শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক কবি ও স্পেনীয় ভাষা-সাহিত্যের অধ্যাপক
কথামুখ
একটু পিছিয়ে ভাবি। ২০০২ সালের বইমেলা শেষ। সদ্য বসন্ত। বিখ্যাত কবি ও সম্পাদক নাম কেটে দিয়েছেন খাতা থেকে। তার কারণ অবশ্য আমি। আমার ২৩ বছরের তেজ। বিখ্যাত কবি-সম্পাদক আমার ২০ লাইনের কবিতা কেটে ৬ লাইন করার ফতোয়া দিয়েছেন। আমার অনেক সমসাময়িক এই ধরনের ফতোয়া মেনে নিয়েছিল। আমি পারিনি। চোখে অন্ধকার। আর কবি হওয়া হবে না! আমাদের মফস্বলের জীবনে একটি খবরের কাগজ ও তার দেগে দেওয়া কবি-সাহিত্যিক ছাড়া আর কাউকেই চিনতাম না আমরা। তাদের লিখে দেওয়া বাংলাভাষারীতি ছিল আমাদের অনুকরণীয়। সেই খবরের কাগজের অনুকরণ কবিতা থেকে অঞ্জলি দাশ ও জমিল সৈয়দের সাহচর্যে বেরোতে পারলেও, বেরোতে পারছিলাম না খ্যাতি পাওয়ার মোহ থেকে। বেশ কঠিন এই চাওয়া। প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত বহুকাল আগে লিখেছিলেন “… একটি অতিক্ষুদ্র এলাকায় বা একটি বদ্ধ ঘরে অসংখ্য কবি যে স্বীকৃতি ও খ্যাতির জন্য মাথা ঠোকাঠুকি করছেন তা একদিক থেকে ভয়াবহ।” ২০০২-এর আমি, অর্থাৎ ২৩ বছরের আমির সামনে যখন প্রথাগত লেখাপড়া দিয়ে আর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তখন ওই নাম কাটা যাওয়াকে পিঠ ঠেকাবার দেয়ালও নেই বলে মনে হচ্ছিল। বেশ কয়েকমাস চুপ করে থাকার পর শুরু করলাম প্রস্তুতি। অস্বীকারের। প্রচলিত ভাষার বাইরে যাওয়ার। প্রচলিত কবিতার বাইরে যাওয়ার।
এই স্মৃতি মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে এল কী করে? কারণ, এই সেই সময় যখন আমি আবিষ্কার করছি বাইরে যাওয়ার রাস্তা। যদিও সামনে বাংলা অন্য কবিতা ছিল। কিন্তু আমায় তাক লাগিয়ে দিল বিদেশের, মানে তখনও পর্যন্ত না-জানা দেশের কবিতা। আমি খুঁজে-খুঁজে পড়তে লাগলাম নোবেল পুরস্কারজয়ীদের কবিতা। যেহেতু ভালো ইংরেজি জানতাম না, তাই আরও বেশি করে খুঁজতে লাগলাম বাংলায় হওয়া অনুবাদ। সেই খননে মানবেন্দ্র, শিশিরকুমার দাশ উঠে এলেন হাতে। আমাদের পদ্যচর্চায় অভীক মজুমদার একটা গদ্য লিখেছিলেন, “আমি বলি যুদ্ধ করো”। সেখানে মানববাবুর অনেক উদ্ধৃতি। আমাকে দেখালেন, মানববাবুর আরও কী কী বই পড়া যায়।
বিস্তার
এরপরে যেটা ঘটল, সেটা বিস্ফোরণ। আমার জীবনে। প্রথমে চেসোয়াভ মিউশ। পোল্যান্ডের কবি। ১৯৮০ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কী দিলেন এই কবি? স্বাধীনতার চেহারা। প্রসঙ্গত লেখা থাক, মিউশ একেবারে স্তালিনবাদী কমিউনিস্ট বিরোধী, ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে মার্কিন দেশে গিয়ে আশ্রয় নেন। আদ্যোপান্ত বামপন্থী মানববাবু কিন্তু অনুবাদ করেছেন তাঁকে, এবং পরিচয় করিয়েছেন আমাদের আদ্যোপান্ত “আত্মজ্ঞানবাদী” বাংলা কবিতার সঙ্গে ২০ শতকের এক প্রধান কবিকে। এরপরে পড়লাম ভাসকো পোপা। নিকানোর পাররা। মিরোস্লাভ হোলুব। বুঝতে শিখলাম তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান। আত্মজ্ঞানবাদী বাংলা কবিতাকে তিনি তাঁর কমাপ্রধান জটিল বাক্যে লেখা ভূমিকা ও উপসংহারে আক্রমণ করছেন অন্য দিক থেকে। রেখে যাচ্ছেন নিজস্ব প্রতিরোধ। মিরোস্লাভ হোলুবের কবিতার উপসংহারে লিখছেন, “কবিতার কি এখানে কিছুই করার নেই? সে কি এখনও ব্যস্ত থাকবে কেবলই গোলাপ, রাজার দুলাল (এবং দুলালী), প্রতীকীবাদ, ‘বস্তুবাদ — সে দুঃসংবাদ’, আত্মার লাঞ্ছনা, খরগোশ, নিজস্ব ঘুড়ি, নীরা, ‘দীর্ঘতম বৃক্ষে তুমি ব’সে আছো দেবতা আমার’, হলুদ সংসার, …” নিজের সমসময়ের কবিতার প্রচল ধারা নিয়ে প্রশ্ন রাখছেন। প্রশ্ন রাখছেন পবিত্র ও ব্যক্তিগত নিয়ে আগের প্রজন্মের অবস্থানের দিকে।
আমরা জানি কবিতার দীর্ঘ ইতিহাসে তার বহুত্ববাদের কথা। কিন্তু বাংলা কবিতায় কাব্যিক-বস্তুবাদের সঙ্গে প্রকৃত পরিচয় ঘটিয়েছেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর অনুবাদে যে ধারাটা শুরু করেছিলেন সেই ধারা যে কোনও আভাঁগার দিকে যেতে পারে, তার ধারণা আমাদের সামনে রাখলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। কী সেই ধারণা? নিজে মার্কসবাদী হয়েও থিওডোর আডোর্নোর বিরোধিতা করলেন, তাঁর নিজের আত্মরক্ষায় টেনে আনলেন উত্তর ঔপনিবেশিকতা— যা আমাদের বাংলাভাষার কবিতা চর্চাকে কখনওই ভাবায়নি, বস্তুত বাংলা কবিতা ভাবনা চর্চাকে এড়িয়েই চলেছে চিরকাল। আর এড়িয়ে গেলেন স্লোগানধর্মী সব কবিতা— মুখে না বললেও কাজে স্পষ্ট করে দিলেন তাঁর অভীপ্সা, তাঁর পাঠযোগ্য কবিতা— আমাদের জন্য নির্মিত এক অমোঘ নির্মাণ রাস্তা।
এখন হয়তো অনেকেই তর্ক জুড়ে দিতে পারেন তাঁর কবিতার একদেশদর্শিতা নিয়ে। তাঁর অনুবাদের ভূমিকা বা উপসংহার প্রায় সব বইতেই একটি দিকে ইঙ্গিত করে। যেন বা ভাস্কো পোপা বা চেসোয়াভ মিউশ একই পাঠশালার মানুষ। কিন্তু এখানেই আসে পাঠপদ্ধতি। তিনি কবিতাকে দেখেছেন উত্তর ঔপনিবেশিক-দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী চোখে, আর সেটাই তাঁর কবিকে আবিষ্কারের চাবি। যে বাংলা ভাষার সমস্ত প্রাচীন ধারা লুপ্ত হয়ে গেল ইংরেজ আসার ১৫০ বছরের মধ্যে— এখন তাকে চেনাই যাবে না যে সে ভাষায় কাব্যিক আমি-র জন্ম হয়েছিল ইংরেজ রোম্যান্টিকদের কাব্যিক আমি-র সমসময়ে— এবং সে আমির অভীপ্সা ছিল একেবারেই আলাদা; সেই ভাষায় ভাবনাহীন কবিতা চর্চার দিগন্তে মানবেন্দ্র অতিমানব হয়ে উঠলেন তাঁর পাঠে, তিনি নিজের লেখাকে সরিয়ে রেখে, আমাদের জন্য প্রকাশ করতে লাগলেন তাঁর নিজস্ব কবিতার পাঠাগার। আর সেই পাঠাগারের ভিত্তি উত্তর ঔপনিবেশিক-দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, তিনি আমাদের সামনে তুলে আনলেন তাঁদেরই যাঁরা বাংলা কবিতার মূলধারার কবিতা উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সন্দেহের চোখে দেখে।
যেখানে একদিকে খবরের কাগজ তৈরি করছে কবিদের, যাঁদের স্মরণযোগ্য পংক্তি আজও বাঙালির কবিতা পাঠের মূল ধাত্র, আরেকদিকে উগ্র আন্দোলনকারীরা মার্কিন দেশের ঘোরতর ভোগবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে গড়ে ওঠা প্রতি-সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ করছে। যে দেশের ভাষা বিপদে, যার বীজ পোঁতা হয়েছে এইসব কবিদের কালেই, তাদের নিশ্চিন্ত স্মরণযোগ্য করতালিপ্রবণ কাকলি, বা গরীব দেশের কবির হ্যামলেট হয়ে ওঠা দুটোই সমান পলায়নপর, যেমনটাবা যেকোনও মূলধারার সংস্কৃতি। আমাদের বোঝানো হল আমাদের সব ভাল হচ্ছে, আমাদের এটাই অভিমুখ। আমরা বুঝলাম। দীর্ঘ যাত্রায় কবিতা হয়ে উঠল হালকা ফুলকা মনোরঞ্জন। আমরা ভুলে গেলাম আমাদের জাতপাত, ভুলে গেলাম আমাদের রাজনৈতিক দলের ঝুটো কথা, আমরা দেখলাম না আমাদের লেখক তালিকার সিংহভাগ পুরুষ— মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের লেখাকে শহিদ করে আমাদের সামনে রেখে গেছেন, তাঁর মত করে এক প্রতি-সংস্কৃতির বীজ।
দেশে ফেরার খাতা, ভাসকো পোপা ও কিছু অনিবার্য একলব্যতা
বাংলা কবিতা থেকে, তার ছান্দিক দোলা থেকে বেরিয়ে পড়া সহজ নয়। যদিও আমার মণীন্দ্র গুপ্তের পাঠশালায় বসার অভিজ্ঞতা ছিল, কিন্তু ওই আমার মফস্বলী “গ্রাম্যতা” ঢাক-কাঁসরের মন্দির মার্কা নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে আসতে ভয় দেখাচ্ছিল। যদিও তখন আমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে অতিমানবের অনুবাদের। হাতে খড়ি হয়েছে, ভাষা শিক্ষার কারণে, সরাসরি এস্পানিওল ভাষার কবিতার সঙ্গে। কিন্তু বেরোতে পারছিলাম না, হয়ত এটাই আমার মত কবিতাকর্মীর স্বভাব। ২০০৫ সালে আমার এই চিরশিক্ষানবিশীর মধ্যে আরেক বিস্ফোরণ। এতদিনের পড়া, এবং ক্রমাগত নিজের কবিতা নিয়ে তৈরি হতাশা, মানববাবুর ভাষায় “পদলালিত্যের ঝঙ্কারে” রাজনীতি ঠেসেও দেখছি আমি এক তৃতীয় শ্রেণির বাক্সবাজিয়ে! দেখছি এখন আর রাজনৈতিক কবিতা লেখা যায় না। অন্তত আমার পরিচিত রাজনৈতিক কবিতার যা ফরম্যাট তাতে আর কিছু করার নেই। কারণ কবিতার পাঠক চিৎকার পছন্দ করেন না। সমস্ত রাজনৈতিক কবিতাই একটা সীমিত সময়ের দাবি মেটায়।
বিস্ফোরণ ঘটল মানববাবুরই হাতে। আমি ২০০৫ বইমেলায় পেলাম তাঁর অনুবাদ করা এমে সেজেয়ারের মহাকবিতা দেশে ফেরার খাতা। পেলাম সেই দেখা, হ্যাঁ, অদ্বিতীয়, এক রাজনীতির যা আসলে আত্মবীক্ষার কাছ দিয়েই যায়, অথচ নিজের ফোঁড়া নিয়ে এলেজি লেখে না, বরং তলিয়ে দেখে উপনিবেশের ক্ষত, ঔপনিবেশজাত হওয়ার জন্মগত দাগ ও দগদগে ঘা। সেই দিন থেকে আর এই ২০২০ সালের অগাস্ট মাস অব্দি বইটি আমার কাছে মৌলবাদীর ধর্মগ্রন্থের মত। আমার জ্ঞাত তিনটি ভাষাতে তাকে পড়েছি। বাংলা ইংরেজি ও এস্পানিওল (তার দুরকম অনুবাদে, ইউরোপীয় ও ক্যারিবিয়ান এস্পানিওল-এ), কিন্তু ছাড়তে পারিনি। পড়ে ফেলেছি সমগ্র সেজেয়ার। মূলত ক্যারিবিয়ান এস্পানিওলে। কিন্তু এই বেঁচে থাকাটা আমার কাছে এসেছে মানবেন্দ্রবাবুর হাত ধরে, আমার দেশে ফেরার খাতা দেবলীনা ঘোষের সঙ্গে করা তাঁর অনুবাদই। আমি ঢুকে পড়েছি কালিবানের আত্মায়, কালিবান আমাকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। আমি উশকে উঠেছি কুবার কবি ফেরনান্দো রেতামার-এর তত্ত্ব পড়তে। আর হ্যাঁ মানববাবুর সূত্রে পাওয়া কালো চামড়া সচেতনতা আমাকে কথায় কথায় সাদা সাহেবের নাম ছুঁড়ে মারা থেকে বিরত করেছে। খুঁজে দেখেছি নিজেকে, নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিতে। আর সেখানেই পেয়েছি ভাসকো পোপাকে। সেই মানববাবুর আরেক অতিমানবিক কাজ। কীভাবে লোকসংস্কৃতিকে নিজের কবিতায় কাজে লাগিয়ে নিজের ক্ষুদ্র ভাষা-ভূগোলকে দীর্ঘ চরাচরে পরিণত করা যায়, সেটাই শেখা পোপার কাছে। তাঁকেও আমি পড়েছি তিন ভাষায়। পরে মানববাবুর দেওয়া মার্ক্সীয় চশমা খুলে পোপাকে পড়তে বাধ্য হয়েছি। অন্য দিক থেকে দেখছি। কিন্তু তাঁকে প্রথম ও সচলভাবে পেয়েছি বাংলাতেই। আজও কবিতাগুলো বারবার পড়ি বাংলা অনুবাদে। আবিষ্কার করি নির্মাণ প্রবণতা। ভাষার স্থাপত্য। এবং সবচেয়ে বড় কথা, আত্মজ্ঞানকে না হয় আমাদের মত ক্ষুদ্র মানুষরা বাদ দিল, থেকে গেল অসহায় রকমের জীবনলোলুপ কিছু অক্ষরে, সেই থাকাটা এসেছে মানববাবুর দেখানো কবিদের সূত্র ধরে।
হ্যাঁ, এখন মার্কসবাদ অচল। ধনতন্ত্র আরও বেশি নির্লজ্জ। আমরা জানি কবিতা লিখে দিন কেন কিছুই বদলানো যায় না। কিন্তু যায় ভাষাশৈলী ও ইতিহাসের পরিহাসময় পুনরাবৃত্তিকে নিজেদের মত কিছু মানুষের আরও অন্ধকারের সঙ্গে নিজেদের অন্ধকারকে মিলিয়ে নেওয়া। যেমনটা বা মানববাবু নিয়েছিলেন সেজেয়ার পোপা বা হুয়ান হেলমানের কবিতার সঙ্গে।
আমার কবিতা কিছু হয় কিনা জানি না। শুধু জানি আমি আর বাক্স বাজাই না। কোনও দিন বাজাবও না। শুধু জানি আমি নিজের কাছে সৎ থাকব কবিতার বিষয়ে। আর এই সততার রাস্তা আমার সামনে খুলে দিয়েছেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অতিমানবের হাতের পাঞ্জা যে আমার বুকে পড়েছিল তাঁর গ্রন্থপাঠে, সেই অভিঘাতেই যে আমি বাংলা কবিতার “সব ভালো হচ্ছে” পাঠশালা থেকে বেরিয়ে এস্পানিওল ভাষা শিখে একেবারে এক বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গির কাছে এলাম সেটা মানুষ হিসেবে, কবিতার পাঠক হিসেবে আমার আবিষ্কার— সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে বুঝতে শেখা কবিতা দিয়ে সব হয়, জানতে শেখা, জানতে চাওয়া নিরন্তর নতুনতম কবিতা, সেটা তাঁরই কাজ দেখে শেখা। ২০১২ অব্দি নিজের ভিতরে একটা দ্বন্দ্ব ছিল প্রকাশমাধ্যম নিয়ে। দেশে ফেরার খাতা, ভাস্কো পোপার পাঠ আমাকে নিশ্চিত করে কবিতাই আমার প্রকাশমাধ্যম।
আমি তার পর থেকে কোনওদিন আখ্যান পড়িনি বা লিখিনি (পড়ার ব্যাপারে সামান্য দুটি ব্যতিক্রম আছে)। কোনওদিন লিখবও না। কবিতার ক্রীতদাস হয়ে থাকার সাহস আমি পেয়েছি তাঁর অনুবাদ করা কবিদের কাছেই। কখনও আলাপ করার সাহস হয়নি। ২০০৫-এর বইমেলায় দেখতে পেয়ে সই করিয়ে নিয়েছিলাম দেশে ফেরার খাতা। কথা বলেছিলাম সামান্য, সত্যি বলতে গেলে ২০০২-এর পর বাংলার বানিয়ে বলা কোনও নামী কবিকে দেখলেই সমীহ হয় না— যখন দেখি একজন অতি পরিচিত কবি তাঁর কবি-পরিচিতিতে ছাপার অক্ষরে এক “কল্পনায়” পাওয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কারের কথা লেখেন— ভুলে যান এখন ইন্টারনেটের যুগ, সব খবর পরখ করা যায়— তখন করুণা হয়; মানববাবুকে দেখলে সমীহ হত। আর সেই সমীহই আমাকে তাঁর একলব্য করে তুলেছে। ২০১৩ সালে পাওয়া একটি বড় পুরস্কারের কমিটিতে তিনি বিচারক ছিলেন সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তাঁকে সরাসরি চেনা হল না, শেখা হল না, নতুন লাতিন আমেরিকার কবিতা আন্দোলন নিয়ে তর্ক হল না, তাঁকে চেনানো হল না হোসে লেসামা লিমার জীবনানন্দ-সুলভ পুনরুত্থান, পিতাকে যেমন পুত্র চেনায় প্রযুক্তি— তেমনই হয়ত, কিন্তু তা আর হল না, সে আমারই আলস্যে, এই দুঃখ থাকবে।