বিশ্বদীপ চক্রবর্তী
পূর্ব প্রকাশিতের পর
The Duck and the Kangaroo
২
তোদের মনে আছে কলেজ জীবনের শুরুতে আমি কেমন গয়ংগচ্ছ ছিলাম? তারপর বিজু আমার জীবনের হাল ধরতে এসে গেল। ঝুঁকে দাঁড়ানো মণীশের দুই হাত চেয়ারের দুই মাথায়, ডান হাতের দু আঙুলে হাতের গ্লাস কবজা করতে করতে চোখের টর্চ দুজনের উপর দোলাচ্ছিল। বিজু আমাকে নিয়ে কী বলত জানিস? বলত— তুই অনেক উঁচুতে উঠবি মণীশ, অনেক। ও বলত, আর আমার বুকটা ফুলে ফুলে উঠত। আমি বিশ্বাস করতাম, করতে শুরু করেছিলাম— আমি এক লম্বা রেসের ঘোড়া, যেমন বিজু বলছে সেটাই সত্যি। আমি সত্যিই ট্যালেন্টেড। And to make her happy, I have to prove her right. আমি ছুঁড়ে দেওয়া দড়ি ধরে এগিয়ে যাচ্ছি, উঁচুতে উঠছি আর বিজু আমাকে বলেছে, তুই পারবি রে মণীশ, তোর মধ্যে আছে।
মণীশ বাঙালি হিসেবে যথেষ্ট লম্বা। ছয় দুই। ও দাঁড়িয়েছিল। বুদ্ধ সোফায় হেলান দিয়ে আর হীরক কোলে বালিশ নিয়ে কার্পেটে।
মানুষের মনে কতরকমের দুঃখ যে থাকে! কিন্তু সেটা বাইরে টেনে আনতে আনতে কেমন পলকা হয়ে যায়। না থাকে ধার, না থাকে ভার। নাহলে এটা শোনার পর বুদ্ধ কেন বলবে, সেটা তোর জন্য ভালোই তো হল, তাই না? তাহলে আর কিসের দুঃখ? বুদ্ধর বলার ভঙ্গি একটু খোঁচা দেওয়ার মত।
মণীশ বেশ ভালো পজিশনে আছে। সবার আগে গ্রিন কার্ড বাগিয়েছিল। এখন অ্যামেরিক্যান সিটিজেন। বুদ্ধ মাঝখানে ফিরে চলে গেল, হীরক এসেছিল একটু দেরিতে। ওদের জীবন এখনও কিছুটা অনিশ্চিত। মণীশ কোম্পানিতেও তরতর করে বাড়ছে। বিশাল বাড়ি কিনেছে টেক্সাসের পাসাদেনাতে।
বুদ্ধর খোঁচা অগ্রাহ্য করে মণীশ বলল, তোর কখনও মনে হয়েছে ভালো ভালো রেজাল্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এসে হঠাত আমরা পড়াশোনা থেকে কেন রাশ আলগা করেছিলাম?
বেড়াতে এসে প্রথমবারের মত বুদ্ধ মণীশের সঙ্গে একমত হল। হবে না? ছোটবেলা থেকে এক একজনকে রেসের ঘোড়া বানানো হয়েছে। চোখে ঠুলি লাগিয়ে এক লক্ষ্য এক মন হয়ে শেষের ফিতে ছুঁতে দৌড়াও। ওই রেজিমেন থেকে বেরিয়ে সত্যি জীবনের স্বাদ পেতেই সবার ডানায় হাওয়ার টান।
ঠিক বলেছিস। পড়া আর পরীক্ষার নামে জ্বর আসত মাইরি। পড়াশোনার প্রতি প্যার মহব্বত ফিরিয়ে আনতেই বছর দুয়েক চলে যায়। অন্তত হীরকের তাই হয়েছিল। ভাবটা এমন যে এই সব তো হয়ে গেছে, এখন এত পড়াশোনা করার আর কি? ভালো লাগার জন্যও যে পড়াশোনা করা যায়, প্রতিযোগিতার চাপে জিভ বের করা ঘোড়াগুলোর সেটা বুঝতেই কতগুলো বছর।
আমিও তো তাই ছিলাম। টিউশন, নানারকম কোচিং ক্লাসের চাপ, কমপিটিটিভ এক্সামে বসতে বসতে ফেড আপ আমি কলেজে এসে ব্যাপক মস্তিতে কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু বিজুর পাল্লায় পড়ে আবার দেওয়াল ধরলাম। সারা জীবনের জন্য। গলা ভিজে গেছিল মণীশের। সত্যি চাপ না মদের প্রভাব বলা মুশকিল।
বন্ধুদের এরকম অবস্থায় ঠেকনা দেওয়াটা আশু কর্তব্য। হীরক চোখ কপালে তুলে বলল, এখনও? কিন্তু মনে মনে ভাবল, চাপ কার না থাকে! কতরকমের। সবার নিজের নিজের দেওয়াল। সেই দেওয়াল লিখন বাইরের চোখে ইনভিজিবল।
একদম! হীরকের কিউ ধরে মণীশ তার কমপ্লেনের ঝাঁপির ঢাকা আর একটু খুলল। তোরা বুঝতে পারছিস, এটা কিরকম প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারে? উপরে ওঠাটাই কি সব? কিন্তু ওর এই ভাবনা, আগামী কুড়ি বছরের একটা উপরে ওঠার প্ল্যান মাথায় নিয়ে সবসময়ে ঘোরা— একটা হাল ছেড়ে দেওয়া মানুষের নিঃসঙ্গ দুপুর মণীশের গলায়।
–অফিসে তো মুখ দেখে তোকে প্রোমোশন দিচ্ছে না! ভালো কাজ করছিস, ফল পাচ্ছিস। এর মধ্যে বিরোধটা কোথায়? উন্নতি কে না চায়। সেটা যদি প্ল্যান করে হয়…
মণীশ হীরকের মুখের কথা কেড়ে নিল। কে বলেছে ভালো কাজ করছি? আমি যে কী কাজ করছি আমার নিজেরই কেমন সন্দেহ হয়। দিনে পাঁচটা মিটিং, দশটা লোকের সঙ্গে কথা বলা। দমবন্ধ লাগে এই থোড়বড়িখাড়া কাজের মধ্যে। চালিয়ে যেতে পারি, যাচ্ছিও। কিন্তু তার মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চাই না। জীবনে অন্য কিছুও আছে।
–ওর সঙ্গে কথা বলে দেখ। বোঝার চেষ্টা কর। বিজুকে জানি তো আমরা। ও জীবনে সাফল্য চায়, সেটলড লাইফ হোক সবসময়ে এমনটাই চেয়েছে। তোর যদি অন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকে, সেটাও তো সম্ভব। তুই এমন টরচার্ড সোল হয়ে ঘুরছিস জানলে গলার দড়িটা আলগাও করবে। তুই তখন ছাড়া গরু হয়ে ঘুরিস। বিজু ওদেরও ক্লাসমেট, বন্ধু। যে কোনও সময় বন্ধুদের সাহায্য করার জন্য হাজির, একটু বেশিই হয়তো। সবার দরকারের কথা বেশি বেশি ভেবে রাখাটা বিরক্তিকর লাগতে পারে, তাই বলে তিনজনে মিলে ওর অবর্তমানে এমন কাঁটাছেড়া করাটাও ভালো লাগছিল না।
মণীশ নিরুপায় ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল। কতবার বলেছি। চেষ্টা করিনি ভাবছিস? আসলে ও ভাবে আমি সুযোগ পেলেই দিকভ্রষ্ট হব। ভুলে যাব আমার উপরে ওঠার সিঁড়ি। উঁচুতে ওঠা, স্কাই ইজ দ্য লিমিট— সারাদিন এসব শুনলে কিরকম দমচাপা লাগে?
মণীশ টেবিলে গিয়ে খালি গ্লাসের উপর আবার বোতল উপুড় করল। পার্টিমিক্স থেকে বেছে বেছে দুটো কাজু আর একটা কিসমিস খুঁজে মুখে রাখল। সময় নিচ্ছিল। হীরক আর বুদ্ধ শোনা কথাগুলোকে নিজের নিজের মত করে হজম করছিল। ঘরে একটা সাময়িক নীরবতা। অস্বস্তিকর। ভারী। মণীশ নিজেই আবার ধরল। আমি তো ওকে বাধা দিইনি এগিয়ে যেতে। যাচ্ছেও। তিয়াস হবার পর ও যাতে তাড়াতাড়ি চাকরিতে জয়েন করতে পারে তার জন্য কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে বাড়ির কাজ করেছি। কিন্তু শুধু নিজের সাফল্যে কেন খুশি থাকবে বিজয়েতা? যেন ইচ্ছে করেই বিজুর পুরো নামটা ঠোঁটে আনল মণীশ। কিন্তু থামেনি। তার বরকে সফল হতে হবে। মেয়েকে সব কিছুতে চৌকশ হতে হবে। নোশন অফ সাকসেস ড্রাইভস হার ক্রেজি। ওটাই ওর জীবনের ধ্যানজ্ঞান। বলেও সে কথা। উঠতে বসতে। এই চাপ আমি আর নিতে পারছি না রে। ধপ করে চেয়ারে বসল এবার মণীশ। ও চায় একটা ছবির মত জীবন। চল্লিশ পেরোবার আগে মিলিয়ন ডলারের বাড়ি, জীবনের সত্যি চাওয়াগুলো যে অন্য জায়গায় তুই ওকে বোঝাতে পারবি না। মণীশকে দেখে মনে হচ্ছিল সোনার খাঁচায় বন্ধ একটা পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে।
হীরক ভাবছিল। কার জন্য যে কোনটা সত্যি কে বলতে পারে। সবার রিয়ালিটি যে এক নয়, জীবনে ওইটাই তো সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা। তার আর মঞ্জিনির রিয়ালিটি কি এক?
কথা বলতে বলতে মণীশ থেমে গিয়ে কোটের পকেট থেকে ওয়্যারলেসটা বের করে নাড়াচাড়া করছিল। কথারা কানাগলিতে ঢুকে গিয়ে আর বেরোবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। মণীশ বুদ্ধ আর হীরকের বহুকালের বন্ধু। কিন্তু বিজুও তো তাই। কাকে ফেলে কাকে রাখবে? হীরক জিজ্ঞেস করতে চাইছিল, তোর আর বিজুর মধ্যে কি এই নিয়েই গণ্ডগোল চলছে? সেই জন্যই কি বিজু এল না এবার? কিন্তু প্রশ্ন করার আগেই টিং টিং করে মণীশের হাতেরটা বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে মণীশের মুখে আলো ফিরে এল যেন। ওদের থেকে একটু পিছন ফিরে শব্দ করে হাসি ছড়াল, Ola! Cómo estás? অপর প্রান্তের কথা হীরক কিংবা বুদ্ধ শুনতে পাবে না। কিন্তু মণীশের হাসিটা আরও উঁচু তারে বাঁধল এবার। আই অ্যাম ডেফিনিটলি ট্রায়িং মায়া। দিজ টাইম আই গট দ্য বুক মাইসেলফ। বলতে বলতে মণীশ ঘর থেকে বেরিয়ে ওদের শোনার দূরত্বের বাইরে চলে গেল। ওয়্যারলেস থাকার এইটাই সুবিধা। হীরক, বুদ্ধ এখনও নেয়নি। কিন্তু একটা শিগগির না নিলে একবিংশ শতাব্দীতে ঢোকা যাবে না বোধ হয়।
মিনিট পাঁচেক বাদে ফিরল মণীশ। মুখে তখনও হাসির আলগা ছোঁয়া। দেখে কেন যেন হীরকের খুব রাগ হল। যে কথাটা জিজ্ঞেস করতে এতক্ষণ বাধো বাধো ঠেকছিল, এবার বলেই ফেলল। কী ব্যাপার বল তো? বিজু সঙ্গে এল না, আর আজই হঠাত ওর সম্বন্ধে এত কথা বলছিস! তোদের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল চলছে বলে আসেনি?
–না। সেটাই একমাত্র কারন না। কথাটা হাওয়ায় ঝুলিয়ে দিয়ে গ্লাসে মণীশের আলতো চুমুক। একটু বেশি খাচ্ছে আজ। যেন কণ্ঠনালী যথেষ্ট পিচ্ছিল না হলে দরকারি সব কথা ঠিকঠাক হুমড়ি খেয়ে বেরোতে পারবে না। এলও, আচমকা। গোলার মত। আমি মায়াকে ভালোবাসি। প্রতিটা শব্দের উপর আলাদা করে জোর দিয়ে বলল। সত্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ না রেখে।
–মায়াটা আবার কে? হীরক আর বুদ্ধ এত অবাক হয়েছিল ওর এমন অকপট স্বীকারোক্তিতে, যে এক সঙ্গে এই প্রশ্নটা আর্তনাদের মত বেরিয়ে এল। আকস্মিকতাও ছিল। এতক্ষণ কথা একদিকে যাচ্ছিল। মণীশের ধানাইপানাইয়ের পিছনে যে এমন একটা বোমা লুকিয়ে থাকতে পারে ভাবেওনি।
–এই যে এক্ষুনি যার ফোন এসেছিল। মণীশকে বেশ উজ্জীবিত লাগল। বুদ্ধ, তুই দেখেছিস মায়াকে। মনে আছে আমি যখন টেক্সাস টেকে ছিলাম, হেরিটেজ অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম। সেখানে তুই একটা উইকেন্ডে এসেছিলি? মনে নেই?
–সে তো অনেকদিন আগে রে।
–হ্যাঁ, প্রায় এক যুগ। তোকে দেখিয়েছিলাম আমি। আসলে মায়া এত সুন্দর দেখতে ছিল— একবার দেখলে ভোলা মুশকিল।
হীরক এবার খুব অবাক হল। তার মানে তুই এত বছর ধরে একটা ডাবল লাইফ লিড করছিস?
–না, আমি তা বলিনি। ডোন্ট জাম্প টু আ কনক্লুশন।
ততক্ষণে বুদ্ধর মনে পড়ে গেছে। কথাটা সত্যি। কাটা কাটা চেহারা, মায়াময় বাদামী চোখের মেয়েটা মিস ওয়ার্ল্ড কম্পিটিশনে জেতা ভেনেজুয়েলান বিউটিদের মনে করায়। মায়া অবশ্য মেক্সিকান। মাত্র একবার দেখলেও এত বছর বাদে এক মুহূর্তে মনে পড়ে গেল বুদ্ধর। মণীশই দেখিয়েছিল ওকে। বুদ্ধ মনে করিয়ে দিয়েছিল, বিজুর সঙ্গে এত বছরের সম্পর্ক। অন্য কোনও মেয়ের সঙ্গে এখন ফেঁসে যাস না। এই কথায় মণীশ রেগে কাঁই। কারও সঙ্গে বিয়ে হবে বলে, কোনও মেয়েকে ঝাড়ি মারব না এমন মুচলেকা দিয়েছি নাকি? নাকি কোনও জেলখানায় নাম লিখিয়েছি? সেদিন বুদ্ধ আর কথা বাড়ায়নি। তারপর ভুলেও গেছিল। আর কোনওদিন এই নাম শোনেনি মণীশের মুখে। কিন্তু এত বছর বাদে সেই মায়া যে আবার আলোচনায় ফিরে আসবে সেটাও ভাবেনি।
–তাহলে ওর সঙ্গে এতদিন কোনও সম্পর্ক ছিল না তোর? হীরক জেরা চালিয়ে যায়।
–ধুর মেক্সিকান মেয়ে, সম্পর্কের প্রশ্নই ছিল না। খুব সামান্যই কথা হয়েছে। হওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ মায়া ইংরাজি জানত না। কখনও লিফটে দেখা হলে গুড মর্নিং বলেছি, মায়াও বলেছে। ব্যস ওইটুকুই। মনে আছে ওর গলা খুব সুরেলা ছিল, ঠিক পিয়ানোর টুংটাং। কিন্তু একটা দুটো শব্দের বেশি একসঙ্গে শুনিনি কখনও। আমি কিছু বলতে গেলে, ও আলগোছে বলেছে ‘নো কমপ্রিয়েন্ডে’। সেটা কি শুধু ইংরাজি না জানার জন্য নাকি বোঝানো যে ওর কোনও ইন্টারেস্ট নেই সেটা জানতে পারিনি কখনও। আসলে কারও সঙ্গেই কথা বলত না। বাবার সঙ্গে থাকত। সে লোকটা বেশ খানিকটা ইংরাজি বলতে পারত, কিন্তু মায়া একবারে না।
–আচ্ছা না হয় প্রেম করিসনি, অন্তত ব্যথা ছিল তোর আগে থেকেই। বুদ্ধ খোঁচা মারল। কলেজের দিনের বন্ধুত্ব, এইটুকু খুনশুটি করতে পারে।
–তুই দেখেছিস মায়াকে। রোজ লিফটে ওঠানাবার সময় যদি ওরকম একটা মেয়ের সঙ্গে দেখা হয় তোর, আর কথা না বলতে পারলেও তোর দিকে তাকিয়ে সেই মেয়ে মিষ্টি হাসি ছুঁড়ে দেয় দেখা হলেই, ব্যথা নয় শুধু, ক্ষত তৈরি হয়। মণীশের গলায় লড়াইয়ের বারুদ ফসফস করছে, বোঝা যায় মায়াকে নিয়ে ওর ভাবনাকে কোনওভাবেই লুকাতে চাইছে না।
–তুই তো সেই বাড়ি ছেড়েছিস কত বছর হয়ে গেছে, তাহলে ওর সঙ্গে দেখাও হয়নি বহুদিন, সেই ক্ষতও নিশ্চয় বুজে গেছে। তাহলে আজকে মায়ার কথা বলছিস কেন?
বুদ্ধর পাকা উকিলি ভঙ্গিতে প্রশ্নের উত্তরে মণীশ নতুন একটা সিগারেট ধরাল। আজ একটু বেশিই খাচ্ছে। দেখা হয়েছে, একদিন হঠাতই। প্লেনে। স্যানফ্র্যান্সিস্কো যাচ্ছিলাম, প্লেনে উঠে অন্যমনস্কভাবে ম্যাগাজিন দেখছি। হঠাত চোখ তুলে দেখি একজন এয়ার হোস্টেস ফুটখানেক দূরত্বে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টে আমার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে। এত কাছ থেকে মায়াকে কখনও দেখিনি। জোরে নিঃশ্বাস ফেললেও চোখের পাতায় বাতাস লাগবে এমন দূরত্বে। চোখ তুলে তাকাতেই আমাকে বলল, ডু ইউ রিমেম্বার মি, মানিশ? ওর মুখে স্পষ্ট ইংরাজি শুনে যত না চমকেছিলাম, তার চাইতে বেশি পরিষ্কার উচ্চারণে আমার নাম শুনে। নিশ্চয় জানত আমার নাম, কিন্তু বলতে শুনিনি। সেখানে এত বছর বাদে দেখা হতেই এমন ইন্ডিয়ান নাম স্পষ্ট উচ্চারণে বলা কি সোজা কথা?
বলতে বলতে মণীশের চোখেমুখে এক স্বর্গীয় আভা। মায়া এখন ডেল্টার এয়ার হোস্টেস। ইটজ আ সারপ্রাইজ দ্যাট আওয়ার পাথ ডিড নট ক্রস এনি আর্লিয়ার। আমাকে তো রেগুলার ট্যুরে যেতে হয়। খুব অবাক হয়েছিলাম। তুমি এখানে? যদিও প্রশ্নটা বোকামো, কারণ দেখতেই পাচ্ছিলাম এয়ার হোস্টেসের পোশাকে। কোনওমতে নিজেকে সামলে বললাম, তোমার ইংরাজি একদম পরিষ্কার ঝরঝরে মায়া!
–অনেকগুলো বছর হয়ে গেছে যে।
–তুমি কিন্তু একটুও বদলাওনি। লিফটে দেখা সেই মেয়েটাই একদম!
আমার এই কথায় বেশ খুশি হল। বলল, অনেক কথা আছে। কিছু কাজ দেখে নিয়ে আবার আসছি। বলে চলে গেল, কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই ফিরে এল। হাতে ছোট ট্রেতে একটা চকোলেটের বার, নিচে একটা চিরকুট। মুচকি হেসে চলে যেতে, খুলে পড়লাম। May I ask you a question? Why did you leave that apartment building without ever saying goodbye to me? লেখার শেষে একটা অ্যাংরি ফেস আঁকা।
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমার মনে তখন ঝড় উঠেছে। সেই মেয়েটি, শুধু যে একইরকম রয়েছে তাই নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও সুন্দর হয়েছে। সাহসীও। একটু বাদেই আবার একটা চিরকুট, Today don’t go away without saying goodbye. এইবারে একটা হাসি হাসি মুখ।
প্লেন থেকে নেবে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি স্প্যানিশ বলতে পারো?
আমি পারি না শুনে মুখে একরাশ দুঃখের মেঘ ছেয়ে গেল। আই লেফট আ বুক অন ইয়োর ডোরম্যাট ফর লার্নিং স্প্যানিশ। ইউ ডিড নট ইভন বদার? ওর মুখটা এত করুণ হয়ে গেল, ভাবতে পারবি না। আমি তো কখনও বুঝতেও পারিনি ওর নিস্তব্ধতার আড়ালে এতটা ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল। আমি খপ করে হাত ধরে বললাম, সরি মায়া। আমি তো পাইনি এমন কোনও বই, নাহলে নিশ্চয় এতদিনে শিখে নিতাম। এই কথায় ও একটু আশ্বস্ত হল। বলল, কফি? আমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে মিটিং ছিল। কিন্তু তখন মায়াকে ছেড়ে ক্লায়েন্টের জন্য দৌড়ানোর কোনও মানে হয় না। কী হয়েছিল সেদিন তার বর্ণনা না দিয়ে কথা শেষ করতে চাইল মণীশ। সেই শুরু।
–তারপর থেকে রেগুলার দেখা করছিস?
–আবার দেখা হয়েছে, কী হয়েছে না হয়েছে তার বৃত্তান্ত দিয়ে লাভ নেই। মোদ্দা কথা বিজু জানতে পেরেছে, আমাদের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে।
এত বড় একটা কথা কি অনায়াসে বলে দিল মণীশ! বুদ্ধ জানতে চাইল, এখনও একসঙ্গে আছিস তো, নাকি?
–এখান থেকে গিয়ে আমি আর বাড়িতে উঠছি না রে। তিয়াসটাকে খুব মিস করব, কিন্তু আর কোনও অপশন নেই।
–বলছিস কি তুই? চমকে উঠল হীরক।
–কোথায় উঠবি?
–আপাতত মায়ার সঙ্গে। বোঝা গেল জল অনেক দূর গড়িয়েছে। বুদ্ধ তবু জেরা চালিয়ে গেল।
–এটা কি বিজুর সঙ্গে ঘোড়দৌড়ের জীবন চাস না বলে, নাকি মায়ার প্রেমে পাগল হয়ে?
মণীশ থমকাল এক মুহূর্তের জন্য। জীবনটা তো কোনও অঙ্ক নয় রে বুদ্ধ। অমন মেপেজুকে চলতেও চাই না আর। দমবন্ধ লাগছিল আমার। মণীশের মুখের হাসিটা বেপরোয়া। আমরা ভুলে যাই যে মানুষের জীবন একটাই। অনেকরকমভাবে জীবনযাপনে আমাদের জন্মগত অধিকার।
মণীশের মুখ থেকে স্লোগানের মত বেরিয়ে এল কথাটা। অথবা এমন একটা স্লোগানের আড়ালে আশ্রয় নিল মণীশ।
–মায়া কি একা থাকে, এতদিন বিয়ে করেনি?
বিয়ে করেছিল, কিন্তু ওর বর মেক্সিকোতে ডিপোর্টেড। অনেক বছর কেস চলছে।
–তাহলে তো তোর কেসটা খুব রিস্কি হচ্ছে মণীশ।
মুখে কিছু না বললেও মণীশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটু দুশ্চিন্তাই হচ্ছিল বুদ্ধর। আড়ালে বলেছিল হীরককে। বড্ড ভুল স্টেপ নিচ্ছে। নতুন দেশে এসে বেশ দাঁড় করিয়ে নিয়েছিল নিজেকে। এখন ও যেই পজিশনে আছে, প্রোফেশনাল দৃষ্টিকোণ থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কত উপরে যেতে পারে সেটা নির্ধারিত হওয়ার সময়। এইসময়ে নিজেকে এমন ধরনের সম্পর্কে জড়িয়ে ফেলে সেই সম্ভাবনাকে নিশ্চিত খাটো করে দিল।
হীরকের মনে হল বুদ্ধ আসলে মণীশের মত কিংবা আরও বেশি উচ্চাকাঙ্খী। নাহলে প্রথমে ক্যারিয়ারের কথাই মাথায় আসবে কেন? হীরকের অবাক লাগছিল অন্য কারণে। মণীশ তিয়াসকে মিস করবে। বিজুকে করবে না? বিজু আর মণীশের সম্পর্ক এক যুগের বেশি, বিয়ে করেছে তারও নয় বছর হল। তার কোন মূল্য নেই? মায়া না কে যার সঙ্গে দশ বছর বাদে হয়তো দেখা হয়েছে, তার জন্য ছেড়ে দিচ্ছে বিজুকে অতীতের আবর্জনার মত? তাছাড়া মায়ার কথা বলার আগে, বিজুর সম্বন্ধে এত কথা বলার দরকারটাই বা কী ছিল? সেটা কি নিজের ব্যবহারের বাহানা খাড়া করার জন্য? ওর উপর খুব রাগ হচ্ছিল হীরকের। মণীশ যদি তার বন্ধু হয়, বিজুও তাই। বরং বেশি। ডেট্রয়েটে এসে নাবার পর থেকে বিজু তো কম কিছু করেনি হীরকের জন্য। সবসময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, অথচ নিজের যখন দরকার একবারও জানায়নি তাকে। বিজুকে জানে হীরক, বড্ড আত্মাভিমান মেয়েটার। নিজে মুখ ফুটে কিছু বলবে না। এই মুহূর্তে বিজুর পাশে দাঁড়ানোটা দরকার, ভাবল রাত্রেই ফোন করবে বিজুকে। দরকার হলে ও আর মঞ্জিনি চলে যাবে বিজুর ওখানে।
এরপর এবারের আড্ডাটা আর জমল না, কেমন দায়সারাভাবে সারা হল। কারণ মৌমি আর মঞ্জিনি রাত্রিবেলায় বুদ্ধ আর হীরকের কাছে জেনে গেল। মণীশের সঙ্গে ওরাও তেমন স্বাভাবিকভাবে ব্যাবহার করতে পারল না আর।
৩
ফোন হাতে বিজু ভাবছিল। ভাবনারা যখন দীর্ঘস্থায়ী হয়, তার ছাপ পড়ে চোখে, মুখে, কপালে। ভাবনার একটা শরীরী ভাষা আছে। কিন্তু শব্দতরঙ্গে ধরা পড়ে না। তারা পৌঁছায় না হুস্টন থেকে মিশিগান।
–কি রে বিজু, আছিস তো? অন্য দিক থেকে হীরকের অস্থির গলা রিসিভারে আছড়ে পড়ল। আজকাল এমন হয়েছে। কথা বলতে বলতে মেয়েটা কখন যে ফোন রেখে দেবে তার ঠিক নেই। বরাবরের গুছানো মেয়ে, এখন কেমন ইরাটিক হয়ে গেছে। স্পন্টেনিয়েটি নেই আর। তাতে চিন্তা আরও বেড়ে যায়। হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবছি তো, হীরকের চিন্তা লাঘব করার তাগিদ বিজুর গলায়, আমি ল ইয়ারের সঙ্গে কথাও বলছি। দেখি কি হয়। সুজিতও সেটাই বলল।
সুজিত বিজুর মাসতুতো ভাই। গত বছর এদেশে এসেছে। অ্যারিজোনা স্টেটে মাস্টার্স করছে। সুজিত এসেছিল না কি?
–না, না এখন কেন আসবে? সেমিস্টার চলছে না?
সত্যিই তো কেউ মারা যায়নি। কোনও কঠিন অসুখ হয়নি। বিজুর কথায় হীরকের মনে হল, সেই কি একটু বেশি বেশি ভাবছে? কিংবা বিজু তার কাছ থেকেও গোপন করতে চাইছে যেটা আরও বেশি চিন্তার।
তাছাড়া সুজিত এই দেশে নতুন, বয়েসেও ছোট। এসব ব্যাপারে দিদিকে কতটাই বা হেল্প করতে পারবে। হীরক বিজুকে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে মনে করে সবসময়। দায়িত্ব তাই কিছু কমেনি। সেই জায়গা থেকেই বলল, আমার এক কলিগের সঙ্গে কথা বলেছি। শি ইজ আ ডিভোর্সি উইথ টু কিডস টূ। দেশি নয়। সো হি নোজ।
এটা সত্যি দেশিদের মধ্যে এখনও ডিভোর্সটা অতটা ক্যাচ আপ করেনি। নতুন দেশে এসেছে, নতুন জীবন গড়ার তাগিদ। কীভাবে ভিসার রং বদলাবে, ক্রেডিট রেটিং কীভাবে ভালো হবে, কোথায় গাড়ির ভালো ডিল পাওয়া যাচ্ছে এইসব হাতে হাত ধরে সামলানোর যূথবদ্ধতায় ঝগড়া করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। বিয়ে একেবারে ভেঙে চুরচুরে না হলে কেউ ওই পথ মাড়ায় না। মণীশ আর বিজুর ব্যাপারটা আলাদা। ওরা সিটিজেন।
–তুই যদি চাস আমি তোর সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে পারি। নাথিং বেটার দ্যান ফার্স্ট হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স। কথাটা নিজের কানেই কেমন অদ্ভুত ঠেকল হীরকের। এ যেন জব ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রিপারেশান নেওয়া। কিন্তু বিজু তেমন উৎসাহ দেখাল না। হয় ও নিজেই করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাসী। অথবা মণীশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবাইকেই দূরে ঠেলতে চাইছে।
বিজু সবার বিপদে সাহস জুগিয়েছে সারা জীবন। সব সময়। কিছু হলেই পাশে বিজু। এদেশে হীরক পা রেখেছিল, সেই প্রথম দিনের থেকে কতভাবে যে হেল্প করেছে। কিন্তু কোনও ব্যাপারে পিছপা না হওয়া সেই মেয়েটা কেমন গুটিয়ে ফেলেছে নিজেকে! সরিয়ে নিচ্ছে বন্ধুদের কাছ থেকে। নিজের থেকে সাহায্য চাইতেও আসেনি। এই প্রশ্নটা যখন সরাসরি করেছিল, বিজুর বক্তব্য ছিল কেউ নিজে থেকে এগিয়ে এলে ভালো, না হলে কারও কাছে গিয়ে নিজের দুঃখের প্যান্ডোরাজ বক্স খুলতে পারব না আমি। খোলেওনি। এমন কি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে না চাইলে কিছু বলতেও চায়নি। বরং কিচ্ছু হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে কথা ঘুরাচ্ছিল। নেহাত মণীশের মুখে ওরা আভাস পেয়েছিল বলে। কথাটা জেনে অবধি ছটফট করছিল হীরক। ডিউন থেকে ফিরেই ফোনে ধরল। অবশ্য মণীশের সঙ্গে কী কথা হয়েছে সেসব জানায়নি। ফোনে বিজু ভাব করেছিল যেন কিছুই হয়নি। বরং উল্টে গল্প— অফিসের ট্যুরে গেছে রে, ফিরতে কদিন দেরি হবে। হীরক ভেবেছে, হবেও বা। মুখে বললেও সত্যিই কি এতদিনের সম্পর্ক এভাবে ভেঙে দিতে পারে কেউ? মণীশের মনে যাই থাকুক, ওইভাবে নিজের বউবাচ্চাকে হুট করে ছেড়ে যাওয়া যায় না। তবু কদিন বাদে আবার ফোন করল, মণীশ তখনও নেই। সেদিন সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, একবার ঠিকঠিক বল তো। মণীশ আর তুই কি এক বাড়িতে আছিস না নেই? শুনেই বিজু পট করে ফোন কেটে দিল। এই বিজু হীরকের চেনা নয়।
কী করা উচিত সেটাই ভাবছিল। ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও কথা বলছে না। শুনে মঞ্জিনি বলল, যাও তুমি। একবার সামনাসামনি কথা বলে এসো গিয়ে। ফোনে এসব কথা হয় না। আমি আসব সঙ্গে? জিনির এই উৎকণ্ঠাটা ভালো লাগল হীরকের। তারা নিজেরাও কেমন দূরে দূরে চলে যাচ্ছে মনে হয়। এরকম সঙ্কটের মুহূর্ত মানুষকে কাছাকাছি আনে।
শেষ অবধি একা যাওয়াই ঠিক হল। জিনির সামনে সব কথা নাও ভাঙতে পারে। সেই উইকেন্ডেই পৌঁছে গেল হিউস্টন। এয়ারপোর্ট থেকে রেন্টাল গাড়ি নিয়ে পাসাদেনা, মণীশ আর বিজুর বাড়ি। পাসাদেনা এমন কিছু বড় শহর নয়, লাখখানেক লোকের বাস। হিউস্টনের শহরসীমার একটু বাইরে। বাড়িগুলোর চেহারা মিশিগানের থেকে কিছুটা আলাদা। গরমও বেশ, তাদের অ্যান আরবারে তো এখন ঠান্ডা পড়ে গেছে।
বেল দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পট করে দরজা খুলল। মুখে হাসির ছবি ফুটিয়ে বিজু বলেছিল, আরে, আরে কি সৌভাগ্য! কতদিন পরে এলি হীরু। একা এসেছিস?
বিজু মণীশের সঙ্গে মানানসই লম্বা। চৌকো কাঁধ, কাটা কাটা চোখমুখে বুদ্ধির দীপ্তি তথাকথিত সৌন্দর্যের খামতিকে অনায়াসে ঢেকে দেয়। সব সময়ে টিপটপ, গোছানো। একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, সবুজ টি শার্ট আর পায়ে রানিং শু। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হাতের ছোট টাওয়েলে মুখ মুছতে ব্যাস্ত বিজুকে আলগা চোখে মাপছিল হীরক। ডিওডোরান্টের ঘেরাটোপ পেরিয়ে নাকে ধাক্কা দিচ্ছিল ঘাম ঝরানোর ঘ্রাণ। বুঝতে পেরে বিজুর হাসিটা এবার একটু অন্তরঙ্গ হল, অ্যাম আই স্মেলিং? আসলে এক্ষুনি প্রায় ছয় মাইল দৌড়ালাম ট্রেডমিলে।
–ম্যারাথনে নাববি নাকি?
–হাফ ম্যারাথন। ডিসেম্বারে।
জীবন কি এত বেশী স্বাভাবিক? ট্রেন রেলের এক পাটরি থেকে অন্য পাটরিতে সুইচ করে যাওয়ার মত ছোট্ট একটা ঝাঁকুনি, ব্যস ডেস্টিনেশান চেঞ্জড? ফিসপ্লেট সরিয়ে রেলের জোড় খুলে দেওয়ার পরেও? বিজুকে স্বাভাবিক জীবনের স্রোতে বইতে দেখে হীরকের খুশি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কেন জানি তার মনে হল এ সব বাইরের মোড়ক, আসল কথা বুঝতে গেলে একটু ভিতরে পৌঁছাতে হবে। বাইরেও কি সব ঠিক আছে? বিজু কি একটু শুকিয়ে গেছে? একটু অবিন্যস্ত? এত বছরের সঙ্গী ছেড়ে চলে গেলে কত গভীরে তার অনুরণন পৌঁছায়! অন্তত বিজু সেটা বুঝতে দিচ্ছিল না। ভাবটা এমন যেন সে বেড়াতে এসেছে আর বিজু তাকে আপ্যায়ন করছে।
–দাঁড়া আমি চট করে একটু জামাটা বদলে আসি, বড্ড ঘেমেছি।
বিজু যেতে নীল রঙের নরম সোফা থেকে উঠে হীরক ঘরের চারকোনায় চোখ বুলাল। আগে একবার মণীশদের এই বাড়িটায় এসেছে। দ্রুত চোখে জরিপ করে তেমন কিছু পরিবর্তন দেখতে পেল না। দুটো বড় সোফা। গাছের গুঁড়ির উপর মোটা কাঁচ পাতা কফি টেবলের নীচে ভারী কাশ্মিরি কার্পেট। মনে পড়ল দেওয়ালজোড়া একটা বড় ছবি ছিল মণীশ আর বিজুর, কোলে সদ্যজাত তিয়াস। একদম দরজা থেকে ঢুকলেই চোখে পড়ার মত। সেটা নেই। যদিও ছবি সরানোর কোনও দাগ নেই। এদেশে ধুলো কম। ছবির ফ্রেম সরালে ফাঁকা দেওয়ালে সীমানা টানা শূন্যতা আলাদা করে চোখে ধাক্কা দেয় না। শুধু দেওয়ালে একটা পেরেক উজিয়ে আছে নতুন ছবির অপেক্ষায়।
বিজু ফিরে এল। উপরে এখন একটা বাটিক প্রিন্টের দেশি কুর্তি, পরনের প্যান্ট একই। পায়ে ঘরে পরার স্যান্ডাল। হালকা গন্ধ ফ্লোরালকোন পারফিউমের।
–ড্রাইভ করে এলি, চা খাবি না কফি?
–দাঁড়া দাঁড়া অত ব্যস্ত হবার কিছু নেই। আমি একটু আগেই এয়ারপোর্টে কফি খেলাম। তিয়াস কোথায়?
–ও নাচের ক্লাসে গেছে। ওড়িশি শিখছে। নিয়ে আসব একটু বাদেই।
হীরক যদি একটা শিকর উপড়ানো গাছের খোঁজে এসে থাকে, এ তা নয়। মণীশের সঙ্গে ওরা বসেছিল মাস দুয়েক আগে। ওর কথামত তারপর ওর আর এই বাড়িতে না ফেরার কথা। দু মাস কি যথেষ্ট সময় ক্ষত বুজে যাওয়ার জন্য? কিংবা বিজু আর মণীশের ভাঙন হয়তো তার অনেক আগে থেকেই। তাই একপাড় যেমন ভেঙেছে, অন্যপাড় গড়েও উঠেছে। হঠাত মনে হল মঞ্জিনি সঙ্গে থাকলে বোধহয় ভালো হত। কীভাবে কথাটা তুলবে বুঝতেই পারছে না।
কথা খুঁজে পেতে পকেট হাতড়ে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করল। তামাকের গন্ধে বাতাস ভারী। সিগারেটের ধোঁয়া রোদের তেরচা আলোর রেখায় ধূলিকণা দেখাতে দেখাতে হাওয়ায় ভাসল।
একটু উশখুশ করে বিজু বলল, দে তো একটা আমায়।
–তুই ছেড়ে দিয়েছিলি না?
মণীশের কাছ থেকে নিয়ে কাউন্টার খেতাম মাঝে মাঝে। বিজুর গলায় মণীশের নামটা খুব সহজভাবেই বেরোল। কোন আক্ষেপ কিংবা নালিশের গন্ধ না মেখে।
হীরক নিজের সিগারেটটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিজু হাত বাড়িয়ে আবার ফিরিয়ে নিল। না, গোটাই দে। অর্ধেক ভালো লাগে না।
বিজুর কথাটা বেশ লোডেড। হীরক যে কথা তুলতে পারছিল না, হঠাত যেন সেই সুযোগ পেয়ে গেল। মণীশ কি একদমই চলে গেছে বিজু?
–গেলে তো একদমই যাওয়া ভালো। তাই না? দুই নৌকায় পা দিয়ে জীবন চলে না রে হীরু। সেটাই দেখলাম। একটা চাপা শ্বাস বুকের মধ্যে হারিয়ে যেতে যেতে শব্দ ছড়াল।
হীরক যদি ভেবে থাকে এরপর বিজু গড়গড় করে অনেক কথা বলতে থাকবে সেরকম কিছু হল না। এটাও একটু পরিবর্তন। এমনিতে বিজুর কথা ঝরে অঝোরধারায়। নিজেই অন্যের কথার পাদপূরণ করে দেয়। কিন্তু এখন কথা বলছে গ্রীষ্মের বৃষ্টির কৃপণতায়। সিগারেটটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে দরজা খুলে ডেকে চলে গেল। হীরক দোনামনা করছিল। ও কি পিছন পিছন যাবে? বিজুর কথা শুনতে এসেছে, সাহায্য করতে চায়। ও যদি নিজের চারপাশে একটা দেওয়াল তুলে রাখে, সেটা হীরককেই টপকাতে হবে। ডেক থেকে বাইরের বাগানের মরে যাওয়া ঘাসের উপর নিজের সিগারেটের বাটটা ছুঁড়ে দিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়াল হীরক।
শীত পড়ছে। গাছের সব পাতা ঝড়ে গেছে প্রায়। সদ্য ঝরা পাতারা হাওয়ায় এদিক ওদিক উড়ছে। পাসাডেনায় বরফ পড়ে না, তবে হিম পড়ে। দিনে গরম থাকলেও রাতে ঠান্ডা হয়। বাগানের পরিষ্কার না হওয়া পুরনো ঝরা পাতাগুলো আধভেজা হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। তোর বাগানটা পরিষ্কার করে দেব বিজু?
–এই কাজটা মণীশ করত। ফিকে হাসল বিজু। আমাকে শিখে নিতে হবে। গরমে ঘাস ছাঁটা, শীতে শুকনো পাতা সরানো। তাও তো আমাদের এখানে তোদের মত বরফ পড়ে না। তাহলে যে কীভাবে সামলাতাম।
বিজুর কথা শুনে মনে হল কী কী কাজ জীবনের অন্য ভাগ থেকে ওর খাতে এসে পড়েছে তার একটা হিসাব কষছে যেন। বললও সেটা। মণীশ যে আমাদের জীবনে ছিল, এইসব কাজগুলো মনে করিয়ে দেয় হীরু। কিন্তু ঘাসপাতা সরাবার জন্য তো কেউ হাজব্যান্ড খুঁজে নেয় না, তাই না?
–মণীশ নিশ্চয় শুধু তোর বাড়ির ঘাসপাতা সরাবার কাজটাই করত না।
–আসলে তার চাইতেও কম করত। ইদানীং। সব সময়েই অফিসের ট্যুরে। গত কয়েক মাস বেড়ে গিয়েছিল। প্রথমে বুঝতে পারিনি যে অফিসের ট্যুরের নাম করে ওই মেয়েটার সঙ্গে কৃষ্ণলীলা করছে। এই কথাটা বলার সময়ে বিজুর ঠোঁটের কোনে কষ্টের থেকেও বেশি জমে উঠেছিল বিদ্রূপ। একটা উইকেন্ডে আমার নেবারের বাড়িতে গিয়েছি। ওরা বলল, আসো বিজু ডেকে বসে আড্ডা দিই। বিয়ার নিয়ে বসেছি। ভাবলাম ওকেও ডেকে নিই। ওই বাড়ি থেকে আমার বাড়িতে ফোন করেছি। আমাদের তো পার্টি লাইন। শুনি মণীশ একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে। আমি কিছু বলার আগেই এমন কথা শুনলাম যে থমকে গেলাম রে। একটু লজ্জার হাসি হাসল বিজু। হয়তো এভাবে অন্যের কথা শোনা ঠিক নয়, কিন্তু যদি তুই নিজের বরকে ফোনে কারুর সঙ্গে প্রেম করতে শুনিস তুই কি ছাড়বি? আমি জলজ্যান্ত বর্তমান, আর ও আরেকজনের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছে? নিজেকে এত ছোট মনে হল, রিজেক্টেড। মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। তারপরে মনে হল আমার লজ্জার কী আছে? লজ্জার কিছু থাকলে সেটা মণীশের। কিন্তু দাঁড়িয়ে শুনতেও পারছিলাম না। আমি বিয়ার ছেড়ে বাড়িতে দৌড়ালাম। বুঝতেই পারছিস কী চলছে তখন আমার মনে। অনেকটা বলে দম নিয়ে হাত বাড়াল বিজু। দে তো আর একটা ধোঁয়া খাই। লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে দেওয়ার সময় হীরক দেখল বিজুর হাতের নখপালিশ আবরা খাবরা হয়ে আছে। আনলাইক বিজু। ভাঙনের ছোট ছোট চিহ্ন। বালির উপর পায়ের ছাপের মত এগুলো খুব শিগগির মিলিয়ে যাবে।
বিজু ঠোঁট সরু করে আকাশে ধোঁয়া ছাড়ল। মণীশ কোনওদিনই ধোয়া তুলসীপাতা নয়। তোরাও জানিস। আমার সঙ্গে ঝোলার আগে অনেক ঘাটের জল খেয়েছে। হয়তো পরেও। কখনও কিছু শুনলেও না-শোনা করে থেকেছি। কিন্তু এবার জল বড্ড বেশি গড়িয়ে গেছে রে। আমি বাড়িতে ঢুকেই সরাসরি কনফ্রন্ট করলাম।
–মণীশ কী বলল?
–হোয়াট অডাসিটি! হি ডিফেন্ডেড হিমসেলফ সেয়িং দ্যাট আই সাফোকেট হিম, হি নিডেড আ ব্রিদিং স্পেস! ভাব একবার, আমার সঙ্গে নাকি ওর দম বন্ধ হয়ে যায়, ও নাকি একটা ইটে চাপা ঘাসের জীবন কাটাচ্ছে। এই প্রথম বিজুর গলায় আর্দ্রতা। তুই তো দেখেছিস জেইউতে পড়ার সময় আমি কীভাবে ওকে হাত ধরে টেনে তুলেছি। আমি পিছনে না লেগে থাকলে ওর এই দেশে আসা হত? এমনকি এখানে এসেও আজ এটা করবে তো কাল ওটা। হি ইজ অলওয়েজ সো ডিসট্র্যাক্টেড! আরেক বন্ধুর সঙ্গে একটা স্টার্ট আপ খুলতে চলেছিল, সিলিকন ভ্যালিতে নাকি হুলুস্থূলু ফেলে দেবে। আমি যদি সেই সময় ওকে না আটকাতাম, তাহলে আজ চাকরিতে এমন উন্নতি হত? কোনও গ্র্যাটিচিউড আছে তার জন্য? থরথর করে কাঁপছিল বিজুর ঠোঁট, টপ টপ করে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল গালে। তিলতিল করে এই সংসারটা গড়ে তুলেছি। নিজের আগে ওর কথা ভেবেছি। এখন বুঝেছি সব ভুল করেছি। হি ইজ নাথিং বাট আ বাস্টার্ড লুকিং ফর আ গুড ফাক! চোখের জল বাষ্প হয়ে উড়ে গেল হিসহিস শব্দে।
ও কী বলল জানিস? ডিভোর্সের দরকার নেই, আলাদা থাকবে। দ্যাট ইজ এনাফ!
–তুই তাতে রাজী হয়ে গেলি?
–হোয়াই শুড আই? ওর ওই মেক্সিকান মেয়েটার হাজব্যান্ড মেক্সিকোতে, ডিপোর্ট হয়ে গেছে। সো ইট স্যুটস হার ফাইন। এই জন্যেই তো তোর বন্ধু শুরুতে বলেছিল, এই বাড়িতেই দুজনে আমরা আলাদা থাকতে পারি। ভাব একবার! আমার সঙ্গে থাকবে অ্যান্ড দেন হি উইল গো অ্যান্ড স্লিপ উইথ দ্যাট স্লাট ফ্রম টাইম টু টাইম। হু অ্যাম আই? হিজ ডোরম্যাট দ্যাট ক্যান বি ইউজড অল দ্য টাইম? বিজুর গলা চড়ছিল, শব্দগুলো তাদের আলাদা আলাদা অস্তিত্ব হারিয়ে মিলেমিশে হীরকের বোধগম্যের বাইরে চলে গেল। কিন্তু শব্দের পিছনের দুঃখ, প্রত্যাখ্যানের হাহাকার বুঝতে পারা যায় স্পষ্ট। বিজুর মুখ একদম ভেঙেচুরে যাচ্ছিল এবার। সেই ফাটলে বইছিল জলের ধারা। হীরু বিজুকে কখনও এমন দেখেনি। চোখের কাজল গালে লেপটে গেছে, কণ্ঠনালী ঘনঘন ওঠানামা করছে রুদ্ধ কান্নাকে বেরোবার পথ দেওয়ার জন্য। হীরু বুঝতে পারল বিজুর এই হাহাকার মণীশের বিরহে নয়, কাঁদছে নিজের জন্য। এক পা এগিয়ে হীরু দুহাতের মধ্যে বিজুর মুখটা গ্রহণ করল। খুব ভালোবেসে মুছিয়ে দিল ওর চোখের জল। কোনও বাচ্চার কান্না ভোলানোর সময় যেমন গলা দিয়ে ঘুঘুর ঘুঘুরঘুর ডাকের মত অস্ফুট ভালোবাসার ধ্বনি বের হয়, নিজের অজান্তে হীরুর গলা দিয়ে অমনি আওয়াজই বের হচ্ছিল। ও কি বলছিল নিজেই জানত না। কাঁদতে কাঁদতে হিক্কা তোলা বিজুকে শান্ত করার জন্য ওর আন্তরিক চেষ্টার মধ্যে কোন খাদ ছিল না। বিদেশে থাকলে একে অপরের মধ্যে ঝগড়া হলে কোথাও গিয়ে একটা কাঁদার জায়গাও থাকে না মানুষের। মানুষ তখন সত্যিই নিঃসঙ্গ, একা। শরীর খারাপ হলে, অসুখ করলে তবু কমিউনিটির অনেককে পাশে পাওয়া যায়। কিন্তু মনের অসুখে কাকে পাশে পাবে? মনের দরজা খুলবে কার কাছে? তাই বিজুকে থামানোর জন্য চেষ্টাটা কান্নার সব দোরকপাট খুলে দিয়েছে। এক চোখ কৃতজ্ঞতা নিয়ে হীরুর দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ শক্ত থাকার অভিনয় করা মেয়েটা শরীর ঝাঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে।
কান্নার মধ্যে একটা সারল্য থাকে। নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার সৌন্দর্য। হীরু অবাক চোখে বিজুর মুখের দিকে তাকিয়েছিল। এ যেন অচেনা বিজু। কোন আবডাল নেই। হীরকের এই জ্যোৎস্না আলো চাহনিতে একটা অপরিসীম ভালোবাসা মিশে ছিল যেটা খুব কাছের কোনও লোকের জন্যেই ফিল করা যায়। ওরা অনেকদিনের প্রাণের বন্ধু, কিন্তু বন্ধুর বাইরে আর কিছু ছিল না কখনও। কিন্তু আজকের এই মুহূর্তের জঠরে একটা ভালোবাসার নির্মাণ হল যেটা অনুভব করে বিজুর কান্না থমকে গেল। বিজুর চোখ সেই অপরিসীম ভালোবাসাকে নিজের কষ্টের ভেজা জলপটি দিয়ে আদর করতে চাইল। বন্ধুর বাড়ানো হাতে একটু আদৃত বোধ করবার চরম আকাঙ্খায় যা কখনও করবে বলে ভাবেনি, বিজু হীরকের দুই ঠোঁটের মধ্যে নিজেকে সঁপে দিয়ে সেটাই করল। তখনও কাঁদছিল বিজু। হীরকের মুখের ভিতরে আশ্রয় খুঁজছিল ওর ঠোঁট। ওর কান্নার স্পন্দন হীরক সারা শরীর দিয়ে অনুভব করতে পারছিল। কিন্তু অন্যায়বোধের তাড়নায় একটা প্রতিরোধ ভিতর থেকে ছটফট করে উঠে ওর উন্মুখ দু হাত বিজুর পিঠে বেড় দিতে গিয়েও ফিরে এল।
পরমুহূর্তেই নিজেকে সরিয়ে নিল বিজু। আই অ্যাম সো সরি হিরু। আই শুড নট হ্যাভ ডান দিজ! উপযুক্ত শব্দ খুঁজছিল বিজু। আসলে আমাকে অনেকদিন কেউ ভালোবাসেনি রে। তুই এমন করে আমার দিকে তাকালি, সেই সহানুভূতিটাকেই ভালোবাসা ভেবে কেমন ভেসে গেলাম। ছি ছি কী করলাম আমি এটা! এমনভাবে বলল যেন দুধ মনে করে পিটুলিগোলা পান করেছে। একটা লজ্জা আর প্রত্যাখানের কালিমা বিজুর মুখে।
–কেন বন্ধু কি বন্ধুকে ভালোবাসতে পারে না? এতগুলো বছর যে আমরা হাতে হাত ধরে বন্ধুত্বের দায়িত্ব পালন করেছি, তাতে একটা চুমুর জয়টিকা পড়লেই কেন গেল গেল রব তুলতে হবে রে? একটা পাঁচিল ডিঙানোর গোঁ নিয়ে বিজুর লজ্জা ভাঙতে চাইল হীরক। দু হাতে জড়িয়ে ধরল বিজুকে বন্ধুত্বের পূর্ণতায়। হীরকের দিকে মেলে ধরা বিজুর চোখের পাতায় আটকে থাকা জলের ফোঁটার মধ্যে দিয়ে সাতরঙা আলো ছড়াল। আয় একটা সিগারেট খাই। শেয়ার করে। খাবি?
(চলবে)
আলাপ থেকে বিস্তারে গড়াচ্ছে গল্প। সুখপাঠ্য লেখা 🙂