অম্লান চক্রবর্ত্তী
সাত পাহাড়ের কোলে রাজগীর এক ছোট্ট উপত্যকা। একে আগলে রেখেছে চারপাশে সপ্তগিরি— বৈভরগিরি, রত্নগিরি, শৈলগিরি, শোনগিরি, উদয়গিরি, ছোটগিরি, বিপুলগিরি। এই রাজ্যের নাম ছিল গিরিব্রজ। প্রকৃতির আশীর্বাদে এই উপত্যকা সমৃদ্ধ ছিল সবুজ বনানী, সুরম্য বেণুবন, ফসলের ভারে নত যৌবনবতী শস্য ক্ষেতে। যে কোনও সাম্রাজ্যের রাজধানীর পক্ষে অতি সুরক্ষিত এক উপত্যকা। আর তাই মগধের রাজধানী ছিল রাজগীর বা রাজগৃহ (পালি ভাষায় রাজগেহ)। সুপ্রাচীন কাল থেকে এই শহর এক মুখর জনপদ। একদিকে যেমন রাজপ্রাসাদ, সৌধ, গৃহ; অন্যদিকে রাস্তায় রাজা-মন্ত্রী-পাত্র-মিত্র-অমাত্যদের চলাচল, সুসজ্জিত শ্রেষ্ঠীগণের চলাফেরা, মার্জিত নাগরিক কোলাহল, নট, বিট, পুরললনা এবং যুবকদের মিঠে খুনসুটি, নগরনটির কুহকী হাতছানি। ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীতচর্চার আধার ছিল রাজগীর। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বে কাশীর কাছাকাছি শহর রাজগীর। অনেকে এই শহরকে চিহ্নিত করেন “বিহারের বারাণসী” অভিধায়। হিন্দু-জৈন-বৌদ্ধ-ইসলাম এই চার ধর্মের কাছেই রাজগীর এক অত্যন্ত পবিত্র ধর্মস্থান।
মহাভারতে রাজগীর ছিল মগধের রাজা জরাসন্ধর রাজধানী। আমি নিজেও স্থির করেছিলাম মহাভারতের চিহ্ন থেকেই শুরু করব রাজগীর ভ্রমণ। সকালে বুদ্ধগয়া থেকে অটো ভাড়া করে রাজগীর পৌঁছেই টাঙ্গা নিয়ে নিয়েছি। আমার যাত্রাপথের পরিকল্পনা শুনে টাঙ্গাচালক আমাকে নিয়ে চললেন জরাসন্ধের শোন ভাণ্ডার বা স্বর্ণ ভাণ্ডারে। বৈভবগিরির মধ্যে এক গুহা। রাজগীরের “এল ডোরাডো” বলা চলে। এই গুহার মধ্যে আছে এক দরজা। কিন্তু সেই দরজা খোলা যায় না। “চিচিং ফাঁক” মন্ত্র লেখা আছে দরজার গায়ে। কিন্তু আজ অবধি এর পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইংরেজ আমলে একবার পরিকল্পনা হয়, এই দরজা ভেঙে ফেলার। কিন্তু এই পাহাড়েই আছে গন্ধক— যার কারণ রাজগীর প্রস্রবণ। বাস্তুতন্ত্রের সমূহ ক্ষতির কথা ভেবে পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। স্বর্ণভাণ্ডারের পাশে জঙ্গল আর এই জঙ্গলের মাঝেই মল্লযুদ্ধে ভীম পরাস্ত করেন জরাসন্ধকে। আজও জঙ্গলের মধ্যে সেই আখড়ার ধ্বংসাবশেষ আছে। যা “জরাসন্ধের আখড়া” বা “জরাসন্ধ কি আখাড়া” নামে পরিচিত। যদিও বর্তমানে একটি ভাঙা ইটের সীমানা ব্যতীত আর কিছুই সেখানে নেই।
স্বর্ণভাণ্ডারের সামনের রাস্তা স্বর্ণভাণ্ডার রোড কিছুদূর গিয়ে ইংরিজি “T” অক্ষরের মতো মিশেছে রাজগীরের মূল রাস্তা গয়া-মোকামা রোডে। এই মোড়েই মনিয়ার মঠ— বিম্বিসারের স্ত্রী ছলনার নির্মাণ কূপ। যদিও বর্তমান মঠটি নির্মিত হয় গুপ্ত যুগে। চোঙাকৃতির ইঁট দিয়ে নির্মিত এই মঠকে “ওয়ার্ক অফ আর্ট” বলা চলে।
বৈভরগিরির পাদদেশে ব্রহ্মকুণ্ড— একটি উষ্ণ প্রস্রবণ। পাহাড়ের ভিতর থাকা গন্ধকের কারণে ব্রহ্মকুণ্ডের জলের তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। স্নান করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু দেখলাম কুণ্ডের দরজায় ইংরিজিতে লেখা আছে, “অহিন্দুদের প্রবেশ নিষেধ”। সর্বধর্ম মিলনস্থলে এইরূপ বিধিনিষেধ মনে বিরক্তির উদ্রেক করে। তাই বেরিয়ে এলাম।
এরপর গয়া-মোকামা রোড ধরে দক্ষিণে কিছুদূর অগ্রসর হলে পরবর্তী রাস্তার মোড় থেকে পূর্বদিকের পথটি ভারতবর্ষের ইতিহাস। রাস্তাটির নাম “শান্তি স্তুপ রোড”। আমি টাঙ্গা থেকে নেমে পড়লাম। বাকি পথ হেঁটে যাব। চালক অবশ্য বলেছিলেন, আমাকে নিয়ে যাবেন, কিন্তু আমি চাইছিলাম, ঐতিহাসিক পথের ধুলো মাখতে। এই রাস্তায় চলেছেন তথাগত, পদধূলি রেখে গেছেন মহাবীর, এই পথে ঘাম মিশেছে কৌটিল্যের। মহাভারতের যুগ থেকে এই পথ ভারতীয় রাজনীতির মেরুদণ্ড। এই পথে চলার অর্থ ভারতবর্ষের ইতিহাসকে মেখে নেওয়া। বৌদ্ধত্ব লাভের পর আগত বুদ্ধের সম্মুখে এই পথেই “নৃপতি বিম্বিসার/ নামিয়া বুদ্ধে মাগিয়া লইল পাদনখকণা তাঁর”। এই পথে পায়ে চলার সুযোগ কি ছাড়া যায়!
এই পথ দিয়ে চললে প্রথমে পড়ে বিম্বিসার জেল, জীবক আম্রবন। কিন্তু আমি সবার আগে যেতে চাই গৃদ্ধকূট পর্বতে। এই নগরীতে তথাগত এসেছেন চারবার। প্রথম থেকেই বলা শুরু করি।
লুম্বিনীতে জীবনের প্রথম ষোল বছর যাপনের পর যখন যুবরাজ গৌতম এক রাতের অন্ধকারে পাড়ি দিলেন সত্যের সন্ধানে, প্রথমে তাঁর আশ্রয় ছিল আশ্রম থেকে আশ্রমান্তরে, বিভিন্ন সন্ন্যাসীর সঙ্গলাভে। কিন্তু গৌতম সমৃদ্ধ হলেন না। বরং উপলব্ধি করতে পারলেন, আত্মা-ব্রহ্ম-ঈশ্বরকে জানতে চাওয়া তাঁর উদ্দেশ্য নয়। নিখিল জীবের বেদনার স্বরূপ ও বেদনা অতিক্রম তাঁর অন্বেষণ। সেই এষণার পথে এসে পৌঁছলেন রাজগীর নগরীতে।
সুরম্য রাজগীর তখন সোহাগী নগরী। এই শহর সেই সময় ভারতীয় রাজনীতির হৃদপিণ্ড এবং হৃদয়। তথাগত মহাকালের পথ ধরে পৌঁছলেন রাজগীরে। আশ্রয় নিলেন গৃদ্ধকূট পাহাড়ে। সমস্ত দিন ভিক্ষা। মাধুকরী গ্রহণান্তে সামান্য ভোজন এবং ধ্যান। নগরবাসীর মনে দেখা দিল কৌতূহল। সন্ন্যাসী সুলভ জীবন যাপন করলেও গৈরিক চিরবাসের মধ্য দিয়ে প্রস্ফুটিত রাজকীয় লক্ষণ। তাঁর অচিন্ত্য রূপলাবণ্য, করুনাময় নয়নযুগল, সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব যেন রচনা করেছে এক জ্যোতির্বলয়। তাঁর অর্চিষ্মান উপস্থিতি যেন সর্বদা রচনা করে এক মায়া। গৃহস্থের মধ্যে ক্রমে ক্রমে উঠল মৃদু কৌতূহল— “কে এই সন্ন্যাসী?”, কিশোরীদের মুগ্ধ নয়নের দৃষ্টি সর্বদা তাঁর প্রতি, চপলা যুবতীদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে শুরু হয়েছে মিঠে কানাকানি। বয়োজ্যেষ্ঠরা কেউ বা সন্দিগ্ধ, “এই সন্ন্যাসী কি ঈশ্বরের অবতার?” একদা রাজপ্রাসাদেও পৌঁছে গেলো সন্ন্যাসীর আগমনবার্তা। উৎসুক রাজা বিম্বিসার এলেন সন্ন্যাসী দর্শনে। গোধূলির আলো তখন পড়েছে গৃদ্ধকূট পর্বতে। আরক্ত আকাশের নিচে মহামিলন ঘটল নৃপতি বিম্বিসার এবং সন্ন্যাসী সিদ্ধার্থর।
মগধাধিপতি চর মারফৎ অবগত হয়েছেন সদ্য আগত শ্রমণ সন্ন্যাসী শাক্যবংশীয় রাজকুমার। প্রাথমিক আলাপ পর্ব শেষে সেকথা প্রকাশ করলেন। গৃদ্ধকূট পর্বতের দিকে তাকিয়ে আমি যেন শুনতে পাচ্ছিলাম বিম্বিসার ও গৌতমের কথোপকথন। বিম্বিসার যেন নিজেকে সম্মোহিতের মতো সমর্পন করছিলেন সিদ্ধার্থর পদতলে। আর সিদ্ধার্থ ততই ছিলেন নিঃস্পৃহ।
বিম্বিসার গৌতমকে জানালেন, “শ্রমণ, আমি আপনার বন্ধুতা-প্রত্যাশী। এই বিশাল সাম্রাজ্যের উপদেষ্টা হন আপনি। আমি আপনার আজ্ঞাবহ।”
গৌতমের সুভদ্র প্রত্যাখ্যান, “হে রাজাধিরাজ, যে পথে আমি চলেছি সেখানে যে ফিরে তাকানোর কোনও নিয়ম নেই। উল্টোমুখে চলার অর্থ বিচ্যুত হওয়া। যে সম্পদ হতে নিজেকে স্বেচ্ছায় বঞ্চিত করেছি, তা আজ যদি আবার আঁকড়ে ধরতে চাই, তবে আমার জীবন বৃথা। আমি সত্যের অন্বেষণে যাত্রা করেছি। সেই সন্ধান লাভ করার পর সসাগরা ধরিত্রী জয় সম্ভব শুধুমাত্র ভালোবাসার মাধ্যমে। যুদ্ধ নয়, হত্যা নয়, এই বসুন্ধরার অধিপতি হতে পাওয়া চাই শুধু পরম সত্যের সন্ধান।”
সিদ্ধার্থের অমোঘ কণ্ঠস্বরে ছিল আত্মপ্রত্যয়, যা বিম্বিসার উপলব্ধি করতে পারলেন। অনুরোধ জানালেন, “শ্রমণ, তবে তাই হোক। আপনার ধ্যান সফল হওয়ার পর আপনার মন্ত্রে আমি দীক্ষিত হতে চাই।”
পড়ন্ত বেলার শেষ আলোয় যেন দেখতে পেলাম, গৃদ্ধকূট পর্বত থেকে পাথুরে পথ ধরে চলে গেলেন সিদ্ধার্থ এবং আপন পথে গমন করলেন রাজা বিম্বিসার।
সন্ধ্যায় আমি হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন সকালে আবার আমার যাত্রা শুরু হল। টাঙ্গাচালক শুরুতেই বলেছিলেন আজ আমাকে প্রথমে নিয়ে যাবেন বেণুবনে। গয়া-মোকামা রোড ধরে কিছুদূর এগোলে পথে পড়ে বেণুবন। এই বনের প্রতিটি মাটির কণায় তথাগতর ছোঁয়া। একটু ইতিহাসে ফেরা যাক।
বুদ্ধগয়ায় নিজের পরিচয় জানাজানি হয়ে যাবার পর সিদ্ধার্থ উপলব্ধি করতে পারছিলেন, তাঁর পক্ষে রাজগীর বাস সম্ভব নয়। ভিক্ষান্নর পরিবর্তে প্রতিদিন বহু মানুষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে সাহায্য করছে। সন্ন্যাস জীবন যাপন ব্যাহত হয়ে উঠছে। অতঃপর তিনি চললেন বুদ্ধগয়ায়। যে গল্প আগের সংখ্যায় বলেছি।
বোধিলাভের পর তথাগত সারনাথ যান। তারপর রাজা বিম্বিসারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো সশিষ্য যাত্রা করলেন রাজগীরে। বোধিসত্ত্বের দেখা পেয়ে আনন্দিত রাজা সাদরে বরণ করে নিলেন। আমন্ত্রণ জানালেন নিজ গৃহে ভোজনের। ভোজনান্তে রাজা বিম্বিসার হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। গুরুদক্ষিণা স্বরূপ সম্প্রদান করলেন সম্পূর্ণ বেণুবন এবং গৃদ্ধকূট পাহাড়। প্রতিদিন গৃদ্ধকূট পাহাড়ে “সন্ধেবেলায় শুচিবাস পরি রাজবধূ রাজবালা/ আসিতেন, ফুল সাজায় ডালায়/ স্তূপপদমূলে সোনার থালায়/ আপনার হাতে দিতেন জ্বালায়ে/ কনক প্রদীপমালা।”
আর সারাদিন এই বেণুবনে বাস করতেন বুদ্ধদেব এবং তাঁর শিষ্য ভিক্ষুকগণ। বৌদ্ধ সন্নাসীগণ নিয়মিত রাজদরবারে পঞ্চব্যঞ্জন সহ আহারাদি করতে অপারগ। বরং মাধুকরীই তাঁর একমাত্র আহারাদি। তথাগত ও তাঁর শিষ্যগণের ছোঁয়ায় বেণুবন তখন এক পবিত্র ভূমি। বুদ্ধদেব এখানে বহু বছর অধিষ্ঠান করেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ এখন থেকেই প্রদান করেন। বৌদ্ধদের কাছে বেণুবন মহাপবিত্র স্থান। এই সময়টি ছিল রাজগীরের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ।
বর্তমানে বেণুবনের অধিকাংশ অঞ্চলেই সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। বিহার ট্যুরিজমের স্থির করা কিছু অংশই এখন গম্য। একাগ্র চিত্তে আজও এই বেণুবনে কিছু সময় যাপন করলে মনে হয় ওই তো তিনি আসছেন। দেখা দেবেন হয়তো। একবার হলেও চোখে পড়বে তাঁর দৈব রূপলাবণ্য। কিন্তু এ নিছকই ভ্রম।
ইচ্ছে ছিল, সকালের নরম আলোয় আরও একবার দেখব গৃদ্ধকূট পাহাড়। সেই মতো টাঙ্গায় চড়লাম। কিন্তু শান্তি স্তুপ রোডে চোখে পড়ল “আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া”র বোর্ড— বিম্বিসার জেল। আমি নেমে গেলাম। এটি রাজগীরে তথাগতের তৃতীয় পর্যায়ের ঘটনা। সমগ্র ভারতে তখন বৌদ্ধধর্মের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র মগধ নয়, কাঞ্চী, কোশল, কাশী, অবন্তী, শ্রাবস্তী সর্বত্রই হিন্দুরা দলে দলে যোগ দিচ্ছেন বৌদ্ধ ধর্মে। ব্রাক্ষ্মণ্যবাদের অত্যাচার, পাপাচারে তিতিবিরক্ত অন্ত্যজ শ্রেণি শুধু নয়, বুদ্ধের জীবনদর্শনে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এমনকি যুক্তিবাদী ব্রাহ্মণদের মধ্যেও বৌদ্ধধর্মের প্রতি আগ্রহ বেড়ে চলেছে। গোঁড়া হিন্দুরা মেনে নেবেন কেন? অতএব শুরু হল ষড়যন্ত্র। হিন্দুরা রাজকুমার অজাতশত্রুকে নিজেদের দলে টানলেন। ক্রোধ ও লোভের বশবর্তী হয়ে আপন পিতাকে বন্দি করলেন কুমার অজাতশত্রু। নিজে বসলেন রাজসিংহাসনে। আর পিতা বিম্বিসারকে নিক্ষেপ করলেন কারাগারে। বৃদ্ধ বিম্বিসারের শেষ ইচ্ছা মেনে নির্মিত হল বিম্বিসার কারাগার— একটি পাথুরে কুটির। একমাত্র গবাক্ষ দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতেন রাজা বিম্বিসার। গবাক্ষের মধ্য দিয়ে দু চোখ শুধু চেয়ে থাকত গৃদ্ধকূট পর্বত অভিমুখে। ভগবান বুদ্ধ সকাল-সন্ধে ধ্যানে বসবেন ওই পাহাড় চূড়ায়। ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ দর্শন ছিল বিম্বিসারের জীবনের একমাত্র সুখ।
বর্তমানে মাটি থেকে ইঞ্চি দুয়েক লম্বা পাথরের সীমানা বিম্বিসারের ভগ্ন হৃদয়ের রূপক হয়ে ভাগশেষের মতো পড়ে আছে। আজও সেই পাথরে কান পাতলে শোনা যায় বৃদ্ধ বিম্বিসারের কান্নার শব্দ। এবং গোটা রাজগীর শহরে আজও একমাত্র এখান থেকেই দেখা যায় গৃদ্ধকূট পর্বত।
বিম্বিসার কারাগার থেকে কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়ল জীবক আম্রবন। যদিও নাম আম্রবন তবে আম গাছের কোনও চিহ্নমাত্র নেই। ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে জানা যায়, সিংহাসনে অধিরূঢ় হবার পর অজাতশত্রু কিছুদিন মহানন্দে রাজ্য শাসন করেছিলেন। কিন্তু কারাগারে পিতা বিম্বিসারের মৃত্যুর পর তিনি পিতৃহত্যায় অনুতপ্ত হয়ে অশান্তিতে দিন যাপন করছিলেন। তারপর এক পূর্ণিমায় রাজবৈদ্য জীবক তাঁকে পরামর্শ দেন তথাগতের শরণাপন্ন হতে। আত্মগ্লানিতে অনুতপ্ত অজাতশত্রু বুদ্ধের সম্মুখে দোষ কবুল করেন এবং বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হন। মগধ রাজ্যে রাজধর্ম হিসাবে বৌদ্ধধর্ম পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং দেবদত্তকে অজাতশত্রু মগধ ত্যাগের নির্দেশ দেন।
বর্তমানে আম্রবনের চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট নেই। আমি চললাম আবার বিশ্ব শান্তি স্তুপের দিকে। তবে আজ আর বেশিক্ষণ ছিলাম না। বরং কিছুক্ষণ থেকে নেমে এসে গেলাম “ঘোড়া কাটোরা লেক” দেখতে। শহরের এক প্রান্তের এই হ্রদের জল নিস্তরঙ্গ। হ্রদটির চতুর্দিকে পাহাড়। নৌকোবিহারের ব্যবস্থাও আছে।
বেলা পড়ে আসছিল। কিছুক্ষণ থেকে আমি ফিরে এলাম। পরদিনের গন্তব্য নালন্দা। আগামী সংখ্যায় সেই গল্প বলব।