো যাবে। যে লকডাউন আমরা পালন করছি, সেটাকে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ ছাড়া অন্য কিছুই বলা যায় না। করোনা-র উপদ্রব আটকাতে হলে একই সঙ্গে সক্রিয় প্রতিরোধ চাই। সক্রিয় প্রতিরোধ মানে আগাম পরীক্ষা, ব্যাপকহারে। একমাত্র এভাবেই আমরা দ্রুত করোনা-র প্রকোপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।
ঘণ্টা বাজানো আর প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচি ছাড়া ভারত সরকারের এই ক্ষেত্রে ভূমিকা কী? কোনও পরিকল্পনা না করেই চটজলদি লকডাউন শুরু করে দেওয়া ছাড়া সরকারের অন্য কোনও সক্রিয়তা ২৪ মার্চের আগে দেখা যায়নি। তার পরেও যতটুকু সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বললেও বোঝানো যাবে না। আমাদের স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো যে আদৌ প্রস্তুত ছিল না, সেটা ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে গেছে। যে সরকার ১৩ মার্চ জানায় করোনা সংক্রমণ এখনও কোনও হেলথ ইমারজেন্সি নয়, তার কাছাখোলা দশা প্রমাণ করতে আর কোনও তথ্য লাগে না। দেশে করোনা ডিটেকশন কিট উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া হল ২৪ তারিখ। সেই কিট বাজারে আসতে এপ্রিলের মাঝ-বরাবর হয়ে যাবে। জনতা কারফিউ-এর মধ্যেই জাতীয় শঙ্খ-বাজানো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। পরিণতি হল রাস্তায় ক্যানেস্তারা বাজিয়ে গণ-নৃত্য। এই পরিস্থিতিতে জমায়েত করার জন্য তবলিগ-ই জামাতের বিরুদ্ধে আঙুল উঠেছে। একদমই ঠিক। কিন্তু এইভাবে যারা রাস্তায় রাস্তায় গণ সংযোগ গড়ে তুলল, তাদের বিরুদ্ধে আঙুল উঠল না কেন?
ঘরে শঙ্খ বাজানো বা প্রদীপ জ্বালানোর কর্মসূচির প্রভাব একরকম। দীর্ঘদিন ঘরে আটকা পড়ে থাকতে থাকতে মানসিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা তো বাড়েই। একদিকে স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, পাশাপাশি আর্থিক দুর্ভাবনা, অন্যদিকে টিভি-রেডিও-সোস্যাল মিডিয়া সর্বত্রই করোনা-র আতঙ্ক। এই পরিবেশে মাথার উপর চাপ তো বাড়বেই। সেই সময়ে একদিন শাঁখ বাজানো, একদিন প্রদীপ জ্বালানো কি আরেকদিন গান গাওয়ার কর্মসূচি মানুষকে সামান্য হলেও মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সুযোগ দেখায়। হ্যাঁ, এর বেশি কোনও তাৎপর্য খুঁজতে যাবার কোনও মানে হয় না। যে মানুষগুলো আহ্লাদে কাঁসর বাজিয়েছেন কিংবা ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি জ্বালিয়ে আশা করেছেন এই আতঙ্ক কেটে যাবে, যেদিন তার নিজের ভাতের থালায় টান পড়বে, সেদিন এসব সে আপনা থেকেই ভুলে যাবে। ভারতীয় অর্থনীতির জাহাজ সক্ষম ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে বহুদিন ধরেই ডুবছে। করোনা আতঙ্কের আবহে সেই জাহাজ কাত হয়ে পড়তে বাধ্য। আর্থিক সঞ্চয়ের বহরে সরকার সেই জাহাজকে আবার ঠেলেঠুলে খাড়া করতে পারত। কিন্তু এক বছর ধরে সরকার একদিকে ব্যাঙ্কের টাকা মেরে পালিয়ে যাওয়াদের বাস্তবত ছাড় দিয়ে, অন্যদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিলে হাত দিয়ে সেই জায়গাটাই নষ্ট করে দিয়েছে। ভারতের অর্থনীতিকে এখন একমাত্র কোনও ম্যাজিক-ই বাঁচাতে পারে।
সেটা অন্য আলোচনা। কিন্তু ৫ এপ্রিল রাতে যারা আতসবাজির প্রদর্শনী করলেন কিংবা বাজি ফাটিয়ে একতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন, তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে। এদের স্রেফ বুদ্ধিহীন বলে এড়িয়ে গেলে হবে না। হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্পষ্ট ভাষাতেই বলেছিলেন, ঘরের বাইরে আসবেন না। ঘরের মধ্যেই প্রদীপ জ্বালান। কিন্তু ২৪ তারিখের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এটা তাঁর বোঝা উচিৎ ছিল যে উপলক্ষ পেলে ঘরে এরা বসে থাকবেন না। কিংবা হয়তো সেটাই কাম্য ছিল। হয়তো এটাই দেখানোর ছিল যে এত কষ্টের মধ্যেও ভারতবাসী দিব্যি আছে; তাদের উৎসাহ কিংবা আমোদে কোনও ভাটা পড়েনি। একটা কথা বলুন তো। লকডাউন চলছে ২৪ তারিখ থেকে। ১২ দিন ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া অন্য সমস্ত দোকান বন্ধ। তাহলে এত বাজি এল কোত্থেকে? তাহলে কি বাজির সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছিল? নাকি কেউ কেউ ঘরে চালডালের সঙ্গে বাজিও মজুত করেছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়াটা খুব জরুরি।
কেন জরুরি? প্রথমত এই গণ-উৎসবের মাধ্যমে এরা লকডাউনের কর্মসূচিকে ভেঙেছেন। তবলিগ-ই জামাতের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, এদের বিরুদ্ধেও সেই একই অভিযোগ ওঠা উচিৎ। যুক্তি সেই কথাই বলে। তবলিগ-ই জামাত তবু সম্মেলনের আয়োজন যখন করেছিল, তখন কেন্দ্রীয় সরকারও কোনও নির্দেশ জারি করেনি। তাতেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এবং ওঠাটাই স্বাভাবিক। মৌলানা সাদ কান্দালভি সহ মারকাজ নিজামুদ্দিনের যাবতীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। একদম ঠিক কাজ হয়েছে। কিন্তু রামনবমীর জমায়েত থেকে শুরু করে ৫ এপ্রিলের রাতে যারা এমন কাণ্ড ঘটাল, তাদেরও শনাক্ত করে এফআইআর করা উচিৎ। এরা জেনেশুনেই লক ডাউনের কর্মসূচিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাই এরা জাতীয় অপরাধী। এই কাজ যদি না করা হয়, তাহলে করোনা-র প্রকোপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।
তার থেকেও বড় একটা হিসাব আছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকেই ভারত সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল, করোনা সমস্যাকে আদৌ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ২২ তারিখের জনতা কারফিউয়ের আগে পর্যন্ত সরকার যে সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে ভাবছেন, এমন কোনও ইঙ্গিত জনজীবনে কোথাও ছিল না। সরকারের হাতে না ছিল উপযুক্ত সংখ্যক ডিটেকশন কিট, না ছিল অন্যান্য পরিকাঠামো। এমনকি লকডাউন ঘোষণার সময়ও কোটি-কোটি গরিব মানুষ, বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা মাথায় রাখা হয়নি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট-কে নির্দেশ জারি করে কেন্দ্রীয় সরকারকেই এদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবার কথা বলতে হল। কেন্দ্রীয় সরকারের উপায় অবশ্য ছিল না। মধ্যপ্রদেশের সরকার গড়ার খেলায় তারা তখন প্রবল ব্যস্ত। সেই সরকার গদিতে বসার পরই করোনা নিয়ে ভাবনার অবসর মিলল। জল তখন গঙ্গা-যমুনা দিয়ে অনেকদূর গড়িয়ে গেছে।
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই জড়দ্গব ভূমিকা পালন করে এসেছে। যাবতীয় সংক্রমণ বিদেশ থেকে আসছে বুঝেও মার্চের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করেনি। যদি করা হত, তাহলে আজ সংক্রমণের আমদানির সুযোগ থাকত না। এমনকি তবলিগ-ই জামাতের বহু-নিন্দিত জমায়েতটি হওয়ারও সুযোগ থাকত না। পশ্চিমবঙ্গে যে-কজন এই ভাইরাস আমদানি করার কৃতিত্বের দাবী করতে পারেন, তারাও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতেন। যত বড় বড় লেকচারই দেওয়া হোক না কেন, সবাই জানে হাল বিগড়োলে নিতান্ত ভক্তও এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসবে। তাই কি এমন গণ-কর্মসূচির আহ্বান? তাই কি বিশেষ উদ্যোগে আতসবাজির ভাণ্ডার বানিয়ে রাখা? যাতে দেখানো যায় দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একসুরে কথা বলছেন? তাঁর নীতি বা কর্মপদ্ধতি নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ন্যূনতম প্রশ্নচিহ্ন নেই? সবাই কেন্দ্রীয় সরকারের লীলাখেলায় সন্তুষ্ট?
অসম্ভব নয়। কারণ পেড আপ সাপোর্ট সিস্টেম কতটা খেলেছে, বলা মুশকিল। শঙ্খ বাজানোর কর্মসূচির পক্ষে মনগড়া তথ্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের নামে ঢালাও প্রচার করা হয়েছিল। মাথায় রাখবেন, এইসব পেড সাপোর্টাররা খুব ভালই জানেন, আজকের দিনটা পার করে দিলেই আগামীকাল আর কেউ প্রশ্ন করবে না। ঠিক তাই হয়েছে। সেই সাপোর্টাররাই আবার প্রদীপ জ্বালানোর পিছনে নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করতে শুরু করে দিল। এদেরই কেউ কেউ দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে জায়গায় জায়গায় আতসবাজি জমিয়ে রেখেছিল কিনা, তদন্ত হওয়া দরকার। রাতে আচমকা মিছিল যে কেউ চাইলেই শুরু করতে পারে না। পিছনে একটা সাংগঠনিক ভূমিকা থাকতেই হবে। কারা এরা? এই বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসা উচিৎ। এই মুহূর্তে আমরা কমিউনিটি স্প্রেডিং-এর মুখে দাঁড়িয়ে আছি। সেই সময়ে যারা এমন কাণ্ড করতে পারে, তারা সব গণশত্রু।