রক্ষাবন্ধন এবং এক মিরাকল খোঁজার গল্প

চার নম্বর নিউজডেস্ক

 

চন্দানি দেবী, প্রভাবতী কুমারী, বিমলা দেবী, নীতু কুমারী, নীলম দেবী। নাম। অনেকের মধ্যে কিছু। কে এঁরা? কেন অন্যরকম? বিহারি। আর বিহারি বলতেই আপামর ভারতবাসীর দুয়োরানি ট্যাগ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভারতীয়তাবোধ— বিহারি? ধুস। এইসব স্টিরিওটাইপড অসুখ থেকে উত্তরণের নাম প্রভাবতী, বিমলা, নীতু। অতিমারির ভারতবর্ষে এঁরা রোগ সারাতে না পারুক, আলো জ্বালাতে পারেন। এদের জন্যই আমাদের লড়াই রোগের বিরুদ্ধে, রোগীর বিরুদ্ধে নয়…

বিহারের রোহতাস জেলা। গতানুগতিকতা, দারিদ্র, রাজনৈতিক প্যাঁচে কেটে যাওয়া গ্রামীণ ভারতবর্ষের ছবি। পট পরিবর্তন। অভিশাপে আলো। প্রধান উদ্যোক্তা ডক্টর মধু উপাধ্যায়। রোহতাসের সানঝাওলি ব্লকের ডেপুটি চিফ। জেলার স্বচ্ছতার আইকন। কী করলেন মধু? গ্রামের মেয়েদের এককাট্টা করলেন। দেখলেন, বুঝলেন যে স্বল্প পরিসরে হলেও বিপ্লব আনতে গেলে মেয়েদের ধরাটা সবচেয়ে জরুরি। মেয়েদের দিয়ে ‘হ্যালো সিস্টার্স’ নামের একটি উদ্যোগ চালু করলেন। কোভিড প্রতিরোধ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছোটখাটো কাজকর্ম, যা তাক লাগিয়ে দিতে পারে বাকি ভারতকে।

ইকো-ফ্রেন্ডলি রাখি। রক্ষাবন্ধন। গ্রামের মেয়েদের হাতের খরচ থেকে বাঁচিয়ে তাঁদের দিয়েই রাখি বানালেন। ঘরেই। নিজেও ব্যক্তিগত সাহায্য করলেন। একটা ছোট্ট মিটিং। কিছু করতে হবে। মাত্র পনেরো দিনে পাঁচশোর উপর রাখি বানালেন চন্দানি, নীলমরা। মধু পরিবেশের দিকটিও বলেছিলেন। এমন কোনও সামগ্রী রাখা হবে না, যার ডিসপোজাল সমস্যা হতে পারে। কাপড়, কাগজ, সহজে পচে যায় এমন সমস্ত সামগ্রী দিয়ে শয়ে শয়ে রাখি।

কিন্তু পরবে কে? রাখি বানানো নতুন কিছু নয়। কোথায় আলাদা তাঁরা? হ্যালো সিস্টার্সের মেয়েদের রাখি চলে যাচ্ছে কোভিডযোদ্ধাদের হাতে। রাজ্যের চিকিৎসক, নার্স, পুলিশকর্মী, সাফাইকর্মী, কোভিড নিয়ন্ত্রণে সরাসরি ফোরফ্রন্টে কাজ করা রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারি আধিকারিক ও সমাজকর্মীদের কাছে। কোভিডযোদ্ধাদের কাছে বোনেদের উপহার। ট্রিবিউট। হাতে বেঁধে দেওয়া শুভেচ্ছাবার্তা। এমনই কিছু কোভিডযোদ্ধা যাঁদের তাঁরা সামনাসামনি পেলেন, তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে পরালেন। যাঁদের পারলেন না, তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হল। যদি মিরাকল হয়, যদি ভালোবাসা হারিয়ে দেয় অসুখকে…

একটা ঘটনা ছোটখাটো আরও অনেক কিছুর প্রেরণা দেয়। অতিমারি পরিস্থিতিতে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা অনুযায়ী সমস্ত গাছেদের গায়ে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে প্রতীকি রাখি। হয়ত হ্যালো সিস্টার্স পথ দেখাল এই আলোর।

অতিমারির অন্ধকার থেকে আলো কবে আসবে জানা নেই। তবে রোহতাস জেলার সানঝাওলি, চিতাওলি, কর্মাইনি, চিতাউলি, তিলল— গ্রাম থেকে গ্রাম মিরাকল খুঁজছে। মিরাকল বুনছে। যত্নে …

 

তথ্যসূত্র

https://www.magzter.com/article/Newspaper/The-Morning-Standard/In-Bihars-Rohtas-Women-Make-Rakhis-To-Honour-Corona-Warriors

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...