মাধব বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কর্মী, গণ-আন্দোলনের কর্মী
স্বদেশি আন্দোলনের যুগের কিছু মানুষকে জানতাম। যাঁরা জনমানুষের জীবনধারা রূপান্তরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ১৯৪৭-এর পরবর্তী রাজনৈতিক প্রজন্মে তাঁদের সংখ্যা বিরল। দু-চারজন, যাঁদের মধ্যে সেই সচেতন প্রবাহ আমার নজরে পড়ে, যদিও আমি নিজে সেই পঞ্চাশের শেষভাগ থেকে সাম্যবাদী আন্দোলনে জড়িত, তাঁদের মধ্যে আছেন শ্রীমতী মেধা পাটেকর, স্বামী অগ্নিবেশ, শঙ্কর গুহ নিয়োগী, বিনায়ক সেন প্রমুখ। শঙ্কর অনেকদিন আগেই প্রয়াত। এখন প্রয়াত হলেন স্বামী অগ্নিবেশ। দেশের সাম্যবাদী তথা গণ-আন্দোলনের সঙ্কট হল কালোপযোগী সামাজিক বিরোধের প্রধান দিক চিহ্নিতকরণ এবং গণমুখী আন্দোলনের বিকাশ ঘটিয়ে সবচাইতে অবহেলিত মানুষের সমস্যা চিহ্নিত করে তা নিরসনে গণ-সমাবেশ ঘটানোর ব্যর্থতা। শঙ্কর ভিলাইয়ের শ্রমিকদের মধ্যে, মেধা নর্মদা উপত্যকায়, বিনায়ক ছত্তিশগড়ে আদিবাসী মহলে এবং অগ্নিবেশ অন্ধ্র-বিহারে বন্ধুয়া মুক্তি তথা বেগার শ্রম বন্ধের আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সেই কাজটি করেছিলেন। এবং তার মধ্যে দিয়ে আমাদের কল্পনাহীন, একঘেয়ে, যুগচেতনা-বর্জিত কর্মধারার বিকল্প কর্মসূচির দিকনির্দেশ করেছেন।
অগ্নিবেশের সঙ্গে আমার দুবার সাক্ষাৎ হয় এনএপিএম-এর কর্মসূচি উপলক্ষে। বাংলাতেই আলাপচারিতা হয় তাঁর সঙ্গে— তিনি কলকাতারই ছাত্র ছিলেন। তিনি স্পষ্টতই বলতেন যে, ব্যাপক জনগণকে সামাজিক নিপীড়ন, বৈষম্য এবং অবিচারের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যাপক গণ-সমাবেশ ঘটাতে হবে। এবং সেই সমাবেশ ঘটাতে সংগ্রামী শক্তি বিচিত্র ধারায় যে সংগ্রাম চালাচ্ছেন তাকে সর্বতোভাবে পরিপুষ্ট করতে হবে। তাই তাঁর উপস্থিতি পাই গড়ের মাঠে পিডব্লিউজি-র সমাবেশে, দান্তেওয়াড়াতে আদিবাসী সংগ্রামে, আবার দিল্লির এনএপিএম-এর জন-পঞ্চায়েতের সভায় বা পাটনার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধবাদিতায়। অসংখ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণ-আন্দোলনের সমষ্টিগত রূপই বৃহত্তর সামাজিক রূপান্তরের ইমারত গড়ে তুলবে— অগ্নিবেশ ছিলেন সেই সৌধের ভিত্তি-প্রতিস্থাপকদের অন্যতম।
কোনও কোনও মৃত্যু পাথরের চাইতেও ভারী।