অরূপরতন ঘোষ
১১ । বিশ্রাম
দৈনিক লোকাল ট্রেনে দমদম যাই
তাই ত্রস্ত থাকি
কোথায় টাকার ব্যাগ, কোথায় বা তস্করের কেরামতি…
ভিড় ট্রেন থেকে নেমে সিগারেট খাই
হাতড়ে দেখি সমস্ত সম্পদ…
রবিবারে কেবল এর ব্যত্যয় ঘটে—
ওইদিন আমি রুমাল কাচি, আর
পুকুরে স্নান করি।
পাথরের ঘাটে বসে থাই-তে সাবান ঘষি
মসৃণ সকালে
১৯ । ঘূর্ণি
আজ শনিবার
জঙ্গল এলাকার ছেলে কানুর ধরা পড়ার দিন
অতিনিষ্ক্রিয়তার থেকে যেন জেগে উঠছে আবার
প্রফুল্ল কেবিনের দ্বিসাপ্তাহিক সান্ধ্য আড্ডা
তুমি দেখছ নির্বাসন থেকে
ঝুটা কবিতার বাইরে কিছু মর্মতন্তু বিঁধে আছে
ভেবে নিচ্ছ আরেকবার বসন্তগাথার ওঠানামা আর
কিছু আধা বিশৃঙ্খলার কথা…
২১ । শতাব্দী
কবিতা লেখার সময় গ্লাসে মাথা ঠেকে যায়
কী অদ্ভুত সেই অনুভূতি!
একে একে (ভটচায্ সহ) কর্কটরেখা পার করে গেছে
বন্ধুরা সবাই— এই ভেবে খানিক স্বস্তিতে থাকি
আর ভাবি, এই তারা ডাক দেবে
জলের ভিতর থেকে…
আমি তো সেতুর উপরে, কখন যে মেঘ আসে
সেই হেতু দাঁড়িয়ে রয়েছি বহুক্ষণ—
দুপুর গড়িয়ে গেছে
চারটে কি বাজেনি এখনও?
২২ । বিকল্প
রান্নাঘরের দিকে যে সুদৃশ্য রুমাল উড়ে যায়
তাতে পাহাড়ি সৌন্দর্য নেই কোথাও
এমনকি মহুয়া গাছটিও নেই
সকালের মিডলটন স্ট্রিটে—
শুধু একটি শীর্ণ ঘোড়া হেঁটে যায়;
যেন ধূসর নায়েবের ক্রেন
মুছে যায় ৬৫ তলার ছাদে
অথচ কেউ লক্ষ্যও করেনি
প্রবণতায় এসেছে প্রেম—
দু-একটি পাখির ডাক আর এক
বুদ্বুদ উঠছে ওই পাথরের জাঁতিতে
এই সকালে যা দিয়ে সুবাসিত সমূহ করুণা
আড়াআড়িভাবে কাটার কথা ছিল আমার…
২৫ । প্রাত্যহিক
সমস্ত ব্যস্ত পায়রার মত
আমিও আলেখ্যহীন হয়ে উঠি আজ
দেখি চৈত্রের সকালে
বাবা বাজারে যাচ্ছেন, আর
সব পথ মিশে যাচ্ছে বটতলার সবুজে…
এই এক গভীরতা… লক্ষও করিনি আগে কোন
আশ্চর্য জাদুতে আমার পা টলে যায়, কখনও
ঝলসানো রোদ মনে হয় খানিকটা
অন্ধ হয়ে গেছি—
যদিও ছাড়িনি সরলবর্গীয় কিছু কিশোরীর
করা সূঁচের কাজ আর তাঁতে বোনা ওই
জামার কোণাটি…
খুব ভাল লাগল সবকটি কবিতাই।