এখনও ভাত নেই, সেই পাথরই রয়েছে

সোমেন বসু

 


লেখক গল্পকার, রাজনৈতিক ভাষ্যকার

 

 

 

 

…সেখানে রাস্তা হয়েছে, কিন্তু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখনও নেই। অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবা চালু হয়েছে, কিন্তু সেখানে সহায়িকার জন্য সরকারের ভাতা আসে ছ মাস পর পর। গ্রামের প্রতিটি শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে, কিন্তু আইসিডিএস সেন্টার মাসে মোটে তিন দিন খোলে। আশাদিদি ভ্যাক্সিনের বাক্স নিয়ে আসেন, কিন্তু গ্রামের ওঝা যেহেতু বলেছে সুঁই দিলে ধনুষ্টঙ্কার অবধারিত, তাই সরকারের বহুবিজ্ঞাপিত ইন্দ্রধনুষ প্রকল্প কার্যকর হওয়ার আগেই মুখ থুবড়ে পড়ে।

এভাবেই একদিন মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল পার হয়ে ভারতবর্ষ সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলের পথে যাত্রা শুরু করে; আর যমুনা আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকে কবে কোন বাদলার দিনে তার পরের সন্তানটিরও সন্ধের মুখে পেটব্যথা আর জ্বরের উপসর্গ দেখা দেবে।[1]

যমুনাবতীর গল্প অভীক ভট্টাচার্য শেষ করেছিলেন এইভাবেই।

বোঝা গেল কি যে লেখাটি তিন বছরের পুরনো? ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকের— যাতে ভারত ১১৯টি দেশের মধ্যে ১০০তম স্থানে ছিল— প্রেক্ষিতে প্রথমে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মের লোকাল ট্রেনে প্রকাশিত হয় সৌনক দাশগুপ্তের একটি লেখা (২৮ অক্টোবর), এবং পরে ডিসেম্বরের মেল ট্রেনের রিভার্ভড বগি (প্রচ্ছদ ভাবনা)-র বিষয় করা হয় “ভাত নেই, পাথর রয়েছে”। সেখানেই অভীক ভট্টাচার্য শুনিয়েছিলেন যমুনাবতীর আখ্যান।

‘থাক, সেসব পুরনো কথা’ বলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ কথাগুলি একটুও পুরনো লাগছে না। আমরা জামলো মাকদমমঙ্গল ওয়াঘদের ভারতবর্ষে বাস করি। সেই জ্বলন্ত অবস্থানে যমুনাবতীরা দৃঢ়ভাবেই বর্তমান।

 

আবার একটি ক্ষুধা সূচক

আবার একটি আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, প্রতি বছরই হয়। তবে এ-বছর আমরা আর সেঞ্চুরি করতে পারিনি। আমাদের র‍্যাঙ্ক ৯৪। মোট দেশের সংখ্যা কিন্তু কমে গেছে— ১০৭। সেই হিসেবে অনুপাত কী দাঁড়ায় সেঞ্চুরি-পিয়াসীরা করে দেখতে পারেন। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, আমাদের আগের বছরের র‍্যাঙ্ক ছিল ১০২।

আর হ্যাঁ, এ-বছর পাকিস্তানের অবস্থান ৮৮ নম্বরে এবং বাংলাদেশের ৭৫ নম্বরে। ফলে একটা অন্যরকমের স্বস্তি রয়েছে। এবার থেকে কেউ এই দুটি দেশে চলে যেতে বললে, অন্তত খিদের নিরিখে সে সদুপদেশ দিচ্ছে এমনটাই ধরে নেওয়া যাবে নিঃসঙ্কোচে।

এবারের ক্ষুধা সূচক রিপোর্টটির মূল বিষয়গুলি এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক।

ভারতের স্কোর হয়েছে ২৭.২। এটি ‘সিরিয়াস’ ক্যাটেগরিতে পড়ে। অর্থ, আমাদের দেশের ক্ষুধা-পরিস্থিতি গুরুতর। ভারতীয় জনগণের ১৪ শতাংশ অপুষ্ট। ভারতের ১৭.৩ শতাংশ (আগের বছর ছিল ২০.৮ শতাংশ) শিশুর ওজন উচ্চতার তুলনায় কম, যা তীব্র অপুষ্টি (অ্যাকিউট আন্ডারনিউট্রিশন)-র সূচক। এবং দেশের ৩৭.৪ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। এটি ধারাবাহিক অপুষ্টি (ক্রনিক আন্ডারনিউট্রিশন)-র সূচক। একটা ভালো খবর আছে। সেটা হল, ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার এবার কমেছে।

তবে, এই পরিসংখ্যানগুলি, সবই সরকারি।

এখানে আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা রিপোর্ট (স্টেট অফ ফুড সিকিওরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড)-টিও একটু দেখে রাখা যাক। এই রিপোর্টে বলছে ২০১৪ থেকে ১৯-এর মধ্যে ভারতে খাদ্যে নিরাপত্তাহীনতা ৩.৮ পার্সেন্টেজ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঠক, মনে রাখুন, এই সময়কালে আমরা পার করেছি অচ্ছে দিন-এর প্রথম দফা। রিপোর্ট বলছে, ২০১৯-এর শেষে আমাদের দেশে খাদ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০১৪-র থেকে ৬.২ কোটি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং, গোটা বিশ্বের মোট খাদ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের ২২ শতাংশ বাস করে আমাদের এই দেশে, দেশ হিসেবে সংখ্যাটা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।

কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এই রিপোর্টগুলি তৈরি করা হয়, সেগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা অনেক হয়েছে। উপরে যে-দুটি লেখার কথা উল্লিখিত, তাতে পাওয়া যাবে, খাদ্য সূচক এবং খাদ্য নিরাপত্তা রিপোর্ট দুটির লিঙ্কও দেওয়া থাকল—পাওয়া যাবে তার মধ্যেও। “ভাত নেই, পাথর রয়েছে”-তে শচীন জৈনের একটি লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল। আগ্রহীরা সেই লেখাটিও দেখতে পারেন। ফলে এখানে সেসব নিয়ে আর কথা বাড়ানো নিষ্প্রয়োজন। আমরা বরং এখানে অন্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করি।

আর সেই আলোচনাতেই শচীনের এই লেখাটি পরেও আরেকবার প্রয়োজন পড়বে।

 

ভারতে ক্ষুধা— এক অশ্লীল স্ববিরোধিতা

কেন বলছি? আসুন দেখি…

ভারত বিশ্বের সেরা খাদ্যশস্য উৎপাদক (২৫ শতাংশ), গ্রাহক (২৭ শতাংশ), এবং আমদানিকারক (১৪ শতাংশ)। দুধ-উৎপাদনেও ভারত বিশ্বে প্রথম স্থানাধিকারী।[2]

গোটা বিশ্বের মোট খাদ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের ২২ শতাংশের বাস এ দেশে। শিশুদের অপুষ্টির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে সেরা!

২০১৯-এ যখন আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকের রিপোর্ট তৈরি হয়, যে সময় ভারতের সমস্ত এফসিআই গোডাউনগুলিতে ৬৮ মিলিয়ন টনেরও বেশি খাদ্য মজুত ছিল। ২০২০-র সেই একই সময়ে ওই সংখ্যাটা ৭০ মিলিয়ন টনেরও বেশি। এই দুটি হিসেবের একটিতেও মিলে-যায়নি-এখনও এরকম ধান ধরা হয়নি।[3]

আর এই দুই বছরে আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে— আগেই বলেছি, আরেকবার বলি— ভারতের স্থান ১১৯-এ ১০২ এবং ১০৭-এ ৯৪ যথাক্রমে।

লাগছে না অশ্লীল? এত এত খাদ্য উৎপাদন করে, আমদানি করে, গুদামে পচিয়ে আমরা কোটি কোটি দেশবাসীকে ভুখা রেখে দিই। দেশ এগোচ্ছে বলে গর্ব করি!! শাইনিং ফাইনিং আরও কী কী সব বলতে জিভে একটুও আটকায় না আমাদের!!

থাক… সেসব আবেগের কথা।

বিশ্লেষণের কথায় প্রশ্ন আসে— কেন এরকমটা?

ক্ষুধার কারণ, সে নিরাময়ের উপায়— এই সমস্যাটি বহুমাত্রিক। এ নিয়ে অধিকারীজনেরা অনেক গবেষণা, পরামর্শ, হাতেকলমে কাজ ইত্যাদি করছেন, সে সব ইন্টারনেটে সহজলভ্যও যথেষ্ট। এই লেখায় সেসব নিয়ে আলোচনার সুযোগও নেই এবং প্রয়োজনও নেই। আমরা বরং আমাদের দেশের এই স্ববিরোধী অবস্থানের দিকেই মনোনিবেশ করি।

খিদের জ্বালায় ভোগেন গরীব মানুষেরা। আমাদের দেশে ভৌগোলিকভাবে গ্রামের মানুষ, শহরের বস্তির মানুষ; পেশাগতভাবে কৃষক, গ্রামীণ শ্রমজীবী, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক; জাতিগতভাবে দলিত, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে এর প্রকোপ সর্বাধিক। এবার এইসব ক্ষেত্রগুলিতে যুক্ত মানুষদের জন্য সরকারের ভূমিকা ঠিক কীরকম?

আমরা কৃষি বিল দেখছি— যে বিল পরিষ্কারভাবে কৃষিক্ষেত্রকে কর্পোরেটদের থাবার মুখে উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য তৈরি।

আমরা লকডাউন পর্যায়ে দেখেছি অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য কতটা নির্মমভাবে উদাসীন হতে পারে একটা দেশের জনগণের ভোটে জিতে আসা নির্বাচিত সরকার।

গ্রামীণ কর্মসংস্থানের হাল ভয়াবহ। ২০১৭-১৮-তে পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের সমীক্ষা অনুযায়ী জানা যায় গ্রামীণ বেকারত্বের হার ৬.১ শতাংশ— যা ১৯৭২-৭৩-এর পর সর্বাধিক। গ্রামের কর্মসংস্থানের জন্য একটাই সরকারি প্রকল্প রয়েছে। মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫ বা এমজিএনআরইজিএ বা চলতি কথায় ‘একশো দিনের কাজ’। এতে বরাদ্দ প্রতি বছরই কমানো হয় অনেকটা করে। যার ফলে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা ঠিক সময়ে টাকা পান না, অনেক ক্ষেত্রে আদৌ পান না। বিভিন্ন মহল থেকে, বিশেষত এই কোভিড-কালে, সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে প্রকল্পটিকে ২০০ দিনের কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে পরিণত করার। সরকার সেসব কানে তোলেনি।

আদিবাসীদের মধ্যে অনাহারের প্রকোপ কমানোর চেষ্টাতেই ২০০৬-এ অরণ্যের অধিকারের আইন সংশোধন করে আদিবাসী জনগণের জঙ্গলের ওপর অধিকার স্বীকার করা হয়। এই সরকার অরণ্য থেকে আদিবাসী জনগণকে উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর। না হলে দেশের অরণ্য এবং খনিজ সম্পদ কর্পোরেটদের পায়ে ভেট দেওয়া যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে খনি বিল সংশোধনও করা হয়েছে সেই লক্ষ্যে।

আর, আমাদের দেশের শাসকরা, এখানে কিছুটা দলমতনির্বিশেষে ঐক্য রয়েছে, ক্ষুধা-অনাহার নিয়ে খুব বেশি ভাবিত কখনওই নন। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে সংসদে বিতর্কগুলির মাত্র ৩ শতাংশ হয়েছে শিশুদের বিষয়গুলি নিয়ে। তার মধ্যেও মাত্র ৫ শতাংশ শিশুদের যত্ন এবং বিকাশ সংক্রান্ত। আর ২০১৩ সালে প্রকাশিত জঁ দ্রেজ এবং অমর্ত্য সেনের বই ‘অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কন্ট্রাডিকশনস’ থেকে আমরা দেখেছিলাম শিশুমৃত্যুর হারে ভারত বিশ্বে অন্যতম অগ্রণী দেশ।

আর এক অশ্লীল স্ববিরোধিতা।

আর সরকারের এইধরনের মনোভাবের সবচেয়ে নগ্ন প্রকাশ দেশের ক্রমবর্ধমান অসাম্য। দেশের সর্বাধিক ধনী ১ শাতাংশের সম্পদ আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বর্তমানে। ভারতের এত প্রাচুর্য, এবং দেশে এত অভুক্ত মানুষ— এই রহস্যের এর চেয়ে প্রকৃষ্ট ব্যাখ্যা আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না।

 

অতিমারি পরিস্থিতি

এ বছর বিশেষ করে অতিমারির কথাটা উল্লেখ করা উচিত। কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশজুড়ে চূড়ান্ত অবিমৃষ্যকারী এক লকডাউনের ফলও স্বাভাবিকভাবেই ভুগেছেন দেশের দরিদ্র জনগণ। কৃষি বিপর্যস্ত হয়েছে। একদিকে লকডাউন এবং অন্যদিকে যথেষ্ট কোল্ড স্টোরেজের অভাবের জন্য ২০ শতাংশ ফসল মাঠেই নষ্ট হয়েছে। মহারাষ্ট্রে দুগ্ধ উৎপাদক কৃষকরা এর মধ্যেই বিক্ষোভ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এই সামগ্রিক খাদ্য সঙ্কটের মাসুলও দিতে হয়েছেন দেশের প্রান্তিক জনগণকেই। এর সঙ্গেই অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থার কথা ভেবে নিন। সে তো বহুদৃষ্ট, বহুচর্চিত।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার। আমার দেশের এই ক্ষুধার্ত ছবি কিন্তু চিরকালীন— বলছি সে-কথা পরেই। এখনকার কথাটা হল, সরকার বা দেশের পরিচালকরা কোনওভাবেই যেন এই অবস্থার জন্য এই অতিমারির কাঁধে বন্দুক রাখতে চেষ্টা না করে।

 

এবং আমরা

শচীন জৈনের যে লেখাটির কথা বলেছিলাম তাতে উনি বলেছিলেন—

আমরা মনে হয় এক অভিশপ্ত সমাজে পরিণত হচ্ছি প্রতিদিন, যে সমাজ তার নিজেরই কৃতকর্মের ফলশ্রুতিগুলির থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। যে সমস্যা ও ঘটনাবলির মুখোমুখি হচ্ছি প্রতিনিয়ত, তার বৈজ্ঞানিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কার্যকারণ ও ফলাফলগুলোকে স্বীকার করতে না-পারার ব্যর্থতাই আমাদের সমাজের চারিত্র্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স রিপোর্ট-এর ক্রমতালিকায় ভারতের স্থান ৫০ না ১০০, র‍্যাঙ্কিং-এর পদ্ধতি সঠিক না বেঠিক, পাকিস্তান ভারতের আগে না পরে— ‘ক্ষুধা’-বিষয়ক যাবতীয় আলোচনা বা বিতর্ক এই লজ্জাজনক পরিসরেই আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বোঝা যায়, আমাদের মনোযোগ সরে গিয়েছে ক্ষুধার প্রকৃত কারণ থেকে অন্য নানা দিকে।[4]

তা-ও এই গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে আমাদের। প্রতি বছর একবার করে এটা মনে করানোর জন্য যে আমাদের এক বিপুল সংখ্যক সহনাগরিক— যাঁদের ওপর আমরা নানাভাবে নির্ভরশীল নিজেদের পরজীবী শ্রেণিচরিত্রের কারণে— অর্ধাহার, অনাহারে দিনগুজরান করেন।

নইলে সেটা মনে পড়াতে আমাদের একটা আমলাশোল ঘটতে বা কারিমাটির একজন একাদশবর্ষীয়া সন্তোষীকে মরতে লাগে।

সন্তোষী মরেছিল বছর তিনেক আগে। আটদিন না খেয়ে থেকে। ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা জেলার কারিমাটি গ্রামে।

কাছাকাছি সময়েই কর্নাটকের গোকর্নে মরেছিল এক দলিত পরিবারের তিন ভাই। নারায়না, বেঙ্কটরাম্মা আর সুব্বু মারু মুখরি। ওদের রেশন দেওয়া হয়নি রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করা ছিল না বলে।

এই আধার! বছর খানেক একটি রিপোর্ট মোতাবেক সে-বছরের ৪২টি ক্ষুধাজনিত মৃত্যুর মধ্যে ২৫টির পেছনে আধারের ভূমিকা ছিল।

বছর দুয়েক আগে লালগড় খবরে এসেছিল অনাহারে কয়েকজন শবর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসায়।

যমুনাবতী ভাত আর মুংগা শাক খেয়ে থাকে।

উত্তরবঙ্গের চা-বাগানগুলিতে মদেশিয়া আদিবাসীরা মাটি খুঁড়ে বিষ-আলু বলে একটা বুনো কন্দ তুলে সেদ্ধ করে খায় বছরের বেশ কটা মাস। শুধু ওটাই। আর কিছু নয়।

২০০০ থেকে ২০১৫-র মধ্যে উত্তরবঙ্গের ১৭টা বন্ধ চা বাগানে ১৪০০ জন শ্রমিক মারা গেছেন অনাহারে অপুষ্টিতে।

পশ্চিমবাংলার যে কোনও গ্রামে সাধারণ কৃষক জনগণের কাছে আশ্বিন-কার্তিক এখনও চিন্তার মাস!

সাংবাদিক পড়গুম্মি সাইনাথের সংগঠন পারি-র ওয়েবসাইট খুলে দেখুন। ক্ষুধা, অনাহারের এরকম প্রচুর গল্প রয়েছে।

. . .

. . .

এর শেষ নেই। বাৎসরিক ক্ষুধা সূচক প্রকাশ পাওয়ার মতো কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই। কালাহান্ডি বা আমলাশোলের মতো কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। ক্ষুধা অনাহার আমার দেশবাসীর জীবনে এক দগদগে বাস্তব। আমরা দেখি বা না-দেখি। দেখতে চাই বা না-চাই।

সামান্য করোনার ভ্রূকুটি থাকলেও মোটের ওপর এই ভরা উৎসবের মরসুমে আপনাদের সেই রেললাইনের ছবিটা আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই। ছবিতে কয়েকটা রুটিও পড়েছিল ইতস্তত।


  1. যমুনাবতীর পুত্রশোক কিংবা একটি উন্নয়নের গল্প, অভীক ভট্টাচার্য, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭
  2. India at a Glance
  3. Global Hunger Index: Why is India trailing? By Dibyendu Chaudhuri, Parijat Ghosh, DownToEarth, 23 Oct 2020.
  4. ক্ষুধা সূচক: কাগুজে তথ্য বনাম ক্ষুধার প্রকৃত চিত্র, শচীন কুমার জৈন, চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭
About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4650 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...