স্বাতী ভট্টাচার্য
সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক
সাতান্ন বছর বয়সি মায়ের জ্বর আর শ্বাসকষ্ট শুরু হতে কলকাতার এক ব্যবসায়ী তাঁর মাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির কাছের সরকারি হাসপাতালে। সেখানে ভেন্টিলেটর ছিল না, তাই ভর্তি করেন বেসরকারি হাসপাতালে। দিনটা ছিল ১২ই এপ্রিল। তার পর থেকেই দফায় দফায় নানা রকম টেস্ট আর নানাবিধ পরিষেবার বিল ধরাতে থাকে হাসপাতালে। ৯ মে মায়ের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বিলের পরিমাণ হয় ১৫ লক্ষ টাকা। দফায় দফায় দরাদরি করে শেষ অবধি রফা হয় পাঁচ লক্ষ টাকায়।
এই ঘটনাটি দিয়ে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে তাঁর নিবন্ধ শুরু করেছেন কমলা ত্যাগরাজন[1], এ কথা বোঝানোর জন্য যে, কোভিড-কালে বেসরকারি চিকিৎসার দর কীভাবে বিপর্যস্ত করেছে ভারতীয়দের। একেই ভারতে এখন যত সরকারি হাসপাতাল হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল তার প্রায় দ্বিগুণ— সরকারি হাসপাতাল যেখানে ২৫ হাজারের কিছু বেশি, প্রাইভেট হাসপাতাল সেখানে ৪৩ হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ, ভারতে প্রতি দশজনের মধ্যে আটজনেরই চিকিৎসা বিমা নেই। ফলে চিকিৎসা চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। আবার গ্রামীণ এলাকায় সরকারি হাসপাতালে দশহাজার মানুষের জন্য সাকুল্যে তিনখানা শয্যা। এটা অবশ্য গড়, উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে শয্যার সংখ্যাটা দুই থেকে আড়াই। কোভিড-কালে সবাই নজর করল, আইসিইউ শয্যা এবং ভেন্টিলেটর, যা সঙ্কটজনক করোনা-আক্রান্ত রোগীর একান্ত প্রয়োজন, তার অধিকাংশই বেসরকারি হাসপাতালে। করোনার চিকিৎসা যাতে নাগালের বাইরে চলে না-যায়, তার জন্য অধিকাংশ রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতর বেসরকারি হাসপাতালের বেশ কিছু শয্যা অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু তারপরেও বেসরকারি কোভিড শয্যাই বেশি অনেক শহরে। স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটের তথ্য, কলকাতায় সরকারি কোভিড শয্যার সংখ্যা ১৭৭১, যেখানে বেসরকারিতে ২৭৫৪।
বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার খরচ তাই কেবল বেসরকারি ক্ষেত্রের নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন নয়। উপভোক্তার প্রতি ন্যায্য ব্যবহার, কিংবা চিকিৎসার মানের প্রশ্নও শুধু নয়। তা সরকারি স্বাস্থ্যনীতির প্রশ্নও বটে। সবার জন্য চিকিৎসা সুলভ করার যে নীতি নিয়েছে সরকার, তার প্রধান উপকরণ স্বাস্থ্যবিমা। কেন্দ্রের ‘প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’ কিংবা পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী’, দুটোরই ব্যয়সীমা পাঁচ লক্ষ টাকা। দুই সরকারই প্রতিযোগিতা করে এর বিস্তার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কেন্দ্রের প্রকল্পটিতে ২০১৭-১৮ সালে ২৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, ২০১৮-১৯ সালে ৩৩১৪ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ সালে এবং চলতি বছরে ৬৪০০ কোটি টাকা। এই বিপুল বরাদ্দের ফলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নয়ন, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রভৃতি খাতে যথেষ্ট টাকা বরাদ্দ হয়নি, কিছু ক্ষেত্রে টাকা কমেছে, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে গত নভেম্বরে রাজ্য সরকার রাজ্যের সব নাগরিকের কাছে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এই প্রকল্পের বরাদ্দ বছরে ৯২৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দু’হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অবশ্য ইতিমধ্যেই আপত্তি তুলেছে যে, যে চিকিৎসার জন্য খরচের যে হার বেঁধে দিয়েছে রাজ্য, তা অবাস্তব। অর্থাৎ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি উঠেছে একেবারে গোড়া থেকেই।
যদিও সরকারি এবং বেসরকারি, উভয় হাসপাতালই থাকে বিমার ‘নেটওয়ার্ক’-এ, তবু ‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা’-র মতো সরকারি প্রকল্পগুলির অভিজ্ঞতা বলে, অধিকাংশ রোগীই ভর্তি হন বেসরকারি হাসপাতালে। অর্থাৎ সরকারি অর্থ যায় বেসরকারি ক্ষেত্রের চিকিৎসা বিল মেটাতে। তাতেও রাজি হওয়া যায়, যদি দেশবাসীর চিকিৎসার প্রয়োজন মেটায় বেসরকারি হাসপাতাল। কোভিড অতিমারি, যা সাম্প্রতিক কালের সর্বাধিক বড় স্বাস্থ্যসঙ্কট, তা কি সেই ভরসা দিল?
বেসরকারি ক্ষেত্র যে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের পরীক্ষায় খুব বেশি নম্বর পাবে না, তার কারণ তিনটি। এক, অতিরিক্ত খরচ। দুই, অকারণ চিকিৎসা। এবং তিন, রোগী প্রত্যাখ্যান। আশি শতাংশ ভেন্টিলেটর নিয়েও, মোট সঙ্কটাপন্ন রোগীদের মাত্র দশ শতাংশের চিকিৎসা করেছে বেসরকারি হাসপাতাল। ভারতের প্রতি পাঁচজন ডাক্তারের চারজনই কাজ করেন বেসরকারি ক্ষেত্রে, কিন্তু তাঁদের একটি বড় অংশ কোভিড-আক্রান্তের চিকিৎসা তো করেনইনি, অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা থেকেও সরে থেকেছেন। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কোভিড-লক্ষণ দেখা দিতেই বহু বেসরকারি হাসপাতাল রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয়। যদিও অনেকে যুক্তি দেয় যে তাদের ‘পরিকাঠামো নেই’, কিংবা ‘প্রোটোকল তৈরি হয়নি,’ কিন্তু বারবার অভিযোগ ওঠে যে নন-কোভিড চিকিৎসা বন্ধ করে ব্যবসার ক্ষতি করতে রাজি না-হওয়ার জন্যই বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড রোগী এড়িয়েছে। আর যখন নিয়েছে, তখন যে বিল তৈরি করেছে তার অঙ্ক দেখে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রোগী। এপ্রিল মাসেই দিল্লির এক নাগরিক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন, কোভিড-চিকিৎসার হার বেঁধে দেওয়ার জন্য। ক্রমশ প্রায় সব রাজ্যই প্রতিটি চিকিৎসার উপকরণ, পরীক্ষা, প্রভৃতি ধরে ধরে দামের উর্ধ্বসীমা বেঁধে দেয়। কিন্তু তার ফাঁকফোকর দিয়ে বিল বাড়ানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। নিজের খরচে যাঁরা চিকিৎসা বিমা করান, সেই ‘মেডিক্লেম’ গ্রাহকদের এক এজেন্ট-এর অভিজ্ঞতা, গড়ে তিনলক্ষ টাকা বিল হচ্ছে। বিমা কোম্পানি দিচ্ছে দেড়লক্ষ টাকা মতো, বাকি দিতে হচ্ছে গ্রাহককে, কারণ পিপিই-জাতীয় সুরক্ষা সরঞ্জামের টাকা দিচ্ছে না বিমা কোম্পানি। তবে যখনই আইসিইউ-য়ের প্রয়োজন হচ্ছে, তখন সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বহু মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার, যথা অবসরপ্রাপ্ত আইএএস, অধ্যাপক প্রভৃতি, তাঁরাও ঝুঁকেছেন সরকারি হাসপাতালের দিকে। অতিরিক্ত খরচ এড়ানোর তাগিদ ছাড়াও কাজ করেছে অকারণ পরীক্ষা আর ওষুধ এড়ানোর চেষ্টা। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তার কথায়, ‘রেমডিসিভির’ ওষুধ, কোভিড রোগীর উপর যার প্রয়োগের কোনও স্পষ্ট বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না, তা এত বেশি প্রয়োগ করেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলি যে, ওষুধের কালোবাজারি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় তার দাম উঠে গিয়েছিল তিরিশ হাজার টাকা। সংবাদে প্রকাশ, সাড়ে পাঁচহাজার টাকার একটি ভায়ালের জন্য দিল্লিতে ষাট হাজার টাকাও দাবি করেছে দোকানদার।[2] অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নভেম্বরে জানিয়েছে, সংক্রমণ যতই তীব্র হোক, রেমডিসিভির প্রয়োগ করে ভাল ফল মেলার নজির মেলেনি। ফলে তা ব্যবহার না-করারই সুপারিশ করেছে ওই সংস্থা। সেই রকমই, কোভিড সংক্রমণ হয়েছে কিনা বুঝতে বুকের সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিয়েছেন বহু প্রাইভেট চিকিৎসক, প্রাইভেট হাসপাতালও ভর্তি-হওয়া রোগীদের পরীক্ষা করিয়েছে। যা অপ্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের প্রচলিত পরীক্ষাগুলিই প্রাথমিক রোগনির্ণয়ের পক্ষে যথেষ্ট।[3]
বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা যাঁরা বিচার করে দেখেছেন, মোটের উপর তাঁদের মতটা এইরকম যে, নড়বড়ে ঢাল-তলোয়ার নিয়েও ময়দানের মাঝখানে নেমে প্রধান লড়াইটা লড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোই। প্রাইভেট হাসপাতাল সম্পদ-সম্বলের অধিকাংশটা নিয়ে পাশে সরে থেকেছে, কিন্তু বাণিজ্যিক স্বার্থকে কখনই সরিয়ে রাখেনি। অনিচ্ছুক সেনানির মতো তলোয়ার চালিয়েছে। হয়তো এই ধারণা সর্বতো ঠিক নয়, কোনও যথাযথ সমীক্ষা হলে বেসরকারি হাসপাতালের ভূমিকা আরও স্পষ্ট হবে। কিন্তু এখনও অবধি রাজ্যবাসী, দেশবাসীর কাছে তাদের যে ভাবমূর্তি, তা খুব ভরসা আনে, এমন নয়। বরং নানা অভিযোগ সত্ত্বেও (প্রধানত, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার আর ডাকলে নার্সদের সাড়া না-পাওয়া) সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং শহরের বড় হাসপাতালগুলি মানুষের বিশ্বাস অনেকটাই অর্জন করেছে। এ সব হাসপাতালের চিকিৎসা বা পথ্য, কোনওটি নিয়েই তেমন অভিযোগ শোনা যায়নি। এবং সরকারি হাসপাতাল সম্পূর্ণ নিখরচায় কোভিড রোগীকে পরিষেবা দিয়েছে বলেই অন্যান্য রাজ্যের মতো, এ রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতালের বিল মারাত্মক অঙ্কে পৌঁছয়নি, মনে করেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা। সরকারি পরিষেবার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়ে রাশ টানতে হয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রকে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি টাকা সরকারি হাসপাতালে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আশ্বাস নিয়ে নির্বাচনে নামলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বরং স্বাস্থ্যবিমাকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে বিধানসভা নির্বাচনের তুরুপের তাস করলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প থেকে রাজ্যবাসীকে বঞ্চনা করার অভিযোগের তিরে বিদ্ধ করতে চাইলেন মমতাকে। দু’জনেই এড়িয়ে গেলেন এই সত্যটা যে, সরকারি পরিষেবাই বিপদের দিনে মানুষের পাশে থেকেছে। জনস্বাস্থ্য, সর্বজন-চিকিৎসার নীতি যদি নিতে হয়, তবে সরকারি চিকিৎসায় বিনিয়োগ অনেক কার্যকর হবে, তার যথেষ্ট সাক্ষ্য মিলেছে অতিমারিতে। চিকিৎসা, প্রশাসন এবং অর্থনীতির অনেক বিশেষজ্ঞই এ বছর বারবার মনে করিয়েছেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার মৌলিক পরিকাঠামোর উন্নতি না করে বিমার উপর নির্ভরতা কোনও দেশে, কোনও রাজ্যে ভাল ফল আনেনি, আনা সম্ভবও নয়।
পরিকাঠামোর সর্বাধিক ফাঁক অবশ্যই প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে। এক তো চিকিৎসাকেন্দ্রের ঘাটতি। ২০১৭-১৮ সালে প্রকাশিত সরকারি তথ্য (রুরাল হেলথ স্ট্যাটিসটিক্স বুলেটিন) অনুসারে, জনসংখ্যার অনুপাতে বিচার করলে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি ৩২,৯০০, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৬,৪৩০, এবং ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘাটতি ২,১৮৮। যে সব কেন্দ্র রয়েছে, তাদের দশাও তথৈবচ। চারটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, অর্ধেকেরও বেশিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মীর (এএনএম) থাকার কোয়ার্টার। দশটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অন্তত চারটিতে রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠাবার গাড়ি নেই। ফলে দেরিও হয়, খরচও বাড়ে। ব্লক হাসপাতালে আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব প্রকট। সার্জন, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞের যত পদ, তার অধিকাংশই খালি। বহু ক্ষেত্রেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মুষ্টিমেয় যে ক’জন ডাক্তার রয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনকে জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন ব্লক হাসপাতালে কাজ করতে। এ রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা একান্তে জানালেন, যাঁরা ব্লক হাসপাতালে কাজ করছেন, সেই ডাক্তারদের অন্তত ৩০ শতাংশের পোস্টিং আসলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।
এর ফলে গ্রামীণ কেন্দ্রগুলোর কী দশা, তা সহজেই অনুমেয়। খাতায়-কলমে এ রাজ্যে ৯০৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু তার ৬৪০টি বস্তত কাজ করছে, বলছে জাতীয় সমীক্ষা (আরএইচএস ২০১৭-১৮)। চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছে মাত্র ২৩৪টি। যদিও সরকারি পরিকাঠামো অনুসারে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই চিকিৎসকের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হওয়ার কথা গ্রামবাসীর, কিন্তু অধিকাংশ কেন্দ্র চালান নার্স ও নানাবিধ কর্মীরা। তবে সরকার গ্রামে চিকিৎসক নিয়োগ করে না, নাকি নিয়োগ করলেও চিকিৎসক শহুরে জীবনের আকর্ষণে গ্রামে থাকেন না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে ডিগ্রিহীন ডাক্তারই যে গ্রামবাসীর প্রধান ভরসা, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যের পরিকাঠামোর উন্নতি কতটা কার্যকর হয়, তার দৃষ্টান্ত কেরল। কোভিড সংক্রমণের হার রুখে দেওয়া, মৃত্যুহার কম রাখতে পারায় কেরলের সাফল্য তাকে বিশ্বে অভিনন্দিত করেছে। তার কারণ বিশ্লেষণ করে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে গবেষকদের একটি দল[4] লিখছেন, কেরলে ৮৪৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র (৩০ হাজারে একটি, যা সরকার-নির্দিষ্ট আদর্শ অনুপাত) সক্রিয় রয়েছে, এবং পঞ্চায়েত ও মেয়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের যোগদানের নির্দিষ্ট ব্যবস্থাও তৈরি রয়েছে। তাই বিদেশ-প্রত্যাগত ব্যক্তিদের গৃহে নজরবন্দি করে রাখা গিয়েছে এবং তাদের্ খাদ্য ও ওষুধের প্রয়োজন মেটানো গিয়েছে। প্রয়োজনে কোয়রান্টিন বা হাসপাতালে দাখিল করা গিয়েছে। বৃদ্ধ এবং অন্য রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সংক্রমণ আটকানো গিয়েছে। যা কেরলের মৃত্যুহারকে কম রাখতে সহায়তা করেছে।[5]
সরকারি ব্যবস্থা, বেসরকারি ব্যবস্থা, অথবা সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্ব, চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্য কোন মডেল যথার্থ, তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এ বিতর্ক সহজে শেষ হওয়ার নয়। তবে এ নিয়ে বোধহয় বিতর্ক চলে না যে, ভারতের সব স্তরের মানুষের কাছে বিপদের দিনে সরকারি হাসপাতালই প্রধান ভরসা, কোভিড অতিমারির প্রথম আট মাস তা প্রতিষ্ঠা করল। সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামো কেন সরকারি অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার পাবে না, কেন রাজনৈতিক চাপান-উতোর বাঁধা থাকবে ‘আয়ুষ্মান ভারত বনাম স্বাস্থ্যসাথী’-র ফ্রেমে, সে প্রশ্নটি নির্বাচনের পূর্বে সব দলকে করা দরকার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
[1] Kamala Thiagarajan. Covid-19 exposes the high cost of India’s reliance on private healthcare; BMJ 2020; 370 doi: https://doi.org/10.1136/bmj.m3506 (Published 10 September 2020)Cite this as: BMJ 2020;370:m3506
[2] Prabha Raghavan , Tabassum Barnagarwala , Abantika Ghosh | April 30, 2020; Covid fight: Govtsystem in front, private hospitals do the distancing; https://indianexpress.com/article/india/coronavirus-covid-19-private-hospitals-6385631/
[3] Anuradha Mascarenhas September 5, 2020. Indian Express; Limit Chest CT Scan Use in Covid Diasgnosis: Doctors; https://indianexpress.com/article/cities/pune/limit-chest-ct-scan-use-in-covid-diagnosis-doctors-6583891/
[4] ২ নং টিকা দ্রষ্টব্য
[5] Menon JC, Rakesh P, John D, et al; What was right about Kerala’s response to the COVID-19 pandemic? BMJ Global Health 2020;5:e003212.