শতাব্দী দাশ
প্রাবন্ধিক, গল্পকার, শিক্ষক ও সমাজকর্মী
অগাস্ট ল্যান্ডমেসারের গল্প দিয়ে শুরু করি?
১৯৩৬ সাল এক জাহাজ তৈরির কারখানায় হিটলার স্বয়ং এসেছেন। সেদিনের সাদা-কালো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেই সমাবেশে শয়ে শয়ে শ্রমিকের মধ্যে একজনের মাত্র ডান হাতটি ‘হেইল হিটলার’ বলার ভঙ্গিতে সামনের দিকে বাড়ানো নেই। তিনিই অগাস্ট ল্যান্ডমেসার। প্রথম জীবনে নাজি পার্টিরই সদস্য হয়েছিলেন ল্যান্ডমেসার, যাতে একটা চাকরি পান। তারপর হঠাৎ ইহুদিমেয়ে ইরমা একলারের আগমন তাঁর জীবনে।
একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বিয়ে, সন্তান ইত্যাদি সামান্য স্বপ্ন। ১৯৩৫ সালে তাঁদের এনগেজমেন্ট হল। নেতাদের কানে সে খবর উঠতেই পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হলেন ল্যান্ডমেসার। তবু বিয়েটা হয়েই গেল। এক মাস পরে নতুন আইন চালু হল। এল নুরেনবার্গ আইন। সে আইনের প্রথম ভাগে বিশুদ্ধ জার্মান রক্তের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের কথা ছিল (সিএএ-র মতো শোনাল কি?)। আর দ্বিতীয় ভাগে জার্মান-ইহুদি বিবাহগুলিকে নাকচ করার নির্দেশ এসেছিল। বিশেষত জার্মান মহিলাদের ইহুদি পুরুষরা ফুঁসলিয়ে বিয়ে করছে, এমন তত্ত্ব গোয়েবেলস ও তাঁর দলবল প্রচার করছিল তার আগে থেকেই। অগাস্ট আর ইরমার গল্পটি অবশ্য উলটো, এখানে পুরুষটি জার্মান আর নারীটি ইহুদি। কিন্তু নিষ্কৃতি পেলেন না তাঁরাও। নাজি পার্টির কুনজরে পড়লেন তাঁরা।
অগাস্ট-ইরমা তবুও একে অন্যকে ছাড়তে পারলেন না৷ ১৯৩৫ সালেই প্রথম কন্যা, ইনগ্রিদ, জন্মাল। ১৯৩৭ সালে পরিবারটি চেষ্টা করল ডেনমার্কে পালাতে। তখন ইরমা দ্বিতীয়বার অন্তঃসত্তা। তাঁরা ধরা পড়ে গেলেন৷ বিচারে ল্যান্ডমেসার দোষী চিহ্নিত হলেন। দোষ হল, ‘নিজ জাতির অবমাননা’ (disgracing the race)।
সে যাত্রায় কোনওরকমে ছাড়া পেলেন, তবুও স্ত্রীকে ছাড়তে পারলেন না৷ ১৯৩৮ সালে আবার গ্রেপ্তার হলেন ল্যান্ডমেসার৷ এবারে বিচারের রায়ে তাঁকে এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হল আড়াই বছরের জন্য। অন্যদিকে গর্ভবতী ইরমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রথমে জেলখানায়, তারপর একে একে তিনটে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বদলি হল তাঁর। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত তাঁর চিঠি পেতেন ল্যান্ডমেসার। ক্রমে চিঠিও বন্ধ হল। ইরমার দ্বিতীয় সন্তান জন্মেছিল। আরেক মেয়ে, আইরিন। যাকে বাবা কোনওদিন দেখতে পেলেন না, যে শুধু বাবার ছবি দেখে বেড়ে উঠল।
আনুমানিক ১৯৪২ সালে আরও ১৪০০০ জনের সঙ্গে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে হত্যা করা হয় ইরমাকে। অন্যদিকে, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর অগাস্ট ল্যান্ডমেসারকে পাঠানো হয়েছিল ‘স্ট্র্যাফ ব্যাটেলিয়নে’, মানে ‘শাস্তিমূলক ব্যাটেলিয়নে’৷ এ এমন এক সৈন্যবাহিনী, যা রাষ্ট্রের চোখে ‘অপরাধী’দের নিয়ে গঠিত৷ অপ্রতুল অস্ত্রশস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ‘স্ট্র্যাফ ব্যাটেলিয়ন’কে ভয়ঙ্কর সব সামরিক মিশনে পাঠানো হত, যেখান থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব৷ মনে করা হয়, ক্রোয়েশিয়ার যুদ্ধে মারা যান ল্যান্ডমেসার।
১৯৯১ সালে সেই আশ্চর্য সাদা-কালো ছবি যখন প্রকাশিত হল, ইনগ্রিদ-আইরিনের চেনা ঠেকেছিল ‘হেইল হিটলার’ না বলা অবাধ্য লোকটাকে। ১৯৯৬ সালে আইরিন লিখেছিলেন একটি বই। “গার্ডিয়ানশিপ ডকুমেন্টস: পারজিক্যুশন অফ আ ফ্যামিলি ফর রেশিয়াল ডিসগ্রেস”। সেখানে সংযোজিত হয়েছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে তার বাবাকে লেখা তার মায়ের চিঠিগুলিও। দুজন ব্যক্তি দুই জেলখানায় নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন৷ ভালোবাসা তবু মরে না! রাষ্ট্র পরিবার ভেঙে দেয়, সম্পর্ক ভেঙে দেয়। তবু অনুভূতিরা অবিনশ্বর।
কাট টু। ভারতবর্ষ, ২০২০। ১৩ই ডিসেম্বর ‘দ্য সানডে টেলিগ্রাফ’ সহ বেশ কটি বিদেশি কাগজ ও পোর্টাল এক খবর প্রকাশ করল। উত্তর প্রদেশের মুসকান জাহান ওরফে পিঙ্কির শাশুড়ির বক্তব্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক খবরটি প্রকাশিত হয়। জানা যায়, পিঙ্কি উত্তর প্রদেশে ‘লাভ জিহাদের’ কারণে প্রথম মহিলা বন্দি। তার শ্বশুরবাড়ি জানায়, এক সরকারি শেল্টার থেকে ফোন করে তিন মাসের অন্তঃসত্তা বাইশ বছরের পিঙ্কি জানিয়েছে, তার গর্ভপাত হয়ে গেছে।
অবশ্য এর আগে, ডিসেম্বরের শুরুতেই একটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় মোরাদাবাদের পথে গেরুয়া উড়নি জড়ানো কিছু লোক এক মহিলাকে উৎপীড়ন করছে। লোকগুলিকে বজরং দলের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়৷ ‘এই তোমার মতো অবাধ্য মেয়েদের জন্যই সরকারকে নতুন আইন আনতে হচ্ছে’, তারা বলছিল। ভিডিওর ঘটনাটি ঘটেছিল ডিসেম্বরের ৫ তারিখে। ভিডিওর সেই মেয়েটিই পিঙ্কি।
এরপর বজরং দল তাকে, তার বর ও দেওরকে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। পিঙ্কিকে পাঠানো হয় সরকারি হোমে। পুরুষরা গ্রেপ্তার হন।
পিঙ্কি ধর্মান্তরিত হয়েছিল স্বেচ্ছায়, রশিদকে ভালোবেসে। তাদের আলাপ উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে, ২০১৯ সালে। লোন কোম্পানির কর্মী ছিল পিঙ্কি। রশিদ কাজ করত সাঁলোয়। প্রেম হল। দেরাদুনেই তাদের বিয়ে হল ২০২০ সালের জুলাই মাসে, লকডাউনের মধ্যে। প্রাথমিকভাবে পরিবারের লোক জানত না। সেপ্টেম্বরে তারা লকডাউনের মন্দার কারণে মোরাদাবাদের কান্থ-এ, রশিদের বাড়িতে, ফিরে আসতে বাধ্য হয়। দুই পরিবারেই অশান্তি হয়, কিন্তু তারপর তাঁরাও নাকি মেনে নেন। এরপরেই তারা বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার তোড়জোড় শুরু করে। কিন্তু সেই রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়েই ঝামেলা বাধে। রেজিস্ট্রেশন অফিসে যাওয়ার পথেই তাদের ধরে বজরং দল। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
সমাজমাধ্যমে পিঙ্কির গর্ভপাত নিয়ে আলোড়ন পড়ে যায়। সংবাদমাধ্যম উত্তর প্রদেশ পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
কমিশনের চেয়ারম্যান বিশেষ গুপ্ত গর্ভপাতের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ওর শিশু নিরাপদেই আছে।’ বলেন, দু দুবার পর পর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল পিঙ্কিকে, কারণ সে ভয়ানক পেটে ব্যথার কথা জানাচ্ছিল, কিন্তু গর্ভপাত হয়নি। অথচ যে হাসপাতালে সে ভর্তি ছিল, সেখানে মহিলা-রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, সাত মাসের ভ্রূণকে আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সে বেঁচে আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না ট্রান্স-ভ্যাজাইনাল পরীক্ষা ছাড়া।
সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করে, কেন অন্তঃসত্তাকে তাহলে এই শারীরিক অবস্থাতেও আটকে রাখা হয়েছে, যখন পিঙ্কি প্রথম দিনই জবানবন্দি দিয়েছিল যে তাকে জোর করে ধর্মান্তরিত বা বিয়ে করা হয়নি? উত্তর— তার থেকে জানতে হবে, সে শ্বশুরবাড়ি যাবে না বাপের বাড়ি। এদিকে পিঙ্কির ভাইকে যোগাযোগ করা হলে, সে জানায়, এর উত্তরও পিঙ্কি বারবার দিয়েছে। সে কোনওমতেই বাপের বাড়ি যাবে না৷ তাহলে আর কি জিজ্ঞাসাবাদ বাকি থাকে? উত্তর— ‘রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ’৷ কেন দেরি তা করতে? উত্তর— ‘বিজি শিডিউল’। পিঙ্কির গর্ভপাত নিয়ে সংবাদমাধ্যম তাই তখনও ধোঁয়াশায় থেকে যায়।
জনমতের চাপেই হয়ত, সোমবার বেলার দিকে পিঙ্কি ছাড়া পায়, ফেরে শ্বশুরবাড়িতেই। কিন্তু তার বর ও দেওর জেলেই আছে বলে খবর।
ফিরে এসেই সে কিন্তু হোমের কর্মীদের বিরুদ্ধে মন্দ ব্যবহার ও অযত্নের অভিযোগ করে।
সে বলেছে, ৫ই ডিসেম্বর পুলিশ স্টেশনে তাদের বজরং দল ধরে নিয়ে গেলে, সেখানেই অসুস্থ অবস্থায় তাকে বসিয়ে রাখা হয় আট ঘণ্টা। ৬ই ডিসেম্বর তাকে নারী নিকেতনে পাঠানো হয়।
পিঙ্কি বলছে, পুলিশ বরং বিশ্বাস করেছিল যে সে স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু বজরং দল এফআইআর নিতে তাদের বাধ্য করে।
পাঁচ ডিসেম্বরের কথা বলতে গিয়ে পিঙ্কি আরও বলে, ‘আমরা নিকাহনামা, বয়সের প্রমাণপত্র, অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের কপি সব নিয়েই রেজিস্ট্রেশন করাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পথে বজরং দল আমাদের ধরল। ওরা আমার নাম জিজ্ঞেস করল। তারপরেই যা তা বলতে শুরু করল। আমাদের বিয়েকে ‘লাভ জিহাদ’ বলল তারা। তারপর আমাদের থানায় টেনে নিয়ে গেল। তাদের বলেছিলাম আমি অন্তঃসত্তা এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। কিন্তু কেউ শোনেনি।’
বজরং দলের স্থানীয় নেতা মনু বিশনই বলছেন, তাঁরা পুলিশের কাছে দম্পতিকে ‘তদন্তের জন্য’ নিয়ে গিয়ে ‘হিন্দু বোনেদের প্রতি’ নিজেদের কর্তব্য করেছেন মাত্র।
পিঙ্কি আরও বলেছে, তার থেকেই ঠিকানা নিয়ে বিজনোর থেকে তার মাকে জোর করে গাড়িতে তুলে আনে বজরং দল। তাঁকে দিয়ে নাকি জোর করে অভিযোগ লেখানো হয়৷
সে বলেছে, নারী নিকেতনে তাকে খাবার কম দেওয়া হত, পরিশ্রমসাধ্য কাজ করতে বলা হত, ভারি জিনিস তুলতে বলা হত বা মোছামুছির কাজ দেওয়া হত, অপমান করা হত এবং সর্বোপরি সেখানে প্রাথমিকভাবে তার অসুস্থ হয়ে পড়ার কথাও অগ্রাহ্য করা হয়। সে বলে, ‘আমি পেটব্যথার কথা হোমের ইন চার্জকে জানালে তিনি বলেন আমি নাকি মিথ্যে বলছি। তাকে বললাম আমি গর্ভবতী, কিন্তু তিনি পাত্তা দেননি।’
প্রবল রক্তপাত হলে তবেই তাকে ১১ই ডিসেম্বর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার রক্তপরীক্ষা হয়, তাকে ভর্তিও নেওয়া হয়। কিছু ইঞ্জেকশনও দেওয়া হয়। ১৩ তারিখ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ তারিখেই আবার ভর্তি করতে হয় তাকে। কারণ আবার রক্তপাত শুরু হয়েছিল। পিঙ্কি এমতাবস্থায় সরাসরি অভিযোগ করে, ইঞ্জেকশনের ফলেই গর্ভপাত হয়েছে, যদিও তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
কী ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল তাকে? হাসপাতালের ডাক্তাররা বলছেন ইথামসাইলেট ইঞ্জেকশন, আইসপ সুপ্রিম ওষুধ, যা এ ধরনের ক্ষেত্রে সবাইকেই দেওয়া হয়। প্রথম ত্রৈমাসিক কালে গর্ভ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা অনেকেরই ঘটে। প্রশাসন রাতারাতি চিকিৎসাব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করেছে, এমনটা প্রমাণ ছাড়া বলা উচিত হবে না। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে, শারীরিক বা মানসিক চাপে গর্ভপাত ত্বরান্বিত হতে পারে।
পরবর্তীকালে চিকিৎসকরা আরও বলেন, তাঁরা পিঙ্কির আল্ট্রাসাউন্ডে ভ্রূণ দেখেছেন, কিন্তু হার্টবিট খুঁজে পাননি। তাই পিঙ্কিকে মীরাটে রেফার করা হয় সোনোগ্রাফির জন্য। কিন্তু পিঙ্কি বলে, শ্বশুরবাড়ির লোকের সঙ্গে ছাড়া সে যাবে না। তারপর সে ফিরে যায় হোমে। পরে, বাড়ি ফেরার পরে পিঙ্কির আলট্রাসাউন্ড আবার হয় বিজনোরের এক প্রাইভেট হাসপাতালে।
‘দ্য প্রিন্ট’ জানাচ্ছে সেই রিপোর্টে লেখা আছে “uterus is bulky” এবং “RPC (Retained product of conception)/blood clots in UT”, তার মানে সম্ভবত তার গর্ভপাতই হয়েছে, কিন্তু মৃত ভ্রূণ শরীরের মধ্যেই থেকে গেছে। ডাইলেশন অ্যান্ড কিউরেটেজ পদ্ধতিতে সেই ভ্রূণ বের না করলে মায়েরও জীবনের ঝুঁকি।
বিধ্বস্ত পিঙ্কি তাই ভাবে, কেন দেরাদুনের দোঁহের সংসার ছেড়ে তারা কান্থে ফিরতে গেল! সে আরও ভাবে, কেনই বা সে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে গেল? তা না করাতে গেলে হয়ত কেউ জানতেও পারত না তাদের আন্তঃধর্ম বিয়ের কথা! বরের জেলও হত না। পিঙ্কির অন্ধ বিশ্বাস, তেমনটা হলে হয়ত বাচ্চাটিও বেঁচে থাকত!
সে এখন রশিদের ছাড়া পাওয়ার প্রতীক্ষায়। কিন্তু সে জানে না রশিদ বাড়ি ফিরলে সন্তানের মৃত্যুর খবর কেমন করে দেবে?
পিঙ্কি জানে,তাদের ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা, কোনও ‘জিহাদ’ নয়। কিন্তু রাষ্ট্র সে কথা মানতে নারাজ।
উত্তর প্রদেশের তথাকথিত লাভ জিহাদ বিরোধী আইনটির দিকে এবার দৃষ্টিপাত করা যাক। ২৮শে নভেম্বর রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল ‘বে-আইনি ধর্মান্তরকরণ বিরোধী আইন’ প্রণয়নের জন্য অর্ডিন্যান্সে সম্মতি দিলেন। তার চারদিন আগে আইনটির চূড়ান্ত রূপে শিলমোহর লাগিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই আইন অনুসারে কোনও মেয়েকে বিয়ের কারণে জোর করে বা প্ররোচনার মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করা হলে পুরুষটিকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার করা হবে। পনেরো হাজার টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর জেল হতে পারে। আইনে একথাও বলা আছে যে জোর করে ধর্মান্তরকরণ প্রমাণ করা গেলে এমন বিয়েকে ‘শূন্য’ (নাল অ্যান্ড ভয়েড) ঘোষণা করা হবে। বলা হয়েছে, কেউ স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হতে চাইলেও জেলা প্রশাসকের কাছে দু মাস আগে নোটিস দিতে হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্কাদের ধর্মান্তরকরণ হলে আবার পঁচিশ হাজার জরিমানা ও দশ বছর জেল হতে পারে। গণ-ধর্মান্তরকরণ হলে জরিমানা পঞ্চাশ হাজার, জেল দশ বছর।
উত্তর প্রদেশ ছাড়া একইরকম আইন আনার তোড়জোড় চলছে আরও চারটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যে। মধ্যপ্রদেশে খসড়া বিলে প্রাথমিক শাস্তিপ্রস্তাব ছিল পাঁচ বছরের জেল। তা বাড়িয়ে দশ বছর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হরিয়ানায় তিন-সদস্য কমিটি বিলের খসড়া তৈরি শুরু করেছে। কর্নাটক ও অসমেও চলছে প্রস্তুতি।
লক্ষণীয় ব্যাপার হল, উত্তর প্রদেশে রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল অর্ডিন্যান্সে সম্মতি জানানো মাত্রই ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়। সেদিনই এক মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় বারেলি থেকে। তার মানে আন্তঃধর্ম বিবাহের খোঁজ গেরুয়াবাহিনী রাখছিল অনেক আগে থেকেই, তালিকা বানিয়ে সম্ভবত শাস্তির তোড়জোড়ও করছিল। শুধু আইন প্রণয়ন হওয়ার অপেক্ষাতেই তারা ছিল। অন্তত পনেরো জন গ্রেপ্তার হয়েছেন তারপর থেকে। এমনকি একটি এমন বিয়েও বানচাল করার খবর পাওয়া গেছে, যা স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে হচ্ছিল। সেক্ষেত্রেও যুবককে বলা হয়েছে, পাত্রীকে ধর্মান্তরিত যে করা হচ্ছে না, তা জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে প্রমাণ করতে!
এদিকে আইনজীবী ও প্রাক্তন বিচারপতিরা বলছেন, কোনও ঘটনা নতুন আইনের নোটিস জারির আগে ঘটে থাকলে তা এই আইনের আওতায় পড়বে না। কারণ এমনটা দেওয়ানি আইনের ক্ষেত্রে হলেও ফৌজদারি আইনের ক্ষেত্রে হয় না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অন্তত তিন-চারটি কেসে এফআইআর করা হয়েছে পূর্বতন ঘটনার ভিত্তিতে। তাই, উত্তর প্রদেশের এডিজি প্রশান্ত কুমার যতই আশ্বাস দিন যে এই আইনের অপব্যবহার হবে না, কার্যক্ষেত্রে বহুল অপব্যবহার ঘটছেই।
এর আগে আমরা দেখেছি, বহুজাতিক গহনা প্রস্তুতকারক সংস্থা তাদের বিজ্ঞাপনে আন্তঃধর্ম বিয়ে দেখালেও বিজেপি ও সহযোগী দলগুলি ভাঙচুর চালিয়েছে শোরুমে, বিজ্ঞাপন তুলে নিতে বাধ্য করেছে। এরপর নিকিতা তোমার নামের এক একুশ বছরের মেয়ে হরিয়ানায় মুসলিম প্রণয়প্রত্যাশীর হাতে খুন হলে লাভ-জিহাদ ইস্যু আবারও সরগরম হয়ে ওঠে। অথচ প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে খুনের ঘটনা এ দেশে আকছার ঘটে এবং তার জন্য দায়ী ইসলাম নয়, দায়ী হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ, যা মেয়েদের থেকে ‘না’ শুনতে নারাজ।
এই নিকিতা তোমারের ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথও বলেছিলেন, হিন্দুদের মা-বোনের ‘সম্মান’ নিয়ে টানাটানি হলে, তিনি বিধর্মীদের ‘রাম নাম সত্য’ করে দেবেন। যতি নরসিংহানন্দ সরস্বতী, সর্বভারতীয় সন্ত সমাজের প্রধান ও গাজিয়াবাদের দশনা দেবী মন্দিরের মোহান্ত, দিল্লির যন্তর মন্তরে বলেছিলেন, বাড়ির মেয়েদের দিকে যদি মুসলমান ছেলেরা ‘নজর দেয়’, তাহলে তাদের মেরে ফেলতে হবে। ফেসবুকে লাভ জিহাদ নিয়ে উস্কানিমূলক ভিডিও পোস্ট করেছিল কপিল গুজ্জর নামে সেই ছেলেটিও, যাকে এই বছরের শুরুতে শাহিনবাগে গুলি চালাতে দেখা গেছিল।
আন্তঃধর্ম বিয়ে, বিশেষত হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলের বিয়ে, অনেকদিন ধরেই বিজেপি তথা হিন্দু সংগঠনগুলির মাথা-ব্যথার কারণ।
আন্তঃধর্ম বিবাহ নিয়ে এই রাজনীতি হিন্দুসভার সময় থেকেই ছিল। ইউএন ব্যানার্জী ও তৎকালীন হিন্দু মহাসভা তা নিয়ে বিস্তর প্রচার চালিয়েছিল এক কালে। আবার সংস্কারপন্থী আর্যসমাজের দুটি লিখিত প্রচারপত্র ছিল— ‘হিন্দু আওরাতোঁ কি লুট’ আর ‘হিন্দু স্ত্রীও কি লুটনে কি কারণ’। ক্রমে সেসব প্রচারের দায়িত্ব অধুনা আরএসএস ও বিজেপি ঘাড়ে নিয়েছে, বলা বাহুল্য। বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীরা এরই নাম দিয়েছে ‘লাভ জিহাদ’। প্রেমের অছিলায় অন্য ধর্মের প্রতি ইসলামের জিহাদ— এইরকম একটি কনস্পিরেসি থিওরির জন্ম তারা দিয়েছে। হিন্দু মেয়েদের বলপূর্বক বা প্ররোচনার মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করে বিবাহ করছে মুসলমান ছেলেরা, এমন একটি মিথ তারা নির্মাণ করতে চাইছে। সুপ্রিম কোর্ট কয়েক বছর আগে ‘লাভ জিহাদ’ প্রসঙ্গে বলেছিল, যদিও প্রেমে পড়ে অনেকেই বিয়ের জন্য ধর্মান্তরিত হন ভারতে, কিন্তু লাভ-জিহাদ ধরনের কোনও সার্বিক কনস্পিরেসি থিওরির সপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ তাঁরা পাচ্ছেন না। বাস্তবে ভারতে ৯০ শতাংশ বিয়েই হয় পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করে, মাত্র পাঁচ শতাংশ অসবর্ণ বিয়ে হিয়, সেখানে বলা বাহ্য যে আন্তঃধর্ম বিয়ের সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য, কখনই ২-৩ শতাংশের বেশি নয়।
দুটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। তা কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তির ভালো লাগার কথা নয়। আবার, তথাকথিত লাভ-জিহাদের প্রতি ঘৃণায়, হিন্দুত্ববাদীদের বিতৃষ্ণা প্রকট হয় নারীর এজেন্সির প্রতিও। যোগী আদিত্যনাথের হুঙ্কারটি মনে করুন। ‘মা-বোনের সম্মান’ ক্ষুণ্ণ হলে তিনি বিধর্মীকে হত্যা করবেন। অথচ লক্ষণীয়, নিকিতা নামের মেয়েটি কিন্তু মারা গেছিল। প্রাণের চেয়েও মেয়েটির সম্মানই তাঁর কাছে প্রধান। কারণ মেয়েটির ‘সম্মান’ (পড়ুন কুমারীত্ব) এক্ষেত্রে হিন্দুজাতির সম্মানের সমার্থক হয়ে উঠেছে। নারীর নিজস্ব এজেন্সির, তার যৌনসঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতার এক্ষেত্রে স্বীকৃতি নেই। নারীদেহই এখানে ধর্মীয় ক্ষমতা-দখলের জমি। এভাবেই বিজেপি লাভ-জিহাদ সংক্রান্ত নির্বাচনী অ্যাজেন্ডা সাজিয়েছে।
উত্তর প্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্য তাদের আইনে ও বিলে ‘জোর করে বা প্ররোচনা দিয়ে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে’-র কথা বলেছে। এখন ‘জোর করে বা প্ররোচনা দিয়ে’ ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা হয়েছে কিনা, তা বলবে কে? ধর্মান্তরিত ব্যক্তিটির নয়, সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির বাবা-মা-ভাই-বোনের নালিশকে গ্রাহ্য ধরা হবে (এমনকি ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলেও)। এতদিন ভারতীয় বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক ও অবিবাহিত দুজন মানুষের বিয়েতে তৃতীয় ব্যক্তির আপত্তি গ্রাহ্য হত না।
প্রশ্ন উঠতে পারে, বিয়ে করার জন্য ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রয়োজন কী? স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট তো আছেই। ঠিক। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টেও কিন্তু এক মাস আগে নোটিস দিতে হয়। কেউ আপত্তি করছেন কিনা, তা দেখার জন্য এই নোটিস। অনেক আন্তঃধর্ম বিবাহের ক্ষেত্রেই রেজিস্ট্রারের অফিসে নোটিস দেওয়ার পর বাধে বিপত্তি। পরিবারের লোকজন জানতে পারলে মারধর, ভয় দেখানো অনিবার্য হয়ে ওঠে। ‘অনার কিলিং’-এর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অর্থাৎ কিনা বাড়ির অমতে বিয়ে করতে চাইলে স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট-এর দীর্ঘসূত্রিতা ও নোটিস প্রকাশ্যে টাঙিয়ে রাখার নিয়ম অনেক ক্ষেত্রেই বিপদ ডেকে আনে। তাই অনেক সময় গোপনে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করতে অনেকে বাধ্য হতেন। সে উপায়ও আর রইল না। কারণ স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হতে চাইলেও জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হতে হবে, কোথাও একমাস, কোথাও দুমাস আগে। গেরুয়াবাহিনী যদি বিয়ে আটকাতে চায়, তাহলে তৃণমূল স্তরে তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপর নজর রাখতে পারে। তারপর ভয় দেখিয়ে বিয়ে বানচাল করা কঠিন হবে না। বিয়ে বানচাল না করা গেলেও বিয়ের পর দম্পতিকে উৎপীড়নের রাস্তা খোলা থাকছে। শুধু বাবা-মা-ভাই-বোনকে দিয়ে একটা এফআইআর করানোর অপেক্ষা। কেসে ‘প্ররোচনা-জোর করা-প্রলোভন’ ইত্যাদি প্রমাণ না করা গেলেও, হেনস্থা তো করা যাবে! এইভাবে আন্তঃধর্ম বিয়ের পদ্ধতিকে অযথা জটিল বানিয়ে আসলে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতেই চাইছে।
আরও উল্লেখ্য, অন্য আইনের ক্ষেত্রে ‘বার্ডেন অফ প্রুফ’ থাকে অভিযোগকারীর উপর। প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তকে নিরপরাধ ধরা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অভিযুক্তকে প্রমাণ দিতে হবে যে সে জোর করে ধর্মান্তর করেনি।
আর যদি অধিকারের প্রশ্নই ওঠে, তাহলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির স্বাধীনভাবে বিয়ে করার অধিকারের মতো স্বাধীনভাবে ধর্মান্তরিত হওয়ার বা বিশ্বাস পরিবর্তন করার অধিকারও থাকাই বাঞ্ছনীয়। গণতান্ত্রিক একটি দেশের কিছু আন্তর্জাতিক মূল্যবোধ বজায় রাখার দায়বদ্ধতাও থাকে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১৮ ধারায় ভারত সই করেছিল। সেখানে বলা ছিল, আপন বিশ্বাস ও বিবেক অনুযায়ী আচরণের স্বাধীনতার কথা, যেমন খুশি ধর্মাচরণ করার বা না করার স্বাধীনতার কথা। ভারতের সংবিধানের ২৫ ধারাতেও সেই অধিকার স্বীকৃত। লাভ জিহাদ আইন যেন সেই সব অধিকার বাজেয়াপ্ত করল।
শুধু ২৫ নং সাংবিধানিক ধারা খর্ব করা নয়, লাভ জিহাদ আইন আরও নানাভাবে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী। সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা (সাম্যের অধিকার), ১৫ নম্বর ধারা (ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যে নিষেধাজ্ঞা), ২১ নম্বর ধারা (জীবন ও স্বাধীনতার অধিকার) ইত্যাদিও তা আলবাত খর্ব করে। সংবিধানের ২১৩ ধারা অনুযায়ী রাজ্য সরকার বিশেষ অবস্থার নিরিখে নতুন অর্ডিনান্স জারি করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারে। কিন্তু উত্তর প্রদেশের ক্ষেত্রে সেই বিশেষ অবস্থাটি কী? কেবলমাত্র দুটি মানুষের ভালোবাসা?
আশার কথা, আইনজীবী, বিচারক ও নাগরিক সমাজের একাংশ যথাসাধ্য প্রতিরোধও গড়ে তুলছেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট উত্তর প্রদেশ সরকারকে একাধিক পিটিশনের ভিত্তিতে নোটিস দিয়েছে। এই সব পিটিশনই আন্তঃধর্ম বিবাহ জনিত নতুন আইনের বিরোধিতা করে। কিন্তু কোর্ট ওই আইনে কোনও স্টে-অর্ডার জারি করেনি। সরকারকে নোটিশ দিয়ে সে পাল্টা এফিডেফিট করতে বলেছে ৪ জানুয়ারির মধ্যে। সেই এফিডেফিটের জবাব আবার পিটিশনাররা দেবেন ৬ তারিখের মধ্যে। ৭ তারিখে পুনঃশুনানির তারিখ রেখেছে হাইকোর্ট।
এই আইন বাতিলের দাবিতে পিটিশন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টেও। সাংবাদিক ও সামাজিক কর্মী তিস্তা সেতালভাড পরিচালিত মুম্বাই-এর একটি এনজিও, সিটিজেনস ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস, সুপ্রিম কোর্টে এই উত্তর প্রদেশীয় আইনের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা করেছে। উত্তরাখণ্ডের প্রায় সমগোত্রীয় আইনটির বিরুদ্ধেও তাদের এই মামলা।
দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তর প্রধান বিচারপতি এপি শাহ মনে করেন, এখনই লাভ জিহাদ বিরোধী যাবতীয় আইন বাতিল করা উচিত। তিনি বলেন, এ আইনের ভিত্তিতে এজলাশে বিচার-টিচার সাজে না। এ হল খাপ পঞ্চায়েতের নারীস্বাধীনতা বিরোধী মানসিকতার পরিচয়। তিনি এও মনে করেন যে, এই আইনের অপব্যবহারের সম্ভাবনা অসীম। ঐতিহাসিক চারু গুপ্তা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, কোনও আইন কীভাবে প্রেমকে ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য করতে পারে!
একবছর আগে ‘ল্যয়লা’ নামের এক ওয়েব চলচ্চিত্র দেখিয়েছিল ‘আর্যাবর্ত’ নামক এমন এক ডিস্টোপিয়া, যেখানে আন্তঃধর্ম বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েটির বিধর্মী সঙ্গীটিকে খুন করে দেওয়া ও সন্তানকে সরকারি তৎপরতায় গুম করাটাই দস্তুর। পিঙ্কির সন্তানকে কোনও ইঞ্জেকশন দিয়ে হয়ত মেরে ফেলা হয়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর কালে তার সন্তানসম্ভবা মা যে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গেল, তা অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল নিঃসন্দেহে।
যেমন, একটি মান্য প্রশ্ন হল, অগাস্ট ল্যান্ডমেসারের জার্মানি আর পিঙ্কির ভারতবর্ষের তফাত ঠিক কতটা?