বই

বই -- বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার

বর্ণালী ঘোষ দস্তিদার

 

বাবাকে বললাম, “কম্পিউটার না পারো একটা স্মার্টফোন অন্তত কিনে দাও।”

বাবা স্মার্টফোন কাকে বলে জানে না। তবে বাবার ফোন একটা আছে। টেপা ফোন। যখন জিও থেকে ফ্রিতে ফোন আর কানেকশন দিচ্ছিল তখন বাবা সেই ফোন নিয়েছিল একটা। তার আগে পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে ফোন বলতে ছিল একটাই। ওই আমারটা। যেটা আমি এইচএস পাশ করে কলেজে ভর্তি হবার সময় বাবা কিনতে বাধ্য হয়েছিল বেশ কষ্ট করেই।

আজ প্রায় দু মাসের ওপর আমার কলেজ বন্ধ। অনলাইনে পড়াশুনো চলছে। টিচাররা কখনও ভিডিওয় ক্লাস করাচ্ছেন, কখনও আবার পিডিএফ করে লিঙ্ক পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর আগে যতবার প্রয়োজন হয়েছে ফর্ম ডাউনলোড বা সাবমিট করা, ওয়েবসাইট চেক করা, পাড়ার সাইবার কাফেটায় গিয়ে কাজ সেরে এসেছি। কিন্তু এখন তো সেসব সম্ভব নয়। যা করার, ঘরে বসে করো। পড়ার হলে ঘরে বসেই পড়ো। আর এইখানেই সমস্যা। টেলিফোনে বন্ধুদের কাছে খবর পাই তারা নাকি অনেক এগিয়ে গেছে। আমি ঢের পেছনে পড়ে গেছি। ওদের কাছে গিয়ে ওদের সঙ্গে বসে যে গ্রুপ স্টাডি করব তারও উপায় নেই। সোশ্যাল ডিসট্যানসিং।

তীর্ণার সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব। কিন্তু আজ দু মাসের ওপর হয়ে গেল তীর্ণার সঙ্গেও দেখা নেই আমার। মাঝে-মধ্যে ফোনে একটু কথা হয় মাত্র। অধিকাংশ সময় তীর্ণাই ফোন করে। তা-ও “কেমন আছিস?” “কী করছিস?”… এইটুকু। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীর্ণার সঙ্গে টেলিফোনে আড্ডা দেব সে রেস্তও আমার নেই, সে সুযোগও নেই।

মাড়োয়ারি কালোয়ারের লোহার কারখানায় বাবার চাকরি। ডিউটি বারো ঘণ্টা। আর আমাদের বাসা হাওড়ায়। শালকের ঘুসুড়িতে।

আমাদের আসল বাড়ি অবশ্য দিঘার পথে যেতে পড়ে যে নন্দকুমার, সেখান থেকে আরও অনেকটা ভেতরের গ্রামে। ওখানে আমার ঠাকুর্দা-ঠাকুমা আছেন। আর আছে দুই কাকা, এক নুলো জ্যাঠা আর বিয়ে না হওয়া ফুলপিসি। ফুলপিসি বিএ পাশ করার পর আর পড়াশুনো করতে পারল না। এখন ঘর-সংসারের কাজকর্ম করে। ফুলপিসির বিয়ের সম্বন্ধ দেখা চলছে। দেখতে মোটেই খারাপ নয় ফুলপিসি। তবে গায়ের রংটা চাপা। পাত্রপক্ষ কি বারবার সেই কারণেই রিজেক্ট করে দিচ্ছে? আমার তা মনে হয় না। লুকিয়ে নগদ-টগদ নেওয়ার তাল। কিন্তু ফুলপিসিকে পণ দিয়ে পার করার মতো টাকা বাবা-জ্যাঠাদের নেই। নগদ দিতে পারলে এতদিনে ফুলপিসির গতি হয়ে যেত… তা সে যত কালোই হোক।

বাবার অবশ্য এ ব্যাপারে অন্য মত। বাবা বলে টাকা দিয়ে বিয়ে দিলে পাত্রপক্ষের লোভ বাড়তেই থাকে। এই ধরনের পরিবারগুলোই গৃহবধূ খুনটুন করে। আসলে বাবার দৃষ্টিভঙ্গিটা বেশ আধুনিক। অল্পবয়েস থেকে শহরে বসবাস করে বড় হয়েছে। গ্রামের ইস্কুল থেকে পাস করে বাবা শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছিল। পড়াশুনো চালিয়ে যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কলেজে বাম ছাত্র-রাজনীতি করত। কিন্তু গ্রামে বড় একান্নবর্তী পরিবার। কাকা-জ্যাঠারা আগ্রহ দেখাল না বাবার শহুরে লেখাপড়ায়। যন্ত্রপাতির যা একটু-আধটু হাতুড়ে কাজ জানত সেই বিদ্যেতেই লোকাল কারখানায় কাজ পেয়েছিল বাবা।

আমি বাবা-মার বড় সন্তান। আমার পরে ভাই। তারপর বোন। আমি কলেজে সেকেন্ড সেমিস্টার। ভাই পরীক্ষা দিচ্ছিল এইচএস। করোনা-লকডাউন এসবের চক্করে মাঝপথে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেল। কবে, কী হবে কেউ জানে না। বোন ক্লাস টেন। লেখাপড়ায় আমরা কেউই খুব খারাপ নই, তবে বাংলা মিডিয়াম তো… ইংরেজিটা একটু কমজোরি। বাবা অবশ্য বলে, “ধুর, ওতে কিসসু হয় না। ফরফরিয়ে ইংরেজি বলতে পারলেই বুঝি বিদ্বান হওয়া যায়?” কিন্তু বাবা এটা ঠিক বলে না। একদম কিচ্ছু না জেনেও শুধু একটু ইংরেজি বলতে পারলেই চাকরি মেলে আজকাল।

আজ লকডাউনের পঁয়ষট্টিতম দিন। আমরা এই দীর্ঘ সময় এই ছোট্ট খুপরি ঘরটায় বন্দি হয়ে আছি। দশ ফুট বাই দশ ফুট একখণ্ড ঘরটায় গোটা আঙিনা জুড়েই বিশাল এক তক্তপোষ পাতা। তক্তপোষের নীচটায় মা তাঁর ঘরগেরস্থালির অসংখ্য জিনিস আর তৈজসপত্রে বোঝাই করে রেখেছে। সেসবের নাগাল পেতে গেলে উপুড় হয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে, অন্ধকারে চোখের মাথা খেয়ে ঢের পরিশ্রম করতে হয়। ঘরের মাথায় টালির চাল। আর সামনে একটুকখানি দাওয়া। ওই একচিলতে জায়গাতে মা রান্না করে। আর শীতের দিনে শোওয়া হয়। নাহলে সম্বচ্ছর এই ঘুপচি ঘরেই…

এই ব্যবস্থায় আমাদের খুব কিছু অসুবিধা হত না। কারণ বাবা বলতে গেলে গোটা দিনটাই বাড়ির বাইরে থাকে। আমি সকালের দিকে কলেজ বেরিয়ে যাই। দু-একটা টুইশন সেরে পাড়ায় মন্টুদার চা-দোকানে খানিক আড্ডা মেরে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কম করেও রাত নটা। ভাই-বোনেরও দীর্ঘ সময় কেটে যায় স্কুলে। মা বাড়িতে একাই। একা হাতেই রান্না-বান্না, ঘরদোর পরিষ্কার, কাচা-ধোয়া সব করে। আজকাল অবশ্য বাড়িতে থাকলে বোনও একটু সাহায্য করে মাকে। কিন্তু মা-বাবা দুজনেরই আমাদের তিন ভাইবোনের পড়াশুনোর প্রতি খুব নজর। মাধ্যমিক পর্যন্ত মাও পড়েছিল। তারপর যা হয় গরিবের সংসারে। পড়া বন্ধ। বিয়ে, সংসার। সেই কারণেই, নিজেদের আকাঙ্ক্ষা মেটেনি বলেই চায় ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে সুশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ায়।

এই ঘরটা যে পাঁচজন ফ্যামিলি মেম্বরের পক্ষে খুবই ছোট সেটা আমি প্রথম বুঝেছিলুম আমার এইচএস পরীক্ষার সময়। তারপর… কার ওপরেই বা বিরক্ত হব… রাগই বা করব কার ওপর… মানিয়ে নিয়েছি। সবাই ঘুমিয়ে পড়লে, এজমালি বাড়ির বারো ঘর এক উঠোন শান্ত হলে রাত জেগে পড়তাম। রেজাল্টও খুব খারাপ করিনি। তবে এইট্টি অ্যাবাভ নম্বর আজকাল ঘরে ঘরে আকছার সবাই পাচ্ছে। মা খুব খুশি হয়েছিল। কিন্তু বাবা খুশিটুকু চেপে রেখে বলেছিল “তোকে আরও অনেক ভালো রেজাল্ট করতে হবে বাবুল… আমি স্বপ্ন দেখি তুই মস্ত বড় সরকারি আমলা হয়েছিস কিংবা অধ্যাপক… পারবি না বাবুল? চেষ্টা কর। ভাঙা ঘরেও যে চাঁদের আলো আসে রে… তোকে দেখে ভাইবোন দুটোও শিখবে। তুই আদর্শ হবি ওদের।”

বাবার কথা শুনে আশা-নিরাশায় বুক দুলে উঠত আমার। পারব আমি বাবার স্বপ্নপূরণ করতে? পারব অভাবে জরাজীর্ণ হতশ্রী সংসারে একটু সুখের সুপবন আনতে?

এইসব শুনতে শুনতে আমি স্কুল পেরিয়ে কলেজে পৌঁছে গেলাম। কিন্তু এখন ভারি একটা সমস্যা হয়েছে। প্রায় দু মাস আমি ওই টুইশন বাড়িগুলোয় যেতে পারি না। চিন্তা হয় তারা আর কি আমায় তাদের বাচ্চা পড়ানোর জন্য রাখবে? আমি তো কামাই করতে চাই না। খুব প্রয়োজন বা অসুবিধা হলে এক্সট্রা করে পুষিয়েও দিই। কিন্তু সরকার সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে বেরোলেই রোগে ধরবে। আমাকেও ধরবে। অন্যদেরও ধরবে। রোগ ধরার আগে সরকারি পুলিশ-সেপাই ধরবে। এর ফলে আমার ভারি মুশকিল হয়েছে। আমি কলেজে পড়ি। একটু-আধটু সিগারেট-বিড়ি খাই। কিন্তু এখন না আছে বাইরে বেরুবার উপায়, না আছে পকেটে পয়সা। এছাড়া সর্বক্ষণ ঘরের মধ্যে ঢুকে থাকা। অথচ আমরা যে ছোটবেলা থেকেই ফুটপাত-রাস্তার ধুলোবালি মেখেই বড় হয়েছি। বাড়ি তো শুধু আমাদের রাতটুকু মাথাগোঁজার ঠাঁই। বাবাও বাড়ি থেকে বেরোয় না। দু মাস ধরে কারখানা বন্ধ। আগে কখনও কখনও কারখানা বন্ধ হলেও বাবা কিন্তু যেত। মালিকপক্ষ যাতে রাতের অন্ধকারে লকআউট করে গা-ঢাকা দিতে না পারে। লেবাররা তাই রাত জেগে কারখানার গেটে পাহারায় বসত। কিন্তু এখন তো তা নয়। এখন স……ব বন্ধ। গোটা দেশটার প্রতিটা গেটেই তালা ঝুলছে। বাবা মাঝেসাঝে কাছের বাজারটায় যায়। অল্পস্বল্প আলু-পেঁয়াজ কিনে আনে। ভাই-বোন বায়না ধরলে এক-আধদিন ডিম।

একদিন বাবা-মা-র কথায় কান পাততেই শুনলুম বাবা বলছে, “সরকার বলে দিয়েছে তবু মালিক বেতন দিচ্ছে না। এক মাস শেষ হয়ে আর এক মাসের কুড়ি তারিখ হয়ে গেল। এখনও গত মাসের বেতন পেলাম না।” শুনে আমার সারা শরীর এক অচেনা ভয়ে শিউরে উঠল। বাবা দু মাস বেতন পায়নি? পাবে তো? না যদি পায় তো এই পাঁচজনের সংসার…? ছোট ভাই টুটুল একদিন রেশনের দোকানে গিয়েছিল। প্রচণ্ড ভীড় ওকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে। বেচারা হাতে একথলি চাল একথলি আটা নিয়ে কোনওরকমে বাড়ি ফিরেছে। ভাগ্যিস ওটুকু পেয়েছিল। ওইটুকু দিয়েই কোনওরকমে গড়িয়ে গড়িয়ে চালাচ্ছিল মা।

নিয়মমাফিক ভাড়া নিতে এল রাজেশ আগরওয়াল। গত মাসে, তার আগের মাসেও এসেছিল। বাবা তখন বলেছিল, “কটা দিন একটু সবুর করুন। একটু অসুবিধায় আছি। আপনার বাড়িভাড়া মার যাবে না। ঠিকই মিটিয়ে দেব।” বাবা দু মাস বেতন পায়নি। ফলে দু মাসের ভাড়া বাকি পড়ে গেছে। এবার আগরওয়াল আর বাবাকে রেয়াত করল না। শুধু অপমানই করল না, শাসিয়ে গেল, পরের বার এসে পাওনা টাকা না পেলে নাকি বাড়ি ছেড়ে গাছতলায় দাঁড়াতে হবে। এ তল্লাটের টালির বাড়িগুলোর সে-ই মালিক। এলাকার রাজনৈতিক দাদাদের মদতপুষ্ট কালোয়ার। ব্যবসাপাতি করে অঢেল পয়সা করেছে।

বাবার শুকনো অসহায় মুখটা দেখে আমার বুকটা টনটন করে। কিন্তু আমারও তো সমান অবস্থা। টুইশন থেকে যে হাজার দুই আসে তার পাওনা তো পাইইনি, টুইশনগুলোও চলেই গেছে মনে হয়। সেসব বাড়ি থেকে প্রথম কদিন ফোন আসত। এখন আর কোনও সাড়াশব্দ নেই।

দেশের বাড়ি থেকে ফোন আসে। দাদু ঠাকুমা বারবার বলছে দেশে ফিরে যেতে। বলছে না শুধু, রীতিমতো চাপ দিচ্ছে। চাকরিই যখন নেই আমরা যেন আর শহরে না থাকি। যেন গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাই। যা সামান্য জমিজমা আছে চাষবাস করে কোনওরকমে কষ্টেসৃষ্টে চলে যাবে। বাবা বলে, “ধুর চাকরি যাবে কেন? ক মাস তো কোম্পানিতে প্রোডাকশনই হয়নি, বেতন আসবে কোত্থেকে?” বাবা আসলে বিশ্বাস করে দুর্দিন ঘুচে যাবে। কোম্পানি খুলবে আবার। ফের দেখা হবে ইয়ার-বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু সে কবে…..?

আগরওয়ালের চাপ শেষ পর্যন্ত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াল। কোনওভাবেই বোঝানো গেল না তাকে। একদিন সাত সকালে এসে ঘরের জিনিসপত্র নিজের হাতেই তছনছ করতে যাচ্ছিল। বাবা বলল, “জিনিসপত্র ফেলবেন না। একটু সময় দিন। জিনিসপত্র গুছিয়ে আমরা নিজেরাই চলে যাচ্ছি।”

বাক্সপ্যাঁটরা গুটিয়ে পথে নামলাম আমরা। পাঁচ সদস্যের সংসার। হাঁটতে শুরু করলাম। আমাদের গন্তব্য মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম। বাড়ি আর এলাকা পেছনে ফেলে যত এগোচ্ছি তত কলেজ-ক্লাসরুম-প্রফেসরদের লেকচার চোখে ভাসছে। এই তো সেদিন একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষাদিবস কী চমৎকারভাবে উদযাপিত হল। সম্মেলক গানে সেদিন আমিও গলা দিয়েছিলাম। ভাষাশহিদদের উদ্দেশে ফুল দেওয়া হল। কবিতা পড়া হল। তীর্ণার কথা মনে পড়ায় গলার কাছটায় কান্না কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠল। আর কোনওদিন হয়তো তীর্ণার সঙ্গে দেখাই হবে না আমার। কোনওদিনও দেখা হবে না বন্ধুদের সঙ্গে। একটা ট্রাঙ্কে আমাদের তিন ভাইবোনের স্কুল-কলেজের বইগুলো খুব যত্ন করে গুছিয়েছিলেন বাবা। সবাই মিলে বাবাকে সাহায্য করেছিলাম আমরা।

ছোট ভাই টুটুল বইভর্তি ভারী ট্রাঙ্কটা বইতে বইতে যখন হাঁপিয়ে উঠছিল বাবা ওর হাত থেকে নিয়ে নিচ্ছিল।

অনেক দূরের পথ। আমরা হাঁটছি তো হাঁটছিই… কখনও চড়া রোদ, কখনও বৃষ্টি। কখনও একটু-আধটু খাবার পাই। কখনও খালি পেটে মাথা ঘুরতে থাকে। রাস্তার কল থেকে অনেকটা জল খেয়ে সাময়িক পেট ভরাই। মনের মধ্যে অবসাদ। শরীর জুড়ে ক্লান্তি। পথের ধারে দু দণ্ড বসে জিরিয়ে নিই… আবার হাঁটি… পথেই ঘুমিয়ে নিই একটু… আবার হাঁটি…

বাবা তার কোটরগত চোখ আর শীর্ণ হাত-পা নিয়ে বলেন… “বইয়ের ট্রাঙ্কটা যেন কোনও অবস্থাতেই মাথা থেকে নামাস না টুটুল… ভুখা মানুষের ওটাই হাতিয়ার।”

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4802 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...