লকডাউনে গরিব মানুষের খাদ্যসুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যদি এসেনশিয়াল না হয়, তবে কোনটা এসেনশিয়াল

লকডাউনে গরিব মানুষের খাদ্যসুরক্ষা সুনিশ্চিত করা যদি এসেনশিয়াল না হয়, তবে কোনটা এসেনশিয়াল

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

মার্চ ২০২০ থেকে আমরা সকলেই গৃহবন্দি। শুধু গৃহবন্দিই নই, রীতিমত বাধ্য স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের মতো মন দিয়ে পড়াশোনা করে চলেছি। মাস্টারমশাইটি চেহারায় ছোট – নিতান্তই এক মাইক্রো-অরগানিজ্‌ম। কোভিড-১৯ ভাইরাসটি আক্ষরিক অর্থেই আমাদের ঘাড়ে ধরে অনেক কিছু শিখিয়ে নিচ্ছে গত সাড়ে তিন মাস ধরে। এবং মনে করিয়ে দিচ্ছে বেশকিছু অতি প্রয়োজনীয় কথা – যার অধিকাংশই নিছক সাধারণ জ্ঞানের বিষয়, কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই, যা আমরা হয় ভাবিইনি কখনও, বা হয়তো জেনেও অব্যবহারে ভুলে গিয়েছি সকলেই। আর, কিছু জিনিস আমরা শিখতে বাধ্য হয়েছি দায়ে পড়ে। আমরা জেনেছি সামাজিক দূরত্ব (আসলে শারীরিক)দূরত্ববিধি পালনের কথা। আমাদের কান মলে মনে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে,বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং অন্যান্য সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কতটা জরুরি,এবং, ঠিক কতটা জরুরি আমাদের চারপাশেরকয়েকজন মানুষ।

‘এসেনশিয়াল ওয়ার্কার্‌স’ শব্দটি বারবার ঘুরেফিরে আসতে দেখছি এই কয়েক মাসে। এর বাংলা ঠিক কী হতে পারে? এই শব্দবন্ধটি দিয়ে আমরা বোঝাচ্ছি অত্যাবশ্যক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের – যাঁরা আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের পক্ষে অপরিহার্য হয়ে উঠেছেন কোভিড-ঋতুতে। ‘এসেনশিয়াল ওয়ার্কার্‌স’ তাই তাঁরা, যাঁদের কাজে যেতেই হবে, নিজের জন্য যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি আসলে আমার-আপনার জন্য। আমরা যাতে গৃহবন্দিদশায় সুখে-শান্তিতে-স্বাচ্ছন্দে-স্বস্তিতে থাকতে পারি, তার ব্যবস্থা করার জন্য এঁদের কাজে যাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক। আমরা ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে সুরক্ষিত থাকলেও, এঁদের তা করার উপায় নেই। না, বলা বাহুল্য, এখানে ‘এসেনশিয়াল ওয়ার্কার্‌স’-দের তালিকা তৈরি করতে বসিনি আমরা – যদিও, সেই তালিকাটাও নতুন করে তৈরি করাও রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ল, লকডাউনের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দস্তুরমতো সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, কেন ইস্টার বানিকে তাঁরা অত্যাবশ্যক পরিষেবা প্রদানকারীর তালিকায় রাখছেন! কিন্তু, আপাতত সেই প্রসঙ্গ থাক। বরং আসুন, আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই এমন কয়েকজনের সঙ্গে, যাঁদেরকে এই ‘এসেনশিয়াল ওয়ার্কার্‌স’-এর  তকমা সরকার দেয়নি। কিন্তু আনুষ্ঠানিক তকমা এবং তার সঙ্গে পাওয়া কিছু বিশেষ ছাড় এবং সমীহর তোয়াক্কা না-করেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন এমন কিছু মানুষের কাছে এমন কিছু পরিষেবা নিয়ে, যা সরকারি অ্যাডভাইসরি-মোতাবেক অপরিহার্য না-হলেও, তাঁদের কাছে সত্যিই ‘এসেনশিয়াল’।

এঁরা কারা?

যাঁদের কথা শুনব, তাঁরা ওডিশা ও ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। সেখানকার কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করেন ফিল্ড ওয়ার্কার হিসেবে। এঁদের প্রধান কাজ হল গ্রামে-গ্রামে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা তার দেখভাল করা, গ্রামবাসীরা কোনও অসুবিধেয় পড়ছেন কিনা তার খেয়াল রাখা, কোনও জরুরি তথ্য গ্রামবাসীর কাছে না-পৌঁছে থাকলে সেই তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এঁরা যে এলাকায় কাজ করেন, সেখানে এঁরা প্রায়ই বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন –যার মধ্যে থাকে স্থানীয় উগ্রবাদী রাজনৈতিক কার্যকলাপ, রাজনৈতিক নেতাদের চিরাচরিত দ্বন্দ্ব-বিবাদ-বিসংবাদ, খুনোখুনি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ইত্যাদি প্রভৃতি। এসবের মোকাবিলা করে কাজ করার জন্য তাঁরা তৈরিই থাকেন। তবে, এবারের এই দেশজোড়া লকডাউন তাঁদের কাছেও অভিনব এক সমস্যা হয়ে উঠেছে। কেমন সেই সমস্যা? কীভাবে তাঁরা মোকাবিলা করছেন সেগুলির? চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা…

 

সীতারাম ওরাওঁ

‘ট্রিকল আপ’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে ঝাড়খণ্ডের সারান্ডায় বনবসতির মধ্যে কাজ করছেন

আপনার কাজের ধরনটা একটু বলবেন? বিশেষত এই লকডাউনের মধ্যে ঠিক কী ধরনের কাজ করেছেন আপনি?

আমি যেখানে কাজ করি, সেটা ঝাড়খণ্ডের সারান্ডার জঙ্গলের একদম ভিতরের একটি ছোট গ্রাম, নাম ছোটা নাগড়া। এখানে ফোনে টাওয়ার থাকেনা প্রায়ই, অনেক সময় অনেক জরুরি তথ্য আমরা ঠিক সময়ে পাইনা। আমি যাঁদের সঙ্গে কাজ করি তাঁরা অধিকাংশই আদিবাসী সম্প্রদায়ের অতিগরিব গ্রামবাসী, জঙ্গলের মধ্যে ছোট ছোট বনবসতিতে থাকেন। লকডাউনের ঘোষণার সঙ্গে-সঙ্গে সরকার এঁদের জন্য অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেছিলেন। রেশন, পেনশনের টাকা ইত্যদি – যাতে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলেও, খাওয়াদাওয়ার যোগানটুকু থাকে। কিন্তু এখানে সরকারের সেই বার্তা পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। এখানে ক’জনের কাছেই বা ফোন থাকে, থাকলেও, তাতে নেটওয়ার্ক থাকে কই? তাই লকডাউনে আমাকে বাড়ি থেকে কাজ করার কথা বলা হলেও, আমার পক্ষে তা সম্ভব ছিলনা। আমি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রত্যেককে সম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার বিষয়ে হাতেকলমে সাহায্য করে, তাঁদের রেশনের ব্যবস্থা করেছি। যারা অনেক দূরে থাকেন তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না-হলে, গ্রামের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে কাজগুলি করিয়ে নিয়েছি। এই সময়ে ঘরে বসে থাকলে আমার এলাকায় অনেকমানুষ আক্ষরিক অর্থেই না-খেয়ে থাকতে বাধ্য হতেন। কিন্তু, সেটা তো আমি হতে দিতে পারি না।

 

ববিতা মহানন্দ

ওডিশার বালিশঙ্করা ব্লকের ন’টি গ্রামে ‘সেবক’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন

এতবছর ধরে যে কাজ করছেন, তার কোনও সুফল দেখতে পেলেন এইসময়ে?

কেউই জানত না এমন একটি ঘটনা ঘটতে চলেছে। আমি যে গ্রামগুলিতে কাজ করি, সেখানকার লোক আমাকে এতটাই বিশ্বাস করেন যে, আমি যখন তাঁদের বাড়িতে সব্জির ছোট্ট বাগান তৈরির পরামর্শ দিতাম, তাঁরা শুধু আমি বলছি বলেই আমার কোনও প্রশ্ন না-করে আমার কথামতো কাজ করতেন। এই লকডাউনে যখন বাজার বন্ধ হল, বন্ধ হল সমস্ত কাজকর্ম, তাঁরা বুঝলেন, বিপদের দিনে এই বাগানগুলি কতটা কার্যকর। বাগান থাকার ফলে, এইসময়েও অনেকেই নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে পেয়েছেন নিখরচায়। অতিগরিব পরিবারে এটা তো স্বপ্নাতীত।

আমার কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা কী করে বুঝলাম জানেন? লকডাউন শুরুর কয়েকদিন পরেও ওরা কোথা থেকে আমার ফোননম্বর জোগাড় করে আমাকে ফোন করে বারবার জিগ্যেস করা শুরু করল, কবে আসবে, কতদিন দেখিনি তোমাকে! লকডাউনের প্রথম পর্বের পরে, যখন আমি আবার গ্রামে যেতে শুরু করি ২০এপ্রিলথেকে,গ্রামবাসীরা আমাকে এমন স্বাগত জানাল, যেন আমি ওদের ঘরেরই লোক, অনেকদিন পর বাড়িতে ফিরেছি। এর আগে এরকম অভিজ্ঞতা কোনওদিন হয়নি আমার। বলতে পারেন, ঠিক এই কারণেই আমি আমার কাজকে এতটা ভালবাসি!

 

সুশান্তি হেমব্রম

ঝাড়খণ্ডের ‘প্রভা’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সামনের সারির কর্মী

লকডাউনের মধ্যে আপনারা কাজ বন্ধ রাখতে পারলেন না কেন, যদি আমাদের জানান…

কোভিড-১৯এর বিস্তার রুখতে, দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালীন বাকি সকলের মতোই আমাকেও বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়। কিন্তু আমি এই সিদ্ধান্তটা মেনে নিতে পারিনি। যে মহিলাদের সঙ্গে আমি কাজ করি, তাঁরা এমন জায়গায় থাকেন যে, সেখানে আমি বা আমার মতন কেউ যদি রোজ না-পৌঁছোয়, এই লকডাউনের বাজারে তাঁরা খেতে পাবেননা। কারণ তাঁরা জানবেন না যে, সরকার তাঁদের জন্য রেশন বরাদ্দ করেছে, বা কিছু পেনশনের টাকা তাঁদের ব্যাঙ্কে পৌঁছে গেছে, যা তাঁরা তুলে নিতে পারেন অবিলম্বে, যাতে কাজ না থাকলেও, সংসারটা চলে যাবে। আমি নিজের দায়িত্বে, নিজের স্কুটিতে দুমকা (আমার বাড়ি দুমকায়) থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের লিটিপাড়া (যেখানে আমি কাজ করি) যাতায়াত করেছি শুধুমাত্র এইকারণেই। প্রতিটি সরকারি যোজনার খবর যেন গ্রামবাসীরা ঠিকঠাক পেতে পারেন এবং সেগুলির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারেন, সেটা দেখাই আমার কাজ। আদিবাসী সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষরা এধরনের লকডাউনে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই কঠিন সময়ে তাঁদের পাশে থাকাটাই আমার কাজ। সেটা ঘরে বসে করা সম্ভব ছিল না।

 

অতীশ বারিক

‘লোকদৃষ্টি’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে ওডিশারবঙ্গমুন্ডা ব্লকের ৩০টি গ্রামে কর্মরত একটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।

কোনও নতুন অভিজ্ঞতা হল? যা আপনারা একদমই অনুমান করতে পারেননি?

যখন লকডাউন ঘোষণা হল, আমি কেবল একটিই কথা ভাবছিলাম। আমরা কাজ করি সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষদের জন্য, এবং এই সঙ্কটের সময়ে যদি আমরা তাদের কাছে পৌঁছতে না-পারি তাহলে আমাদের কাজেরমানেটাই আর থাকে না। তাই, লকডাউনের প্রথম ধাপ শেষ হতেই আমরা আমাদের কাজের জায়গায় পৌঁছে যাই। এবং সেখানে আমার নতুন অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটি হল, ঘরে ফিরে আসা পরিযায়ী  শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা। তাঁরা যে কেবল সবরকম পরিষেবার জন্য নিবন্ধীকৃত ছিলেননা তা-ই নয়, তাঁদের ঘিরে সমাজে যথেষ্ট ভয়ভীতিও ছিল। আমরা আমাদের পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে এঁদের সমস্ত সরকারি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। শুধু তা-ই নয়, প্রত্যেকের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আমরা পৃথকীকরণ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং সামাজিক ভয়ভীতি দূর করার জন্য সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। এই রোগটির বিরুদ্ধে একজোট হয়েই লড়াই করা সম্ভব। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নয়, সহানুভূতি এবং যত্নটাই মানুষের প্রয়োজন।”

 

অরুন্ধতী দাশ

‘প্রভা’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে ঝাড়খণ্ডের ৭২টি ​​গ্রামে কর্মরত একটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন

নিজেদের এসেনশিয়াল ওয়ার্কার বলবেন কি?

আমরা দেশের কিছু প্রত্যন্ত জায়গায় আদিবাসী উপজাতিদের সাথে কাজ করি, যেখানে বেশিরভাগ পরিষেবা এখনও পৌঁছয়নি। লকডাউন চলাকালীন আমরা চেঞ্জমেকার, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেম্বার এবং মোবাইল ফোন আছে এমন সক্রিয় মহিলাদের মাধ্যমে প্রত্যেকটি জায়গায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। আমার দলের কেউ কেউ লকডাউনের সময়ও স্বেচ্ছায় প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি গ্রামে কাজ করে এসেছে। আমাকে যদি জিগ্যেস করেন, আমি বলব আমরা অতি অবশ্যই এসেনশিয়াল ওয়ার্কার। স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদেরও যদি ‘পাস’ দেওয়া হত, তবে আমরা নিশ্চিতভাবে আমাদের কার্যক্ষেত্রের ১০০% মানুষের কাছে পৌঁছে যেতাম। লকডাউনের সময় খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছিল আমাদের প্রধান কাজ। এটা তো জীবনমরণের ব্যাপার। এটা যদি এসেনশিয়াল না-হয়, তবে কোনটা এসেনশিয়াল?

 

নবকুমার বিশী

‘লোকদৃষ্টি’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে ওডিশার মুড়িবহাল এলাকায় সাতটি গ্রামে কাজ করছেন

লকডাউনের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কোন বিষয়টার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে হয়েছিল?

দেখুন, আমারও বয়েস হচ্ছে। তার ওপরে, আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। ফলে লকডাউনের মধ্যে আমার বাইরে যাওয়ার ওপর নানান নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু, যে কাজটা করি, তার জন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটা, যাকে বলে, একটা প্রাথমিকতম শর্ত। কাজেই, আমার এলাকার প্রায় ৯৬জন সহযোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পুরো কাজটাই আমায় করতে হয়েছে ফোনে। তা ছাড়া, স্থানীয় সরকারি আধিকারিকরাও এ কাজে আমায় যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।  সামান্য যে কয়েকজনের সঙ্গে লকডাউনের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারিনি, আনলক পর্বে ফিল্ডে যাওয়ার অনুমতি পেইয়েই তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছি। দেখেছি, দারিদ্র আর অসহায়তার ছাপ কীভাবে লেগে রয়েছে তাঁদের চোখেমুখে। এখন আমরা মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট স্কিম-এর সঙ্গে তাঁদের যুক্ত করার চেষ্টা করছি, যাতে তাঁরা ছোটখাট ব্যবসা বা অন্যান্য জীবিকার মধ্যে দিয়ে গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থান করতে পারেন।

এটা করতে গিয়ে যে কথাটা আমি সবচেয়ে বেশি করে বুঝেছি, সেটা হল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করা কতটা জরুরি। এই যে সবাই সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-এর কথা বলছেন, সে কথাটার যে কী মানে, সেটা আমি বুঝতে পারি না। শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে বললে বোঝা যেত, কিন্তু নিজেকে  সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দেব, অথচ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলব – এই দুটো ব্যাপার কি পরস্পরবিরোধী নয়?

 

যাঁদের কথা শুনলেন, তাঁরা কিন্তু মোটেও হাতে গোনা কয়েকজন নন। এই কয়েকজনের কথা আসলে সারা দেশ জুড়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কর্মরত হাজার-হাজার কর্মীরমনের কথা। তাঁরা এই কাজটি বেছে নিয়েছেন কঠিন সময়ে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে। সামনের সারির কর্মী হলেও, এঁদের নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়না, হয়না কাজের প্রশংসা। তবু, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে, দুঃখের সময়ে, দরকারে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে এই মানুষগুলিকেই বারবার দেখা যায়।

আর হ্যাঁ, আরও যেটা জানিয়ে রাখা দরকার – এঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু মুখে মাস্ক পরে, হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে, সুনির্দিষ্ট দূরত্ববিধি মেনেই কাজে গিয়েছেন, এখনও যাচ্ছেন। কাজ করছেন সমস্ত প্রতিরোধমূলক নিয়ম মেনেই।

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...