দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম
নদী স্বভাব
যাই, ফিরে আসি, যদি দেখি বিমর্ষতা তাকে ছুঁয়ে আছে
ভুল যে অনুমান তার দিকে সহস্র বছর এ খেলা আমার
ফিরে দেখি বিকেলের অস্তরাগ, ধুন্ধুমার উৎসব
বিরহ কিছু নয়, এ অন্য সাঁজ,
একটু আয়েসি ভঙ্গিতে সে বসে আছে নদীটির পাশে
নদী বয়ে যেতে যেতে স্রোতস্বিনী
ভালোবাসার কথা বলে, যদিও পাথর ছিটকে বেখেয়াল
তবুও রাগ নেই, জলকেলি মতো ছুড়ে বিপরীত,
আমি পারি না নদীর মতো এমন খেলা…
আমাকে ঘিরে থাকে ফিরে দেখার আকাঙ্ক্ষা,
সকরুণ চোখের থেকে একটু চাহনি,
এসেছ তুমি ফিরিয়া!
বিগত ট্রেনের প্রতি
ট্রেন চলে গেলেই মনে হয় আমারও উঠে পড়ার ছিল।
প্রাথমিক গতিপথ অজানা, তবুও
তুমি জানো শেষাবধি কোথায় যাবে ঠিক;
যেরকম দুধের শিশু রেখে সেবাসদন ক্লান্ত মা ঘুমিয়ে,
সহস্র কান্নার ভেতর চলে যায় অনন্তের ট্রেনে,
মুখের ছায়া তার ধূসর হতে থাকে,
যেন পরিত্যক্ত স্টেশন পড়ে রইল,
আর কোথাও মনখারাপ
নশ্বর পৃথিবীর আনন্দ আয়োজন রেখে যে যায় দূর
বহুদূর জ্যোৎস্নাময় এক কুটিরের খুঁজে
খুব তাড়া তাঁর
পড়ে থাকে কলম নকশা-খাতা,
সন্তানের গলা বন্ধ হয়ে আসা ডাক।
একেকদিন এমন আসে, চলে যাওয়ার মিছিল
একা ফেলে রেখে যায় খুব,
যে ট্রেন চলে যাচ্ছে তাতে অবসরের নিশান,
মোহময় শুভ্রতা…
প্রতিবার ট্রেন ছুটে, প্রতিবার মন খারাপ৷
অপেক্ষায়,
ফিরে না তাকানোর উপেক্ষায়…
বর্ষার হুঙ্কারে
এমন রোগা দিন আর আগাম বর্ষার হুঙ্কার আকাশে
চিত্রিত ভয় ফণা তুলছে হিস-হিস, ফেরোনি ঘরে,
কি যে অস্থিরতা তার চোখে-মুখে;
যতদূর চোখ যায় অন্ধকার, ফাঁদ পেতে রেখেছে রাত
তুমি লুটিয়ে পড়েছিলে অকস্মাৎ দেখে কাকতাড়ুয়া
অভূতপূর্ব সাজ, তোমারই সে সহোদর!
সে জানে চিরবৃষ্টি তোমাকে আগলে রাখলেও তুমি
গম্ভীর হয়ে আরও বৃষ্টিজল আঁকো, তার বদ্ধ জলাধার
মাছেদের ঠোঁট থেকে বাজে শঙ্খধ্বনি
এইসব তোমার সামলে উঠবার বাহানা, স্মৃতিফলকে
যেদিন আটকে গেলো চাঁদ, তোমার সে কি কান্না…
চারদিকে মর্মর ধ্বনি, ভাঙনের খেলা;
এমন রোগা দিন আর তুমি ফেরোনি ঘরে, রয়েছ-
উদাসীন শহরের পাশে, মড়কেও যে থাকে নিস্পন্দ
অনেক মনখারাপে, বর্ষাই হচ্ছে সে
চৈত্রের শেষ সন্ধ্যায়
অমৃতলোকের থেকে ভেসে আসে গান,
তুমি তার মর্মার্থ জানো? জানো না কিছুই।
ভয়ার্ত পৃথিবীতে বহুদিন পর-
ছবির মতো যত মানুষের মুখ দ্যাখা যায়
তার অধিক মানুষের পড়ে ছায়া,
সেইসব ছায়া ও মানুষের অনুচ্চারে লেখা
এ মর্মগীত, তোমাকে ঘিরে—
চৈত্রের শেষ ব্যবচ্ছেদ রেখে যেতে চায়,
এ গানের ভেতর।
তার ভাবানুবাদ?
দৃশ্য ১
দূরে আমগাছ। নারীটির ছায়া।
বিকেল খেলা এক কিশোর
ছবিটি এমন। বাকিটা মায়া।
বর্ষার প্রতি
যত কবিতা লেখা, সব ম্লান, বর্ষা-উঠোনের মতো স্যাঁতসেঁতে, আর বহুদিন সূর্যবিরহে শ্যাওলার দঙ্গলে আটকে থাকা বাতাবিলেবুর ফুল পাপড়ি, সব যেন খুলে পড়া অস্থিমাংস নিয়ে অলস দুপুরের ছবি আঁকছে পৃথিবীর কোথাও, ঈশ্বরের দৃষ্টিসীমার অবহেলিত করিডোরে। কার আঙুলের স্পর্শ নিয়ে জল কুয়াশা হচ্ছে, বিন্দু বিন্দু সংহতি মেনে তোমার মুখের মতো ধূসর প্রতিচিত্র আজ আকাশ অন্তর্লীন মধ্যপুকুরে। আমি নিঃশব্দে ডেকে যাচ্ছি, আর স্মৃতিহীন মানুষ যেরকম কেবলই যায়, মেঘ ভেঙে বরষা ভেঙে, অলীক কোন ছাউনি দেখে, যেখানে গাণিতিকি জট পড়ে আছে, তার রহস্যরূপের সন্ধানে, সেখানে সব জলে ভেজা, প্রায় গলে পড়া কবিতা, সব যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে হঠাৎ বিস্ময় দ্যাখে!
যত কবিতা, সব যেন অরণ্যের মধ্য দিয়ে ডেকে যাচ্ছে, আর বাতাস থেমে গেলে ফুল-পাতার অস্থিরতায় টনটনে ব্যথার মতো আটকে আছে বৃষ্টিজল, বুকের ভেতর যত আছে বর্ষাকাল। এইসব এইসব আজ চিত্রিত হচ্ছে অবিরাম।
কবিতা ২
দৈবাৎ তোমাকে দেখি,
দৈবাৎ লিখি শব্দফুল…
দৈবচক্রের বাকি পৃষ্ঠায় অনন্ত শূন্যতা,
না-লেখা যত হুলস্থুল!