মণিকুন্তলা সেনকে প্রমোদবাবুরা দাবিয়ে রেখেছিলেন

মণিকুন্তলা সেন | বামপন্থী নেত্রী

শঙ্কর রায়

 


লেখক প্রবীণ সাংবাদিক

 

 

 

 

জলিমোহন কলের জীবনাবসানের পরে ওঁর স্মৃতিচারণে সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা ও পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসু কথাচ্ছলে জলিদার সহধর্মিনী ও প্রসিদ্ধ জননেত্রী মণিকুন্তলা সেন প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “জলিদা-মণিদি, এঁরা একটা বিগত জমানার প্রতিনিধি। মণিদি চলে গিয়েছেন অনেক আগেই। সাংবাদিকদের কাছে শুনেছি, সে সময় রাজনীতিতে মহিলাদের সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, এইরকম একটা বক্তব্য মণিদির ছিল। উনি কি বলেছিলেন, কী পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, জানি না। তবে আমি যতটুকু বুঝি, মণিদি তো গুরুত্ব পেয়েছেন। সে আমলে কমিউনিস্ট পার্টি, সংগঠনে তাঁর যথেষ্ট গুরুত্ব ছিল।” বিমানবাবুর এই বক্তব্য, বলা বাহুল্য, অর্ধসত্য।

সেই সময় মণিদি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের (অর্থাৎ অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তথা সিপিআই) উপ-নেতা (১৯৫২ থেকে ১৯৬২)। অথচ ১৯৫৯-এর খাদ্য আন্দোলন নিয়ে বিতর্কে মণিদি অংশ নেননি, বলা ভাল তাঁকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি, যদিও পার্লামেন্টেরিয়ান ও বাগ্মী হিসেবে তখন মণিদির খ্যাতি ছিল। বিধানসভায় সিপিআই বিধায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিক্ষণ বলেছিলেন হরেকৃষ্ণ কোঙার, যিনি প্রমোদবাবুর অন্যতম কাছের মানুষ ছিলেন সেই দিনগুলিতে। ধরে নেওয়া যায়, সে কারণেই তাঁকে বেশিক্ষণ বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রবাদপ্রতিম বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের চেয়েও বেশিক্ষণ। অন্যদের মধ্যে ছিলেন অবিভক্ত ২৪ পরগনার খগেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী। অসাধারণ ভাষণ দিয়েছিলেন এসইউসি-র সুবোধ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবাদপ্রতিম বাগ্মী সোমনাথ লাহিড়িও সেই বিতর্কে বক্তাদের তালিকায় ছিলেন না।

তখন সিপিআই রাজ্য নেতৃত্ব মানে প্রমোদ দাশগুপ্ত-শিবিরেরই রমরমা। যদিও জ্যোতি বসু ছিলেন রাজ্য সম্পাদক ও বিধানসভায় সিপিআই গোষ্ঠীর নেতা, বকলমে রাজ্য সম্পাদক ছিলেন প্রমোদবাবুই। প্রমোদবাবু-নেতৃত্বাধীন উপদলের কর্তাব্যক্তিরাই কার্যত ঠিক করতেন, বিধানসভায় বা বিধান পরিষদে কে কোন দিন বলবেন। প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুরা এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন দীনেশ রায়কে, যিনি কোনও স্তরেই নেতা বলতে যা বোঝায় তা ছিলেন না। কোনও জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন না। সর্বসময়ের পার্টিকর্মী ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তদুপরি ছিলেন প্রমোদ-হরেকৃষ্ণ গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। সেই সময় কড়েয়া রোডে জলিদা-মণিদির সরকারি আবাসনের ফ্ল্যাট ছিল পার্টির একটি কমিউন। একটি ঘরে থাকতেন মণিদি-জলিদা, অন্য ঘরে দীনেশ রায়। তদানীন্তন সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক অজয় ঘোষ বা রাজ্যসভায় সিপিআই গোষ্ঠীর নেতা ও কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভূপেশ গুপ্ত দিল্লি থেকে কলকাতায় এলে ওই ঘরে থাকতেন, আর সে সময় দীনেশবাবু অন্যত্র থাকতেন।

যাই হোক, মোদ্দা কথা হল অবিভক্ত পার্টিতে ব্যাকরণের ‘টি-টা-খানা-খানি’ গোত্রের সদস্য হয়েও দীনেশবাবু বিধায়কদের (যাঁদের বেশিরভাগই রাজ্যস্তরের নেতা) ওপর ছড়ি ঘোরাতেন। সাংগঠনিক দিক থেকে তাঁর জোর ছিল, কারণ তিনি প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের কাছের লোক ছিলেন। তাই পার্টি ভাগের পর প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের নেতৃত্বে যে রাজ্য পার্টি সংগঠিত হয়েছিল, ১৯৬৪ সালে গঠিত রাজ্য পরিষদে (অক্টোবর-নভেম্বরে ত্যাগরাজ হলে নতুন দলের প্রথম পার্টি কংগ্রেসের আগে) তিনি অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁকে দেখেছিলাম ১৯৭০ দশকের মধ্যভাগে লালবাজারের উল্টোদিকে একটি সিপিআই(এম)-ঘেঁষা বাংলা সাপ্তাহিকের দপ্তরে। শুনলাম তিনি তখন সিপিআই(এম) সাংসদ জ্যোতির্ময় বসুর গেস্ট হাউসে থাকেন, কার্যত তাঁর ভাবশিষ্য। তবে তাঁর সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভাল। তাঁকে ১৯৮০-র দশকে যখন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয়, কৌতুক বোধ করলেও আশ্চর্য হইনি। কারণ সরকারি কমিউনিস্ট পার্টিগুলিতে প্রায়ই নিয়ামক ভূমিকা নেয় গোষ্ঠীতন্ত্র বা উপদলবাদ।

যাই হোক, বিধানসভায় বিতর্কে মণিদিকে বাক্‌হীন ও মূক করে রাখলেও তিনি খাদ্য আন্দোলনে পথে নেমেছিলেন, সমবেত জনমণ্ডলীর সম্মুখে জোরদার বক্তব্য পেশ করেছিলেন।

মণিদিকে বিধানসভায় বলতে নে-দেওয়া আসলে একপ্রকার চক্রান্ত ছিল বলেই মনে হয়। এ প্রসঙ্গে তাঁর অবিস্মরণীয় আত্মকথা ‘সেদিনের কথা’-য় মণিদি লিখেছেন, “আইনসভায় প্রত্যেকটি অধিবেশনেই আমার নাম বক্তার তালিকায় থাকত। আমি কিছু বললে, অল্প হলেও, তা উল্লেখ করত। কিন্তু ১৯৬০-৬১ সনের একটা বছরে আমি মাত্র সাত মিনিট বক্তৃতা করেছিলাম।… মুশকিলে পড়তাম প্রেস রিপোর্টারদের নিয়ে। রঞ্জিত রায়, অমিতাভ চৌধুরী (বর্তমানে ম্যানিলায়), প্রয়াত গোবিন্দ সেন প্রমুখের সামনে পড়লে ওঁরা বলতেন, ‘কী, মুখে কুলুপ এঁটেছেন নাকি? কিছু বলবেন না বলেই কি ঠিক করেছেন?’ ইত্যাদি। ব্যাপারটা সেক্রেটারিয়েট সদস্যদের মধ্যে একজনকেই জানিয়েছিলাম” (‘সেদিনের কথা’, নবপত্র প্রকাশন, দ্বিতীয় সংস্করণ ২০০৩; পৃ ২৭৮। প্রথম সংস্করণ ১৯৮২)।

লক্ষণীয়, বিধানসভা গ্রুপের উপনেতা ও একাধিক গণসংগঠনে প্রথম সারির নেতা হওয়া সত্ত্বেও মণিদি পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন না। মধ্যবিত্ত-প্রভাব ও পুরুষতন্ত্র এমনই প্রকট ছিল। অথচ রাজ্য পার্টিতে অন্তত তাঁর মতো প্রায় সর্বত্রগামী নেতা আর বিশেষ কেউ হয়ে উঠতে পারেননি। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি, কৃষক সমিতি, তেভাগা আন্দোলন, মন্বন্তর-প্রতিরোধ আন্দোলন, শিক্ষক আন্দোলন, শ্রমজীবী সংগ্রাম — প্রায় সব ক্ষেত্রে তিনি প্রবল সক্রিয় ছিলেন, যেমনটি আর কেউ ছিলেন না। শহরে-গ্রামে-গঞ্জে তিনি যেমন চষে বেড়াতেন পার্টি ও গণসংগঠনের ডাকে, তেমনটি আর কেউ করেননি— খানিকটা ব্যতিক্রম অবশ্য ছিলেন বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু মণিদি সদাই পথে নেমেছিলেন, যেখানে পার্টি নেতৃত্বের কাছে তাঁর বিকল্প কেউ ছিল না। আত্মকথায় লিখেছেন খাদ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের বিতর্কিত ভূমিকার কথা। “অস্থিচর্মসার অর্ধ-উলঙ্গ দেহ নিয়ে বসে আছে আমাদের গ্রামের কৃষককুল — যাদের মেহনতের ফলে আমাদের অন্ন জোটে। আমাদের প্ল্যান ছিল সভা শেষে আমরা রাইটার্স বিল্ডিং ঘিরে থাকব— যতক্ষণ আমরা খাদ্যের প্রতিশ্রুতি না পাই ততক্ষণ। কিন্তু খাদ্যমন্ত্রী কেন যে ভয়ে অবশ হয়ে গেলেন, তা আমাদের বুদ্ধির অগম্য। অথচ এই ভুখমিছিল রাইটার্স বিল্ডিং দখল করতে যায়নি। হয়ত তাদের হাতে চিড়ে-মুড়ির পুটুলি ছিল। আমরা মঞ্চ থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম লাঠি ও বন্দুকধারী পুলিশের কী বিরাট আয়োজন…। আমার বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, ‘আমরা রাজ্য জয় করতে আসিনি, শুধু দু’মুঠো অন্ন চাইতে এসেছি। আমরা কাউকে রক্তচক্ষু দেখাতে আসিনি।’ এ সত্ত্বেও সরকারের পুলিশ চার দিক ঘিরে ফেলে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেছিল…” (‘সেদিনের কথা’,পৃ ২৮৪)।

গত দেড় দশক ধরে একটা অপপ্রচার চলে আসছে যে ১৯৫৯-এর খাদ্য আন্দোলনে ৮০ জন নিহত হয়েছিল। কারণ সিপিআই তার তালিকা দিতে পারেনি। এরকমও বলা হয়, বড় জোর ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন (যেন ২৫জনের নিহত হওয়া বিষয় হিসেবে ততটা প্রবল নয়)। সিপিআই-এর তালিকা তৈরির মেশিনারি ছিল না। কিন্তু এ বিষয়ে জ্যোতিবাবুর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। “ক’জন মারা গেল সেদিন। কমপক্ষে ৮০, সম্ভবত কয়েকশো। শেষ রাতে প্রচুর মৃতদেহ পাচার হ’ল। প্রায় দু’শো মানুষকে খুঁজে পাওয়া গেল না।” অশীতিপর সাংবাদিক বরুণ দাশগুপ্ত সেদিন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, “অন্তত ২৫০ জন নিহত হয়েছিল। শুধুমাত্র হাওড়ার বাঁশতলা শ্মশানে পুলিশি প্রহরায় দু’ট্রাক ভর্তি শব দাহ করা হয়েছিল।” কংগ্রেস সরকারের নারকীয় রূপ প্রকাশ পেয়েছিল খাদ্য আন্দোলনে।

আন্তঃপার্টি সংগ্রামে মণিদি ও তাঁর স্বামী জলিমোহন কল (১৯৫২ সাল থেকে কলকাতা জেলাকমিটি সম্পাদক ও প্রমোদবাবুর আগেই দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য) জ্যোতিবাবু-প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুর পক্ষে ছিলেন, অর্থাৎ ‘গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’-এর সমর্থক ছিলেন। কিন্তু প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের উপদলেও ছিলেন না, বা অন্ধ চিনভক্তও ছিলেন না (যদিও নকশালবাড়ি আন্দোলনের পরে প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের মাও-মোহ কেটে গিয়েছিল, কারণ পিকিং রেডিও-য় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার)। এতে বোঝা যায় যে, প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের কাছে লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা দখল ও সে কারণে উপদলবাদ প্রাধান্য পেয়েছিল, আন্তঃপার্টি রাজনৈতিক সংগ্রাম নয়। প্রমোদবাবু-হরেকৃষ্ণবাবুদের আধিপত্যকালে আন্তঃপার্টি রাজনৈতিক সংগ্রামের নির্মোকে জারিত হয়েছিল সুপরিকল্পিত উপদলবাদের বিষবৃক্ষ।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সমিতির (সারা ভারত কিষাণসভার প্রাদেশিক শাখা) নেত্রকোণা সম্মেলনে (এপ্রিল ১৯৪৪) পার্টির বর্ধিত সাধারণ সভায় (জিবি) সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক পূরণচাঁদ জোশীর ভাষণে মহিলা কর্মীদের ‘তীব্র সমালোচনা’ তিনি মেনে নিতে পারেননি, জোশীর প্রতি অকপট শ্রদ্ধা সত্ত্বেও। ‘সেদিনের কথা’-য় মণিদি লিখেছেন, “কৃষক মেয়েদের সঙ্গে যেভাবে মেলামেশা করা উচিত ছিল, সেভাবে নাকি আমরা মেলামেশা করিনি, এটাই আমাদের অন্যায়। হয়তো কিছু অন্যায় হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এমন অনেক অভিযোগ করলেন, যা আর বলতে চাই না। ঘণ্টাখানেক ধরে এই রূঢ় সমালোচনা আমরা নতমস্তকে শুনলাম। আমার পিছনে মনোরমা মাসিমা (যে বিরল কিংবদন্তিপ্রতিম মহিলা আজও অনেকটাই অনালোচিত) এবং আরও অনেক প্রবীণ মহিলা কর্মীরা বসেছিলেন— যাঁরা বিশেষভাবে কৃষক এলাকায় কাজ করেন। এই ধরনের সমালোচনা তাঁদের খারাপ লেগেছিল। বারে বারে আমাকে তাঁরা প্রতিবাদ জানানোর জন্য বলতে লাগলেন। কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে উঠিনি। কারণ, পার্টি নেতা যা বলবেন তা মেনে চলাই আমার শিক্ষা, প্রতিবাদ করা নয়। তা ছাড়া কমরেড পিসি জোশীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অন্ত ছিল না… তাঁর কাছ থেকে এই ধরনের সমালোচনা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক হলেও প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হয়নি।” নেত্রকোণা সম্মেলনে সেই জিবি ঠিক পার্টি সদস্য ও ঘনিষ্ঠদের গোপন সভা ছিল না। মণিদি লিখেছেন, “এই জিবি ছিল প্রায় একটি জনসভা গোছের ব্যাপার। পার্টি নেতা পিসি জোশী নির্দেশ দিলেন টাউনের সমস্ত ভদ্রলোকদের ডাকার জন্য, অর্থাৎ যাঁরাই এই সম্মেলনে সাহায্য করেছেন, তাঁরাই আসবেন।” বাংলা জানলেও জোশী ইংরেজিতেই বলেছিলেন। ‘নেত্রকোণাশুদ্ধ লোকের সামনে এই সমালোচনা’ মহিলা কর্মী-সমর্থকদের স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত করেছিল।

সবশেষে স্মরণ করিয়ে দিই, জলিদা ১৯৬৩-র জানুয়ারির শেষ দিকে পার্টি ছাড়লেও যতদিন পার্টি অবিভক্ত ছিল, ততদিন মণিদি পার্টি ছাড়েননি। মনে পড়ে যাচ্ছে, ১৯৬৩ সালের মে মাসে রাজ্যসভা নির্বাচনের কথা। পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ভূপেশ গুপ্তকে পুনর্মনোনীত করল। কিন্তু রাজ্য কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় প্রমোদবাবু স্নেহাংশু আচার্যের নাম প্রস্তাব করলেন, অথচ সেই সময় স্নেহাংশুবাবু আর পার্টিসদস্য ছিলেন না। প্রমোদবাবু প্রস্তাব করতেই জ্যোতিবাবু পালটা প্রস্তাব পেশ করলেন ভূপেশ গুপ্তর নাম। ভোটাভুটি হল। ভূপেশ গুপ্তর পক্ষে পড়ল ১১টি ভোট, আর স্নেহাংশু আচার্যের পক্ষে ১০টি। সরোজ মুখোপাধ্যায় ভোটদানে নিরত ছিলেন। ‘মণিকুন্তলা কল’ ভূপেশ গুপ্তর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। অথচ প্রমোদবাবু, হরেকৃষ্ণবাবু, জ্যোতিবাবু, মুজফফর আহমদ, ভূপেশ গুপ্ত সবাই মতাদর্শগতভাবে ‘গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ লাইনের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু জ্যোতিবাবু-ভূপেশবাবুরা প্রমোদ-হরেকৃষ্ণ উপদল থেকে শতহস্ত দূরে থাকতেন। জলিদা-মণিদি তো উপদলবাদকে গভীর ঘৃণার চোখে দেখতেন। তাঁর প্রয়াণের (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৮৭) পরে ৩৩ বছর কেটে গেছে, এখনও তাঁর রাজনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক মূল্যায়ন হল না— যদিও নানা গবেষিকা-গবেষক তাঁর রাজনৈতিক-সামাজিক জীবনের কথার সশ্রদ্ধ উল্লেখ করেছেন, বিশেষত নারী জাগরণ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ হিসেবে। ‘সেদিনের কথা’ যত পড়ি, তত এই আক্ষেপ তীব্র হতে তীব্রতর হয়।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4593 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...