রুখসানা কাজল
লেখক গল্পকার, গদ্যকার। ঢাকা তেজগাঁও মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান
গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ৮৮৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ধর্ষণের পর মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।
সংগৃহীত এ জরিপ বুঝিয়ে দিচ্ছে ধর্ষণের মত একটি স্বীকৃত অপরাধে গলা পর্যন্ত ডুবে আছে বাংলাদেশ। ভয়াবহ হয়ে উঠেছে পলিবিধৌত বদ্বীপের নারীজীবন। কোভিড-১৯কে শিশ্ন দেখিয়ে বেলাগাম ধর্ষণযজ্ঞে মেতে উঠেছে এক শ্রেণির পুরুষ পশুর দল।
প্রতিদিন ফেসবুক, ডেইলি পোর্টাল, দৈনিক পত্রিকার পাতা খুললেই একাধিক ধর্ষণের খবর দেখতে পাচ্ছে পাঠক। গ্রাম বা শহর, মাদ্রাসা মক্তব গির্জা মন্দির, ইশকুল কলেজ, ইউনিভার্সিটি, হোটেল, অফিস, পাহাড় ক্ষেতজমি, নিজের বাড়ি, রাস্তা গাড়ি এমনকি বাপ ভাই স্বামীর সঙ্গে থেকেও নারীদের নিরাপত্তা নেই। শিশু হতে প্রৌঢ়া, বোরখাধারী বা সাধারণ পোশাকের ধনী গরীব যে কোনও স্তরের নারী ও কিশোর বালকরা ধর্ষণ নামের এই সামাজিক ব্যাধির ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ছোঁয়াচে রোগের মত ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিব্রত বিভ্রান্ত করে তুলছে রাষ্ট্র, সমাজ, ব্যক্তিমানুষকে। করোনাকালীন এ দুঃসময়ে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া শারীরিক দূরত্বের অনুশাসনকে থোড়াই কেয়ার করে থেমে নেই ধর্ষকদের লালসা।
খুব সামান্য করে ধর্ষণ কী বা ধর্ষণ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে তা বুঝতে চেষ্টা করি। ধর্ষণ হচ্ছে, “বেআইনিভাবে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর বা শক্তি প্রয়োগ করে অথবা ভয় ভীতি লোভ দেখিয়ে তার যৌন অঙ্গসমূহকে ব্যবহার করা।”
তাহলে এটা তো পরিস্কার হয়ে গেল যে, ধর্ষণ একপ্রকার জবরদস্তি বা আগ্রাসন।
সেই সঙ্গে এটিও জানা গেল যে, ধর্ষণ একটি অপরাধ। সেক্ষেত্রে কোনও নারী বা পুরুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার শরীরের প্রাইভেট অঙ্গগুলো কোনও ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি ভোগ করলে অবশ্যই তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে অপরাধী হিসেবে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
১৯৭৭ সালে “আমেরিকান জার্নাল অফ সাইক্রিয়াট্রি”তে নিকোলাস গ্রোথ নামের একজন গবেষক ধর্ষণ এবং ধর্ষকের প্রকৃতি, আচরণ উদ্দেশ্য নিয়ে নানা আলোচনা করেন। ধর্ষণ ধর্ষকের একটি হিংস্র আচরণ। বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহিত কামাল বলেন, ধর্ষণ হচ্ছে একটি অতর্কিত হামলার মত। যা কিনা মানুষের শরীর কেবল নয়, মনকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে।
গবেষকদের মতে, “Rape is a type of sexual assault usually involving sexual intercourse, which is initiated by one or more persons against another person without that person’s consent.”
অপরাধবিজ্ঞানীদের ভাষায়, ধর্ষণ একটি প্রাচীন সামাজিক অপরাধ। সাধারণত বিজয়ী গোষ্ঠীর পুরুষরা পরাজিত গোষ্ঠীকে অপমান করার উদ্দেশ্যে তাদের নারীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ধর্ষণ করে। অতীতকাল থেকে, যুদ্ধবিগ্রহে অন্যান্য অস্ত্রের মত ধর্ষণকেও যুদ্ধবাজরা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই ধর্ষণ অস্ত্রের ব্যপক এবং যথেচ্ছ ব্যবহার ইতিহাসের পাতায় দেগে বসে আছে।
কিন্তু কেন এই ধর্ষক মানসিকতা? এটা কি বিকৃতি নাকি বীরত্ব? ধর্মগ্রন্থ থেকে জন্মদাতা পিতামাতা এবং কর্মস্থলের মেধাবী, কলমপেশা বা ইট সিমেন্ট বালু বওয়া কিম্বা বাজারের মেছুনি নারীদেরও পুরুষের অলঙ্কার, ইজ্জত, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখা হয়। তাই যে কোনও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পিতার কন্যাকে, ভাইয়ের বোনকে, প্রেমিকের প্রেমিকাকে, স্বামীর স্ত্রীকে, সন্তানের মাকে, জাতির নারীশক্তিকে ধর্ষণ করা হয়।
সামাজিক স্থিতিশীল পরিবেশে ঘরেবাইরে, শিক্ষাক্ষেত্রে, রাস্তাঘাটে, বাসেট্রেনে, অফিসে যারা ধর্ষণ ও নির্যাতন করে তারা বিকৃত মানসিকতার। তিন পর্দার বোরখা পরলেও এদের হাত থেকে রেহাই পায় না নারীরা। আর এগুলো যে সবসময় হঠাৎ করে ঘটছে তাও নয়। পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন ও ধর্ষণের মত কুকর্ম ঘটে থাকে। অতি সম্প্রতি নোয়াখালির একলাশপুরে সংঘটিত হয়েছে যে পাশবিক নারীনির্যাতন, সেটি একটি পরিকল্পিত নির্যাতন ও বিকৃত ধর্ষণ প্রক্রিয়া বলেই বোঝা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার কুড়িলে কর্মজীবী গারো তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করে। চট্টগ্রামের কর্মজীবী মেয়েটিকেও কয়েকজন মিলে পরিকল্পনা করেই ধর্ষণ করেছে। প্রতিবন্ধী আদিবাসী মেয়েটিও সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার। কয়েক বছর আগে ঢাকার মালিবাগে বুশরা নামের ছাত্রীটি বেডরুমে এবং কুমিল্লার তানিয়া সেনাবাহিনীর সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে ধর্ষিত এবং খুন হয়ে যায় পরিকল্পিতভাবে। এছাড়া হরহামেশা বন্ধুবান্ধব, পরিচিত অপরিচিত, আত্মীয় পরমাত্মীয়, শিক্ষক, অফিসের বস্, স্বামী, ভাই এমনকি পিতার দ্বারাও ধর্ষিত হচ্ছে নারীরা।
কেন ঘটছে এই ধর্ষণ?
পুরুষদের অনিয়ন্ত্রিত জৈবিক তাড়না, অর্থবিত্ত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের সঙ্গে রয়েছে ধর্মীয় প্রশ্রয়। ইহুদি, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, সনাতন হিন্দু ধর্ম বা ইসলামে নারীকে বলা হয়েছে নিকৃষ্ট অথচ চাষাবাদের জন্যে সরস ও উত্তম একখণ্ড জমি। তাতে সন্তান নামের যে ফসল উৎপাদিত হবে নারী তাকে পরিচর্যা করে তুলবে কিন্তু নিজের বলে দাবি করতে পারবে না। থাকবে পুরুষের নিরঙ্কুশ এবং একচ্ছত্র অধিকার। তাই তো বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর মুসলিম মোল্লারা যেমন নারীদের বোরখায় মুড়ে রাখতে ফতোয়া জারি করে তেমনি হিন্দু মোল্লারা জাতপাতের সুবিধা নিয়ে নারীকে ধর্ষণযোগ্য বলে শ্লোক আওড়ায়।
জন্মমাত্র পুরুষসন্তানটিকে দেওয়া হয় আলাদা মর্যাদা। পরিবার সমাজ এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও পুরুষের পৃষ্ঠপোষকতা অগ্রগণ্য। বিনা প্রশ্নে আসমান জমিনের সবকিছুর উপর পুরুষ তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ফলে পুরুষের ভেতর সর্বগ্রাসী একটি মনোভাব গড়ে ওঠে। এরমধ্যে কেউ কেউ অস্বাভাবিক ক্ষমতা, ঈর্ষা, হিংসা, লালসায় পূর্ণ থাকে। স্বাভাবিক যৌনতার জায়গায় স্থান পায় অনিয়ন্ত্রিত বিকৃত যৌনকাঙ্ক্ষা ও শক্তি। যে শক্তিকে অস্ত্র করে সে অনায়াসে সামাজিক নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে নারীকে কেবলমাত্র ভোগ্যপণ্যের মত দেখে খোদ তার পরিবার। পারিবারিক পরিবেশে নারীকে অসম্মানিত হতে দেখে পুরুষমনে ধারণা জন্মায় ভাত মাছ বিড়ি সিগ্রেট মদের মতই নারী ভোগ্যবস্তু। অনেকে তো মনেই করে, নারী একটি লালসা উদ্রেককারী উপাদেয় ফল। তাই তাকে যত্রতত্র ভক্ষণ করার অধিকার রয়েছে পুরুষদের। যেমন হয়েছে, নোয়াখালির একলাশপুরের মেয়েটি।
এছাড়া পরকীয়া, পর্ন, সেক্সবাজার, বিশ্বসংস্কৃতির খারাপ দিকগুলো নিয়ন্ত্রণহীন অবাধ টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে বর্তমানে এত বেশি উন্মুক্ত এবং সস্তা হয়ে পড়েছে যে কিশোর, তরুণ এমনকি পঞ্চাশোর্ধ্ব থেকে সত্তরের পুরুষরাও অস্বাভাবিকভাবে ঝুঁকে পড়েছে এই দিকে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে কিশোরী বা নারীরাও কমবেশি এই ব্যাপারে আগ্রহী। ফলে বর্তমানে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ধর্ষণের পেছনেই কমবেশি এই অবাধ পর্নোগ্রাফিকে দায়ী করা চলে।
পারিবারিক বন্ধন, মূল্যবোধ, শাসনের অভাব, পিতামাতার অবাধ জীবনযাপন, সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব, অবৈধ সম্পর্কের দিকে আগ্রহ, স্বামীস্ত্রীর দাম্পত্য কলহ, ভাঙন, ভাঙনের ফলে সন্তানের উপর অবহেলা, শিল্পসংস্কৃতি চর্চায় সুস্থধারার অভাব, নেশাসক্ত হয়ে পড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধনী পরিবারগুলির দম্ভ, হঠাত ধনী হয়ে ওঠা পরিবারের নিজেদের স্মার্ট দেখানো ইত্যাদি মিলে বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা খুব খারাপ দিকে ধেয়ে যাচ্ছে।
এর সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিচারহীনতার অভব্য সংস্কৃতি।
এমনিতে ধর্ষিত হওয়ার পরেও মেয়েরা থানা পুলিশ নালিশ ফরিয়াদ করতে চায় না। তাছাড়া এক শ্রেণির শিক্ষিত অশিক্ষিত, ধনী গরীব, ধর্মান্ধ বা বখাটে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কখনওই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে সুষ্ঠু বিচার পাবে না জেনে ভুক্তভোগী নারী এবং তার পরিবার চেপে যাচ্ছে। শাস্তি হবে না জেনে ধর্ষকরাও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলিতে এদের ছবি দেওয়া সত্ত্বেও আইনগত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে এই ধর্ষকামী শ্রেণির সাহস আর প্রশ্রয় দিন দিন আরও বেড়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ২০০০ সালে নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে, যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। কিন্তু আইন থাকা সত্ত্বেও তার যথার্থ ব্যবহার না করে, নাম কা ওয়াস্তে তদন্ত কমিটি করা, গ্রেফতারকৃত ধর্ষকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দহরম, ধর্ষিতা নারীকে সমাজের ভয় দেখিয়ে চুপ রাখা, ধনীর দুলালদের সঙ্গে আপস রফা করা, ক্ষমতার অপব্যবহার করা, পারিবারিকভাবে শাসন না করে অপরাধ ঢেকে রাখার কারণে নির্যাতন-ধর্ষণ আরও বেড়ে গেছে। আইন এবং মূল্যবোধের মূল্যায়ন এতটাই নিচে নেমে গেছে যে এখন মজাক করতে ইচ্ছে করে—
রেপিস্ট বলে পুলিশ,
থানা হাজতে
জামাই আদরে রাখিস।
তো এভাবেই কি চলবে বাংলাদেশ? ধর্ষণ প্রতিরোধের কী কোনও উপায় নেই?
আছে। আর তা হচ্ছেও।
নারীনির্যাতন, ধর্ষণ এবং বিচারহীনতা নিয়ে শাহবাগের জ্বলন্ত চত্বর থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে ছাত্রজনতার অপ্রতিরোধ্য প্রতিবাদসভা, মিছিল, পথনাটক। আন্তর্জাল আর প্রিন্ট পত্রিকাগুলোতে চলছে লেখালিখি। প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে প্রতিটি টিভি চ্যানেলে।
১৪ অক্টোবর, বুধবার সকাল। সচেতন নারীসমাজ ধর্ষণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ এবং মিছিল করে। সেখানে মৃত্যুদণ্ড সহ আরও ৯টি দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়।
নড়েচড়ে বসেছে সরকার।
একই সঙ্গে সরকারের অভ্যন্তর থেকে ধর্ষণ ও নির্যাতনকারী খুনিদের বিপক্ষে কঠিন অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা আসে। প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ ও অন্যান্য আরও অনেকে চলমান ধর্ষণ রোধে শক্ত ভূমিকা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
১৪ অক্টোবর, বুধবার দুপুর। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনকে সংশোধন করে সরাসরি মৃত্যুদণ্ডের আইন বলবৎ করে।
১৫ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার ২০২০, সকাল এগারোটা। টাঙ্গাইলে ২০১২ সালে সংঘটিত এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় প্রমাণিত পাঁচজন ধর্ষককে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে আইনকে কার্যকরী করে তোলেন। এরপর দেশের বিভিন্ন আদালতে প্রমাণিত ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার খবর আসতে থাকে।
কিছু প্রশ্ন উঠে আসছে। যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড দিলেই কি ধর্ষণ রোধ সম্ভব হবে?
অনেকেই কেবল মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকে আশঙ্কাজনক মনে করছেন। তারা জানাচ্ছেন, এটি খুব সুচিন্তিত বা সুফলদায়ক হবে বলে মনে হয় না। কারণ ১৯৯৫ সালে ধর্ষণের ফলে হত্যার শাস্তি হিসেবে বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের আইন করলেও দেশে ধর্ষণ, নারীনির্যাতন ও হত্যা কমাতে সাহায্য না করায় তুলে নিতে হয়েছিল।
তাদের যুক্তি এই আইনকে বাস্তবায়ন করতে সৎ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত দরকার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচারক হবেন নিরপেক্ষ ও মানবিক। নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করতে তারা হবেন কঠোর এবং সতর্ক। আইনের প্যাচে পড়ে নিরাপরাধীরা যেন ফেঁসে না যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নির্লজ্জ দুর্বৃত্তায়ন, প্রভাব, দলগতভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা বন্ধ করতে হবে।
নারীসমাজকে নিরপেক্ষ এবং শক্তিময়ী হয়ে উঠতে হবে। নিজের স্বামী, সন্তান, ভাই, পিতা, আত্মীয়স্বজনদের কেউ নির্যাতন, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত হলে তার বিপক্ষে থাকতে হবে।
পারিবারিক পরিবেশে পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্যে সমানাধিকার গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে পরিবারে অসাম্য রেখে রাষ্ট্রের কাছে সাম্য দাবি করার অর্থ হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে প্রতারণা ও ফাঁকি রেখে দেওয়া।
জনগণকেও সচেতন হতে হবে। কল্যাণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্রায়ণের সাফল্য নির্ভর করে সতর্ক ও সচেতন জনগণের উপর। কেবলমাত্র রাষ্ট্র এবং সরকারের উপর দায় চাপিয়ে দিলে তা হবে অন্ধকারের দিকে গণতন্ত্রকে ঠেলে দেওয়ার সামিল।
লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, বঙ্গবন্ধু, ফরহাদ, মনি সিং, প্রীতিলতা, ইলা মিত্র, বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল আর মুক্তিযোদ্ধা শিরীন বানু মিতিল, সেতারা, তারামন বিবির এ দেশে পুরুষের পাশে নারীর অবস্থান হবে সম্মানের। কেবল ভোগ্যবস্তু নয়। নারী হয়ে উঠবে সহকর্মী, সুজন, বন্ধুসখা। সে উদ্দেশ্যেই বর্তমান বাংলাদেশের রাষ্ট্র, সরকার, আইন ও বিচারবিভাগ একযোগে কাজ করে চলেছে। মানুষ তো শাস্তির ভয়ে আইন মান্য করে চলে। এটুকু আশা তো রাখাই যায়—
পুলিশ বলে রেপিস্ট ঘন্টা বাজছে মৃত্যুদণ্ডের,
শিশ্নগুলো সামলেসুমলে থাকিস।।
লাও তো বটে, কিন্তু আনে কে?