পৌষালী চক্রবর্তী
পতিত
পদচাপে বসে যাচ্ছে অহল্যাভূমি
আর সেই ফাটল বেয়ে উঠে আসছে তেলছোপা ন্যাকড়া, প্লাস্টিক, ভাঙা হাঁড়িকুড়ি
এ সবই একদা সঞ্চয় ছিল।
এখন তা বড়ই বেমানান
তোমার শান্ত রূপের পাশে
ঘরের সন্ধানে আসি
আগাছা সরাতে সরাতে।
এক আঁজলা সঞ্চয় নেই আর,
স্বাতী তারার জল গায়ে ধরেও
তুমি কখন পতিত হয়ে আছ।
****
লকডাউন
নিকষ অন্ধকারে নেমে পড়েছে সব
সামনে কোনও আলো নেই, জল নেই, ছায়া নেই
এমনকি পথও নেই বোধহয়।
মায়াঘর দূরে প্রতীক্ষায়
তার দাওয়ায় মেলা খুঁদকুড়ো
নম্র লেবুগাছের জ্যোৎস্না
হিড়হিড় করে টেনে আনল রেললাইনে
পাথর ভাঙা, হাঁপর ঠেলা, নকশা তোলা ছায়াদের
সবাই মিলে সেই রাজপথ ধরে চলতে গিয়ে
কেউ রক্ত মেশালো রুটিতে
কোথাও মৃত মায়ের সাথে খেলায় মত্ত শিশুর
দৃশ্যে পজ করল ক্যামেরা
ভারতবর্ষ আয়ুরেখা ধরে হাঁটতে নেমেছিল।
****
তুলসীমঞ্চ
ঠাকুমার তুলসীমঞ্চের পাশে
ঠাঁয় দাঁড়িয়ে কিছু একরোখা জেদ।
আগাছা পোড়াবে বলে টেনে জড় করেছে কিছু শুকনো পাতা
ধোঁয়া মিলিয়ে যাচ্ছে অসীম ব্যোমে
ততক্ষণে ছাদে ছাদে বৈকালি মোলাকাত
সবাই উঠে এসেছে
ক্রমে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে সব অবয়ব
একছাদ বন্ধুতায় মিশে যাচ্ছে অন্য ছাদে।
যতক্ষণ আলো না আসে চলবে এই মিলনের সমারোহ
ঠাকুমার তুলসীমঞ্চ প্রদীপের জন্য শ্বাসরোধী অপেক্ষায়।
****
আরোগ্য
এক অবর্ণনীয় রাত্রির মুখোমুখি আমরা
আকাশে আকাশে উল্কাপাত
পৃথিবীতে হেঁটে যাচ্ছে কাতারে কাতারে ছায়া।
রামগিরি থেকে, নন্দাইল থেকে,
মেহিকো, উরুগুয়ে, অন্টারিও থেকে
অবয়বহীন ছায়াপিণ্ড
হেঁসেল ঠেলা, পাথর কাটা, গবেষণা ফেলে ঘরের দিকে চলেছে।
তার মুখজোড়া আবরণ, দেহে মারির গ্রাস
আমরা আকাশ থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখছি সেই অন্ধকূপ যাত্রা
আর পৃথিবী পাঁজর ফাটিয়ে বলতে চাইছে সর্বে সন্তু নিরাময়।
****
বৃষ্টি
বৃষ্টির মাঠে নেমে এসেছি
মুখবিবরে শুকনো জিভের মত
এঁটে থাকা আমাদের প্রজ্ঞাকে ফেলে রেখে
নিখাদ দুঃখের অপেক্ষা করি
তার সততার সাথে মিশিয়ে নিই নৈকট্য।
এখন বৃষ্টি পড়ছে
তার প্রতি ফোঁটা ধুয়ে দিচ্ছে
আমাদের স্বেদকণা।
বর্ষাপুষ্ট আগাছার মত আমরা নত হচ্ছি পৃথিবীর জন্মঋণে।