তথ্যবিকৃতি: কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর

সফিউল

 

 


লেখক ফেসবুকার

 

 

 

 

বর্তমান সময়ে তথ্য নিয়ে এক বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব ও লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়েছে। তথ্য যখন অতি মূল্যবান পণ্য হিসাবে জনসমাজে প্রতিষ্ঠিত হল, তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে তথ্যকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা আবশ্যক হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত তথ্য, সামাজিক তথ্য, বৌদ্ধিক তথ্য, মুক্ত তথ্য, লুক্কায়িত তথ্য। এই সকল তথ্যের কিছু মুক্ত হয়ে গেলে ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিছু তথ্যের একত্রিত পাহাড়ের উপর কোটি কোটি টাকার মুনাফা এক বহুজাতিক থেকে অন্য বহুজাতিক সংস্থার ঘরে ঢুকে যেতে পারে। তথ্য নিয়ে আরও বিস্তারিত যাওয়ার আগে আমার কলেজ জীবনের একটি ঘটনার কথা স্মরণ করব। ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ধর্মের নিরিখে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য নির্বিশেষে বহু মানুষের বিষোদ্গার করার কথা জানতাম। একদিন আমার কলেজের সহপাঠী খবরের কাগজের ক্লিপিং নিয়ে এসে বলেছিল, আমেরিকার কোনও এক শহরের স্কুলে প্রায় ১৫০ জন অভিভাবক চিঠি দিয়েছেন তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রটি বাইবেলের বিরোধী, তাই তাঁদের সন্তানদের ঐ তত্ত্ব পড়াতে চান না। আমার বন্ধুর একটাই প্রশ্ন ছিল, তার মানে ওই অভিভাবকদের ওই তত্ত্বের দার্শনিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হয়েছিল, তাই না?

কয়েক বছর আগেও টেলিফোন করে “ব্যাঙ্ক থেকে ফোন করছি” বলে কাস্টমারের তথ্য নিয়ে এটিএম থেকে টাকা জালিয়াতি করে সরিয়ে নেওয়ার হার যে পরিমাণ ছিল, সার্বিক প্রচারের ফলে গণসচেতনতার মান ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, এখন এই জালিয়াতির সংখ্যা অনেক কমে গেছে, অর্থাৎ এখন অনেক তথ্য জেনে নিয়ে মানুষ অনেকটা বেশি আপডেটেড। মূল কথা হল সব দেশেই মানুষ ধীরে ধীরে হলেও সচেতন হওয়ার চেষ্টা করছেন, তার মধ্যে কখনও কখনও বিপুল তথ্যভারে চাপা পড়ে গেলেও আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টাও সমান্তরালভাবে চলছে। একদিকে মানুষ চেষ্টা করছেন ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে। দেশে দেশে রাষ্ট্রগুলি আবার তার কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বিভিন্ন অছিলায় নানা ফন্দিফিকির করছে ও তথ্য সংগ্রহ করছে যার কিছুটা মানুষকে আধুনিক জীবনের নিরিখে সুযোগসুবিধার বণ্টন করতে, বাকি অংশটার ব্যবহার ক্ষমতার বিন্যাসে কোনওদিক থেকে আক্রমণের মুখোমুখি হওয়াকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে। রাষ্ট্রকে তার পরিকল্পনার দিক ঠিক করতে বা পরিকল্পনার রূপায়ণ করতে বহু তথ্য সংগ্রহ করতেই হয় এবং সেই তথ্যের পরিমাণ বিপুল। কোন তথ্য জনকল্যাণের জন্য আর কোন তথ্য জনগণকে অদৃশ্য খাঁচায় ধীরে ধীরে বন্দি করতে নেওয়া হচ্ছে, এই বিতর্ক সহজে শেষ হওয়ার কথা নয়, কারণ একই তথ্য দুইভাবেই ব্যবহার করা সম্ভব। এগুলির লেয়ারে লেয়ারে বিতর্কের রসদ আছে, কিন্তু যেটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই সেটি হচ্ছে যে কোনও পরিকল্পনার জন্য যথেষ্ট তথ্যের সাপোর্ট দরকার। রাষ্ট্রের যেমন তথ্যের দরকার, নাগরিক জীবনের উন্নতি করতে হলে সেই তথ্য আবার যথাযথ পদ্ধতিতে জনগণের কাছে পৌঁছানোর দরকার।

আমাদের দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেই যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন সেটি হল পরিকল্পনা কমিশনের অবলুপ্তি। স্বাধীনতার আগেই পরিকল্পনা কমিশনের প্রয়োজনীয়তা সুভাষচন্দ্র বসুর মত নেতারা বুঝেছিলেন। স্বাধীনতার পরে প্রধানমন্ত্রী হয়ে জওহরলাল নেহেরু বুঝতে পেরেছিলেন পরিকল্পনার কাজ কিছুই সম্ভব নয়, যদি না বিপুল পরিমাণ তথ্যকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে কম্পাইল করা না যায়। ফসলের উৎপাদন, ফসল উৎপাদনের পূর্বাভাস, ভারতীয় পরিবারের গড় আয় এমনকি বড় স্কেলে যত তথ্য পাওয়া যায় সবই সেই ১৯৩১ সাল থেকে পি সি মহলানবিশের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট সংগ্রহ করে আসছিল নানারকম সার্ভের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতার আগেই জওহরলাল নেহেরু মহলানবিশকে খুঁজে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার পর বিশাল এক কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনে। স্বাধীনতার পরে ১৯৫০ সালেই মহলানবিশ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন National Sample Survey (NSS)। তখন ভারতের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতি নিয়ে নানারকম সার্ভে ও সার্ভে থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ডেভেলপ হতে থাকা স্ট্যাটিস্টিক্স আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক মানের সেই গবেষণা করার জন্য প্রসিদ্ধ ব্যক্তি যারা উন্নত দেশ থেকে ভারতে গবেষণা করতে এসেছিলেন, তাঁদের নামে চোখ বুলালেও অনেকটা ধারণা করা যায়। Ronald Fisher, JBS Haldane, Norbert Wiener, Andrey Kolmogorov, Jerzy Neyman, Joan Robinson এবং Simon Kuznets হলেন অনেকের মধ্য থেকে কয়েকজনের নাম যাঁদের Indian Statistical Institute ১৯৫০ থেকে ১৯৬০-এর মধ্যে স্পনসর করে ভারতে নিয়ে এসেছিল গবেষণা ও সার্ভের কাজের জন্য। প্রসঙ্গত স্মরণে আসতে পারে, বর্তমান ভারতের প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় যেকোনও সমস্যার জন্য দায়ী করতে নেহেরুকে টানতে অভ্যস্ত। আমরা কিন্তু দেশনেতা বলতে সেরকমই ব্যক্তিকে বুঝি যিনি দেশের নানা প্রান্ত থেকে খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিভার সম্ভাবনা দেখে তাঁদের হাতে এমন কিছু চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব তুলে দেবেন যা করতে করতে সেই মানুষগুলি প্রতিভার বিচ্ছুরণ করবেন এবং সেই বিচ্ছুরণের আলোয় দেশ সার্বিকভাবে নতুন নতুন মাইলস্টোন অতিক্রম করে যাবে। নেহেরুর সময়ে তিনি মহলানবিশ, মেঘনাদ সাহা, বিক্রম সারাভাই, ভাটনগর, হোমি ভাবার মত ব্যক্তিত্বদের বিভিন্ন ফিল্ডে দায়িত্ব দেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন মিডিয়া থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী উপাধি দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একটু আগে যে আলোচনাটা করছিলাম, ধীরে হলেও মানুষ একটু একটু করে হলেও সচেতন হচ্ছেন। আশা করছি, খুব শিগগিরি আরও হবেন।

স্বল্পকালীন সময়ে পশ্চিম ভারতের গল্পগাথা স্টাইলে ইতিহাসচর্চা বা যদুনাথ সরকারের স্টাইলে ইতিহাসচর্চা কিছু মানুষের কাছে সাময়িকভাবে জনপ্রিয় হলেও দীর্ঘমেয়াদে রাজা-রানি, সৈন্যসামন্তের জয়-পরাজয়ের গল্পের ইতিহাস মূলধারায় জায়গা পাবে না। জায়গা পাবে ব্যাপক মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় উৎপাদনে এক ধারা থেকে অন্য ধারায় বিবর্তনের ইতিহাসে রাজনৈতিক ক্ষমতার নানা পক্ষ কে কোন দিকে ছিল বা দাঁড়িয়েছে সেটি এবং রসাশ্রয়ী গল্পগাথা বা বীররসের জায়গায় স্থান পাবে নীরস কিছু ডেটা বা তথ্য। স্বাধীনতার পরের প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা করতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিক্ষাবিদ হিসাবে কাদের দেশের নানা প্রান্ত থেকে খুঁজে নিয়ে এসেছিলেন সেই আলোচনা আগেই করেছি। আর আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশন প্রথমেই তুলে দিয়েছিলেন, তারপরেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যে ব্যক্তিত্বদের রাষ্ট্রনেতা হিসাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন তাই দিয়ে রাষ্ট্রনেতা ও তাঁর দেশনির্মাণের কারিগরদের একই সঙ্গে পরিমাপ করে নিতে যে কেউ সমর্থ হবেন। স্বাধীনতার পর NSS-এর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল এতগুলি বছর পর সার্ভে ও ডেটা বা তথ্যের নব নব পাহাড় অতিক্রম করার কথা ছিল। ৫০ ও ৬০-এর দশকে দেশের GDP নির্ধারণ করার পদ্ধতির চর্চা জিডিপি পার ক্যাপিটা হয়ে আসমুদ্রহিমাচল প্রতিটা গ্রাম, শহর ধরে ধরে মানুষের গড় আয় ব্যায়ের হিসাব কম্পিউটারের কয়েকটা মাউসের ক্লিকে এসে যাওয়া উচিত ছিল বললে কি খুব বাড়াবাড়ি হবে? পরিকল্পনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ হয়েছিল যখন আমি আশা করেছিলাম আরও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হবে, দেশে বিদেশ থেকে গবেষকরা এসে নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্ব নির্মাণ করে তার রূপায়ণের প্রচেষ্টায় দেশজুড়ে একটা দক্ষযজ্ঞ শুরু হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ছয় বছরে নতুন নতুন তথ্য যাচাই তত্ত্ব নির্মাণ তো দূরের কথা পুরনো যে সব তথ্যগুলি প্রকাশ করা হত, সেগুলিও সুষ্ঠুভাবে প্রকাশ করা বন্ধ হতে থাকল। নতুন স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্টারপ্রিটেশন পদ্ধতি খুঁজে না বের করে পুরনো পদ্ধতিগুলোকে ট্যাম্পারিং করেই দায় সারার প্রচেষ্টা দেখা গেল। এত বছর পরেও ভারতের মানুষের আয়ের যে বিপুল বৈষম্য, প্রতি বছরের বেকারত্বের পরিসংখ্যান, কত মানুষ প্রয়োজনীয় ন্যূনতম পুষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে যথাযথ খরচ করতে সক্ষম হওয়ার মত রোজগার করতে পারছেন— সেই নিয়ে কোনও তথ্য নেই। দেশের মানুষ তাঁর আয়ের তাগিদে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কতজন যাচ্ছেন, গিয়ে কী ধরনের জীবনযাপন করছেন সেই নিয়েও কোনও তথ্য আমাদের কাছে নেই। গর্বের বিষয় হল আমাদের দেশে কারও অনাহারে মৃত্যু হয় না, কারণ অনাহার বলে কোনও রোগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিনা চিকিৎসায়, অপুষ্টিতে মৃত্যু নিয়ে প্রতিনিয়ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে একটা কলতলার ঝগড়া লেগেই থাকে। আজকের সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শুধু গল্পগাথা দিয়ে সবটা পার হবে না, ডেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয়। তাই যেকোনও ভোটের আগে সরকারগুলি বিজ্ঞাপনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে। ডেটা কারচুপি, ডেটা চেপে দেওয়া তাই সব শাসকদের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

কোভিডের তথ্য গোপন করা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিতণ্ডাকেও কেউ কেউ কলতলার ঝগড়া বলছেন। তবে ২০২১ সালে নির্বাচন (যদি ততদিনে সব স্বাভাবিক হয়) হলে এই ঝগড়া বিজেপির ঝোলায় বেশ কিছু বাড়তি ভোট এনে দেবে। কলতলার ঝগড়াকে ছোট করে দেখা অপরাধ। কিছু ঐতিহাসিক কলতলার ঝগড়া আমাদের সকলেরই জানা আছে। ইহুদিদের এভাবে মারছ কেন? বেশ করব, ওরাই তো আমাদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের জন্য দায়ী, আর ওরাই ছিল সেই সব ভিলেন যারা ভাইমার সরকারের প্রতিনিধি হয়ে আমাদের দেশের মাথা নুইয়ে দিয়েছিল ভার্সাই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তখন তোমাদের নীতিকথা কোথায় ছিল হে? ৬ই ও ৯ই আগস্ট, হিরোশিমা-নাগাসাকির উপর আণবিক বোমা ফেললে কেন, ট্রুম্যান? বেশ করেছি, যখন পার্ল হার্বার আক্রমণ করেছিল জাপান এবং ২০০০-র ওপর মার্কিন প্রাণ দিয়েছিল, তখন তোমরা কোথায় ছিলে? ফলে কলতলার ঝগড়াকে ছোট করে দেখবেন না। এই ঐতিহাসিক কলতলার ঝগড়াগুলি আমদের নিশ্চয়ই শিখিয়েছে যে পার্ল হার্বার আক্রমণের সময় জাপানের অন্দরমহল থেকে জাপ সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী আওয়াজ উঠলে মার্কিন মুলুকে জাপান ও জাপানি বিরোধী তীব্র ঘৃণার পরিবেশ ছড়ানো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যেত। আবার ভার্সাই চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে জার্মানির ভেতরেই কট্টর দক্ষিণপন্থীদের বাইরে বাম-মধ্যপন্থীদের প্রতিবাদ ধ্বনিত হলে, হিটলারদের উত্থান কঠিন হত। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জীদের চূড়ান্ত মিথ্যাচারে মানুষ যখন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, তখন তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুক্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করতেই হবে। বিজেপিও তথ্য গোপন করে, বা তারা আরও অনেক বেশি অন্যায় করে, সেই যুক্তি এনে ফেলা, বিপজ্জনক। না হলে সেই নীরবতাকে ব্যবহার করেই বিজেপির ‘বেশ করব’— ভয়াবহ রাজনীতি আরও শক্ত ভিত পাবে।

বিজেপি–র মুখে স্বচ্ছতার কথা মানায় না তা সকলেই জানে। এবার ক্ষমতায় এসেই প্রথম মাসেই যে কয়েকটা কালা বিল তারা পাশ করিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল RTI আইনকে অনেকটা লঘু করে দেওয়ার বিল। এছাড়া মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য লকডাউন ঘোষণায় দেরি করা, এবং সকলকে অন্ধকারে রেখে হঠাৎ করেই তা ঘোষণা করে দেওয়া— এর চেয়ে ভয়ানক তথ্য গোপন আর কীই বা আছে? আবার দেখুন তারা কোভিডের জন্য ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটির যে প্যাকেজ ঘোষণা করলেন তার অনেকটা বাজেটে আগেই কৃষকদের জন্য ঘোষিত ছিল। যা গোপন করে তারা দুনিয়ার সামনে নিজেদের মহানুভবতা দেখাতে চাইল, যদিও সেই পরিমাণটিও জিডিপির মাত্র ১%।

আবার PM Care Fund NGO–টি যে একটি বেসরকারি ব্যবস্থা তা দেশবাসীকে জানানো হয়নি, সেটি অডিট হবে কি না, তাও আমরা আগে জানতে পারিনি। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা অভিযোগ করেছেন যে তারা রিলিফের জন্য ৪ কোটি টাকা তুলে প্রধানমন্ত্রীর যে ফান্ডে পাঠিয়েছিলেন, তা থেকে সেই টাকা PMCF–এ সরানো হয়েছে, অথচ তাদের না জানিয়ে। তথ্য গোপন। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক কাঠামো অনুযায়ী কেন্দ্রের হাতেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা। তারা যদি চায় তবে রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠাতেই পারেন এবং সর্বোচ্চ আদালতকে কেন্দ্রের সরকারের পক্ষেই মতামত দিতে হবে। সেক্ষেত্রে হয় মমতা ব্যানার্জীদের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সার্বিক সাহায্য করা নতুবা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে, সরকার পড়ে যাবে সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই। ফলে সরকার ধরেও রাখব অথচ প্রতিনিধি দলকে ঘুরতে দেব না, তা হতে পারে না। এবং সেক্ষেত্রে এ রাজ্যের গণতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধিরা যদি মমতা ব্যানার্জীদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার এই ভয়কে প্রশ্রয় দেন তবে জনগণের সামনে বিজেপিই নীতিবাগীশ হিসেবে প্রমাণিত হবে, এবং সেই সুযোগে বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্পূর্ণ জলাঞ্জলি দিলেও জনগণ নীরব থাকবে বা অন্যভাবে বললে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেবে। দেশ যে লকডাউনে যাচ্ছে সেটা কয়েক ঘণ্টার নোটিসে না দেওয়া এক বড় ধরনের অথ্যের কারচুপি। করোনায় মৃত্যুর হিসাব দেখিয়ে দায়দায়িত্ব নিয়ে চাপানউতোর করা যেতেই পারে। কিন্তু করোনা বাদ দিয়ে শুধু শ্রমিকদের মৃত্যুর দায় কে নেবে? সেই নিয়ে তথ্যের চাপানউতোর কোথায়?

করোনায় কতজন আক্রান্ত হচ্ছেন, কতজন আরোগ্যলাভ করছেন, আর কতজনের মৃত্যু হচ্ছে- রাজ্যভিত্তিক যে ডেটা দেখতে পাচ্ছি, তার সঙ্গে অভিবাসী শ্রমিকদের মরিয়া হয়ে ঘরে ফেরার অদম্য চেষ্টায় প্রতিদিন যে রাজ্যভিত্তিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি তার ডেটা, তার কিউমুলেটিভ প্লট, স্টেটিস্টিকাল ডেটা ফিট করে লিনিয়ার বা পাওয়ার কো-এফিসিয়েন্টগুলো যদি দেখতে পেতাম তাহলে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চাপানউতোরের ছবিটা আরও পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারতাম।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...