সুখে আছি সুখে থাকি সস্তা সাবান মাখি

পারভেজ খান

 

–‘কি হবে ওসব ঝুট ঝামেলায় পড়ে-দেখিস তো কিভাবে মেরে টেরে দেয়’
–ওসব বিপ্লব ফিপ্লব বাদ দাও, পড়াশুনো করো,চাকরির খোঁজ করো।অত বিপ্লবী হতে হবে না।
–ট্রেনে উঠে রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলবে না।
–ফেসবুকে লেখালিখির দরকার নেই, এখন তো তার থেকেও জেল ফেল হচ্ছে।ধরে নিয়ে যাচ্ছে।

তাইতো কি আর হবে একটা সফুরা জারগার জামিন না পেলে? দোষ তো আছেই রাস্তা আটকে বসেছিল। মানুষ যেতে পারছিল না। সমস্যা হচ্ছিল। সরকার একটা আইন এনেছে৷ সরকারের কাজ সেটা, এনেছে এনেছে, ভুল হোক ঠিক হোক তা নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ার কি আছে?সবার বাড়ি তো ছেলে মেয়ে আছে, সবাই বসে পড়ছে নাকি এভাবে, হলোই বা আইনটা একটু একপেশে।নিজে না গেলে ঝামেলায় পড়তো না।গবেষণা করছে মন দিয়ে সেটা করুক না।তা,না..

শ্রমিক দের এত কথায় কথায় বিক্ষোভ এর কি আছে? ঠিক করেছে যেখানে যেখানে বলছে ৮ ঘন্টার জায়গায় ১২ ঘন্টা কাজ করতে হবে, ঠিক বলছে, সারাদিন বিক্ষোভ বিপ্লব করবে, আন্দোলন করবে, কাজ করবে না।আইন এরকম ই হওয়া উচিৎ। ওদের আবার অধিকার কি? এত কথা বলার কি আছে।বেসরকারীকরণ ই ভালো সব, কাজ করো, মাইনে নাও। ওসব শোষণ ফোষণ সব বামপন্থীও গালগল্প।ইউনিভার্সিটি ছেলে মেয়েদের ও এ নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি আছে?সুখে থাকতে তো ভুতে কিলায়!সব এজেন্ডা এদের, সুবিধা নেবে সরকারের আর দালালী করবে তার বিরুদ্ধে..

চন্দ্রবিন্দুর গান এর লাইন মনে পড়ছে- “সুখে আছো সুখে থাকো সস্তা সাবান মাখো, শুনে দেখো মা’র কথা”। তাই তো, আমার একটা চাকরি আছে,ছেলে মেয়ে বড় স্কুলে পড়ে, অত দেশ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আমার হবেটা কি? সমস্যা এখানেই-” আমার হবেটা কি?” ততক্ষণ পর্যন্ত কিছুই হবে না যতক্ষণ না সরাসরি আপনার উপর কোপ পড়ছে।এই কয়েক দিন আগে যারা সব বেসরকারীকরণ এর পক্ষে জোরালো ভাবে হ্যাঁ বলছিলেন, করোনা লকডাউন, মন্দা- পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেই আজ কাজ হারানোর মুখে, বা অনেকে হারিয়েছেন।প্রত্যেকটা মূহুর্তে যাদের উৎকন্ঠা যে আমার কাজ টা আছে তো?তাদের গিয়ে জিজ্ঞেস করুন হয়ত এখন বলতে পারবে কেন শ্রমিকরা আন্দোলন করে-কোনোদিন যাদের দাবি দাওয়া হয়তো পড়েই দেখেনি তারা।কিন্তু এই সব ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু বরাবরই রাস্তায় যেকোনো এইরকম সিদ্ধান্তে।লেখালিখি করেছে, আপনারা শুধু নিন্দে মন্দই গেয়েছেন তখন।কারণ কি হবে ঝুট ঝামেলায় পড়ে।

দলিত রান্না করেছে, ডাক্তার ব্রাহ্মণ।সে খেতে নারাজ।আপনি চুপ।মনে মনে আপনিও হয়ত ভেবেছেন যার তার হাতে খাওয়া যায়!যাই হোক আবার যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেখানে ফিরি।সফুরা জার্গার। কাশ্মীরী। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রী। দেশজুড়ে যখন সিএএ বিরোধী আন্দোলোন চলছিল, দিল্লিতে সেই আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন তিনি।ট্রাম্প ভারতে এলেন, গুজরাটে দেশের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে দিল্লি তখন জ্বলছিল।কপিল মিশ্র গোলী মারো ভাষণ দিলেন তার কিছুদিন আগে, দিয়েছে দিয়েছে তাতে কি আর এলো গেলো!প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে বন্দুক উঁচিয়ে কপিল বৈশালা যখন গুলি চালিয়ে দিচ্ছিল-পুলিশ দাঁড়িয়ে তার ছবি তুলছিল।যাই হোক এসব হতেই পারে কারণ রাস্তা আটকানোর থেকে গুলি চালানো এবং চালাতে বলা ভালো।তবে সবচাইতে ভালো ঝোলাগুড়। না না সরি সরি, সবচাইতে ভালো পুলিশের কাজ না করে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকা।যাই হোক দ্বিতীয় কপিল জামিন পেয়ে গেছেন। প্রথম কপিলের কিচ্ছুই হয়নি।ওদিকে ইউএপিএ আইনে এপ্রিলেই গ্রেফতার হয়েছেন সফুরা, জামিনের আবেদন বারবার নাকোচ হচ্ছে।৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাহ এই তো খবর একটা পাওয়া গেছে শেষ লাইনে, আগের গুলো দেখতে পাইনি তো কি হয়েছে, স্টুডেন্ট, অন্তঃসত্ত্বা – এর থেকে মুখরোচক কি হতে পারে, আর তারউপর আপনি এমনিতে লকডাউনে ঘরে বসে থেকে যখন বিরক্ত তখন। মেয়ে প্রতিবাদী, তার এই অবস্থা, জামিন দিচ্ছে না উফফ মিম বানানোর আদর্শ সুযোগ।লেগে পড়লেন।পরে যখন সেই সব প্রচার ফেক প্রমাণ হল তখন আর কি, আবার চুপ থাকাই ভালো।

কারো নামে ভালো প্রচারের জন্য ভালো ট্যাগ থাকতে হয়!কিন্তু এখানে তো সব বিপক্ষে, একে মুসলিম, দুইয়ে কাশ্মীরের, তিনে নারী, চারে সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। আরে কিছু তো একটা ভালো থাকবে।এসব শুনলে আমাদের উর্বর মস্তিষ্ক ভালো কিছু ভাবতেই পারেনা।গর্ভবতী হাতির মৃত্যুতে উত্তাল নেটিজেনরা কিন্তু চুপ। তা স্বাভাবিক, এসব বাবা পলিটিক্যাল ব্যাপার। হাতি তো আর ভোট দেয় না।

Be the first to comment

আপনার মতামত...