বিকর্ষণ

প্রবাল ব্যানার্জী

 


গত দুই দশক ধরে ভিশুয়াল মিডিয়ায় কর্মরত ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী

 

 

 

 

এমনিতেই আমি যে প্রচণ্ড কাজের মধ্যে ডুবে থাকি তা হয়তো নয়। কিন্তু রং-তুলি নিয়ে থাকতে আমি কখনও কখনও তীব্র ভালোবাসি। অথচ ভালোবাসাটা নিখাদ হলেও তাগিদটা ক্রমশ কমে আসছিল। কেন আঁকব, কেন রঙে ভরিয়ে দেব ক্যানভাস— মাঝেমাঝেই প্রশ্নটা যেন আমায় গিলে খেতে আসে।

 

চারপাশটা ক্রমেই অচেনা হয়ে পড়ছিল। কাউকেই… কোনও কিছুই… কোনও রংই আর চিনে উঠতে পারছিলাম না। চারিদিকে পণ্যসভ্যতার এত তো রং— তবু আমার নিজের মধ্যে বা আমায় ঘিরে থাকা পারিপার্শ্বিকের অন্তঃস্থলে— কোথাও কোনও রঙের সন্ধান করে উঠতে পারছিলাম না।

কোভিডোত্তর সময় আমাদের চেনা পৃথিবীটাকে নতুন করে চেনাচ্ছে। আমি হয়তো অনেক আগে থেকেই এই অচেনাগুলোকে চিনতে শুরু করেছিলাম। এই পরিস্থিতি তো আজকের নয়। অনেক যুগ ধরেই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে আমরা দেউলিয়া হয়ে চলেছি। এক অসম্ভব চক্রান্তে সেই দেউলিয়াপনা আমাদের ব্যক্তিগত চেতনার পরিসরকেও প্রচণ্ড বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে। চারপাশের মুখগুলোও অচেনা হতে শুরু করেছে। যেদিকেই তাকাই সব যেন গলে গলে পড়ছে। মুখহীন, অবয়বহীন নষ্ট শসার মত।

সেই কুঁজ গলগন্ড মাংসে ফলিয়াছে
নষ্ট শসা – পচা চালকুমড়োর ছাঁচে,
যে সব হৃদয়ে ফলিয়াছে
সেই সব।

–জীবনানন্দ দাশ

এই বোধ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এই বোধ থেকেই হয়তো আমার মধ্যে জন্মেছে এক তীব্র বিকর্ষণের বোধ। এই তীব্র বিকর্ষণের বোধ থেকেই বোধহয় আমার মধ্যে জেগেছিল এক অন্য রকমের তাগিদ। আবার ক্যানভাস আঁকড়ে ধরেছিলাম আমি। সেখান থেকেই এই Repulsion সিরিজটির জন্ম।

ব্যক্তিগতভাবে জন্মাবধি আমি এই মহানগরের বাসিন্দা। আমার ভাবনার জগতটাও হয়তো তাই নগরকেন্দ্রিক। রেখা ও রঙের ব্যবহারও সেই সব জটিলতারই প্রতিফলন। বর্তমান Mixed Media সিরিজটিতে কিছু সীমিত রং ও রেখার ব্যবহারে Expressionism ও Symbolism-এর মাধ্যমে চারপাশের সেই বদলে যাওয়া মুখগুলোকে ধরতে চেয়েছি আমি। ক্রমাগত সবকিছু থেকে একা হয়ে যাওয়ার এই সময়টিকেই ধরে রাখতে চাইলাম আমার ক্যানভাসে।

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

1 Comment

  1. প্রবাল যে যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত ,সেই যন্ত্রণা সকল সংবেদনশীল, অনুভবী সহনাগরিকের।মনের ঝড় রঙ ও রেখায় প্রতিভাসিত।? — সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

আপনার মতামত...