সত্যব্রত ঘোষ
লেখক প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রবেত্তা
অতিমারি, এবং তার পরিপূরক হয়ে দীর্ঘকালীন লকডাউনের বিভিন্ন পর্ব ঘটানোর ফলে চারপাশটাকে আমরা এযাবৎ যেভাবে দেখে এসেছি, তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। একদিকে যেমন প্রশাসনিক স্তরে বিভ্রান্তিকর নিয়মের আধিক্যের সঙ্গে আমাদের নিরন্তর পরিচয় ঘটছে, তেমনই রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সাবধান হওয়ার পরিবর্তে ক্রমশ এক বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ করে শঙ্কা বেড়েই চলেছে।
কাগজেকলমে চলচ্চিত্র উদ্যোগ একটি শিল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে বাহ্যিক দূরত্ব সহ অন্যান্য সাবধানতা বজায় রাখতে গিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচলিত যে পরিসরটির সঙ্গে আমাদের নিবিড় পরিচয় ছিল, এখন তা যথেষ্ট প্রভাবিত। পাশাপাশি, বড় পর্দায় সিনেমা দেখবার সুযোগ অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য থমকে আছে। পরবর্তীকালে, বড় পর্দায় সিনেমা বানানোর জন্য অর্থলগ্নি হবে কিনা, সেই প্রশ্ন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। একটি হিসেব অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে লকডাউনে দেশ জুড়ে প্রেক্ষাগৃহগুলি বন্ধ থাকবার ফলে প্রতি সপ্তাহে চারশো কোটি টাকার লোকসান হয়ে চলেছে। যে সব প্রত্যাশিত ছবিগুলির মুক্তি আটকে রাখা হয়েছে, প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন ফের শুরু হলে বহু নির্মাতা এবং বিতরণকারীদের মধ্যে সীমিত সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে এতগুলি ছবির মুক্তির ব্যবস্থা করতে গিয়ে ভবিষ্যতে বিভিন্ন রকমের জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। বর্ষীয়ান এক চলচ্চিত্রনির্মাতা এমন দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতিতেও অন্যদের স্থিতধী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আমাদের বিপুল ক্ষতি হবে বুঝতে পারছি, কিন্তু গ্রাহকদের ভালোমন্দটাও তো আমাদের চিন্তা করতে হবে।”
আনলক ১.০, ২.০ এবং সম্ভাব্য ৩.০ পর্বে স্থানীয় স্তরে এবং ভারতব্যাপী পেশাদার চলচ্চিত্রকারেরা যে কাজে ফিরতে উন্মুখ তা বলাই বাহুল্য। পরিবর্ধিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল মেনে বিভিন্ন টেলিভিশন ধারাবাহিকের পর্ব নির্মাণের কাজ আপাতত চলছে। অসমাপ্ত কিছু চলচ্চিত্রের বাকি কাজটুকু শেষ করবার জন্য তোড়জোড় করছেন নির্মাতারা। নিরাপত্তা বজায় রেখে কলাকুশলীদের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার দীর্ঘ আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। করোনা সঙ্কটের কারণে একটা বড় প্রশ্ন চলচ্চিত্রনির্মাতাদের সামনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে— একটি ফিল্ম শ্যুটিং-এ যতজন উপস্থিত থাকেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই কি সেখানে থাকবার দরকার আছে? হয়তো যতজনকে সঙ্গে নিয়ে ওনারা কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন, তার থেকে কমসংখ্যক মানুষদেরই নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের কাজ করতে হবে। সুতরাং, আনলকিং-এর পরে চলচ্চিত্রনির্মাণ ফের শুরু হলে নির্মাতা-নির্দেশকদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কিছু নিয়ম সাময়িকভাবে আরোপিত হলেও কয়েকটি ব্যবহারিক পরিবর্তন চিরস্থায়ী হবে বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন।
ইতিমধ্যেই প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনকে মাস্ক এবং ফেস শিল্ড-এর ব্যবহার, সেট এবং লোকেশন স্যানিটাইজেশন, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদেরদের প্রতিদিন সিম্পটম পরীক্ষা করা ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইউনিটের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিটি ব্যবস্থাই জরুরি। অতিরিক্ত খরচ হলে সুরক্ষার এই নিয়মাবলি অন্তত সাময়িকভাবে অনুসরণ করতেই হবে, যতদিন না অধিকাংশ মানুষের শরীর রোগসংক্রমণ হলেও নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হয় (herd immunity), অথবা প্রতিষেধক কিংবা নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে।
ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে প্রি-প্রোডাকশন প্ল্যানিং ইদানিং বহুল প্রচলিত। শ্যুটিং-এ নিযুক্ত কলাকুশলীদের মজুরির অঙ্ক অবশ্য অন্যান্য দেশগুলির এখানে তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট কম। তাই ‘প্রয়োজন’ অনুযায়ী নিযুক্তিকরণের কঠোর নিয়মাবলিতে গুরুত্ব না দিয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া, সুবিধা নেওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে নির্মাতার অহমিকাকে প্রাধান্য দেওয়াটাই এখানে রীতি। এর ফলে ‘স্বল্প বাজেট’-এর ভারতীয় ছবিতে প্রায়ই ৭০-১০০ জন এবং ‘বড় বাজেট’-এর ছবির সেটে ২০০-৩০০ জনের উপস্থিতি স্বাভাবিক বলে এতকাল মেনে নেওয়া হত। সংখ্যার দিক থেকে দেখলে তা আমেরিকা বা ইওরোপে নির্মিত ছবির সেটে সাধারণত উপস্থিত মানুষদের সংখ্যার যথাক্রমে দুই এবং পাঁচ গুণ বেশি বলা যেতে পারে। বর্তমানে ছবির সেটে জনঘনত্বের বিষয়টিকে মাথায় রাখতে হবে। যারা না থাকলেই নয়, তাদের থাকতে দেওয়া হবে, এবং অন্যদের উপস্থিতির সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। নতুন নিয়ম লাগু হওয়ার কারণে উপস্থিত সীমিত কলাকুশলীদের মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্ভাবনীশক্তি এবং দক্ষতা খুঁজবেন চিত্রনির্মাতারা যাতে ছবি বানাতে গিয়ে করোনার থেকে সুরক্ষিত থাকবার জন্য যে অতিরিক্ত খরচটি করতে হচ্ছে, তা সামলে নেওয়া যায়। এই নতুন ব্যবস্থাপনায় যেহেতু ‘প্রয়োজন আছে কি’ প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলাটা জরুরি হয়ে উঠছে, তাই সম্ভবত ‘ম্যানেজ করে নেওয়া’-র চিরাচরিত ফলপ্রদায়ী ভারতীয় প্রথাটি ছবি বানানোর ক্ষেত্রে জেঁকে বসবে।
দুর্ভাগ্যবশত, প্রথম যার উপর কোপ পড়বে, তা হল অভিনেতাদের ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। বুদ্ধি করে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল নির্বাচন, বডি ডাবলদের ব্যবহার এবং বিশেষ ভিস্যুয়াল এফেক্টস-এর সাহায্যে ‘চিট’ পদ্ধতির ব্যবহারে অভ্যস্ত হবে শিল্পী ও কলাকুশলী। রিয়েলিস্টিক শ্যুটিং, অর্থাৎ ক্যামেরা যেখানে সামনে ঘটমান ঘনিষ্ঠতার ছবি তুলছে— তার প্রচলন সেক্ষেত্রে কমবে। প্রৌঢ়, অভিজ্ঞ অভিনেতা এবং কলাকুশলীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে তাঁদের জন্য আবশ্যিক কিছু বাধানিষেধ জারি হয়েছে। তবে রাজ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে, তাতে শ্যুটিং সংক্রান্ত গাইডলাইন মেনে কাজ করাটা কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। সেই কারণে চলচ্চিত্র উদ্যোগে যুক্ত মানুষেরা যে নিয়মগুলি সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নিয়েছেন, এমনটা নয়। অভিনেতা এবং কলাকুশলীদের সুষ্ঠুভাবে কাজে ফিরিয়ে আনবার স্বার্থে কোন কোন ব্যাপারে নিষেধ থাকবে এবং ভাইরাস থেকে সুরক্ষা সংক্রান্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত। নতুন স্বাভাবিকের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়াটা একদিকে যেমন জরুরি, অন্যদিকে কার্যক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনবার গুরুত্বও কম নয়। সৃজনশীলতার পাশাপাশি নিরাপত্তার দিকগুলি চিন্তা করেই তাই এখন চলচ্চিত্রকারদের কাজে মন দিতে হবে।
আগামী ১২-১৮ মাস অবধি, যতক্ষণ না প্রতিষেধক অথবা ওষুধ সাধারণ মানুষদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, নিয়মাবলি অনুসরণ করে কেমনভাবে ছবি বানানো হবে, সেই ধারণা এখনও তৈরি হয়নি। কারণ, চিত্রনির্মাণের ক্ষেত্র যথেষ্ট বিস্তৃত, যেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পেশাদারিত্ব প্রয়োজন। কেশবিন্যাসকারী ও রূপশিল্পী, পরিচ্ছদ বিশারদ, কলা নির্দেশক থেকে শুরু করে অভিনেতা, আলোকশিল্পী, চিত্রগ্রাহক এবং শব্দগ্রাহকদের সঙ্গে একটি অবিচ্ছিন্ন দল হিসেবে মিলেমিশে চিত্রনির্মাণ সম্ভব। আজকের এই করোনা অতিমারির কারণে যে অভূতপূর্ব বাস্তব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এই প্রয়োজনীয় বিভাগে কর্মরত মানুষদের বিভিন্ন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে, কারণ এতদিন ওনারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ সংযোগে কাজ করতে অভ্যস্ত ছিলেন।
সিনেমা প্রদর্শনের দিকটি এই সময়ে বিভিন্ন কলাকুশলীদের কপালে ভাঁজ ফেলছে। প্রেক্ষাগৃহগুলি যেহেতু সংক্রমণের কারণে বন্ধ রয়েছে, সেখানে নিযুক্ত কর্মচারীদের আর্থিক নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা তো চলছেই। কিছু সংস্থা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সাহায্যের লক্ষ্যে সীমিত সাধ্য নিয়ে এগিয়ে আসছেন। কিন্তু পাশাপাশি, প্রেক্ষাগৃহের পরিবর্তে নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, হটস্টার প্রভৃতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ভারতীয় তথা আন্তর্জাতিক ছবির বাণিজ্যিক মুক্তি ঘটতে শুরু হয়েছে। সিনেমার কারিগরি দিক থেকে এই নতুন পরিবর্তনটির সঙ্গে মানিয়ে পরিচালক ও বিশেষ করে চিত্রগ্রহণ ও শব্দগ্রহণ ও শব্দপুনর্যোজন বিভাগগুলিকে স্মার্টফোনের ছোট পর্দা এবং ছোট শব্দক্ষেপণ ব্যবস্থা মাথায় রেখে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ছবি মুক্তি পাবার আগে দ্বিতীয়বারের জন্য ছবির বিস্তার এবং শব্দের বিভিন্ন কম্পাঙ্কের রেঞ্জ (অর্থাৎ, পরিসর)-কে কমপ্রেস (অর্থাৎ, সঙ্কোচন করা)-র অতিরিক্ত কাজটি করে নিতে হচ্ছে।
যদি সৃজনশীলতাই চলচ্চিত্র নির্মাণের একান্ত প্রেরণা হয়, তাহলে এখনই নতুন ভাবনাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার সঠিক সময়। বাণিজ্যিক ধারায় মুনাফার লক্ষ্যে গতানুগতিক ছবি বানিয়ে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। বিষয়সৌকর্য, দক্ষ প্রযুক্তি, এবং বিভিন্ন ধরনের বিতরণ ব্যবস্থার অনুকূল চিন্তাভাবনা কাজে লাগালে চলচ্চিত্রশিল্প আবার সমৃদ্ধ হবে। সেদিক থেকে দেখলে, টেলিভিশন চ্যানেল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি দেশের তথা বিশ্বের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের যে বিশাল ক্ষুধা, তার একটি অংশই মেটাতে সক্ষম। পর্দার আকার বড় না হলে ছবি দেখার অভিজ্ঞতা অনেকটা অপূর্ণই রয়ে যায়।
সাম্প্রতিক কালে চিনের সঙ্গে ভারতের বৈরিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবুও আমাদের দেশের সামগ্রিক চলচ্চিত্র উদ্যোগ, যার পরিমাণ গত আর্থিক বর্ষের রাজস্বঘটিত হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১৮০ কোটি টাকা, তাকে সঙ্কটমুক্ত করবার লক্ষ্যে চিনের সাম্প্রতিক একটি পদক্ষেপ আমাদের দিকনির্দেশ করতে পারে। ঐ দেশে প্রায় ৭০,০০০ প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ ছিল এবং প্রায় ৬,৬০০টি ছবি এবং টেলিভিশন ধারাবাহিক বিভিন্ন পর্যায়ে আটকে রয়েছে। চিন সরকার প্রেফারেন্সিয়াল ট্যাক্স পলিসি, ফি মকুব, কনজামশন ভাউচার, বিশেষ তহবিল গঠন ইত্যাদি সাহায্যনীতি গ্রহণ করে সেখানকার চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছে। ৬ই জুলাই FICCI FRAMES 2020-তে কেন্দ্রীয় তথ্যসম্প্রচার মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, সরকার এই ধরনের কিছু ব্যবস্থা শীঘ্রই গ্রহণ করবে, যাতে ভারতীয় চলচ্চিত্রশিল্প থমকে না দাঁড়িয়ে পড়ে।
তবে ‘বলিউড’-এর সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ভারতীয় চলচ্চিত্র উদ্যোগের সমীকরণ যে উদারীকরণের বাজারে আরোপিত একটি মস্ত ভুল ছাড়া আর কিছু নয়, তা উপলব্ধি করবার সময় এখন এসেছে। এই সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব থেকে বিভিন্ন সংবেদনশীল ব্যক্তিরা প্রকাশ্যেই যে অব্যহতি চাইছেন তা ভবিষ্যৎ ভারতীয় বাণিজ্যিক সিনেমায় আরেকবার নতুন যুগের সূচনা করবে, তা বলা যেতে পারে। তাছাড়া ভারতীয় বাণিজ্যিক ছবির জগতের অন্তরে এখন যে ঝড় উঠেছে, অতিমারির এই স্তব্ধতায় তার নিষ্পত্তি ঘটলে ভারতীয় চলচ্চিত্রনির্মাণের অন্দরমহলগুলিতে জমে ওঠা ষড়যন্ত্র, অন্ধ স্বার্থপরতা, গুণীজনেদের প্রতি তাচ্ছিল্য এবং মিথ্যা অহঙ্কারের জঞ্জাল যতটা সাফ হয়, মঙ্গল।
হিন্দি চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে স্বজনপোষণের দীর্ঘকালীন যে অভিযোগটি ছিল, গত জুনে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের অকালমৃত্যুর পর তদন্তক্রমে তা ঘনায়িত হয়ে চলেছে। অন্য অনেক ঘটনার মতো, সাম্প্রতিক এই ঘটনা আমাদের বুঝিয়েছে ব্যক্তির গুণ বিচার করবার আগে শিল্পীর নাম এবং জন্মবৃত্তান্ত দেখবার অভ্যাসটি ভারতীয় সমাজের তথাকথিত ক্ষমতাবানেদের বড় একটি অংশ এখনও ত্যাগ করেননি। আগামীদিনেও যে তাঁরা করবেন, এমন ইঙ্গিতও বিশেষ নেই। বিশ্বাসঘাতকতায় বারবার আহত হলেও শিল্পীমন কখনওই অন্যদের চোখরাঙানিতে ডরায়নি। সেদিক থেকে দেখলে প্রতিভাবান সুশান্তের অকালমৃত্যু আমাদের বিষণ্ণ করেছে বটে, কিন্তু আবার এটাও প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে যে প্রতিকূলতা আর ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলাটাই শিল্পীর নিয়তি। ক্ষমতাবানেদের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদলে তাঁরা সেই দুর্বলতার সুযোগ একদিন না একদিন নেবেনই। তাই, সহমর্মিতার প্রত্যাশা না রেখেই চোখের জল মুছে নিজেদের পথ নিজেরাই রচনা করে নিতে হবে।
আজ থেকে দেড় বা দুই বছর পরে হয়তো সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হবে যাতে কোভিড থেকে সুরক্ষা গ্রহণের আর প্রয়োজন থাকবে না। কিন্তু এই সময়ে চলচ্চিত্রনির্মাণে নতুনভাবে যে সৃজনাত্মক দক্ষতার জন্ম নেবে, তাতে পরবর্তীকালে ভারতীয় চলচ্চিত্র সামগ্রিকভাবে গভীরতা পাবে, এমনটা আশা রাখা যায়।