জঁ দ্রেজ
লেখক রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির আমন্ত্রিত অধ্যাপক, সমাজকর্মী। বর্তমান লেখাটি দ্য ইন্ডিয়া ফোরাম-এর ৬ মার্চ ২০২০ ইস্যুতে ইংরাজিতে প্রকাশিত হয়। বাংলায় তর্জমা করেছেন অপর্ণা ঘোষ।
সাম্প্রতিক ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবল বাড়বাড়ন্ত জাতবর্ণব্যবস্থা বিলোপসাধনের আন্দোলনগুলিকে সজোরে ধাক্কা দিয়েছে। সমতাবিধায়ক সমাজ গঠনের লক্ষ্যের উপর এটি বেশ বড়সড় আঘাত। তবে এই পশ্চাৎ-বেগ কোনও হঠাৎ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা নয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদের এই ক্রমবৃদ্ধি গণতন্ত্রের সমতাবাদী দাবিগুলোর বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণের বিদ্রোহ বলা যেতে পারে।
হিন্দুত্ব ও জাতিভেদ
হিন্দু জাতীয়তাবাদ, যা হিন্দুত্ব নামে সমধিক পরিচিত, তার অবশ্যম্ভাবী চারিত্র্য লক্ষণগুলি বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। পরিষ্কার স্বচ্ছতায় সেগুলি ভিডি সাভারকরের ‘এসেনশিয়ালস অফ হিন্দুত্ব’ (সাভারকার ১৯২৩) বইটিতে ব্যখ্যাত হয়েছে। তাদেরই বিবর্ধিত রূপ পাওয়া যায় অন্যান্য ‘হিন্দুত্ব’বাদী চিন্তকদের লেখায়, যার মধ্যে অন্যতম এমএস গোলওয়ালকর। হিন্দুত্বের মূল ভাবটি হল ভারতবর্ষ হিন্দুদের, যতটা না কঠোরভাবে ধর্মীয়, ব্যাপকার্থে তা সাংস্কৃতিক দ্যোতনা— হিন্দু পরিভাষাটি বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু বাদ পড়েন মুসলমান ও ক্রিশ্চানরা (কারণ এই ধর্মদুটির জন্মস্থান ভারতে নয়)। হিন্দুত্বের পরম লক্ষ্য হল সকল হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করা, হিন্দুসমাজের পুনর্জাগরণ ঘটানো এবং ভারতকে একটি হিন্দুরাষ্ট্রে পরিণত করা।
ঘটনাচক্রে এই সব ধারণাকে সমর্থন জোগাতে যে ধরনের যুক্তির অবতারণা ঘটেছে তা চমকপ্রদভাবে যুক্তিসঙ্গত, সাধারণ বুদ্ধি-সিদ্ধ ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবনার থেকে শতহস্ত দূরে অবস্থান করে। উদাহরণ হিসেবে গোলওয়ালকরের যুক্তি দেখানো যায়, যে সমস্ত হিন্দুরা হল একটি জাতি এবং তা আর্যজাতি। গোলওয়ালকরকে সেই সময়ে খুব বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। আজ এই যুক্তির বিরুদ্ধে যে বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলি আমাদের হাতে আছে তা তখন ছিল না। গোলওয়ালকর একটি তথাকথিত আবিষ্কারের চমক তৈরি করেছিলেন। তাঁর মতে আর্যরা ভারতের উত্তরদিকের কোনও অঞ্চল থেকে— নির্দিষ্টভাবে বললে উত্তর মেরুর কাছাকাছি কোনও স্থান থেকে এসেছিল। এই যুক্তির সমর্থনে তিনি দাবি করেন যে উত্তর মেরু তখন ভারতেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল:
“…উত্তর মেরু কোনও স্থিতিশীল স্থান নয়। দীর্ঘকাল আগে তা বিশ্বের এমন অংশে অবস্থান করত যা বর্তমানে বিহার এবং উড়িষ্যা নামে পরিচিত…। পরবর্তীতে তা কখনও উত্তর-পূর্বে, পরে খানিকটা পশ্চিমে, কখনও উত্তরদিকে সরে গিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে…। আমরা সকলে অনাদিকাল থেকে এখানেই ছিলাম, উত্তর মেরু তার আঁকাবাঁকা চলনের (zig-zag march) মাধ্যমে এই অঞ্চল ছেড়ে দূরে সরে গেছে…।” (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯; পৃ ৮)
গোলওয়ালকর এর কোনও ব্যখ্যায় যাননি যে উত্তর মেরুর এই আঁকাবাঁকা চলনের সময়ও কীভাবে আর্যরা এই একই স্থানেই থেকে যাওয়াটা সুনিশ্চিত করতে পারল। আর্যদের একটাই ভাষা— এই পুরনো দাবি প্রমাণের সপক্ষেও তিনি নানা স্বকপোলকল্পিত যুক্তির অবতারণা করেছেন।
‘হিন্দুত্ব প্রকল্প’কে ঐতিহ্যিক সমাজ স্তরায়ন পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ বলা যেতে পারে, যে প্রচেষ্টা তথাকথিত হিন্দু সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে, যা নাকি সকল হিন্দুকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। বর্ণব্যবস্থা বা জাতিভেদ প্রথা (varna system – চতুর্বর্ণ ব্যবস্থা) এই ঐতিহ্যিক সমাজব্যবস্থার অত্যাবশকীয় অংশ। ‘উই অ্যান্ড আওয়ার নেশনহুড ডিফাইনড’ গ্রন্থে গোলওয়ালকর পরিষ্কার বলেন “হিন্দু সমাজের কাঠামো” (hindu framework of society) চতুর্বর্ণ ও চতুরাশ্রম ব্যবস্থার দ্বারাই চিহ্নিত হয়। (গোলওয়ালকর, ১৯৩৯, পৃ ৫৪)। এই ভাবনার পরিবর্ধিত রূপ দেখা যায় ‘বাঞ্চ অফ থটস’ (হিন্দুত্ব টেক্সটগুলির অন্যতম)-এ। এখানে গোলওয়ালকর বর্ণব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, তা সুসম সামঞ্জস্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার ভিত্তিস্বরূপ।[1] এই ব্যবস্থার আরও অন্যান্য কৈফিয়তদানকারীদের মতই তিনি দাবি করেন যে জাতিভেদ প্রথা হায়ারার্কিকাল নয়। বলাবাহুল্য এই যুক্তি কোনও গুরুত্ব বহন করে না।
গোলওয়ালকর বা অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী চিন্তকদের কাস্ট বা বর্ণ শব্দটি নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই, তাঁদের সমস্যা হল casteism বা বর্ণবাদ শব্দটি নিয়ে। হিন্দুত্বের পরিভাষায় casteism বা বর্ণবাদ শব্দটি জাতপাতভিত্তিক বৈষম্যের কোনও সরল উপস্থাপনা করে না, যেমন রেসিজম শব্দটি দ্বারা বর্ণবাদী বৈষম্যের উপস্থাপনা করা হয়। বরং এটি জাতপাতের ভিতরকার নানা ধরনের সংঘর্ষগুলির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে। যেমন দলিত জাতির আত্ম-উত্থান এবং সংরক্ষণের দাবি— হিন্দুত্ববাদীদের মতে এটাই বর্ণবাদ যা হিন্দু সমাজকে বিভাজিত করছে।
রাষ্টীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস— বর্তমানে হিন্দু জাতীয়তাবাদের মশালবাহক— উল্লেখযোগ্যভাবে এই তত্ত্বের প্রতি একান্ত অনুগত। জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে এদের সাধারণ মতাদর্শ হল যে এটি এদেশের একটি উৎকর্ষমূলক উদ্ভাবন। ভারতীয় জনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব তো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় কিছুদিন আগে (২০১৭) সেই কথাই বলেছেন। এবং এটাও বলেছেন— জাতিভেদ নয়, বর্ণবাদই আসল সমস্যা।
উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের প্রধান যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য আরও খোলাখুলি। তিন বছর আগে এনডিটিভিতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি অনেকটা গোলওয়ালকরের ধাঁচে ব্যখ্যা করেন যে জাতিভেদ হল “সমাজকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার একটি পদ্ধতি।” তিনি আরও যোগ করেন “কৃষিক্ষেত্রে পরিখার যে ভূমিকা সমাজে জাতের ভূমিকা ঠিক তেমনই। সমাজকে নিয়মশৃঙ্খলায় রাখা। … সুতরাং জাতিভেদে অসুবিধা নেই… জাতপাতব্যবস্থা বরং সমস্যার…”[2]
বিষয়টিকে যদি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় দেখা যাবে হিন্দুচিন্তকরা যে মূল সমস্যাটির মুখোমুখি হন তা হল জাতপাতে বিভাজিত একটি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার রাস্তাটা কী হতে পারে। সমাধান হল জাতিভেদকে উপকরণ হিসাবে না দর্শিয়ে একটি ঐক্যসাধনের প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপস্থাপন করা।[3] এই তত্ত্ব অবশ্যই সুবিধাবঞ্চিত জাতগুলির কাছে কোনও আবেদন রাখবে না। এই কারণেই সম্ভবত এখন আগের মত এই তত্ত্বটি এই যোগী আদিত্যনাথের মতো এত খোলাখুলিভাবে আর আলোচিত হয় না। হিন্দুত্ববাদী নেতারা জাতিভেদ প্রথা নিয়ে আলোচনা থেকে স্বভাবতই বিরত থাকেন কিন্তু একটি নীরব স্বাচ্ছন্দ্যে এটিকে অনুমোদন দিতেও ছাড়েন না। এঁদের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েকজনই আছেন, যাঁরা এই প্রথার বিরোধিতা করেন।
মাঝেমধ্যে অবশ্য হিন্দু নেতারা এমন একটি ছবি তৈরি করেন যেন তারা জাতপাতের বিরুদ্ধে। অস্পৃশ্যতার কোনও ঘটনার বিরুদ্ধে মতামত রেখে তারা এই চিত্রটি তৈরি করার চেষ্টা করেন। সাভারকার স্বয়ং অস্পৃশ্যতা-বিরোধী ছিলেন, এমনকি ডঃ আম্বেদকরের প্রথম দিককার অস্পৃশ্যতা-বিরোধী একটি আইন অমান্য সমর্থনও করেছিলেন— মহাদ সত্যাগ্রহ (জেলিয়ট ২০১৩, পৃ ৮০)। তবে অস্পৃশ্যতা বিরোধ করা মানেই কিন্তু জাতপাতের বিরোধিতা নয়। অস্পৃশ্যতার বিরোধ ও জাতপাতকে সমর্থনের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য উচ্চবর্ণের রয়েছে, যা প্রায়শই অস্পৃশ্যতাকে জাতপাত-ব্যবস্থার একটি সাম্প্রতিক বিকৃতি হিসেবে খারিজ করে।[4]
অনিশ্চিত ক্ষমতা
উচ্চবর্ণের জন্য হিন্দুত্ব প্রকল্প একটি লাভদায়ী যোজনা। যেহেতু তা ঐতিহ্যিক সমাজ স্তরায়নের পুনস্থাপনের পক্ষে দাঁড়ায় এবং উচ্চবর্ণের জন্য সমাজশীর্ষে অবস্থানের পথ প্রস্তুত করে। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত যে আরএসএস সুনির্দিষ্টভাবে উচ্চবর্ণের মধ্যে জনপ্রিয় হবে। এর প্রতিষ্ঠাতারা ঘটনাচক্রে সকলেই ব্রাহ্মণ্, সব আরএসএস প্রমুখরাই (রাজেন্দ্র সিংহ ব্যতিক্রম। তিনি রাজপুত)। অন্যান্য নেতৃবর্গও ব্রাহ্মণ— সাভারকর, গোলওয়ালকর, নাথুরাম গডসে, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, দীনদয়াল উপাধ্যায়, মোহন ভাগবত, রাম মাধব এরকমই কয়েকজনের নাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরএসএস অবশ্যই উচ্চবর্ণের গন্ডি অতিক্রম করে অন্যান্য জাতের মধ্যেও প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করেছে। তবে উচ্চবর্ণই এই সংগঠনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত ভিত্তি এ পর্যন্ত।[5]
বস্তুত, হিন্দুত্ব প্রকল্প উচ্চবর্ণের বিশল্যকরণী, কারণ স্বাধীনোত্তর যুগে তাদের আধিপত্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। তবে মোটের ওপর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ক্ষমতা ও সুবিধাভোগ স্বাধীনোত্তর যুগেও বজায় রাখতে পেরেছিল। চিত্রটি দেখে নেওয়া যাক— উত্তরপ্রদেশ, এলাহাবাদে ২০১৫-তে “উচ্চপদ ও ক্ষমতা” (position of power and influence, সংক্ষেপে POPI) সম্পর্কিত একটি সমীক্ষা (বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ পদ, বার অ্যাসোসিয়েশন, পুলিশের শীর্ষ অধিকর্তা, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা, এনজিও কর্তা এবং অন্যান্যদের মধ্যে) করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে ৭৫ শতাংশ এই ধরনের পদ উচ্চবর্ণ দ্বারা অধিকৃত, উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যায় যাদের উপস্থিতি মাত্র ১৬ শতাংশ। শুধু ব্রাহ্মণ আর কায়স্থরাই এই উচ্চ পদগুলির অর্ধেক সংখ্যক অধিকার করে আছে। খুবই কৌতূহলোদ্দীপক যে সরকারি ক্ষেত্রের তুলনায় এই অসাম্য ট্রেড ইউনিয়ন, এনজিও এবং প্রেস ক্লাবের মত নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় অধিকতর। যদিও এলাহাবাদ একটিমাত্র শহর, কিন্তু অন্যান্য নানা সমীক্ষাই এই চিত্র ও নকশা তুলে আনছে। উচ্চবর্ণের আধিপত্য বিচিত্র ও ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান বিভিন্ন স্তরে— মিডিয়া হাউজ, ক্রিকেট টিম, উচ্চ প্রশাসনিক পদ এবং আরও নানা ক্ষেত্রে।[6]
তবুও উচ্চবর্ণের নৌকোয় নানা দিক থেকেই ছিদ্র দেখা যেতে শুরু করেছে। শিক্ষা— উদাহরণস্বরূপ বলা যায়— এক সময় ছিল উচ্চবর্ণের একচেটিয়া বিষয়। বিংশ শতকের গোড়ার ব্রাহ্মণ পুরুষদের মধ্যে শিক্ষা খুবই স্বাভাবিক বিষয় ছিল, কিন্তু সেক্ষেত্রে দলিতরা বস্তুতপক্ষে ছিলই না।[7] নিঃসন্দেহে অসাম্য এবং বৈষম্য আজও শিক্ষাক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল। তবু অন্তত সরকারি স্কুলগুলোতে দলিত শিশুরা উচ্চবর্ণের শিশুদের সমান মর্যাদা দাবি করতে পারে। সমস্ত বর্ণের শিশুরাই মিড-ডে-মিল একই খাবার পায়। এবং এই উদ্যোগ বহু উচ্চবর্ণ অভিভাবকদের মাথাব্যথার কারণ (দ্রেজ, ২০১৭)। সাম্প্রতিক কালে মিড-ডে-মিল মেনুতে ডিম অন্তর্ভুক্ত হওয়াতেও নানা রাজ্যের নিরামিষভোজী উচ্চবর্ণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।[8] বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বিদ্যালয়ে মিড-ডে-মিলে ডিমের অন্তর্ভুক্তিকরণ ঠেকানোর জোরদার প্রচেষ্টা চলেছে।
জনজীবনে শিক্ষাব্যবস্থা একটি উদাহরণ যেখানে উচ্চবর্ণকে কিছুটা হলেও ক্ষমতা এবং সুবিধা অন্যান্য বর্ণের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়েছে। অপর একটি উদাহরণ নির্বাচন ব্যবস্থা। এমনকি ডঃ আম্বেদকর “প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার এবং ঘন ঘন নির্বাচনও ক্ষমতাশীল শ্রেণিকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অবস্থানে পৌঁছানো থেকে বিরত করতে পারে না” (আম্বেদকর, ১৯৪৫, পৃ ২০৮)— এরকম বলে থাকলেও। লোকসভাতে উচ্চবর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও তাদের প্রতিনিধিত্ব মোটামুটি ২৬ শতাংশ, POPI-তে উচ্চবর্ণের আধিপত্যের সঙ্গে যা তীক্ষ্ণ বৈপরীত্য প্রদর্শন করে (ত্রিবেদী এট অল, ২০১৯)। স্থানীয় স্তরে পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানেও মহিলা, তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের নীতি উচ্চবর্ণের মুঠোর চাপকে দুর্বল করেছে। অন্যদিকে বিচারব্যবস্থাও নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে উচ্চবর্ণের অবাধ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা দিয়েছে— যেমন জমি দখল, বাঁধা মজুর, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। যদিও আইনের চোখে প্রকৃত সমতা অর্জনের রাস্তা এখনও অনেক দূর।
কিছু অর্থনৈতিক পরিবর্তনও— বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে— উচ্চবর্ণের আধিপত্যমূলক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। বহুদিন আগে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে মোরাদাবাদ জেলার একটি গ্রাম পালানপুরে এ ধরনের একটি লক্ষণীয় পদ্ধতিকে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। মান সিং (নাম পরিবর্তিত) তুলনামূলকভাবে ওই অঞ্চলের একজন শিক্ষিত ব্যক্তি, তাকে গ্রামের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে লিখতে বলেছিলাম। তখন তিনি যা লিখেছিলেন (১৯৮৩-র শেষদিকে):
এক) নিম্নবর্ণের লোকেরা উচ্চবর্ণের লোকেদের চেয়ে ভালো জীবন কাটায় সুতরাং উচ্চবর্ণের লোকেদের মনে নিম্নবর্ণীয় মানুষদের প্রতি ইর্ষা ও ঘৃণা রয়েছে।
দুই) শিক্ষার অনুপাত নিম্নবর্ণের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিন) সামগ্রিকভাবে বলতে পারি নিম্নবর্ণের দ্রুত উন্নতি ঘটছে আর উচ্চবর্ণ অধঃপতিত হচ্ছে, কারণ আধুনিক সমাজে নিম্নবর্ণের অর্থনৈতিক অবস্থা উচ্চবর্ণের চেয়ে ভালো।
আমি প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না। তারপরে বুঝলাম, নিম্নবর্ণ শব্দটির মাধ্যমে মানসিং “দলিত” বোঝাতে চাননি, নিজের জাত বোঝাতে চেয়েছেন— মুরাও, উত্তরপ্রদেশের একটি ওবিসি। সেই সূত্রে তিনি যা লিখেছেন তার একটা অর্থ দাঁড়ায়, আমাদের প্রত্যক্ষণেও তা ধরা পড়ে। মুরাওরা কৃষিজীবী জাত, জমিদারি প্রথার অবসান ও সবুজ বিপ্লবের পর উচ্চবর্ণীয় ঠাকুরদের তুলনায় একটি ধারাবাহিক উন্নতির পথে তারা অগ্রসর হয়েছে। যদিও ঠাকুররা তাদের অলস জমিদারির ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করেছে সাধ্যমত (ঐতিহ্য অনুযায়ী তাদের হাল ছোঁয়া নিষিদ্ধ)। অন্যদিকে মুরাওরা ঢালাও বহুফসল চাষ, টিউবওয়েল বসানো, বেশি বেশি করে জমি খরিদ করা— ইত্যাদির মাধ্যমে, এবং যেমনটা মান সিং ইঙ্গিত করেছিলেন, শিক্ষার দিক থেকেও ঠাকুরদের ধরে ফেলেছে। এ নিয়ে ঠাকুররা তাদের ক্ষোভ গোপনও করেনি।
পালানপুর যদিও কেবল একটিমাত্র গ্রাম, কিন্তু গ্রামীণ ক্ষেত্রসমীক্ষায় এই ধরনটি বহু ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়।[9] এর অর্থ এই নয় যে উত্তর-স্বাধীনতা পর্বে গ্রামীণ ভারতের সার্বজনীন ছবি এটাই— তবে নকশাটার যে একটা সাধারণ রূপ আছে, সেটা বলাই যায়।
সংক্ষেপে, যদিও উচ্চবর্ণ এখনও আর্থসামাজিক জীবনের বহু দিকেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রেখেছে তবুও কিছু ক্ষেত্রে তারা ক্ষমতার জমি হারাচ্ছে বা হারানোর মত বিপজ্জনক অবস্থানে রয়েছে। বিশেষ সুবিধাভোগ খুবই অল্প হারালেও, উচ্চবর্ণের সাপেক্ষে সেটি যথেষ্ট বড় ক্ষতি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রত্যাঘাত
সাম্প্রতিক কয়েক দশকে উচ্চবর্ণের বিশেষ সুবিধা ভোগ যত দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা তাদের বিক্ষুব্ধ করেছে সম্ভবত সবথেকে বেশি। সংরক্ষণ ব্যবস্থা উচ্চবর্ণের জন্য শিক্ষা ও সরকারি চাকুরির সুযোগ প্রকৃতপক্ষে কতটা সঙ্কুচিত করেছে তা স্পষ্ট নয়, সংরক্ষণের নীতিনিয়মগুলিও সম্পূর্ণ প্রয়োগ হওয়া এখনও ঢের বাকি, এবং সেগুলিও শুধু সরকারি ক্ষেত্রগুলিতেই প্রযোজ্য। তবে এই নীতিগুলি নিঃসন্দেহে উচ্চবর্ণের মধ্যে এই সাধারণ ধারণার জন্ম দিয়েছে যে তাদের ডিগ্রি এবং চাকুরি এসসি, এসটি ও ওবিসি-রা ছিনিয়ে নিচ্ছে।[10]
দেখা যাচ্ছে ১৯৯০-তে ভিপি সিং সরকারের ওবিসিদের সংরক্ষণের জন্য মন্ডল কমিশনের সুপারিশ রূপায়ণের পরপরই অতি সত্বর বিজেপির রাজনৈতিক পুনরুত্থান ঘটে। মন্ডল কমিশনের রূপায়ণ শুধুমাত্র হিন্দুসমাজকে বিভাজনের ভীতিই তৈরি করেনি (উচ্চবর্ণ সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল)— ভারতের ৪০ শতাংশ ওবিসি জনসংখ্যাকে বিজেপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি করেছিল। এরপরই এল এলকে আদবানির অযোধ্যা রথযাত্রা এবং তার পরবর্তী ঘটনাবলি (বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২)। বর্ণবাদ বা কাস্টিজমের শাসানি থেকে মুক্ত হয়ে বিজেপি ও বিশেষ করে উচ্চবর্ণের নেতৃত্বে মুসলিম বিরোধিতার মঞ্চে হিন্দুরা পুনর্বার ঐক্যবদ্ধ হল।
এটা হিন্দুত্বের একটি দৃষ্টি-আকর্ষণকারী উদাহরণ। উচ্চবর্ণের বিশেষ সুবিধাভোগের প্রতি যে বিপদগুলি তৈরি হয়েছিল, হিন্দুত্বকে ব্যবহার করে সেগুলি প্রতিহত করা হল এবং হিন্দু সমাজে আবার নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা হল। আজকের হিন্দুত্ব আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি এইটিই। এই আন্দোলনের সম্ভাব্য বিপক্ষ শুধুমাত্র মুসলমান নন— ক্রিশ্চান, দলিত, আদিবাসী, কমিউনিস্ট, ধর্মনিরপেক্ষ, যুক্তিবাদী, নারীবাদী… এক কথায় ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে বা যাদের দাঁড়ানোর সম্ভাবনা আছে তারাই। প্রায়শই একে সংখ্যাগুরুর আন্দোলন বলা হলেও, হিন্দুত্বকে সম্ভবত নিপীড়ক সংখ্যালঘুর আন্দোলন বললে সঠিকতর ব্যখ্যা হয়।
হিন্দুত্ব আন্দোলনের (বলা ভালো সাম্প্রতিক সময়ে এর যে দ্রুত বিকাশ) উপরোক্ত ব্যখ্যায় যে সম্ভাব্য আপত্তি উঠতে পারে তা হল দলিতরা বিরাট সংখ্যায় এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন। তবে এই আপত্তির বিরুদ্ধে খুব সহজ যুক্তির অবতারণা করা যায়।
প্রথমত এটা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় যে এই সমস্ত দলিতরা প্রকৃতই আরএসএস বা হিন্দুত্ব তত্ত্বে বিশ্বাস করেন কিনা বা সমর্থন করেন কিনা। ২০১৯ সালের নির্বাচনে এদের অনেকেই বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছেন মানেই এটা দাঁড়ায় না যে তারা সকলেই হিন্দুত্বকে সমর্থন করেন। আরও নানা সম্ভাব্য কারণ এর পেছনে থাকতে পারে।
দ্বিতীয়ত হিন্দুত্ব আন্দোলনের বেশ কিছু দিক দলিতদের কাছে আবেদন রেখে থাকতে পারে, যদি তারা হিন্দুত্ব তত্ত্বে বিশ্বাস নাও করেন। যেমন আরএসএসের বিরাট বিদ্যালয় নেটওয়ার্ক, আরও নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজকর্ম, বেশিরভাগ সময়ে যার উদ্দিষ্ট সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়গুলি।
তৃতীয়ত দলিতদের সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে আরএসএস তার সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে শুধুমাত্র সমাজসেবামূলক কাজের মধ্যে দিয়ে নয়, প্রচারণা এবং ডঃ আম্বেদকরকে সংযোজিত করার মধ্য দিয়ে। সঠিকার্থে হিন্দুত্ব এবং ডঃ আম্বেদকরের কোনও মিলনবিন্দু থাকতে পারে না, যদিও এখন অবধি নানাভাবে আরএসএস আম্বেদকরকে নিয়মিতই ব্যবহার করে আসছে।
শেষত এটা তর্কসাপেক্ষ যে হিন্দুত্ব জাতিভেদ প্রথার অবসানের পক্ষে না দাঁড়ালেও এই প্রথার সাপেক্ষে তার দৃষ্টিভঙ্গি বা প্রয়োগ হয়তো আজকে দেশে এই প্রথা যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তার তুলনায় কম নিপীড়ক। দলিতদের কোনও অংশের হয়তো মনে হচ্ছে, সব সত্ত্বেও, বৃহত্তর সমাজের কাছ থেকে তাঁরা যে আচরণ পেয়ে থাকেন তার থেকে আরএসএস উৎকৃষ্ট। আরএসএসের এক সমর্থক যেমন বলেন “হিন্দুত্ব এবং সাধারণ হিন্দু পরিচয়ের প্রতিশ্রুতি দলিত এবং ওবিসির বড় একটি অংশের কাছে সর্বদাই আবেদনগ্রাহ্য, কারণ তা তাদের নিম্ন বা দুর্বল বর্ণের সঙ্কীর্ণ আত্মপরিচিতি থেকে মুক্তি দেওয়ার এবং একটি শক্তিশালী হিন্দু সমাজে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।” তবে এটা অন্যতর বিষয় যে এই সব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই অলীক। ভাঁওয়ার মেঘওয়াংশির আরএসএসের দলিত সদস্য হিসাবে অভিজ্ঞতা এ বিষয়ে প্রণিধানযোগ্য (মেঘোয়াংশি, ২০২০)।
পূর্বেই বলা হয়েছে, হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানকে বিজেপির নির্বাচনী সাফল্যের সাথে গুলিয়ে ফেলাটা সঠিক হবে না। তা সত্ত্বেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ সাফল্য আরএসএসের পক্ষেও এক বিরাট জয়। সরকারের শীর্ষপদগুলি (প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, লোকসভা অধ্যক্ষ, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক, বেশ কয়েকজন রাজ্যপাল ইত্যাদি) এখন আররসএসের সদস্য বা প্রাক্তন সদস্যদের দখলে, যারা কঠোরভাবে আরএসএসের হিন্দু জাতীয়তাবাদী তত্ত্বে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণের নীরব বিদ্রোহ আজ ক্রমশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে সরাসরি আক্রমণের আকার নিচ্ছে, বাকস্বাধীনতা ও বিরোধী মতপ্রকাশের উপর আক্রমণের মাধ্যমে যা শুরু হয়েছে। গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ এবং জাতিভেদ প্রথার বিদ্যমানতা আজ পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। দেশ আজ এই বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে।
[1] গোলওয়ালকর (১৯৬৬), পৃ. xxxi এবং 107-111. গোলওয়ালকরের কথায় জাতপাতব্যবস্থা চলে আসছে “for thousands of years of our glorious national life. There is nowhere any instance of its having hampered the progress or disrupted the unity of society. It, in fact, served as a great bond of social cohesion” (p. 108).
[2] সাক্ষাৎকার, এনডিটিভি, ৫ মার্চ ২০১৭। আরএসএসের তৎকালীন সরসঙ্ঘচালক কেএস সুদর্শন একই সুরে জাতকে ফার্মের বেড়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, (Caste system ensured job quota for every caste: RSS chief, Outlook, 27 January 2006).
[3] অবশ্যই আরেকটি সম্ভাব্য রাস্তা হলে জাতিভেদ প্রথার ধ্বংসসাধন। কিন্তু তাতে আবার উঁচু জাতগুলি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
[4] Gandhi গান্ধি নিজেই বলেছিলেন জাতিভাদ প্রথাকে “শুদ্ধ” করার জন্যই অস্পৃশ্যতা দূর হওয়া দরকার। সত্যি কথা বলতে গেলে, তিনি যে জাতিভেদ প্রথা প্রত্যক্ষ করেছেন, তা আজকে যে জাতিভেদ প্রথার অস্তিত্ব দেখা যায় তার চেয়ে অনেকটাই আলাদা— “The moment untouchability goes, the caste system will be purified, that is to say, according to my dream, it will resolve itself into the true Varna dharma, the four divisions of society, each complementary of the other and none inferior or superior to any other, each as necessary for the whole body of Hinduism as any other.” (গান্ধি ১৯৩৩, পৃ. ১৪-১৫)। কিন্তু অস্পৃশ্যতার দূরীকরণ কীভাবে জাতিভেদ প্রথাকে পবিত্র করবে তা আজও এক রহস্য।
[5] ভাঁওয়ার মেঘওয়াংশি-র আরএসএস-এর ভেতরের খবর থেকে (মেঘওয়াংশি, ২০২০) এই দুটি বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধেই জানা যায়— আরএসএস-এ উচ্চবর্ণের আধিপত্য, যা সমাজের অন্য অংশগুলিকেও প্রলুব্ধ করে। এতে ২০০৩-এ আরএসএস-এর ন্যাশনাল ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে একটি চমৎকার বিশ্লেষণ রয়েছে (পৃ ১৮৬-৭)। মেঘওয়াংশি দেখেছিলেন, সেখানকার ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে “২৬ জন ব্রাহ্মণ, ৫ জন বৈশ্য, ৩ জন ক্ষত্রিয় এবং ২ জন অনগ্রসর জাতের (শূদ্র)। একজনও দলিত বা আদিবাসী নেই।”
[6] আগরওয়াল, দ্রেজ এবং গুপ্তা (২০১৫)-র লিটারেচার দ্রষ্টব্য, সেখানে এলাহাবাদ স্টাডির বিস্তৃত রিপোর্ট রয়েছে।
[7] দ্রেজ এবং সেন (২০১৩)-এ প্রদত্ত ১৯০১-এর জনগণানার খতিয়ান দ্রষ্টব্য।
[8] The state government’s recent decision to add eggs in school meals is the subject of a major political battle in Chhattisgarh. BJP legislators, egged on by “communities such as Kabir Panthi, Radha Swami, Gayatri Parivar, Jains and others”, are opposing the move in the State Assembly (India Today, 2019).
[9] এই বিষয়ে, এবং পালানপুরে ঠাকুরদের আপেক্ষিক অবনতি সহ সেখানকার আন্তঃবর্ণ সম্পর্কের বিস্তৃত খতিয়ানের জন্য দ্রেজ, লাঞ্জু এবং শর্মা (১৯৯৮) দ্রষ্টব্য।
[10] This এই ধারণা সবচেয়ে ভালো ধরা পড়েছিল ১৯৯০ সালের একটি ব্যঙ্গচিত্রে যেটির কথা কে বালাগোপাল (১৯৯০) উল্লেখ করেছিলেন। সেখানে দেখানো হয়েছিল এসসি, এসটি এবং ওবিসি ছাত্ররা একটি জাহাজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং “grinning cruelly at the forward caste students who are sinking all round with their degree certificates held high”. বালাগোপালের পর্যবেক্ষণ: “it is difficult to imagine a more atrocious caricature of reality, which is almost exactly the opposite” (p. 2231).
নিবন্ধটি CASTE: A Global Journal on Social Exclusion-এর উদ্বোধনী সংখ্যার অংশবিশেষ।