পারভেজ খান
সুশান্ত সিং রাজপুত। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে দেখেছি পিকে তে এবং ধোনির বায়োপিকে।হ্যা তার অভিনয় নিশ্চই ভালো লেগেছিল এটা বলতেই হবে।তার থেকে বেশি আমি তাকে চিনিনা।প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কেন করেছেন বা কোনো একটা কারণে করেছেন কিনা সেসব জানার কথা আমার বা আমাদের কারোরই নয়।তদন্ত সাপেক্ষ ও তার তদন্তও চলছে। এ অবস্থায় আমাদের মাঝে মাঝে হঠাৎ অতি সক্রিয় হয়ে ওঠা মন ফেসবুক টুইটার ইন্সটাগ্রাম ভরিয়ে দিচ্ছে-বিচার চাইছে আর তারা তো অপরাধী চিহ্নিত করেই ফেলেছে!হঠাৎ করে অভিনয় জগতের অনেকে মুখ খুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিষয়ে তাই জোর কদমে শুরু হয়েছে একপক্ষের সিনেমা দেখবেন না, বয়কট করুন। ছবিতে লাল কালি দিয়ে কেটে পোস্ট করা হচ্ছে, এবং আরও কত কি! এ হেন যজ্ঞে সুশান্ত সিং এর মৃত্যু যেন আইটেম নাম্বারে পরিণত হয়েছে।
এ কি নতুন কিছু?বিচ্ছিন্ন?একেবারেই না, তেলেঙ্গানাতে গণধর্ষণের ঘটনার পরদিন অপরাধীদের ফাঁসির পক্ষে সর্বস্তর থেকে জোর আওয়াজ আর ঠিক তারপর ই চার জনের এনকাউন্টার!জনগণের মহাউল্লাস.. এনকাউন্টার, থ্রিলিং ব্যাপার স্যাপার- ওসব বিচার টিচার আর্ট ফিল্ম!কমার্সিয়াল দাও।তারপর ধরুন সীমান্তে ভারত-চীন বা ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা,জণগণ এর এমন ভাব চীনেবাদাম ও চেবাতে পারবেন না!আপনি বলতেই পারেন এ দেশ আর বিচার?ওসব বিচার টিচারের কথা বললে ঘোড়ায় ও হাসবে! হ্যা ঠিক ই তো, হাসবেই তো, কেন হাসবেনা যদি দেখে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিশ্বাসের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট রায় শুনিয়ে দিতে পারে!কিন্তু সেই তখন এই নেপোটিজম চটকানো জনতা চুপ করে থাকবেন,মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরোবে না।গায়ে লাগলো তো?আরও একটু লাগানোর সুযোগ করে দিই…
ব্রাহ্মণ্যবাদের বাড়বাড়ন্তে দলিতের উপর অত্যাচারে আপনি চুপ করে থাকেন-তখন আপনি হিসেব করেন এসসি এসটি জেনারেল এর কাট অফ কত ছিল, গোমাংস রাখার অভিযোগে কাউকে পিটিয়ে মারলে আপনি চুপ করে থাকেন, জোর করে কেউ জয় শ্রীরাম বলাতে এলে আপনি চুপ করে থাকেন,চারপাশে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাচ্ছে দেখেও আপনি তখন দেখতে পাননা,একের পর এক কৃষক আত্মহত্যা করছে দেখেও আপনার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না, শ্রম আইন কঠোর হচ্ছে দেখে আপনি খুশি হন, ইত্যাদি ইত্যাদি এসব বড়সড় ব্যাপার। তার থেকেও কিছু আরও বড় ব্যাপারে আসি, আপনার পাড়ায় যে কাকু মদ খেয়ে এসে রোজ তার স্ত্রীকে পেটায় আর ছেলেমেয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে, আপনি সেই পরিবার নিয়ে ঠাট্টা করেন, কোনো দিন কিছু বলেন না। পরিবারে ছেলে মেয়ে দুজন থাকলে তাদের দুজন কে যদি বাবা মা আত্মীয়স্বজন রা আলাদা ভাবে ট্রিট করে, আপনি চুপ করে থাকেন। যখন শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে আপনার সাথে পরিবারের অন্য কারো তুলনা টানা হয়, আপনি কিচ্ছু বলেন না!যখন পরিবারের কোনো একজন আপনার ভিন ধর্মের বন্ধুকে নিয়ে অন্যরকম মত পোষণ করেন, আপনি তখন চুপ করে থাকেন ইত্যাদি ইত্যাদি।কেন বললাম এতো কথা?কারণ একটাই যে নেপোটিজম নিয়ে আজ এত চেচাচ্ছেন তার জন্ম আপনার মৌনতাই দিয়েছে।এবার বলতেই পারেন দিয়েছি বলে কি সংশোধন করতে পারবো না? নিশ্চই পারবেন, কিন্তু আমি জানি আপনি করবেন না আর তাতে আমি ১০০% নিশ্চিত, কেন বলছি সেটাও বলি? সুশান্ত সিং এর মৃত্যুর পরদিন একটা খবর বেরিয়েছিল, দিল্লি তে খুব সম্ভবত একজন মানুষ সে ৬ লাখ টাকা ঋণ শোধ করতে পারছে না বলে আত্মহত্যা করেছে।আপনি বলবেন এতো হামেশাই হচ্ছে, কিন্তু তার ও পর ছিল, লোকটা নিজে গলায় দড়ি দিতে পারবেনা বলে চারজন কে ভাড়া করেছিল নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দেওয়ার জন্য!কি নির্মম, তবু বাস্তব।আপনি বলতেই পারেন দেখতে পাইনি।পাবেন ও না, কারণ জানেন, কেন দেখতে পান না? কারণ হচ্ছে আপনি জেনেছেন সুশান্ত সিং অসম্ভব মেধাবী একজন ছাত্র ছিলেন, তার টী-শার্টে “জার্কের” ডেফিনিশন দেওয়া, ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর এক্সপেরিমেন্ট কোট করা, আর এগুলো আপনার চোখে একটা আলাদা সহমর্মিতার জন্ম দিয়েছে।লক ডাউনের পর মে মাসেই শুধু ১৫.৩ কোটি মানুষ এদেশে কাজ হারিয়েছে, অনেকে আত্মহত্যা করেছেন,করছেন,বা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।খবর রেখেছেন তার?
আর নেপোটিজম তত্ত্ব? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে যার প্রোডিউসিং হাউস সে তার পরিচিত দের, বন্ধুদের, সন্তানদের আগে সুযোগ দেবে এটাই স্বাভাবিক!যা অন্য অনেক ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেই সত্য।কারো ভালো লাগবে কারো লাগবে না।আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশি সিনেমা দেখিনা তাই হয়ত আমি আপনাদের মত করে অনুভব করতে পারছিনা, কিন্তু তার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত কে যথেষ্ট সম্মান দিয়েই বলছি, সারা দেশে অনেকেই লড়ছে কেউ অথোরিটির বিরুদ্ধে, কেউ দুবেলা নিজের সাথে।অনেকে কিন্তু শেষ অবধি কোনি হয়ে উঠছে,ফাইট করছে।এখন আপনার সিদ্ধান্ত আপনি আপনার প্রিয় অভিনেতার সিদ্ধান্ত কে সম্মান জানাবেন নাকি তার কতগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিল, তাদের সাথে কোথায় ঘুরতে গেছিলো, সেখানে কি কথা হয়েছিল, কেন ব্রেকআপ হল এসব নিয়ে মেতে থাকবেন!
এতদিনে কেউ একজন জরুরী কথাগুলো বলল।
পারভেজবাবু, আপনার কথা ঠিক। কিন্তু একটা, কথা কোনির ক্ষিদ্দা ছিল । বাস্তবে সবার ক্ষিদ্দা থাকে না। ক্ষিদ্দা না থাকলে কোনিকে শুধু জলে নয়, খিদের সঙ্গে নয়, দারিদ্রের সঙ্গে নয়, লড়তে হত অশিক্ষিত দাম্ভিক কুচক্রী অসভ্য ক্লাবকর্তাদের সঙ্গেও। জানিনা কোনি একা এতগুলো লড়াই লড়তে পারত কি না। সবার Limit of Tolerance এক রকম হয় না, Pain Threshold এক রকম হয় না। পোস্টমর্টেমে সব কি জানা যায় ? পোস্টমর্টেমে কি ধরা পড়ে দিনের পর দিন মানসিক যন্ত্রনার ইতিহাস? কিন্তু যে অভিযোগগুলো উঠছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো উঠছে তা কি শুধু নিজেদের লোককে মইয়ে তুলে দেওয়ার নাকি অন্যের মইটাকে ষড়যন্ত্র করে ফেলে দেওয়ারও? কথাটা এই হিংস্র মানসিকতা নিয়েই ।
একদম ই ঠিক সয্য ক্ষমতা, যন্ত্রণার সীমা সবার সমান হয়না, আমি কোথাও সেটা অস্বীকার করিনি। আমি শুধু বলতে চেয়েছি এই নেপোটিজ, ফেভরিটজম নিয়ে যেটা হচ্ছে সেটা এই ধরনের সব ফিল্ডে খুব কমন আর তার জন্ম আমরাই দিয়েছি এবং আরও প্রায় সবক্ষেত্রেই দিয়ে আসছি।আমি প্রাথমিক তদন্ত বলেছি, অবশ্যই তা থেকে হয়ত সম্পূর্ণ কিছু বলা যায়না আমি সেটাই বলেছি ওটা যাদের কাজ তারা করুক, আমরা সোশাল মিডিয়ায় যেটা করছি সেটা মনে হয় ঠিক করছি না, সবাই কে লাল কালিতে আসামীর মত সার্কেল করছি, আরও কত্ত কি!আমি সুশান্তের সিং এর সিদ্ধান্ত কে সম্মান করছি এবং কোনো অর্থে তাকে সিনেমার কোনির সাথে তুলনা করছি না। তেমনি এটাও মনে করিনা আত্মহত্যা কোনো সমাধান।অন্যের মই কে ফেলে দেওয়া মানে যদি বাজে রাজনীতি বলেন, সেটা কোথায় নেই বলুন তো? স্কুল,কলেজ,অন্য সরকারী অফিসেও! সবাই লড়াই করছে। কিন্তু কথা হচ্ছে আমাদের প্রতিবাদ লড়াই ফেসবুকে পোস্টের বন্যা বয়ে যায় তখন, যখন সেটির সাথে কোনো টিভির পরিচিত মুখ থাকে!সেটি সুশান্ত হতে পারে, বা অন্য কেউ!
আশা করছি বোঝাতে পেরেছি যে কি বলতে চাইছি আসলে। আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ?
আমি অবশ্যই আপনার সাথে একমত যে আত্মহত্যা কোন সমস্যার সমাধান নয়। ধন্যবাদ।