অর্ণব কমল ভট্টাচার্য
প্রহর
তোমার সবটা জুড়ে অঘ্রান
তোমার সবটা জুড়ে রাধার রমণ
বিকেলের হাওয়ায় কতটা হিম
কতটা নোনতা অনুভূতি মেশানো—
বুঝেছিলে বলেই,
তুমি আমায় সাধনসঙ্গী করোনি
ঈশ্বর আর ভূতপূর্ব প্রেম চেনাতে
আমার দিকে হেলায় ছুঁড়ে দিয়েছ পদাবলি,
আমি এক-একটা স্তবক থেকে
কুড়িয়ে নিয়েছি জংলা ফুল
তুমি সকাল গেঁথেছ মালায়
আমি নদী, গাছেদের স্নান
আর মধ্যেকার যাপন নিয়ে কথায় কথায়
প্রহর গুনতে ভুলে গেছি
শেষ রং মিলিয়ে যেতেই
পিছন ফিরে দেখলাম
তুমি তুলসীমঞ্চে সাজিয়ে তুলেছ বৈকুণ্ঠ
একান্তে বেজে উঠছে ইমন
এরপর
এরও পর যা যা থাকে
তাকে তুমি ভিক্ষা দাও, মায়া দাও
কীর্তনে কীর্তনে ভরিয়ে দাও শরীর…
কণ্ঠীর পরোয়া না করে
এসো বৈষ্ণবী,
তোমাকে মাতৃভাষা করি
বিরহ-পরাগ
বয়ামে ভরে রাখো মন খারাপ রঙের তরল—
আঙুল ডুবিয়ে মাঝে মাঝে তুলে নেবে
জুতসই সঙ্গী
আর কফির সাথে দুটো চুমুক মেশালে যা হয়,
সেইসব লেখা থাকবে নরম বুকের এদিকে ওদিকে
আকাশ কমলা হলে আমরা কীরকম অবাক হই
এখনও…
নদীর পাশে স্নান রেখে দিয়ে
চলে গেল যে কুমোরটুলির বউ,
তাকে সিঁদুরের খোয়াব চেনাবে কে?
বয়ামে ভরে রাখো অর্ধতরল বিষাদ
আঙুল ডুবিয়ে মাঝে মধ্যে তুলে নিও
নতুন কবিতা
আর তাদের বেঁধে ফেলো পরিচিত শব্দের ফাঁসে!
সন্ধের সাথে দুটো অন্ধকার গাছ মেশালে যা হয়,
তাই হবে তোমার পাশাপাশি হেঁটে গেলে।
আকাশ ফর্সা হলে পাখি হওয়া সহজ শুনেছি…
সিঁদুরের পাশে নদী রেখে ফিরে গেলে,
ও পালপাড়ার বউ,
আমার বিরহ-পরাগ—
তোমাকে স্নানের সোহাগ চেনাবে কে?
‘যদি তারে নাই চিনি গো…’
তুমি চুল বেঁধে নিলে
আর বান্ধবী শব্দের মানে বদলে গেল…
খোঁপায় জড়িয়ে গেল একটা সময়
ওই হাতের মুদ্রায়
একটা সুর কেমন দুলে উঠল
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি
জেগে উঠে দেখি,
তুমি আঁচলে আমার চোখ মুছিয়ে দিচ্ছ…
আয়না থেকে টিপ খুলে পড়ে নিচ্ছ কপালে
চুলে জল, থুতনিতে জল
তুমি পুজোয় বসছ
স্বামী-পুত্রের মঙ্গল কামনা করছ
যেই চুল খুলে দিলে,
জোর হাওয়া দিল…
আমার লেখার কাগজ লন্ডভন্ড করে
ধুলোয় ধুলোয় নিমেষে ভরে গেল ঘর…
হতভম্ব আমি চোখ তুলে দেখলাম তুমি জানলার পাশে
চোখ বুজে কী যেন ভাবছ,
গুনগুন করছ একটা সুর—
লোকগানের কোনও সুর
আমি চিনতে পারছি না তোমায়
খালি বুঝতে পারছি,
গলার ওঠানামায় কেমন মাতিয়ে তুলছ বুক
আর স্পষ্ট দেখছি দুটো ভিন্নবয়সী ছেলে—
একজন আপনমনে কী যেন লিখছে
আর অন্যজন দেরি হলে মা বকবে বলে
আরও জোরে ছুটছে
বাড়ির দিকে…
অবসাদ
ট্রেনের জানলা দিয়ে
ওয়াগন ব্রেকারের জীবনী দেখতে দেখতে
ধুলোয় ফিরছে কিশোরবেলা
সিঁড়ির ঘরে যে দুপুর
যে রাই…
ছুঁয়ে দেখে নাও
একইরকম আছি কিনা
মুখভর্তি মিথ্যে নিয়ে ছুটে বেড়ানোয়
বয়স আন্দাজ মোতাবেক বেড়ে যাচ্ছে
নদী নদী জল
স্নান স্নান ঘাট
এপ্রিলের চিলছাদ… রাই
জানলার চারপাশে ছেয়ে আছে
মেলাঙ্কলিকাতার দুপুর
রং মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কে ও?
রাই হতে পারে না?
সুন্দর মুখের মেয়ে,
তুমি অলিখিত ডুব রেখে এসো ঘাটে
দূর থেকে লক্ষ করো
কতখানি ঢেউ বুক ভেঙে দিতে জন্মায়
আর কতগুলো সিঁড়ি উঠে এলে
নদীকে পরস্ত্রীর মতো লাগতেই থাকে
সন্ধে বিষয়ক
সন্ধের নির্মাণ দ্যাখো
কি প্রকট আলোর শঠতা
বিকেলের ডান দিক ঘেঁষে
নেমে এল কালের অন্তিম
এ যাবৎ তুমি আমি তুমি
এ যাবৎ আবেগের ভাষা
আমাদের নিগূঢ় দ্বন্দ্বে
রেখে গ্যাছো নিমগ্ন চিরকূট
উড়ে এল স্বর, মাটিকথা
ভেসে যাবে পাখিদের স্নান
চুল্লির ধোঁয়া ছুঁয়ে দ্যাখো
ফেলে গেলে ঝড়ের কলোনি
ছুঁয়ে দিলে ঠোঁট-করিডোর
সন্ধের রাগ চিনে রেখো
ভুলে যেও জলের উপমা
আর কিছু রয়ে গেল বাকি?
রয়ে গেল আগুনের নেশা
ফেলে গেলে কাজলের ঘুম…
আমি তুমি আমি কখনওই
ছন্দের পরোয়া করি না
বিকেলের আলো তুলে রাখো
পেতে পারো দুঃখের খোঁজ
সন্ধের নির্মিত ঘাটে
আমাদের ছাড়াছাড়ি হল