উজ্জয়িনী আইচ ও সায়ন দাস
লেখকদ্বয় জনস্বাস্থ্য গবেষক, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়
রোজ কাকভোর থাকতেই কাজে বার হতেন সোনা। যান চলাচল নেই, সুনসান সড়কে সাধারণত তিনি একা। ভয় তো একটু লাগতই। স্বামী ভিনরাজ্যে গিয়ে তখনও লকডাউনের ফেরে আটকে। নাহলে তিনি হয়ত পৌঁছে দিতে পারতেন কিছুটা। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাইকেলের প্যাডেলে জোরে চাপ দেওয়াই তখন উপায়। অন্য সময় যেখানে বাসে লাগত আধ ঘন্টা, সেখানে সাইকেল খুব জোরে চালিয়েও কমসে কম ঘণ্টা খানেক। তারপর গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছতে আরও বেশ খানিকটা হাঁটা। শরীরটাও খুব ভালো যাচ্ছিল না, মেয়েটা হয়ে বছর ঘুরলেও দুর্বলতা পুরোপুরি কাটেনি। জোরে হাঁটলেই যেন হাঁপ ধরত।
লকডাউনের সময়কার এমনই বিবরণ দিচ্ছিলেন সোনা ঘোষ (নাম পরিবর্তিত)। উত্তর চব্বিশ পরগনার কোনও এক ব্লকে কর্মরত অক্সিলারি নার্স মিডওয়াইফ, সংক্ষেপে এএনএম। ভুল হল, দ্বিতীয় এএনএম। কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে চুক্তিভিত্তিক কর্মী। লকডাউনের সময় রোজ এভাবেই কিছুটা সাইকেলে, কিছুটা হেঁটে পৌঁছেছেন ২২ কিমি দূরে তাঁর কর্মক্ষেত্রে। শুনেছেন হাসপাতালের নার্স ডাক্তারদের জন্য বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে ট্রাভেল পাস। তারা পাননি কেন জিজ্ঞাসার উত্তরে হেসে বলেন— “আমাদের মত গ্রামের কর্মীদের ভাগ্যে কি এসব জোটে!”
সোনার মতো লিপিকা মন্ডলও (নাম পরিবর্তিত) স্বাস্থ্যকর্মী, উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি জেলার এক গ্রামের আশা কর্মী তিনি। প্রতিবেশীদের আপত্তি শুধু নয়, কটাক্ষ উপেক্ষা করে কাজে বার হচ্ছেন রোজ। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের খোঁজখবর করা, কেউ কোভিড পজিটিভ বার হলে তাঁর সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বার করা, আর সঙ্গে গর্ভবতী মহিলাদের সাহায্য করার মত রোজকার কাজ তো রয়েইছে। খাটনিতে অসুবিধে নেই লিপিকার, তিনি তো স্বেচ্ছাসেবীই সে অর্থে। রাজ্যের ন্যূনতম দৈনিক মজুরির চেয়েও কম ‘সাম্মানিকের’ বিনিময়ে বছরে ৩৬৫ দিন কাজ, হ্যাঁ রোববারও। যে গোনাগুনতি মাস্ক সরকারের থেকে এসে পৌঁছয়, বার কয়েক কাচার পরেই তার পরিণতি হয় ন্যাতায়। তারপর আবার পরের লটের অপেক্ষা। ততদিন কাজ কিন্তু থেমে থাকে না। নিজের জন্য নয়, বাড়িতে দুটো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ শ্বশুর, হাঁপানির রুগী শ্বাশুড়ি, এঁদের চিন্তাই লিপিকার মাথায় ঘোরে সর্বক্ষণ।
টিভি চ্যানেলে যে চিকিৎসকদের করোনা বিষয়ক সুচিন্তিত মতামত দিতে দেখছেন রোজ, তাঁদের মতই এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীরা লকডাউনেও অতিমারির তৃণমূল স্তরে কাজ করে গেছেন প্রতিনিয়ত। কাজ করে চলেছেন আজও। এঁদের অধিকাংশই মহিলা এবং মহিলাদের অন্যান্য কাজের মতই এঁদের কাজও সচরাচর আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারের কোভিড মোকাবিলার মূলে রয়েছে এই বুনিয়াদি স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা, তবুও আশ্চর্য যে আমাদের করোনা-ধারণায় স্থান পান না এঁরা। কাজের স্বীকৃতি মেলে না অঙ্গনওয়ারি কর্মী, অ্যাম্বুলেন্সচালক কিংবা সাফাই কর্মীদেরও।
শিশুদের টিকাকরণ, অন্তঃসত্তা মায়েদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নথিভুক্ত করা, প্রসবের আগে ও পরে সেবা ও সচেতনতাবৃদ্ধি, ছোটখাটো রোগের পথ্য বাতলানো, এরকম আরো হাজারটা কাজে রোজ ব্যস্ত থাকেন সোনা বা লিপিকারা। অতিমারিতে তাঁদের সেই কাজের ভার ও পরিসর দুই-ই বেড়েছে, সামলাতে হচ্ছে কোভিড সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ, সমীক্ষা পরিচালনা এবং সচেতনতা প্রচারের কাজও। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক লক্ষণযুক্ত রোগী খুঁজে ওপর মহলকে সতর্ক করার গুরু দায়িত্বও এঁদেরই। রোজ খোঁজ নিতে হচ্ছে অন্তত তিরিশ থেকে চল্লিশটি বাড়িতে, খাটনি দিনে বারো ঘণ্টা কি তারও বেশি। অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও তাঁদের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন খাদ্যশস্য, পাশাপাশি আশাকর্মীদের সঙ্গে পা মেলাচ্ছেন করোনা-সমীক্ষাতেও।
সংবাদে প্রকাশ, রাজ্যের ৩৩২টি ব্লকে ছড়িয়ে থাকা পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি আশাকর্মী ৭ই এপ্রিল থেকে ৩রা মের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি বাড়িতে খোঁজখবর করেছেন, খুঁজে বার করেছেন লক্ষাধিক সন্দেহজনক রোগলক্ষণযুক্ত ব্যক্তি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন করোনা যুদ্ধে তাঁদের অবদান। বাংলার গ্রামাঞ্চলে, আমাদের ঘরে ঘরে, করোনার বিরুদ্ধে সতর্ক নজরদারিতে থাকা এমন অসংখ্য সোনা-লিপিকারাই আজ এই লড়াইয়ে প্রথম সারিতে। করোনা-যুদ্ধে তাঁরাইআমাদের মহিলা মুক্তিবাহিনী।
যুদ্ধে সামিল বটে তাঁরা, কিন্তু জুটছে কি ঠিকমত ঢাল-তরোয়াল? আজ অন্য রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা মানুষ এবং ক্রমশ শিথিল হওয়া লকডাউন যেমন সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, তেমনই বাড়ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত বিপত্তি। অথচ এই সেদিনও লিপিকা নিজের হাতে বানানো সুতির মাস্ক পরে কাজে বার হয়েছেন। সোনামুখে বেঁধেছেন থ্রি লেয়ার মাস্ক। সংক্রমণ নিবারনবিধি অনুযায়ী এন-৯৫ মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই পাননি সোনা লিপিকা-রা। সরকারের দেওয়াহাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ডোজ, আর মাত্র মাসিক ২৫০ এম.এল স্যানিটাইজার তাঁদের সুরক্ষা কবচ। অভিযোগ, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চালু করার আগে না নেওয়া হয়েছে তাঁদেররোগের ইতিহাস, না হয়েছে চেক আপ। এদিকে কাজের সুত্রে কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে আসবার ভীষণ সম্ভাবনা থাকলেওপি.পি.ই সংস্থানের ক্ষেত্রে তাঁরা পড়ছেন ‘লিস্ট রিস্ক’ বা সর্বনিম্ন ঝুঁকির বর্গে।অথচ আমাদের দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হবার সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়। স্বাস্থ্যকর্মী,বিশেষ ভাবে যারা মাঠে নেমে সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন,তাঁদের কোভিড পরীক্ষাকরার কথা ICMR বললেও, বাস্তবে তা এখনও পরিকল্পনার স্তরেই।
ফিল্ড ওয়ার্কার হলেও এঁদের প্রায়ই ডিউটি পড়ছে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে। “সেখানে টানা ১৪ দিন কাজ করে পরদিন সকালে আবার সারভতে বেরিয়েছি এমনও হয়েছে” জানালেন সোনা। তাঁরা ‘আউটডোর’ কর্মী, হাসপাতালের ভিতরে, বিশেষ করে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কাজ করবার প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা কোনটাই তাঁদের নেই। নিজে সংক্রামিত হতে পারেন আবার তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে জেনেও কাজে হাজিরা দিচ্ছেন পেটের টানে।
অতিরিক্ত ডিউটি করেও এপ্রিল মাস থেকে এ রাজ্যে আশাকর্মীদের বর্ধিত প্রাপ্তি মাত্র দৈনিক তেত্রিশ টাকা। এপ্রিলে কেন্দ্রীয় সরকার আশা কর্মীদের জন্য ঘোষণা করে হাজার টাকা মাসিক প্রনোদনার, জানুয়ারী থেকে জুন অবধি। যদিও ষোলটি রাজ্যভিত্তিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী মে মাসের শেষ পর্যন্ত ৭৫শতাংশ রাজ্য এই সামান্য টাকারও সংস্থানকরে উঠতে পারেনি। বর্ধিত বরাদ্দ দূরের কথা, ৬৯ শতাংশ রাজ্য তাঁদের নিয়মিত সাম্মানিকও সময়মত দিয়ে উঠতে পারে নি। অন্য দিকে, আশাকর্মীদের মত করোনা-সমীক্ষাতে বার হলেও, অঙ্গনওয়ারী কর্মীদের ভাগ্যে না জুটেছে বর্ধিত হাজার টাকা, না মাস্ক, স্যানিটাইজার বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। “কেন্দ্রীয় সরকার নাকি ৫ লক্ষ্য টাকার বীমা করে দেবে, সে তো মরলে পাব” স্বগোতক্তি লিপিকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের ১.৭ লাখ কোটির কোভিড প্যাকেজের অংশ হিসাবে ঘোষিত হয়েছিল স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কোভিড বিমা।বলা হয়েছিল বাইশ লাখের কাছাকাছি স্বাস্থ্যকর্মী পাবেন এই বিমার সুবিধা।অথচ গোটা দেশে শুধু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই প্রায় চল্লিশ লাখ!অতঃপর জানা গেল, এই বিমা কোভিড চিকিতসার খরচও বহন করবে না। কোভিডের কারণে মৃত্যু কিংবা কোভিড সংক্রান্ত ডিউটির সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তবেই মিলবে বিমাসুরক্ষা! সেখানেও, প্রামাণ্য কাগজপত্র জুটিয়ে, আট থেকে দশরকম প্রমাণপত্র দাখিল করেও, সরকারি লাল ফিতের গেরো টপকে মিলছে না প্রাপ্যের সন্ধান! সম্প্রতি স্ক্রোল.ইন-এর একটি রিপোর্ট এরকমই বিভিন্ন ভোগান্তির বয়ান তুলে ধরেছে, যেখানে ভুক্তভোগী ডাক্তার থেকে আশাকর্মীর পরিবার সকলেই।এ পোড়া দেশে কোভিড-মৃত্যু প্রমাণের চেয়ে, মরিয়া যে সে মরে নাই, সে প্রমাণ তুলনায় সহজ।
স্বাস্থ্যের ঝুঁকি, আর্থিক অনটন, সরকারি অসহযোগিতা, এ সমস্ত ছাড়াওসামাজিক বিদ্বেষেরও শিকার হতে হচ্ছে এঁদের। হরিয়ানায় আক্রমণ হল ১৭ বছরের সুমনের উপর। সুমনের মা বুটানা-কুণ্ডু জেলার আশা কর্মী। এক প্রবাসী গ্রামবাসী বাড়ি ফেরার পর তিনি তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেন এবং বাড়িতে নোটিস ঝুলিয়ে দেন। সেই আক্রোশ থেকেই আক্রমণ। স্বামীর কোভিড-সংক্রমণ ধরা পড়ায় অন্ধ্রপ্রদেশে এক এএনএম-কে বাড়িছাড়া করা হল এই কিছুদিন আগেই। এমন ঘটনা ফারিদাবাদ, রাজস্থান বা অন্ধ্রতে যেমন ঘটেছে,আমাদের সোনা লিপিকাদের সঙ্গেও কি হচ্ছে না? কতটাই বা জানতে পারছি আমরা।
চোদ্দই মে দেশ জুড়ে ভার্চুয়াল বিক্ষোভ পালন করেন আশাকর্মীরা। এককালীন ২৫,০০০ টাকা কোভিড ভাতা, পিপিই, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আবশ্যিক পরীক্ষার দাবিতে। জুন-জুলাই মাস জুড়ে বেঙ্গালুরু চেন্নাই হরিয়ানা সহ দেশের নানান জায়গায় বারে বারে উঠেছে বিক্ষোভের ঢেউ। কিন্তু বাস্তবে সেবাকর্মীদের প্রতিবাদী স্বর চাপা পড়ে যাচ্ছে ভাত কাপড়ের কঠিন দায়ে। আর্থিক মন্দার মুখে এই কাজটুকুই তাঁদের সম্বল। দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও আশাকর্মীদের তো সরকারিভাবে শ্রমিক পরিচয়টুকুও নেই, তাই নেই শ্রম-আইন অনুযায়ী প্রাপ্য কোনও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা।
স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে অবৈতনিক পদগুলিতে মহিলাদেরই প্রাধান্য। কিন্তুগরহাজির কাজের সামান্য স্বীকৃতিটুকুও। এমনকী বেতনভুক কর্মীদের মধ্যেও পারিশ্রমিক, পদোন্নতি বা চাকরির সুরক্ষা— সবক্ষেত্রেই প্রকট লিঙ্গবৈষম্য। কর্মক্ষেত্রে হিংসা, এবং যৌন হয়রানির প্রধান শিকার মহিলারাই। এছাড়াও রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদের আধিপত্যগত শ্রেণিবিভাজন, যার শীর্ষে অধিষ্ঠিত চিকিত্সক (পড়ুন পুরুষ চিকিত্সক), আর সবচেয়ে শেষের পাদানিতে মাঠেঘাটে কাজ করা গরীব, স্বল্পশিক্ষিত, এবং সাধারণত অনগ্রসর শ্রেণির মহিলা কর্মীরা। এই প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য বরাবর বঞ্চিত করেছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের তাঁদের প্রাপ্য সামাজিক সুরক্ষা থেকে; তাদের দূর্বল আর্থসামাজিক অবস্থানের, তাঁদের তথাকথিত স্বেচ্ছাশ্রমের সুযোগ নিয়ে। আজকের অতিমারি পুনরার প্রকট করে তুলছে দীর্ঘদিনের উদাসীনতা। করোনা-যুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন বাড়লেও, ব্রাত্য থেকে যাচ্ছেন আশাদের মত কর্মীরা। একইভাবে ভারতের কোভিড-১৯ টাস্ক-ফোর্সে জায়গা মেলেনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনও প্রতিনিধির। তাঁদের কাছে আজকের লড়াইয়ের তাই শেষ পর্যন্ত একটাই পরিণতি— ব্যাক্তিগত জীবনের ঝুঁকি।
অথচ স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রত্যেক রাজ্যের প্রত্যেক গ্রামে প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেবার জন্যই তৈরি হয়েছিল এই সেবাকর্মীদের পদগুলি। ভারতে যেখানে প্রতি দশ হাজার জনে হাসপাতাল বেড এবং ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র আট সেখানে গ্রামে গঞ্জে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পৌঁছে দেবার প্রধান সম্বল এই চল্লিশ লাখের কাছাকাছি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীরাই। কোভিড-যুদ্ধে তাঁরা অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় সরকার অস্বীকার করলেও আজকে গোষ্ঠী-সংক্রমণ যখন বাস্তব, তখন বাংলার, ভারতের গ্রামবাসী অসংখ্য মানুষকে করোনা-প্রতিরোধের সঠিক নিয়মবিধি শেখাতে, রোগাক্রান্তের সন্ধান করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আশা এবং অন্যান্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীরা নির্বিকল্প। তবুও কর্মক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘদিনের অবহেলা, দুর্বল পরিকল্পনার ফল ভুগছেন এঁরাই।
শেষ কথা তবুও এটাই যে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের ছাড়া অচল হয়ে পড়বে গ্রামাঞ্চলের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থা, থমকে যাবে তৃণমূল স্তরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। কোভিড পরিকল্পনার কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করছে এই ‘ফার্স্ট লাইন অফ ডিফেন্স’-এর উপর। প্রাতিষ্ঠানিক উপেক্ষার কবল থেকে এঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ কাজের পরিবেশ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষা দিলে আরও বলিষ্ঠ, দক্ষ ও কার্যকরী হতে পারে আমাদের করোনার বিরুদ্ধে এই মুক্তিযুদ্ধ।