প্রিয়ক মিত্র
পূর্ব প্রকাশিতের পর
ঘোরের মধ্যে রয়েছে লতা!
ওর মনে আছে মৃন্ময়দাদাকে ওর খুব ভয় করেছিল সেদিন।
মৃন্ময়দাদা হাতে অস্ত্র ধরতে জানে? মানুষ মারতেও জানে?
মৃন্ময়দাদা কি মানুষ মেরেছে কখনও?
সূর্যবাবু এবং মৃন্ময়দাদা অনেকক্ষণ ধরে লতাকে বুঝিয়েছিল— কেন অস্ত্র ধরা ছাড়া দেশরক্ষার অন্য কোনও উপায় নেই।
কিন্তু ওর খালি ওই এক কথাই মনে হচ্ছিল।
অস্ত্র ধরা, মানে মানুষ মারা?
হঠাৎ একটা বাঁজখাই গলার হাঁক শুনে ঘোর কাটল লতার!
‘সরযূ!’
হাঁক পাড়লেন সনাতন হাজরা।
ওই বিশাল মাঠে সনাতন হাজরার গলা প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসছে। মনে হচ্ছে, যেন চৌধুরীদের ওই প্রাসাদের দেওয়াল হজম করে নিচ্ছে এই আওয়াজ। এবং তারপর তা ছিটকে ফিরে আসছে আবার সনাতন হাজরার দিকেই।
প্রায় বারপাঁচেক ওই দশাসই ডাকের পর চৌধুরীবাড়ির বিশাল সিংহদরজা ততোধিক দশাসই আওয়াজ করে খুলল। ওই মাঝরাতে এই পাণ্ডববর্জিত এলাকার জনমানবহীন ছায়াঢাকা বিস্তীর্ণ প্রান্তরে সেই দরজা খোলার আওয়াজ হাড় কাঁপিয়ে দিল সকলের। চাদরমুড়ি দেওয়া একটি ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এল বাইরে।
সনাতন হাজরা এবং মহেশ সেন— দুজনেরই ভুরু গেল কুঁচকে।
সাধারণত এত রাতে দরজা খোলে কানাই-জগাই এই দুই ভাইয়ের কেউ, নয়তো দাপুটে সরযূ।
দরজা খুলে যে বেরিয়ে এল, সে এদের মধ্যে কেউই নয়।
একটা মুশকোমতো লোক এগিয়ে এল। মুখে একটা অপার্থিব হাসি লেগে লোকটার। দেখেই কেমন যেন মায়া হয়। আবার অস্বস্তিও হয়।
আর যেটা হয়, সেটা হল সন্দেহ।
মহেশ সেন এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন। এবার তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘হরগোপাল কোথায়?’
ওই আশ্চর্য হাসিটা ঠোঁটে লেগেই রইল। অথচ ঠোঁট ফাঁক হল এবং লোকটার মুখ থেকে অনর্গল বাক্য বেরোতে শুরু করল।
‘হয়েচে কি, হরগোপালদার বউয়ের শরীরখানা তেমন ভাল যাচ্ছে না। হরগোপালদার বাড়ি তো অনেক দূর। সেখান থেকে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠি এসে পৌঁছুতেই সময় লেগেছে মাসখানেকের কাছাকাছি। এর মধ্যেই বউয়ের ভালমন্দ কিছু…’
এই কথার বন্যার মাঝে ছেদ পড়ল সনাতন হাজরার কথায়।
‘হরগোপালের বাড়ি তো পাশের গ্রামে। দূর কোথায়? সেখান থেকে চিঠি আসতে এতদিন সময় লাগে? আর হরগোপালের বিয়ে-থা হয়েছে সে কথাও তো জানা ছিল না!’
লোকটা তেমনই বিটকেল হাসি মুখে সেঁটে বলতে লাগল, ‘পাশের গেরামে তো হরগোপালদার মামার বাড়ি। ওর বাপ-পিতেমোর বাড়ি তো সেই দেওঘর। বউ-বালবাচ্চা সব সেখেনেই থাকে। তো হয়েছে কি, এই চিঠিখানা এসে পৌঁছতে দেরি হয়েছে বলে…’
মহেশ সেনের আর তর সইছিল না। তিনি এবার তাঁর ম্যাজিস্ট্রেটসুলভ ভঙ্গিতে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ‘হরগোপাল এখন কোথায়?’
লোকটার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল। লোকটা একটা আশ্চর্য শূন্য অথচ অস্বস্তিকর দৃষ্টিতে কয়েক পলক তাকিয়ে থাকল মহেশ সেনের দিকে। সেই দৃষ্টির সামনে মহেশ সেনের দাপট যেন দুম করে নিভে গেল। কেমন উসখুস করতে লাগলেন তিনি।
লোকটা অদ্ভুত চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলতে লাগল এবার। অথচ কথাগুলো নেহাতই সাধারণ।
‘এজ্ঞে সেই কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। হরগোপালদা এখন দেওঘরে। চিঠি আসতে আসতেই বোধহয় ওর বউয়ের ভালোমন্দ কিছু হয়ে গেছে। তাই দেওঘরে গিয়ে আর ফেরেনি।’
‘এ আবার কী কথা! ফেরেনি মানে!’ মহেশ সেন অস্থির হয়ে উঠল। এই রাতের বেলায় এমন অপ্রত্যাশিত তামাশা তাঁর আর ভালো লাগছিল না।
সনাতন হাজরা মহেশ সেনের হাতটা ধরে তাঁকে আটকালেন।
এবার মুখ খুললেন তিনি নিজে।
‘হরগোপালের দেওঘরে বাড়ি আছে, ওর বউবাচ্চা আছে– এসব কথা তো জন্মে শুনিনি! সে যাক, কদ্দিন হল হরগোপাল নেই?’
‘তা প্রায় হপ্তাখানেক হতে চলল!’
‘কানাই, জগাই, সরযূরা কোথায়?’
লোকটা মাথা নিচু করে চুকচুক করল দুবার। তারপর মাথা তুলে বলল, ‘বাবুরা দেখছি কোনও খবরই রাখেন না।’
‘কী খবর?’ সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন সনাতন হাজরা।
‘মাঝে ওলাউঠার খুব প্রকোপ পড়েছিল এখেনে। সরযূ তাতেই গেল।’
‘সরযূ মারা গেছে?’ বিস্মিত প্রশ্ন সনাতনের।
‘এজ্ঞে হ্যাঁ! কানাই আর জগাই তারপরেও ছেল। কিন্তু নানা উপদ্রব শুরু হল!’
‘কেমন উপদ্রব?’
‘সে নানারকম! একদিন রেতে নাকি হুলস্থূল কাণ্ড! একখানা দেওয়াল ফুঁড়ে বেম্মদেত্তির মতো কে একটা বেরিয়ে এসেছিল! তারপর…’
‘ওরা এখন কোথায়?’
কড়া গলায় প্রশ্ন করলেন সনাতন হাজরা।
‘এজ্ঞে দুজনেই দেশে চলে গিয়েছে।’
‘যদ্দূর জানতাম ওদের তিন কূলে কেউ ছিল না।’
লোকটার চোখ এবার একটু সরু হল।
আবার ওই চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলার ঢঙে লোকটা বলল, ‘বাবু দেখছি অনেক খবরাখবর রাখেন। তবে এইটে জানেন কি, দু ক্রোশ দূরের গাঁয়ে ওদের এক মাসি থাকেন?’
‘ওরা তাহলে এখন সেখানেই?’
‘এজ্ঞে হ্যাঁ!’
‘তুমি কে?’
আর থাকতে না পেরে সনাতন আর লোকটার কথার মাঝেই আবার হুঙ্কার দিয়ে প্রশ্ন করলেন মহেশ সেন।
এবার প্রথম লোকটা শব্দ করে হেসে উঠল।
‘হেঁ হেঁ হেঁ! এজ্ঞে, আমি ভেবেছিলুম আপনারা পেত্থমে আমার নামখানাই জিজ্ঞাসা করবেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হলে যেমনটা করে আর কী!’
মহেশ সেনের চোখটা ধক করে জ্বলে উঠল।
‘তুই আমাদের সবক শেখাবি হারামজাদা! কোথাকার কে…’
বাক্য শেষ করার আগেই দুটো কারণে থমকে গেলেন মহেশ সেন। প্রথমত, সনাতন হাজরা তাঁর কনুইটা চেপে ধরেছেন। দ্বিতীয়ত, লোকটার চাহনি। অমন রক্ত ঠান্ডা করা চাহনি এত বছরের চোরডাকাতখুনে-ঠ্যাঙানো জীবনে কখনও দেখেননি মহেশ সেন।
এবার ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করলেন সনাতন।
‘তোমার নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। সেটা বলো।’
সনাতনের প্রশ্নে লোকটার চাহনি যেন একটু স্বাভাবিক হল। লোকটা ধরা গলায় বলল, ‘আমার নাম জয়চাঁদ। কানাইরা চলে যাওয়ার পর জজসাহেব আমায় এখেনে থাকতে বলেছেন। আর কী জানতে চান বাবুরা, বলুন?’
সনাতন একটু থমকালেন। দু দণ্ড কিছু একটা ভেবে নিয়ে মহেশ সেনকে বললেন, ‘এখান থেকে চলুন। কলকাতা যাওয়ার পথে অন্য কোথাও জিরিয়ে নেওয়া যাবে, জজসাহেবের খাস লোক কেউই যখন নেই, তখন আমাদের পক্ষে বিনা আমন্ত্রণে এখানে থাকা ঠিক হবে না। চলুন।’
মহেশ সেন একটু থমকে ছিলেন। লোকটার ওই চাহনিটা তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না।
‘শুনছেন?’
সনাতনের প্রশ্নে ঘোর কাটল তাঁর।
গলাটা একটু খাঁকড়ে নিয়ে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! চলুন।’
‘এজ্ঞে, আপনি তো ম্যাজিস্ট্রেটসাহেব?’
লতাকে নিয়ে সদ্য পিছু ফিরেছিলেন মহেশ সেন আর সনাতন হাজরা।
লোকটার প্রশ্নে চমকে ফিরে তাকালেন তাঁরা।
‘আমায় চিনলে কী করে?’
মহেশ সেনের বিস্মিত প্রশ্ন।
লোকটা আবার একটু হেঁ হেঁ শব্দ করে বলল, ‘এজ্ঞে, আপনার কণ্ঠস্বর আর দাপট দেখেই মনে হচ্ছিল যেন। জজসাহেব আপনার কথা বলেই রেখেছেন।’
সনাতনের ভুরু একটু কুঁচকে গেল!
‘আপনি জজসাহেবকে জানিয়েছেন নাকি?’
মহেশ সেন সবেগে মাথা নেড়ে বললেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না!’ লতাকে দেখিয়ে বললেন, ‘একে নিয়ে কলকাতা যাওয়ার তলব আচমকাই হয়েছিল, চিঠি লেখা বা তার করার সুযোগই পাইনি!’
‘তাহলে তুমি জানলে কী করে উনি আসবেন?’
কড়া গলায় লোকটাকে আবার প্রশ্ন করলেন সনাতন।
‘হেঁ হেঁ হেঁ’ করে সেই অসহ্য হাসিটা হেসে লোকটা আবার বলল, ‘বাবুরা বড্ড বেশি সন্দেহ করেন। জজসাহেব আমায় বলেছেন ম্যাজিস্ট্রেটসাহেব কখনও এলে তার আতিথেয়তার যেন কোনও ত্রুটি না হয়।’
প্রসন্ন হয়ে উঠল মহেশ সেনের মুখ।
‘তাছাড়া অতিথি নারায়ণ! আমরা কোনও অতিথিকে ফেরাই না। এখনও তিনজন অতিথি রয়েছেন এখেনে।’
মহেশ সেনের ভুরু আবার কুঁচকে গেল। লতা বিপজ্জনক অপরাধী। এখানে ফাঁকায় ফাঁকায় বিশ্রাম নেওয়া যাবে, আর সারারাত পাহারা দেওয়া যাবে বলে এসেছিলেন, এখানে লোকজন থাকলে তো মুশকিল!
হঠাৎ সনাতনের মুখের দিকে তাকালেন মহেশ।
সনাতনের চোখে একটা আশ্বস্ত করার ভঙ্গি দেখে তাঁর মনে হল, আজ রাতটা এখানে জিরিয়ে নেওয়াই যায়।
লতা এতক্ষণ সচকিত ছিল। কিন্তু সে আবার ডুবে গেছে ঘোরের মধ্যে।
তার আরেকটা দুপুরের কথা মনে পড়ছিল।
‘তোর শরীরটা বড্ড নরম, মনটা কিন্তু শক্ত রাখতে হবে লতা।’
লতাকে জড়িয়ে ধরে লতার শরীরে পাগলের মতো আদর করতে করতে হঠাৎই বলেছিল মৃন্ময়দাদা।
রমাকে চুমু খাওয়ার সময় লতার শরীর যেমন আনচান করত, বা মৃন্ময়দাদা প্রথম প্রথম ছুঁলে যেমন মনটা অবশ হয়ে যেত— তেমন কিছুই আর লতার হয় না এখন। মৃন্ময়দাদার আদর তার ভালো লাগছে। কিন্তু মনটা লোহার মতো কঠিনও হয়ে রয়েছে।
যেদিন সূর্যবাবুর বাড়িতে পিস্তলের ঠান্ডা নল আর বাঁট ছুঁয়েছিল সে তবে থেকে তার মনটাও ঠান্ডা হয়ে গেছে। সূর্যবাবুর বাড়িতে বসে বারবার মৃন্ময়দাদা তাকে বুঝিয়েছে, বাড়ি, মা, বাবা, বন্ধু, পড়াশোনা, শরীর, মন— সবকিছুর চেয়ে বড় দেশ। সে যখন সূর্যবাবুর বাড়িতে বাকিদের দেখে, দেখে দেশ ছাড়া আর কিছুই ভাবে না তারা। দেশের জন্য তারা বাড়ি ছাড়তে পিছপা নয়। দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে দিতে পিছপা নয়।
এমনকী, প্রাণ নিতেও নয়।
তবে, এমনটা সে প্রথম প্রথম ভাবত। পরে মৃন্ময়দাদা তাকে বুঝিয়েছিল, খুনে ডাকাতদের সঙ্গে স্বদেশিদের পার্থক্য আছে। যাকে-তাকে খুন করা স্বদেশিদের ধর্ম নয়। স্বদেশিরা খুন করে শুধু ব্রিটিশদের আর বেইমানদের, তালপাতার সেপাইদের। দেশকে স্বাধীন করার পথে যারা যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, প্রাণ নিতে হবে তাদেরই।
হঠাৎ আরামে শিউরে উঠল লতা। তার স্তনবৃন্তে নরম করে আদর করছে মৃন্ময়দাদা।
তারপর তার দুই স্তনের মাঝে নিজের মুখটা ঘষতে ঘষতে মৃন্ময়দাদা বলে উঠল, ‘লতা, অনেক টাকা লাগবে রে আমাদের। কী করে পাব বল তো অত টাকা?’
‘টাকা!’ লতার গলায় বিভোর বিস্ময়। ‘কীসের জন্য টাকা?’
এবার আদর থামিয়ে হেসে উঠল মৃন্ময়।
‘দেশ স্বাধীন করতে অনেক খরচা রে লতা!’ একখানা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। ‘এত অস্ত্রশস্ত্র কিনতে হবে, যদি বাড়ি ছাড়তে হয়, তাহলে কিছু সংস্থানের ব্যাপার আছে।’
লতা মৃন্ময়দাদার কাঁধে চিবুক রেখে বলল, ‘তুমি যে বলেছিলে একজন আমাদের সাহায্য করবেন বলেছেন!’
‘হ্যাঁ। তবে তিনিও বিদেশি। ফ্রান্সের মানুষ। তবে পরিষ্কার বাংলা বলতে পারেন। আমাদের পালিয়ে যেখানে যাওয়ার কথা, সেইখানেই একখানা মিশনারিতে থাকেন।’
‘তুমি যে বলো মিশনারিরা খারাপ!’
অল্প হেসে মৃন্ময় বলল, ‘সবাই নিশ্চিতভাবেই নয়। ইনি যেমন।’
‘তা তিনি তো টাকা দিচ্ছেন?’
‘তাতেও আমাদের অভাব মেটবার নয় রে! আরও অনেক অনেক টাকা লাগবে! কোনও ভারী গয়নাগাটি পেলেও হত। সেটা বেচে…’
হঠাৎ বিদ্যুৎঝলকের মতো লতার মাথায় খেলে গেল একটা বুদ্ধি।
রমা তাকে বলেছিল। তার খগেনদা নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে পরিয়ে দিয়েছিল সেটা। তারপর থেকে রমা তার কাছেই লুকিয়ে রেখেছে জিনিসটা। সযত্নে!
সেই আকাশি রঙের আংটিটা!
মৃন্ময়দাদাকে যেন আর চিনতে পারছিল না লতা এই কথাগুলো বলার পর। অস্থির হয়ে গেল সে। ছটফট করতে লাগল। পায়চারি করতে লাগল ঘরজুড়ে।
তারপর মৃন্ময়দাদা তার কাছে এগিয়ে এল, এসে প্রথমেই তার মুখটা দুহাতে শক্ত করে ধরে চুমু খেল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর ফিসফিস করে বলল, ‘লতা, মন তৈরি রাখ। এ বাড়ি তোকে ছাড়তে হবে। আমি কটা দিন আসব না। তুই ওই আংটিটার আরও খবর নেওয়ার চেষ্টা কর। ওইটা পেলে আমাদের অনেক সমস্যা মিটে যায়। আমি পরেরদিন এসে খোঁজ নেব!’
ঝড়ের মতো উধাও হয়েছিল সেদিন মৃন্ময়দাদা।
‘দাঁড়ান!’
লতার ঘোর কাটল আবার।
সিঁড়িতে ওঠার মুখে এক ছোকরা দারোগা দাঁড়িয়ে। হাতে একখানা পিস্তল।
‘আমি আপনাদের সকলকে সার্চ করব। তারপর আপনারা এ বাড়িতে ঢুকবেন।’
‘কী করছেন বাবু! উনি ম্যাজিস্ট্রেটসাহেব!’
জয়চাঁদ বলে উঠল প্রায় আর্তনাদের সুরে।
দারোগা নাক সিঁটকে বলল, ‘কোথাকার ম্যাজিস্ট্রেট?’
মহেশ সেন এগিয়ে গিয়ে নিজের এবং সনাতনের পরিচয় দিলেন। কায়দা করে এড়িয়ে গেলেন লতার পরিচয়।
দারোগা সরু চোখে সনাতনকে দেখল। দেখে বলল, ‘হ্যাঁ। একে চিনতে পারছি বটে। তবে এর খুব সুনাম তো শুনিনি। এর ঠাকুরদা ছিল একটা চোর!
সনাতনের চোখ ধক করে একবার জ্বলে উঠেই আবার নিভে গেল। একথা শুনে শুনে তো তিনি অভ্যস্ত।
মহেশ সেন গম্ভীরভাবে বললেন, ‘আপনার বয়স কম, তাই আপনি বোধহয় জানেন না। ওঁর ঠাকুরদাকে স্বয়ং কর্নেল স্লিম্যান চিঠি লিখেছিলেন। ভাবতে পারেন, কর্নেল স্লিম্যান!’
দারোগা একচোট হেসে নিয়ে বলল, ‘আপনি একথায় বিশ্বাস করেন সেনসাহেব?’
মহেশ সেন বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘যাক এসব কথা থাক। আপনি এখানে কী উদ্দেশ্যে এসেছেন?’
একটু গম্ভীর হয়ে দারোগা বললেন, ‘বলছি। ওপরে আসুন!’
সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে বাঘের মুন্ডু টাঙানো আছে, এমন একটি দেওয়ালের নিচের দরজা ঠেলে ঢুকল সকলে।
ঘরে ঢুকেই বাকি অতিথিদের ছেড়ে মহেশ সেনের চোখ পড়ল শ্বেতশুভ্র পোষাক পরা স্মিতহাস্য ভদ্রলোকের দিকে।
মহেশ অস্ফুটে বলে উঠলেন, ‘ফাদার! আপনি এখানে?’
(আবার আগামী সংখ্যায়)
সমস্ত পর্বের জন্য ক্লিক করুন: তারান্তিনো — প্রিয়ক মিত্র