এক ম্যাজিসিয়ান এবং গ্রিকদের দাড়ি ভ্যানিশের কিসসা

জয়িতা দাস

 

গ্রিক পুরাণের মিডাসের মতো জাদু জানতেন তিনিও। তাঁর মতোই তিনি যে জিনিসেই হাত দেন, সব সোনা হয়ে যায়। তবে মিডাসের মতো মোটেই বোকা ছিলেন না এই ম্যাজিশিয়ান। তাই তাঁর ভোজবাজি কোনো বিপদ ডেকে আনেনি। গ্রিকরা কি আর এমনি এমনি তাঁকে দেবতা বলে মান্যি করত! আর করত বলেই তিনি যা হুকুম দিতেন, বিনা প্রশ্নে সে কথা মেনে নিত ঠিক। সে উলটপুরাণ হলেও।

সুতরাং এই ম্যাজিশিয়ান যখন হুকুম দিলেন, ‘সবাইকে দাড়ি কামিয়ে ফেলতে বলো’–অবাক হলেও কেউ সেই নির্দেশ অমান্য করেনি। যদিও বাপ-দাদাদের দাড়ি দেখেই অভ্যস্ত তারা। আর এও জানে, এর অন্যথা হলে ঈশ্বরের অভিশাপ নেমে আসে ঠিক। তবু সেই হুকুম তামিল হয়েছিল। না, অমঙ্গল হয়নি কিছুই, বরং সমৃদ্ধি এসেছিল। তাঁর অনুগামীরা যেন জানতই, এমনটা হবে। সাধে কি আর সবাই তাঁকে ঈশ্বরের মতো মান্যি করত!

ফলে লোকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করে ‘এই ছেলে তো ছেলে নয়, দেবতা নিশ্চয়ই’। তিনি দেবরাজ জিউসের সন্তান। নইলে যে সে লোকের পক্ষে কি আর এমন ভোজবাজি দেখানো সম্ভব! তাকে নিয়ে তাই নানা অলৌকিক গল্প লোকের মুখে মুখে ফিরত। সেসব আজকের কথা নয়! সে অনেক পুরনো দিনের গল্প। যিশুর জন্ম হতে তখনও প্রায় তিনশ’ বছর বাকি। তা সেই সময় এক গ্রিক রাজপুত্রের রাজ্যাভিষেক হয়। আর সিংহাসনে বসতে না বসতেই প্রতিবেশী রাজ্যগুলো টের পেয়ে যায়, নবীন রাজা মোটেই সাধারণ মানুষ নন। তাঁর বিক্রমে সবাই থরহরি কম্প। এমন বীর পুরুষেরই তো দিগ্বিজয়ী হওয়ার সাধ জাগে মনে। নতুন রাজারও তাই ইচ্ছে। আর এ কথা ঘোষণা করতেই, রাজ্য জুড়ে হইচই পড়ে যায়। দিন-রাতের আর হিসেব নেই তখন, সবাই ব্যস্ত। প্রস্তুতিতে কোনো ফাঁক থাকুক, কেউ চায় না। এমন জান লড়িয়ে যদি সবাই কাজ করে, যতই ঝক্কির কাজ হোক– শেষ হতে আর ক’দিন লাগে! অতএব, কিছুদিনের মধ্যেই ভিনদেশে লড়াইর ময়দানে নামার প্রস্তুতি সারা।

সেই খবর নবীন রাজার কানে তুলে দেওয়ার জন্য সেনাপ্রধানরা ছুটলেন তাঁর কাছে। তাছাড়া শেষ মুহূর্তে তালিকায় নতুন কিছু যোগও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সব যোগাড়যন্ত্র করে রাখা চাই। তা রাজাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করতেই জবাব এলো, ‘Nothing… except to shave the Macedonians’ beards.’

বিষম খেলেন সেনাপতিরা। এমন অলুক্ষুণে কথা গ্রিকরা কখনও উচ্চারণ করেনি। দাড়ি তাদের গর্ব। পৌরুষের অহংকার। নবীন কিশোররা কি আর এমনি এমনি চিবুকের প্রথম দাড়ি মন্দিরে উৎসর্গ করতে ছুটে যায়! এই দাড়ি আছে বলেই না পুরুষদের এমন দাপট! দেবতাদের এ এক আশ্চর্য দান, যা শুধু পুরুষদেরই দিয়েছেন তিনি। নইলে নারী-পুরুষের মধ্যে বিভেদটাও কি আর থাকত! আর রাস্তায় বেরোলে কে যে গোলাম আর কে যে প্রভু, সেটাই বা লোকে বুঝত কি করে!

রাজাকে তো আর এসব বলা যায় না! তাছাড়া এই নবীন রাজার নির্দেশ তাদের কাছে দৈববাণীর মতোই। তবু কৌতূহল চাপতে না পেরে উপস্থিত সেনাপ্রধানদের মধ্যে ডাকাবুকো বলে যাঁর একটু খ্যাতি ছিল, সেই পার্মেনিও রাজাকে জিজ্ঞেসই করে ফেললেন এর কারণটা। রাজামশাইর তুরন্ত জবাব, ‘Don’t you know that in battles there is nothing handier to grasp than a beard?’

যুক্তিটা নিশ্চয়ই মনে ধরেছিল। ব্যস, ম্যাসিডোনিয়ানরা সব রাজার হুকুমে নিজেদের দাড়ি কেটে ফেলল। আর হ্যাঁ, রাজার নামটি ছিল আলেকজান্ডার। মানুষকে বশ করার এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তাঁর। নইলে ঐতিহ্য-বিরোধী জেনেও তাঁর এমন আদেশ সবাই মেনে নেবে কেন!

মেনে নিয়েছিল। কারণ তিনি যে জিউসের সন্তান! আলেকজান্ডারের জন্ম মুহূর্ত থেকেই তাঁকে নিয়ে ম্যাসিডোনিয়ানরা নানা অলৌকিক গল্প শুনে আসছে! নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন, এই প্রচারের মূলে ছিলেন স্বয়ং আলেকজান্ডারের মা অলিম্পিয়া। প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহিলা। ছেলের সিংহাসনে বসার রাস্তাটা মসৃণ করতেই তাঁর এমন প্রচার। এদিকে আলেকজান্ডার নিজেও নাকি বিশ্বাস করতেন সেসব গল্প-কথায়। এই বিশ্বাস তাঁর মনের জোর বাড়িয়েছে। নাগরিকদেরও তাই। ঐতিহাসিকেরা এমন কথাই বলছেন। তাঁর দৈবী শক্তি নিয়ে নাকি কারো মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। আলেকজান্ডারের কারনামা সেই বিশ্বাসকে মজবুত করেছে আরও। নইলে কি আর এমন এক বিচ্ছিরি নির্দেশ মানতে যায় তারা! এই সেদিনও, আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপের আমলে দাড়ি নিয়ে কত আদিখ্যেতা! আর আলেকজান্ডার রাজদণ্ড হাতে নিয়েই কি না হুকুম দিচ্ছেন, দাড়ি কেটে ফেল। তবু এর বিরুদ্ধে কারো মুখে কোনো রা নেই।

গ্রিসে যে দাড়ির ঐতিহ্য কবে থেকে চলে আসছে সে সন-তারিখের হিসেব কষে বলা মুশকিল। চলছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। দাড়িকে নিজেদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে গ্রিকরা শেখেইনি। এ তাদের অস্তিত্বের অংশ। কিশোরের গালে সবুজ ঘাসের মতো দাড়ির আভাস দেখলেই তারা উৎসবের তোড়জোড় শুরু করে দেয়। সেই প্রথম দাড়ি দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করাই নিয়ম। আবার মৃত্যুর পরও এই নিয়ে কত না আচার-অনুষ্ঠান। হ্যাঁ, ঐতিহাসিকেরাই দিয়েছেন এসব তথ্য– ‘It was cut, torn, or burned by grieving relatives, and the locks of the dead were hung on the door by stricken mourners.’

ফলে গ্রিসে তখন নাপিতদেরও মস্ত রবরবা। নাগরিকরা তাদের বেশ সম্মানের চোখেই দেখত। আর হ্যাঁ, দুনিয়ার প্রথম ‘হেয়ার স্যাঁলো’ কিন্তু চালু হয় এই গ্রিসেই। সে খৃস্টের জন্মেরও পাঁচশো বছর আগেকার কথা। কোঁকড়ানো দাড়ি ছিল তাঁদের খুব পছন্দের। সেই দাড়ি আবার সুবাসিত হওয়া চাই। এর জন্য কতরকম এসেন্স যে তারা ব্যবহার করত! গ্রিসের নাপিতরাও ছিল সেরকম। চুলদাড়ির পরিচর্যায় অত্যন্ত দক্ষ। অভিজাতদের বাড়িতে তাই প্রায়ই ডাক পড়ত তাদের। এতে পরিচিতি মহলে গৃহকর্তার প্রতিপত্তি বাড়ত। বলতে গেলে সেটাই তখন স্ট্যাটাস সিম্বল। তবে শুধু যে নিজেদের চুলদাড়ির পরিচর্যার জন্য ডেকে পাঠানো– এমন নয়। ডাক পড়ত বিশিষ্ট অতিথিদের জন্যও। সেটাই ছিল সামাজিক রীতি। অতিথিকে সম্মান জানানোর। আর ‘হেয়ার স্যাঁলো’গুলি! সে ছিল বিদগ্ধ নাগরিকদের আড্ডাস্থল। বলতে গেলে তাদের বৈঠকখানা। রাজনীতি থেকে সংস্কৃতির চর্চা, দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা– সবকিছুর আঁতুড়ঘর ছিল এই ‘স্যাঁলো’।

আর সেই গ্রিসেই কিনা সেপাইদের দাড়ি কাটার হুকুম দেওয়া হচ্ছে! তবু কেউ বিরোধিতা করেনি। কোনো বিদ্রোহ হয়নি। বিনা প্রশ্নে রাজার হুকুম তামিল হয়েছে। দাড়ি নিয়ে এত যে আবেগ, একটা হুকুমে সব ভেসে গেল! এই ঘটনা অবাক করেছে গবেষকদের। অবাক হওয়ারই কথা। দাড়ি কি আর শুধুই ফ্যাশন তখন! ‘there were strong prejudices in Greek culture against it’– এমনটাই বলছেন ঐতিহাসিকেরা। দাড়ি নেই যার, সমাজে সে প্রায় নপুংসকের সামিল। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের দাড়ি না গজালে লজ্জায় মুখ লুকোতে হত– ‘A smooth chin on a grown man was everywhere taken as a sign of effeminacy or degeneracy.’ আর এই পরিস্থিতিতেই কিনা হুকুম দেওয়া হচ্ছে দাড়ি কেটে ফেলার! গ্রিকদের সংস্কার, তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আর ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপ্রতীপে গিয়ে আলেকজান্ডার দাড়ি কাটার হুকুম দিচ্ছেন, তবু কেউ বিদ্রোহের কথা ভাবেনি!

এমন একটা ঘটনা যে কৌতূহলের জন্ম দেবে, এ আর আশ্চর্য কি! ঐতিহাসিকদের মনেও জিজ্ঞাসা, কী ভাবে সেটা সম্ভব হল! এক ঐতিহাসিকের বর্ণনায় এই সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। পরবর্তীকালের অনেক ঐতিহাসিকই এই তথ্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। তা সেই ইতিহাসকার বলছেন, আলেকজান্ডার সেপাইদের বুঝিয়েছিলেন, লড়াইর ময়দানে দাড়িয়াল সেপাইরা বরাবরই দুর্বল। বিপক্ষীয়রা এর সুযোগ নেয়। তারা ঘোড়া থেকে শত্রুদের দাড়ি ধরে টেনে নামানোর চেষ্টা করে। এরপর তলোয়ারের এক কোপে ধড়-মুণ্ডু সব আলাদা। সেপাইদের তাই দাড়িটা কেটে ফেলাই উচিত।

এই তথ্য দিয়ে গেছেন প্লুতার্ক। গ্রিক ঐতিহাসিক। আলেকজান্ডার সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য তিনি দিয়ে গেছেন, যা অন্য ঐতিহাসিকের লেখায় পাওয়া যায় না। সেই সব তথ্যের সত্য-মিথ্যে নির্ধারণ অসম্ভব। আসলে জীবিত থাকতেই আলেকজান্ডার প্রায় কিংবদন্তী। পরবর্তী তিনশ’ বছরে তাঁকে ঘিরে তৈরি হয়েছে হাজারও জনশ্রুতি। তাঁর নামে আজব আজব সব কিসসা হাওয়ায় উড়ে বেড়াত। দাড়ি কাটার ঘটনা নিয়েও। প্লুতার্ক হয়ত তেমনি এক জনশ্রুতি শুনিয়ে গেছেন। তা হলই বা জনশ্রুতি! আসলে এও তো এক ধরণের মৌখিক ইতিহাস। ইতিহাসে উপেক্ষিত অনেক কাহিনীই এভাবে পুরুষানুক্রমে পৌঁছে যায় তাদের উত্তরাধিকারীদের কাছে।

ধরে নিলাম প্লুতার্কের এই তথ্যে কোনো ভেজাল মেশানো নেই। তারপরেও কি যুক্তি হিসেবে একে খুব জোরালো বলা যায়! তুর্কি আর পার্সিদের যুদ্ধবাজ বলে কি আর কম খ্যাতি ছিল! এরাও তো সব দাড়িয়াল। কই, দাড়ি নিয়ে যুদ্ধ করতে তাদের তো কোনো অসুবিধে হয়নি। রোমানরাও তাই। গ্রিকদেরও একই ঐতিহ্য। মনে রাখতে হবে, গ্রিসের জনপ্রিয় মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’ কিন্তু বলছে, দাড়ি কামালে পুরুষদের পৌরুষত্ব বলে আর কিছু থাকে না। তাছাড়া তাঁর মতো দ্বিগ্বিজয়ে না বেরোলেও আলেকজান্ডারের পূর্বসূরীরা যুদ্ধবিগ্রহ কিছু কম করেননি। আর সে ওই দাড়ি নিয়েই। তবু কেন এমন হুকুম!
আধুনিক কালের এক গবেষক প্লুতার্কের এই তথ্যের পেছনে যুক্তি দেখাতে গিয়ে বলছেন, শুরুর দিকে পারস্যের সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আলেকজান্ডারের পাঠানো বাহিনী নাকি খুব একটা সুবিধে করতে পারেনি। বেশ কয়েকটি যুদ্ধে ম্যাসিডোনিয়ান সৈন্যরা পরাজিত হয়েছিল। সেই সময় দাড়ি ধরে গ্রিকদের ঘোড়া থেকে মাটিতে পেড়ে ফেলে হত্যা করেছিল পারসি সেনারা। এই সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন ছিল। আর তা করতে গিয়েই সেনা ও সামরিক অফিসারদের দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন আলেকজান্ডার। পরে নাগরিকদের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ফ্যাশন।

অসম্ভব নয়। এজন্যই হয়ত সেনারা আলেকজান্ডারের আদেশ মানতে অস্বীকার করেনি। আবার এমনও হতে পারে আলেকজান্ডার চেয়েছিলেন, তাঁর সেনাদের গাল থাকবে চকচকে কামানো। ভুলে গেলে চলবে না তিনি নিজেও ছিলেন ক্লিন সেভেন। তা রাজা হিসেবে নিজের পছন্দ তিনি অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন বইকি! তাছাড়া ফ্যাশনের ইতিহাস বলছে, রাজপরিবারের ফ্যাশন বরাবরই আমজনতার মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু যেখানে ঐতিহ্যের বিপ্রতীপে চলার চেষ্টা থাকে, সেখানেই হয় মুশকিল। তাছাড়া যে রাজা দিগ্বিজয়ে বেরোবেন, তাঁর সেপাইদের নারাজ করলে চলবে কেন! নিজের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে এক্ষেত্রে তাই কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। দক্ষ রাজনীতিবিদ আলেকজান্ডার তাই এমন এক চাল চাললেন, যে চালে মাত হয়ে গেলেন সেনা এবং সেনাপতি– উভয় দলই।

কী ছিল সেই চাল! যুদ্ধযাত্রী সেনাদের তিনি বোঝালেন প্রাচ্যবাসীদের তুলনায় তাঁরা শ্রেষ্ঠ। চলনবলন, আদব-কায়দা, সাজপোশাক, সংস্কার– সব দিক দিয়েই। শৌর্যে-বীর্যে তো বটেই। এই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা চাই যুদ্ধভূমিতেও। তাহলেই লড়াই ক্ষেত্রে জয় নিশ্চিত। এদিকে রণক্ষেত্রে মৃত্যুর একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। দাড়িটা কেটে ফেললে সেই আশঙ্কা অনেকটাই কমে। বিরুদ্ধ-পক্ষ তখন আর দাড়ি ধরে টানাটানি করতে পারবে না। তাছাড়া এতে শত্রুপক্ষের সঙ্গে তাদের একটা বিভেদ রয়েছে, সেটাও স্পষ্ট হয়। সেপাইদের মনে ধরার মতো কথা। প্রস্তাবটি তাই লুফে নিয়েছিল তারা। বাকিটা ইতিহাস।

ক্রিস্টোফার ওল্ডস্টোন মোর– এক দাড়ি বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘grabby Persians’-দের বিরুদ্ধে সৈন্যদের কোনো ‘hypothetical protection’ দিতে চাননি আলেকজান্ডার। বরং এর বদলে এক ‘greater psychological effect’ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। আর হ্যাঁ, “Symbolically, he was calling upon his men to identify with their smooth-faced leader, and to distinguish themselves from the inferior, bearded Asians they confronted.”

এমনি এমনি কি আর তাঁকে ম্যাজিশিয়ান বলা হচ্ছে! সেপাই এবং সিপাহসালার– দুই আলাদা শ্রেণী, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। দু’দলকেই সুন্দর সামাল দিলেন তিনি। এক দাওয়াইতেই। শুধু আবেগের চালে জিতে নিলেন দান।

এখন প্রশ্ন হল এমন এক সাধ আলেকজান্ডারের মনে জাগলো কেন! সত্যিই কি দাড়ি সংক্রান্ত উটকো ঝামেলার মোকাবিলা করতেই এমন সিদ্ধান্ত! অনেক প্রাচীন সভ্যতাই এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। আর সেটা বিপরীত স্রোতে না হেঁটেই। কীভাবে! অ্যাসিরিয়ানরা যেমন। তারা সেপাইদের দাড়ির একটা দৈর্ঘ্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। অনেক দেশেই এমন হয়েছে। ইতিহাসও তাই বলছে, “Assyrian soldiers wore short beards, perhaps for the same reason and also for practical reasons. For soldiers in most countries, beards were kept short or removed for reason of safety.”

আলেকজান্ডার কিন্তু সেই সহজ পথে হাঁটলেন না। তাঁর সবকিছুই জেরা হটকে করা চাই। সিকন্দরের শিরোপা কি আর এমনি এমনি মিলেছে! পৃথিবীর আর কোনো যোদ্ধা দেশ নির্বিশেষে এমনভাবে মানুষের মনের ওপর রাজ করতে পেরেছেন কিনা, সন্দেহ!
আলেকজান্ডার পেরেছিলেন। তুখোড় রাজনীতিবিদ এবং এক যোদ্ধা যখন দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন, তখন নিজের সেনাবাহিনীর প্রতি তাঁর বিশেষ নজর থাকবেই। ইউনিফর্মিটি– নিজের সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রত্যেক শাসক যা দেখতে চান, আলেকজান্ডার নিজেও সেটাই দেখতে চেয়েছিলেন। তব অন্যদের মতো শুধু পোশাক-আশাকেই নয়, চেহারাতেও। এর আগে চেহারার কথা আলাদা করে কোনো শাসক ভাবেননি। আলেকজান্ডারের নিজের দাড়িগোঁফ ছিল না। সৈন্যদেরও নিজের কার্বনকপি করে তুলতে চাইলেন তিনি। সবাই মিলে তৈরি হবে এক দল। একজনকে আর একজন থেকে কিছুতেই বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। জনৈক সমালোচকের ভাষায়, ‘Alexander’s command was to make his troops look more like him.’ এতে সেনা-সেনাপতি-প্রভু– মুছে যাবে এই বিভেদরেখা। দলপতি আর দল– সবাই সেখানে একাত্ম : “each man see himself as a critical part of the mission. They would certainly see this more clearly if each of them looked more like their heroic commander.”

বিরুদ্ধ জনমতের কোনো অবকাশ ছিল না। দুনিয়া এমন ট্রেণ্ড সেটারদেরই পদচুম্বন করে। আলেকজান্ডারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দাড়ি কাটার এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর সাফল্যকে জুড়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা সেই থেকে শুরু হয়ে যায়। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে সেটা তখন এক আইডিয়া। দেশ নির্বিশেষেই।

এই ঘটনা ইউরোপের অনেক দেশগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। আলেকজাণ্ডারের অনুকরণে সেই সব দেশের শাসকরাও তখন সেনাদের দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় এক নয়ি মিশাল– “Alexander set a standard that would endure unchallenged for the next four hundred years. After that long stretch, natural hair regained favor only through the relentless efforts of defiant philosophers, and then only for a brief time.” এক ম্যাজিশিয়ানের জাদুছড়ি এভাবেই পাল্টে দিয়েছিল ঐতিহ্যের এক সুপ্রাচীন ধারাকে।

 

Be the first to comment

আপনার মতামত...