সঞ্চিতা পাত্র
ঘরকন্না
প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে
প্রতিদিন সন্ধ্যায় সূর্য ডোবে
বিশ্বাস-অ-বিশ্বাস বুকে রেখে
তুমি চাল এনেছ
দিনের পরে দিন
বিশ্বাস-অ-বিশ্বাস বুকে রেখে
আমি ভাত রেঁধেছি
দিনের পরে দিন
বিশ্বাস-অ-বিশ্বাস মাথায় তুলে
আমরা ভাত খেয়েছি
দিনের পরে দিন
প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে
প্রতিদিন সন্ধ্যায় সূর্য ডোবে
আজান
বাবা শিঙি মাছ এনেছে, জ্যান্ত।
আমার শরীর খারাপ, জিয়ল মাছ দেহে বল আনবে। কচি তেলাকুচা ও কাঁচকলা দিয়ে ঝোল হবে। বড় একটা গামলায় জল দিয়ে তাদের রাখা হয়েছে। মা বলেছে, রাতে নাকি ওদের দেহে বল বাড়ে। লাফ দিয়ে পালাতে পারে এই ভয়ে, গামলার মুখে কাপড় বেঁধে দিয়েছি।
হঠাৎ ভীষণ শোরগোল। ঘুম ভেঙে দেখি, গামলার জলে প্রচণ্ড আলোড়ন। প্রত্যেকটা মাছ যেন লাফ দিয়ে ছুঁয়ে ফেলবে আকাশ। পারছে না কারণ পাত্রের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা। আমিও নীল মশারির ভিতর শুয়ে শুয়ে শুনি, বাইরে কোকিলসহ অন্যান্য পাখি ভিন্ন ভিন্ন সপ্তকে ডেকে চলেছে। চারদিকে কেমন একটা সাজ সাজ রব। একটা অদ্ভুত গতিময়তা। কোথায় যেন যেতে হবে!
শুরু হয়ে গেছে আজান। ঘড়িতে এখন ভোর চারটে।
গ্রিন সিগনাল
১৩ই জুন, মনসুনের প্রথম বৃষ্টি এল আজ।
ভোররাত থেকে অঝোর বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
হাল্কা বজ্রপাত, চকিত বিদ্যুৎ রেখা। গোটা আকাশে ছাই রঙ মসৃণভাবে মিশে গেছে, কোথাও এতটুকু কমবেশি নেই। ঘাসফড়িং, গিরগিটি, কাঠবেড়ালি, বাদলাপোকা সবাই শশব্যস্ত হয়ে ছুটে চলল। কোথায় কে জানে? গাছগুলিও জোরকদমে গ্রিন সিগনাল দিচ্ছে।
তারের ওপর ফিঙে দম্পতিটি ডানা ও লেজের পালক দু’দিকে যতটা সম্ভব বিস্তৃত করে ভিজিয়ে নিচ্ছে। এতটাই ছড়িয়ে দিয়েছে নিজেদের যে পালকে পালক মিশে গেছে, একজনের জল অন্যজনের উপর গড়িয়ে নামছে, একটি ঠোঁট অন্য ঠোঁটের উপর নেমে এসেছে।
উঃ, আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছে করছে…
প্রাত্যহিকী
শ্রাবণমাস। গরম কাটেনি তবুও। শোবার সময় দুটো ফ্যানই চালাতে হয়। একটা সিলিং-এ, আর একটা দেওয়ালে। বড় বড় জানালাগুলি হাটখোলা। একটু ঘুম চলে এলে দেওয়াল ঝোলানো তীব্র ফ্যানটা বন্ধ করে দিই। রাত বেড়ে গেলে নিঝুম ছোটবড় ঘুমগুলির ওপর টেনে দিই পাতলা চাদর। আরও কিছু পরে সিলিং ফ্যানটাও অফ করে দিতে হয়। ঠান্ডা আরও বেড়ে গেলে বিছানা থেকে নেমে উত্তরের জানালার পর্দাগুলো টেনে দিই। ধীর নিঃশব্দে বিছানায় ঢুকে পড়ি আবার।
প্রাত্যহিক কোকিলের ডাক শুরু হয়। শোনা যায় দূরের আজান।
ঈশ্বর
আমি দ্বিখণ্ডিত।
দুই বাহুতে দুই সন্তানের মাথা এলিয়ে আছে।
প্রত্যেক ভাগে একটি পা, অর্ধেক পেট, একটি হাত,
একটি স্তন, একটি কান ইত্যাদি…চুলচেরা বিচার।
বড়টি যতটা সম্ভব নিজের দেহকে আমার মধ্যে মিশিয়ে দিয়ে এইমাত্র ঘুমিয়ে পড়ল। আমি ঘুম না পাড়িয়ে দিলে দুঃস্বপ্ন আসে, এমনই দাবি ওদের।
অন্ধকারে ছোটর দুই আয়ত চোখ উজ্জ্বলতর। ছোট্ট দুই হাতে আর মুখে স্তনবৃন্ত আদর করতে করতে, কত কী প্রশ্ন পেরিয়ে ভাবনায় ডুবে গেছে। ওই চোখগুলিতে আমি সারাদিন স্বপ্ন এঁকে দিই। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নরা প্রাণ পায়, এক্কা দোক্কা খেলে। ঘুমের মধ্যে ওরা হেসে ওঠে, পাশ ফিরে আমাকে জড়ায় আবার।
হে ঈশ্বর! সবিনয়ে জানাই, এই মুহূর্তে আমার ক্ষমতা কিছু অংশে কম নয় তোমার থেকে।