অম্লান চক্রবর্ত্তী
নিরঞ্জনা নদীতীর বরাবর দ্রুতপায়ে চলেছেন শ্রেষ্ঠী সুজাতা। সুরূপা শ্রেষ্ঠীর অধরে হাসি নেই, ডাগর নয়নকোণে উদ্বেগের কালো মেঘ। চলনে চঞ্চলতা। মনে বারংবার বেজে চলেছে সশঙ্ক ধ্বনি, “পৌঁছনো যাবে তো? মানুষটি বাঁচবে তো?” হাতে এক বাটি পরমান্ন। ক্ষুধার্থ ভিক্ষুকের জন্য। সুজাতার গন্তব্য উরুভেল্লা গ্রামে নদীতীরের পিপুল ছায়াতল।
কিন্তু কে সেই ভিক্ষুক? কার জন্য সুজাতার এই উদ্বেগ? প্রাতঃভ্রমণে কোন ক্ষুধার্থ মানুষকে দেখে সুজাতা কোনওক্রমে বাড়ি ফিরে পরমান্ন নিয়ে পুনরায় চলেছেন উদ্বিগ্ন মুখে? ভিক্ষুকের কঙ্কালসার দেহের মানুষটির মুখে যন্ত্রণার মেঘের আড়ালে রাজলাবণ্য। রাজনন্দন তো তিনি অবশ্যই। বংশমর্যাদায় কপিলাবস্তুর রাজপুত্র। স্ত্রী, সন্তান সহ তাঁর জীবন ছিল কানায় কানায় ভরা। কিন্তু সুখে ছিলেন না কুমার। পরম সত্যের সন্ধানী মন ছিল তাঁর। একদিন সংসার ত্যাগ করে চললেন সেই সত্যের সন্ধানে। বহু পথ ভ্রমণের পর এসে পৌঁছলেন উরুভেল্লা গ্রামে। নিরঞ্জনা (অধুনা ফল্গু) নদীর তীরে এক পিপুল গাছটির নিচে ধ্যানস্থ হলেন। কিন্তু এবারেও অসফল ক্ষুধার্থ, অবসন্ন রাজকুমার। এতদিনের তপোব্রত মননের কাছে অসফলতা অপরিচিত নয়। বহুবার তপস্যা সফল না হলেও মনকে তিনি বেঁধেছেন পরম নিষ্ঠার সঙ্গে। সত্যের পথের সন্ধানে রাজনন্দনের পরিচয় ত্যাগ করে নিজেকে গড়েছেন ভিক্ষুক। কিন্তু আজ তিনি অনুভব করছেন, কোথাও হয়তো সমস্যা হচ্ছে। শরীরটাও ভেঙে পড়ছে ক্ষুধায়। আর পারছেন না তিনি। এলিয়ে পড়ল অভুক্ত শরীরটা। সেই মুহূর্তে সুজাতার চোখে পড়েন সিদ্ধার্থ।
পরমান্ন হাতে সুজাতা পিপুল ছায়াতলে উপস্থিত হলেন। ক্লিষ্ট সিদ্ধার্থ চোখ মেলে দেখলেন সম্মুখে মাধুকরী হাতে এক সুজাতাকে। আহারান্তে তৃপ্ত মনে তিনি পুনরায় ধ্যানে বসলেন। হঠাৎ যেন মনের সমস্ত মেঘ কেটে গেল। চোখের সামনে ফুটে উঠল সত্যের আলো। রাজকুমার সিদ্ধার্থ হয়ে উঠলেন গৌতম বুদ্ধ।
উরুভেল্লা গ্রাম আজ পরিচিত বুদ্ধগয়া বা বোধগয়া নামে। বোধগয়ার ফল্গু (তৎকালীন নিরঞ্জনা) নদীর তীরে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগের কথা। সেই কোন ছোটবেলায় পড়া গল্পগুলি জীবন্ত হয়ে উঠছিল সামনে। আমার গন্তব্য বুদ্ধগয়ার মহাবোধি কমপ্লেক্স।
তথাগতর পথে চলার বাসনায় এবারের ভ্রমণ শুরু করেছি। এই পথের পোশাকি নাম “বুদ্ধিস্ট সার্কিট”। শুরুতেই এই বিষয়ে একটু বলে নিই। লুম্বিনীতে তথাগতের জন্ম, বুদ্ধগয়ায় বোধি লাভ, সারনাথে শিক্ষাদান তথা বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠা এবং কুশীনগরে মহানির্বাণ লাভ। এই চারটি জায়গার সঙ্গে শঙ্কস, রাজগীর, শ্রাবস্তী ও বৈশালীতেও অধিষ্ঠান করেন তথাগত। কোথাও বা বৌদ্ধধর্মের প্রচার, আবার কোথাও রাজার পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষকে উত্তরণের পথে দীক্ষিত করা। এই আটটি জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বৌদ্ধ সার্কিট। নানাবিধ উপায়ে এই পথটি ঘোরা যায়। আমি কলকাতা থেকে বুদ্ধগয়া হয়ে শুরু করেছি। হাওড়া থেকে রাতের ট্রেনে পরদিন এসে পৌঁছেছি গয়া। সেখান থেকে অটো রিক্সায় চেপে বুদ্ধগয়া।
বুদ্ধগয়ার মহাবোধি কমপ্লেক্সে পৌঁছনোর পর থেকেই এক অপার্থিব ভালোলাগায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। ইউনেস্কো ২০০২ খ্রিস্টাব্দে এই কমপ্লেক্সকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছে। এই “লার্জার দ্যান লাইফ” কমপ্লেক্সের শান্ত পরিবেশ এবং মহান বৌদ্ধ স্তব “বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি” চরম নাস্তিকের মনেও ভক্তিরসের সঞ্চার করে।
গোটা কমপ্লেক্সের প্রতিটি কোণ সমৃদ্ধ তথাগতর বোধিলাভের পরবর্তী সাত সপ্তাহের গল্পে। বোধিলাভের পর তথাগত আরও সাত সপ্তাহ এই স্থানে ছিলেন। এবং সাত দিন করে একেকটি জায়গায় অধিষ্ঠান করেন।
প্রথম সপ্তাহে তিনি ছিলেন বোধিলাভের স্থানেই। বর্তমানে সেখানেই পাথরের এক বিশাল বৌদ্ধ মন্দির। সম্রাট অশোক নির্মাণ করেন। মন্দিরের অন্দরে একটি সোনার বুদ্ধমূর্তি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে এই মুখ স্বয়ং বুদ্ধের আসল মুখ। এই ভাবনার গভীরে লুকিয়ে আছে এক গল্প। মন্দিরের ভীতর একটি বুদ্ধ মূর্তি স্থাপনের ইচ্ছা ছিল সম্রাট অশোকের। কিন্তু কোনও ভাস্কর এই কাজ করতে পারছিলেন না। হঠাৎ একদিন এক সুদর্শন যুবক এসে মূর্তি গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। এবং অনুমতি পাবার পর সেই ভাস্কর দুটি শর্ত আরোপ করলেন। প্রথমটি হল, কিছুটা সুগন্ধি মৃত্তিকা ও একটি প্রদীপ মন্দির প্রাঙ্গণে রাখতে হবে, আর দ্বিতীয়টি, মূর্তি তৈরিতে যে ছয় মাস সময় লাগবে, তার মধ্যে মন্দিরের দ্বার বন্ধ রাখতে হবে। নিমরাজি হলেও ভক্তবৃন্দ সেই অনুমতি তাঁকে দিলেন। তারপর দিন যায়, রাত যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, মন্দিরের দরজা বন্ধ। অবশেষে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে ভক্তবৃন্দের। ছয়মাস হতে ঠিক চারদিন আগে ভক্তের দল দরজা খুলে দেখলেন, কক্ষ শূন্য। ভাস্কর অনুপস্থিত। পরিবর্তে আছে এক সোনার বুদ্ধমূর্তি যার থেকে অপার্থিব এক জ্যোতি বিচ্ছুরিত হয়ে সমস্ত মন্দিরকে আলোকময় করে রেখেছে। কিন্তু মূর্তির বুকের কাছে একটু জায়গা অসম্পূর্ণ। কয়েকদিন পর মন্দির প্রাঙ্গনে শায়িত এক বৌদ্ধ ভিক্ষুক স্বপ্নে জানতে পারেন স্বয়ং তথাগত এই মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি অধিষ্ঠান করছেন এই মূর্তির মধ্যেই। তাই এই মূর্তিই হল ভগবান বুদ্ধের মুখের সদৃশ।
প্রথম ঝলকে মূর্তিটির দিকে তাকাতেই যেন চোখ আটকে গেল। রবীন্দ্রনাথের “মূল্যপ্রাপ্তি” কবিতার সুদাসের মতো অবস্থা হল আমার। মূর্তিটির মুখ থেকে যেন বিকিরিত হচ্ছে তপোজ্যোতি। প্রজ্ঞায় দীপ্ত চোখদুটি করুনায় দ্রব। চিত্রার্পিতের মতো দাঁড়িয়েছিলাম মূর্তিটির সামনে। কতক্ষণ মনে নেই। এক বয়স্ক লামা এসে সৌম্যস্বরে বললেন, “বেটা, ওঁকে (মূর্তিটিকে) এবার স্নান করানো হবে। এই সময় কারও থাকার নিয়ম নেই। ঘন্টাখানেক পরে এসো।”
আমি মন্দির থেকে বেরিয়ে এলাম বোধিবৃক্ষের সামনে। বর্তমানে সেই বোধিবৃক্ষ রেলিঙে ঘেরা। যার গায়ে অগণিত ভক্তের দল প্রার্থনা পতাকা জড়িয়ে দিচ্ছেন। নির্বাণ প্রত্যাশী বৌদ্ধদের সযত্ন নিবেদন। কিন্তু কোনও কোলাহল নেই। বরং অনন্য নীরবতা।
কমপ্লেক্সের ভিতর আরও একটি মন্দির আছে। সেই মন্দিরের নাম “অনিমেষ লোচন”। বোধি লাভের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে তথাগত ঐখানে দাঁড়িয়ে সাতদিন ধরে অপলক নয়নে বোধিবৃক্ষের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। বুদ্ধগয়ার মন্দিরগুলি সবই নির্মিত উত্তর ভারতীয় মন্দির স্থাপত্যবিদ্যায়। অনেকটাই দেউল স্থাপত্য।
কমপ্লেক্সের পরিবেশের স্নিগ্ধতায় চঞ্চল মন ও শান্ত হয়। আমি ধীরপায়ে পৌঁছলাম কংকমনে। এখানে তথাগত ছিলেন তৃতীয় সপ্তাহে। দেবতাদের সন্দেহ দূর করতে এখান থেকেই স্বর্গে গিয়ে গৌতম বুদ্ধ দেবতাদের দেখা দিয়ে এসে নিজের দেবত্ব প্রমাণ করেছিলেন। পদ্মফুল দিয়ে সাজানো জায়গাটা। বিশেষ বিশেষ দিনে আরও সাজানো হয়। এখানেই ভক্তের দল দণ্ডি কাটেন। হঠাৎ একটি পাথরের উপর দেখলাম ভক্তবৃন্দ প্রণাম করছেন। ওই পাথরের উপর এক জোড়া পায়ের ছাপ। তথাগতর চরণচিহ্ন।
এরপর রত্নগড়। চতুর্থ সপ্তাহে এখানে অধিষ্ঠান তথাগতের দেহ হতে বিভিন্ন রঙের জ্যোতি বিকিরিত হয়েছিল। তাই নানা রঙের রঙিন ফুল বর্তমানে জায়গাটি সাজানো। চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য।
শুভ কাজে বাধা আসে। আসে পদস্খলনের ফাঁদ। চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় তপস্বীর। মহাভারতে ভীষ্মর ধ্যান ভঙ্গ করতে আগমন ঘটেছিল মেনকার। তথাগতর ক্ষেত্রেও পঞ্চম সপ্তাহে স্বর্গের দেবতাগণ ফন্দি আঁটলেন। প্রেরিত হলেন তিন নর্তকী। তাঁদের নাম তানহা, রতি এবং রাগা। ধ্যানী সিদ্ধার্থর সামনে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে শুরু করলেন নৃত্য। কিন্তু সফল হলেন না। ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মনোসংযোগে সামান্য চিড় ধরাতে ব্যর্থ হলেন অপ্সরীগণ। সাত দিনের প্রচেষ্টার পর বিফল মনোরথে তাঁরা ফিরে গেলেন স্বর্গে। জায়গাটির নাম অজপল নির্গধ বৃক্ষ। এখানে বসে ধ্যান করে প্রার্থনা করলে ফল পাওয়া যায়, এমনি বিশ্বাস। বর্তমানে বহু ছোট ছোট বৌদ্ধ সমাধি প্রতীয়মান হয় এখানে। আর সমাধীর পাশে ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ ভিক্ষু।
আমি হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছলাম কমপ্লেক্সের পশ্চিম প্রান্তে। সেখানে একটি বিশাল সরোবর আছে। নাম মুচলিন্দ সরোবর। মাঝখানে পদ্মের উপর বুদ্ধের ধ্যানস্থ মূর্তি। উপরে পদ্মগোখরো ছাতার মতো নিজেকে মেলে ধরে বসে আছে। বোধিলাভের পর ষষ্ঠ সপ্তাহে প্রবল বর্ষণে প্লাবন হয়। সেই সময় একটি পদ্মগোখরো ধ্যানমগ্ন ভগবান বুদ্ধকে ঘিরে ও মাথায় ছাতার মতো মেলে ধরে রক্ষা করেন। সাতদিন পরে প্লাবন থেমে গেলে পদ্মগোখরোটি মানুষ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এই মূর্তিটি সেই ঘটনার স্মারক। বড় মনোরম এই সরোবরের জল। নিস্পন্দ জলের দিকে চেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কেটে যায়।
নির্বাণ লাভের পর শেষ সপ্তাহে ভগবান বুদ্ধ রজয়াতন বৃক্ষের নিচে ধ্যানে বসেন। সাতদিন পর তাপুসা ও ভল্লিকা নামক দুই ব্যবসায়ী আসেন। দীর্ঘ ৫০ দিনের উপবাসের পর ভগবান বুদ্ধ তাঁদের হাতে পিঠে ও মধু খেয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তাঁদের বলেন।
বুদ্ধগয়ার মহাবোধি কমপ্লেক্সে যেটি সবথেকে চোখে পরে তা হল প্রায় সর্বত্রই ভক্তের দল প্রার্থনা করছেন। কেউ বা দণ্ডি কাটছেন, কারওঁ মুখে শান্ত অথচ গভীর কণ্ঠে বৌদ্ধ প্রার্থণা মন্ত্র পথ করছেন। অপার্থিব এক প্রশান্তি অনুভব করছিলাম আমি।
বেলা দুটো বাজতেই মনে হল কিছু খাওয়া দরকার। মহাবোধি কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে এলাম। বাইরে বিহারের বিখ্যাত লিট্টি চোখা খেয়ে চললাম বোধগয়ার অন্যান্য মন্দিরগুলি দেখতে। কাছাকাছি আরওঁ কয়েকটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। বিভিন্ন দেশের তৈরি মন্দির। তাইল্যান্ড, তিব্বত, চিন, মায়ানমার, ভিয়েতনাম এই পাঁচটি দেশের মন্দির বা মনাস্ট্রির প্রত্যেকটিই নিজের মতো করে সুন্দর। মায়ানমার মনাস্ট্রি ছাড়া বাকিগুলি মহাবোধি কমপ্লেক্সের এক কিলোমিটারের মধ্যে।
থাই মনাস্ট্রিটি সবচেয়ে সুন্দর। এর ঢালু ছাদ তৈরি হয়েছে সোনালী টাইল দিয়ে। সূর্য্যের আলো এর উপর এসে পড়লে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ভিতরে ২৫ মিটার লম্বা ব্রোঞ্জের বুদ্ধমূর্তি। মনাস্ট্রির দরজার দুই ধারে দুটি দৈত্য পাহারা দিচ্ছে।
মহাবোধি কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে তিব্বতীয় মনাস্ট্রি। তিব্বতি ভাষায় লেখা মন্ত্র, থোঙকা দিয়ে সাজানো।
চিনা মন্দিরটি তিব্বতী মনাস্ট্রির পাশেই। এর ভিতরের তিনটি সোনার বুদ্ধমূর্তির প্রত্যেকটিই অসম্ভব সুন্দর। বিশেষত প্রথম মূর্তিটির সুস্মিত মুখ থেকে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।
ভিয়েতনাম মনাস্ট্রিটি স্থাপত্যের একটি নিদর্শন। পুরো মন্দিরটি একটি ট্রি-হাউসের মতো দেখতে, যার শিকড়গুলি নিচে একটি আকুয়ারিয়াম তৈরি করেছে, সেখানে জলে প্রচুর মাছ। প্রত্যেকটি দেশ যেন নিজেদের সমস্ত নন্দনবোধ প্রয়োগ করে বুদ্ধগয়াকে সাজিয়ে তুলেছেন।
আমার পরবর্তী গন্তব্য সুজাতা কুঠি। একটি অটো চালকের সঙ্গে কথা বলে ঠিক হল একশো টাকার বিনিময়ে উনি আমাকে নিয়ে যাবেন এবং নিয়ে আসবেন। সুজাতা কুঠি আদতে নিরঞ্জনা নদীর অপর তীরে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকা একটি স্তূপ। বলা চলে স্তুপের ভগ্নাবশেষ। কিন্তু সৌধটি বড় উদাসিনী। মনে হচ্ছিল, এখানেই অবস্থান করতেন সুজাতা। চুপচাপ বসেছিলাম সৌধটির অনতিদূরে। পর্যন্ত বিকেলের কোন দেখা আলো এসে পড়েছে স্তূপের উপর। সেজে উঠেছে সুজাতা কুঠি।
সুজাতা কুঠির কাছে পথের ধরে বসেছিলাম। পাশেই সুজাতার গ্রাম। পড়ন্ত বেলার আলোয় দেখি, সেই গ্রামের পথ ধরে হেঁটে চলেছেন এক তরুণী। তাঁরও পায়ে ব্যস্ততা। অনতিদূরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর প্রেয়স। হেডফোনে বাজছে সুমনের গান, “নতজানু হয়ে ছিলাম তখনও, এখনও যেমন আছি/ মাধুকরী হও নয়নমোহিনী স্বপ্নের কাছাকাছি”।