বলিউডের কিশোর-আকাশ এবং চকলেট বয়

ঋষি কাপুর | অভিনেতা

চণ্ডী মুখোপাধ্যায়

 



লেখক সাংবাদিক, চলচ্চিত্রবেত্তা, বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সভামুখ্য

 

 

 

চকলেট বয়। ঋষি কাপুরের নিক-নেম বলিউডে। আর এই চকলেট বয়ই বলিউড সিনেমার যৌনতার ব্যকরণ পালটে দিয়েছিলেন একটি ছবিতে। অবশ্যই পরিকল্পনাটা ছিল তার বাবা রাজ কাপুরের। নায়ক ১৭ নায়িকা ১৬। ভারতীয় সিনেমার মেইনস্ট্রিমে এই ভাবনা ভাবা ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই ছবির আগেই রাজ কাপুরের ‘মেরা নাম জোকার’ সুপারফ্লপ। অতএব নতুন ছবি সুপারহিট হতেই হবে। নিজের ছেলেকেই বেছে নিলেন নায়ক হিসেবে। আর নায়িকা, সেটা আবিষ্কার করলেন। ডিম্পল। ১৭ বছরের নায়কের সঙ্গে ১৬ বছরের নায়িকার যৌনতার নানা নতুন আলপনা। চাবিহারানো এক ঘরে বন্ধ টিন-এজ সময়। মূল-স্রোত ভারতীয় ছবির যৌনতা রি-ডিফাইনড হল। ববি সুপারহিট।

পঞ্চাশ বছরের নায়ক জীবন। অভিনয় জীবন সব ধরলে ৬৫ বছরের। ছবির সংখ্যা সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। চূড়ান্ত অসুস্থতার মধ্যেও অভিনয় ছাড়েননি। ‘নামকিন’ এবং ‘সিনিয়র সিটিজন’। শো মাস্ট গো গন। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হসপিটালে স্বাস্থ্যকর্মীর মুখে গান শুনে হাসি মুখে তারিফ করছেন। এই ভিডিও তো এখন ভাইরাল। কাপুর বংশের শেষ সম্রাট বাবা রাজ কাপুরের মতই। এন্টারটেইননার। আজীবন। ক্যামেরার মুখোমুখি হন যখন তাঁর বয়স মাত্র তিন। রাজ কাপুরের শ্রী ৪২০। পথের পাঁচালী যে বছর মুক্তি সেই বছরেই। তারপর ‘মেরা নাম জোকার’। কিশোরকালের যৌনতা। মনস্তাত্ত্বিক। নায়ক না হয়েও যেন এই ছবির নায়ক তিনিই। ববি কিশোরের সূত্র যেন লুকিয়ে ছিল এই ছবিতেই।

এটা এই প্রতিবেদককে ধরিয়ে দেন স্বয়ং ঋষিই। প্রতিবেদক তখন ‘আজকাল’ দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে জড়িত। কর্মসূত্রে বোম্বাইতে। যেহেতু সেখানে অন্যতম বিট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। তাই নানা সূত্রেই দেখা হত ঋষির সঙ্গে। সবসময় প্রাণোচ্ছল। সেন্টুর হোটেলের এক পার্টিতে বুঝেছিলাম চলচ্চিত্রগতভাবে ‘মেরা নাম জোকার’-এর নায়ক কেন সেই বালক। সিনেমার তত্ত্বের অনেক অন্ত-রহস্য তাঁর হাতের মুঠোয়। পপুলিস্ট সিনেমা দর্শন তিনি জানেন। এবং সেটা সুনিপুণ প্রয়োগ করেন তাঁর অভিনয়ে। এনটারটেনার না আর্টিস্ট, নিজেকে কী ভাবতে ভালবাসেন? ‘একজন সার্থক আটিস্টই যথার্থ এনটারটেনার হয়ে উঠতে পারে। যেমন আমার বাবা রাজ কাপুর। যেমন চ্যাপলিন।’ উত্তরে কোনও দ্বিধা নেই।

অমিতাভ, মিঠুন, বিনোদ খান্না, ধর্মেন্দ্র প্রমুখ সুপারহিরোদের পাশে তাঁর নায়ক-দৌড়। তাই লড়াইটা সহজ ছিল না। ‘কিন্তু আমি আমার নিজস্ব জঁ বা ঘরানা তৈরি করে নিয়েছিলাম।’ ঠিকই। ‘অমর আকবর আন্টনি’ ছবিতে দুই সুপারস্টারদের পাশে কী স্বচ্ছন্দ এবং স্বতন্ত্র ববি-বয়। এবং ববি-বয় ইমেজ থেকে কখনও বেরোতে চান না তিনি। শুধু ববি-ইমেজকেই নানাভাবে ভাঙাচোরা করেন এবং তৈরি করেন নতুন এক স্ক্রিন-ইমেজ। সূত্র হিসেবে ধরা যেতে পারে ‘সাগর’, ‘সরগম’, ‘প্রেমরোগ’, ‘নাগিনা’, ‘চাঁদনি’, ‘দামিনী’ এইরকম অসংখ্য ছবি। যেখানে রয়েছে টিন- আইকনের নানা সম্প্রসারণ। এবং স্টাইল-স্টেটমেন্টের নানা বিন্যাস ও সমবায়। আর এইসব মিলেই ঋষি কাপুর। নিজে নিজের আত্মজীবনীর নাম দেন ‘খুল্লাম খুল্লা’। যেখানে তিনি একান্তই অকপট। অনায়াসে নিজের বাবা রাজ কাপুরের তিনটে প্রধান প্যাশনের কথা বলেন (১) সুরা (২) নারী বা নায়িকার প্রতি টান এবং (৩) সিনেমা। এবং এর মধ্যে প্রথম দুটোর জন্যে তার মা কৃষ্ণা কাপুরকে ছোট ঋষিকে নিয়ে বাড়ি থেকে দূরে কাটাতে হয়েছে হোটেল-জীবন।

অভিনয় জীবনের সেকেন্ড ইনিংস-এও তিনি সমান সফল। প্রমাণ ‘১০২ নট আউট’ ও ‘মুল্ক’।

 

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...