পারমিতা চক্রবর্তী-সাহা
পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে দেবীপক্ষ শুরুর মাত্রই দিনদুয়েক আগে, এ-মাসের ১৭ তারিখ তাঁর জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হবে। অথচ ইতিহাসবিমুখতা আমাদের এতটাই যে, উৎসবের আয়োজনে মেতে থাকতে-থাকতে আমাদের হয়তো মনেও থাকবে না, একশো বছর আগের এই দিনটিতে সত্যিকারের এক দেবীপক্ষ শুরু হয়েছিল এ-দেশের বিজ্ঞানসাধনার ইতিহাসে। বিজ্ঞানী, গবেষক ও অধ্যাপক অসীমা চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখেছেন নবনালন্দা হাইস্কুলের প্রাণীবিদ্যা বিষয়ের শিক্ষক পারমিতা চক্রবর্তী সাহা।
উদ্ভিজ্জ রসায়নের তিন তারকা-বিজ্ঞানী শেষাদ্রি-গোবিন্দাচারি-বেঙ্কটরমনের সঙ্গে এক নিশ্বাসে উচ্চারিত হয় তাঁর নাম। ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম মহিলা ডিএসসি ডিগ্রিপ্রাপকের পরিচয় খুঁজতে বসলে গুগ্ল-এর তালিকা আলো করে রাখে তাঁর নাম। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব-রসায়নের প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক পল কারনার তাঁর ল্যাবরেটরি লগবুক ও ওয়র্কিং-নোটে সস্নেহে উল্লেখ করে যান সুদূর ভারত থেকে আসা তাঁর শান্ত ও মেধাবী ছাত্রীটির কথা। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের হলুদ-হয়ে-যাওয়া পুরনো নথি জানায়, এঁরই হাত ধরে সূচনা হয়েছিল কলেজের রসায়নবিদ্যা বিভাগের, সেই ১৯৪০-এ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপকের চেয়ার থেকে পদ্মভূষণ পুরস্কার, জাতীয় বিজ্ঞান অকাদেমির সাম্মানিক ফেলোশিপ থেকে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সম্মান, দেশের প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে জাতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে শুরু করে পরপর দু’বার রাজ্যসভার রাষ্ট্রপতি-মনোনীত সদস্যপদ – অজস্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানের সুদীর্ঘ তালিকা আক্ষরিক অর্থেই সারা জীবন তাঁর পিছু-পিছু ছুটে হাঁফিয়ে উঠতে থাকে। অথচ অনপনেয় স্মৃতিভ্রমে ডুবে থাকা ইতিহাসবিস্মৃত বাঙালির মনেও পড়ে না – কী নীরবে শতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে এ-দেশে উদ্ভিজ্জ রসায়ন-গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ, গবেষক ও অধ্যাপক অসীমা চট্টোপাধ্যায়ের।
ছাত্রজীবনে যাঁদের হাত ধরে বিজ্ঞানচর্চার জগতে প্রবেশ, সেখানেও তো চাঁদের হাট। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ তখন আক্ষরিক অর্থেই প্রফুল্লকানন – মাস্টারমশাইদের তালিকা আলো করে রেখেছেন অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার বসু, অধ্যাপক প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র ও সবার মাথার ওপরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। রয়েছেন অধ্যাপক জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ভারতীয় জৈব-রসায়নচর্চার আর এক পুরোধাপুরুষ। এমন সব ডাকসাইটে শিক্ষকদের ক্লাস করতে-করতেই জৈব-রসায়নে আগ্রহ তৈরি হতে থাকে অসীমাদেবীর। স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠ শেষ করেই গবেষণা শুরু করেন অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার বসুর তত্ত্বাবধানে, যাঁর হাত ধরে এ-দেশে আধুনিক উদ্ভিজ্জ রসায়নচর্চার সূত্রপাত। কিন্তু স্নাতকস্তরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার ঢের আগেই মনে-মনে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ভবিষ্যতের গবেষণার বিষয়। শুধু বেছে নেওয়াই নয়, নিজেকে প্রস্তুতও করে তুলেছিলেন সেভাবে। দেশজ প্রকৃতির মধ্যেই যে বিপুল ভেষজ সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে, সেগুলির প্রতি তাঁকে আকৃষ্ট ও শ্রদ্ধাশীল করে তোলে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের তীব্র স্বদেশিয়ানা – তাঁর কাছেই তিনি পান নিজের মাটির দিকে ফিরে তাকানোর মূল্যবোধ।
যদি সেই সময়টাকে ফিরে দেখি, গত শতকের দুই, তিন ও চারের দশক, সমাজ ও জ্ঞানচর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রেই তীব্র স্বদেশচেতনা, বিদ্যানুসন্ধানের প্রতিটি অলিন্দে দেশকে খুঁজে বের করার উদ্বেল আগ্রহ – বিশুষ্ক জ্ঞানের মধ্যে প্রাণসঞ্চারী দেশপ্রেমের শীকরসিঞ্চন – দেশজ প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনাবিষ্কৃতকে খুঁড়ে বের করে আনা – অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় সেই দেশব্যাপী আয়োজনেরই প্রত্যক্ষ ফসল। আচার্য জগদীশচন্দ্র যেমন বিশ্বের দরবারে বিখ্যাত করে তুলেছেন আমাদের ঘরের পাশের বনচাঁড়াল আর লজ্জাবতীদের – দীনেশচন্দ্র সেন যেমন রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে জেলায়-জেলায় ঘুরে উদ্ধার করে এনেছেন ব্রতকথা ও ছেলেভুলনো ছড়ার ধুলোমাখা, উপেক্ষিত উত্তরাধিকার – দেশীয় শিল্পকলার উৎস ছেনে যেমন অবনীন্দ্র-গগনেন্দ্রর হাতে নতুন শিল্পরীতির উত্থান ঘটেছে – সেই পথে অগ্রসর হয়েই আমাদের চারপাশের চিরচেনা গাছপালার মধ্যে লুকিয়ে থাকা আয়ুর্বেদিক সম্পদকে পুনরাবিষ্কার করেছেন অসীমা চট্টোপাধ্যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তিনি বিশশতকের গোড়ার দিকের স্বদেশি চেতনাজাত ভারতীয় জ্ঞানচর্চার এক প্রবল প্রতিনিধি।
দীর্ঘ গবেষক-জীবনে তিনি যে শুধুই নানা উদ্ভিজ্জ-রাসায়নিক নিষ্কাশনের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তাই নয়, তাঁর অক্লান্ত গবেষণার ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি কেমোট্যাক্সোনমি ও ওষধি-ক্ষেত্রে তার প্রয়োগের নানা নয়া উপায় ও উপকরণ। কে না জানেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষধিগুণসম্পন্ন উদ্ভিজ্জ-সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের ক্রান্তীয় প্রকৃতির দেশ। ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার চলে আসছে সেই চরক-সুশ্রুতের আয়ুর্বেদ-সংহিতার আমল থেকেই। ভেষজ ওষুধের সাহায্যে রোগ নিরাময়ের বহুপ্রচলিত নানা লোকজ পদ্ধতি ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের আদিম উপজাতিদের মধ্যেও। কিন্তু যেটা আমাদের ছিল না, তা হল উদ্ভিদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোন বিশেষ রাসায়নিকের প্রভাবে কোন অসুখ সারে, তার পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান। সহজ কথায় বলতে গেলে, আয়ুর্বেদ আমাদের জানিয়েছিল যে, সর্পগন্ধা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে; কিন্তু সর্পগন্ধার মধ্যে থাকা কোন রাসায়নিক এর জন্য দায়ী তার হদিশ আমাদের জানা ছিল না। অন্যভাবে দেখতে গেলে, ওষধিগুণসম্পন্ন উদ্ভিদের ব্যবহারিক প্রয়োগে আমরা হয়তো সিদ্ধ ছিলাম, কিন্তু পরীক্ষাগারে গবেষণালব্ধ নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ঘাটতি ছিল।
তা অবশ্য স্বাভাবিকও ছিল। সে সময় স্পেকট্রোস্কোপি বা অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি বা পরিকাঠামো কিছুই প্রায় ছিল না। আদ্যিকালের কেমিক্যাল ডিগ্রেডেশন পদ্ধতির ওপর ভরসা করেই উদ্ভিদজাত হরেক জটিল জৈব-যৌগের গঠন ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করতে হত। তার ওপর, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, কোনও বিশেষ রাসায়নিক যৌগ কোনও উদ্ভিদে খুব অল্প পরিমাণে পাওয়া যায় বলে, তার নিষ্কাশন যেমন ছিল সময়সাপেক্ষ, তেমনই গবেষকের ব্যক্তিগত দক্ষতা ও ধৈর্যনির্ভর। উপরন্তু ছিল না ভালো ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতিও ছিল মান্ধাতার আমলের। সেসব অসুবিধের কথা মাথায় রাখলে মানতেই হয়, স্রেফ অনমনীয় জেদ আর বিজ্ঞানচর্চায় লেগে-থাকার ক্ষমতা সম্বল করেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের দেখানো পথে অগ্রসর হয়েছিলেন অসীমা।
বিজ্ঞানের প্রতি এই নিষ্ঠা অবশ্য পারিবারিক সূত্রেই পেয়েছিলেন তিনি। ১৯১৭-র ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম, বাবা ইন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায় পেশায় চিকিৎসক। মা কমলাদেবীর দুই সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠা অসীমা স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বিজ্ঞান নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে ঢুকলেন বেথুন কলেজে। ভাই সরসীরঞ্জন বাবার পথে হেঁটে পড়তে শুরু করলেন ডাক্তারি। পরবর্তীকালে সরসীরঞ্জন হয়ে উঠবেন কলকাতার ডাকসাইটে সার্জন, আর দিদির ভেষজচর্চার অন্যতম প্রধান উৎসাহদাতা। কিন্তু সে তো অনেক পরের কথা। বেথুনে ইন্টারমিডিয়েট-এর পালা শেষ করে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক, সেখান থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পড়তে এলেন অসীমা। ১৯৪০-এ স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করলেন রৌপ্যপদক নিয়ে। অবশ্য তার আগেই মিলে গিয়েছে পথ, মনে-মনে ঠিক করে ফেলেছেন, ফাইটো-অ্যালকলয়েড বা উদ্ভিজ্জ উপক্ষারই হবে তাঁর গবেষণার কেন্দ্রীয় বিষয়। তার পর আর অন্য কোনও দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সে-বছরই লেডি ব্রেবোর্নে খোলা হয় রসায়নবিদ্যা বিভাগ, বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে চাকরিতে যোগ দেন অসীমা। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৩ বছর। শিক্ষকতার পাশাপাশি চলতে থাকে গবেষণা। ১৯৪৪-এ অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার বসুর তত্ত্বাবধানে ডিএসসি। ১৯৪৫-এ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির ফেলো ও ভূ-রসায়নবিদ্যার নামজাদা অধ্যাপক বরদানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে। পরবর্তীকালে অসীমার গবেষণার কাজে তাঁর উৎসাহ ও সমর্থন ছিল প্রায় গল্পের মতো, ১৯৪৭-এ সাত বছরের জন্য অসীমা যখন বিদেশে গবেষণা করতে যান, এবং ফিরে আসার পরেও যখন নতুন গবেষণার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে থাকেন, সে সময় স্ত্রীর প্রতিটি উদ্যোগে প্রথম ও প্রধান উদ্যোক্তার ভূমিকা ছিল বরদানন্দের।
গবেষণার কাজে প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পরে সুইজারল্যান্ডে যান অসীমা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে উইস্কন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক এল এম পার্ক-এর সঙ্গে, এবং পরে ক্যালিফর্নিয়ার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্লান্ট পিগমেন্ট অ্যান্ড ক্রোমাটোগ্রাফি বিভাগে বিজ্ঞানী এল জিসমেস্টার-এর সঙ্গে ক্যারোটিনয়েডস নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেন তিনি। সেখান থেকে সোজা পাড়ি সুইজারল্যান্ড – জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নোবেলজয়ী রসায়নবিদ অধ্যাপক পল কারনারের সঙ্গে অ্যাক্টিভ অ্যালকলয়েডস নিয়ে গবেষণার জন্য। ১৯৫৪ সালে দেশে ফিরতেই ডাক আসে পুণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, জৈব-রসায়নবিদ্যা বিভাগে রিডার পদে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে। একইসঙ্গে কলকাতা ও পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি রিডার হিসেবে অধ্যাপনার পরে, ১৯৬২-তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে খয়রা অধ্যাপকের চেয়ার – যেখানে ১৯৮২ পর্যন্ত অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে গবেষণা ও ছাত্র তৈরির কাজ করে গিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৬০-এ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেজ-এর (এখন যা নাম পালটে ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি হিসেবে পরিচিত) সাম্মানিক ফেলো পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬১-তে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার। ১৯৭২-এ যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর অ্যাডভান্স্ড স্টাডিজ ইন কেমিস্ট্রি অফ ন্যাচারাল প্রোডাক্টস তৈরি হয়, তার সাম্মানিক প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর-এর দায়িত্ব নেন তিনি। ১৯৭৫-এ জোড়া সম্মান – প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের সভাপতির পদ, আর তার পরপরই পদ্মভূষণ। ১৯৮২ ও ’৮৪-তে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য হিসেবে রাজ্যসভায় যোগদান। এবং, এত কিছু সামলেও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন জার্নালে ৩৫০-এর বেশি মৌলিক গবেষণাপত্র ও ২০টি রিভিউ আর্টিক্ল প্রকাশ, গাইড হিসেবে ৫৯টি পিএইচডি পেপার ও তিনটি ডিএসসি পেপারের তত্ত্বাবধান। সর্বোপরি, নয়াদিল্লির পাবলিকেশন অ্যান্ড ইনফর্মেশন ডাইরেক্টরেট থেকে প্রকাশিত ছ’খণ্ডের আকরগ্রন্থ ‘ট্রিটিজ অন ইন্ডিয়ান মেডিসিনাল প্লান্টস’-এর সংকলন ও সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব পালন, এবং বাংলায় ছ’খণ্ডের ‘ভারতের বনৌষধি’ সম্পাদনা। দশভুজা আর কাকে বলে !
অ্যালকলয়েডস, যাদের আমরা উপক্ষার নামে চিনি, ও তার পাশাপাশি ক্যারোটিনয়েডস, টার্পিনয়েডস, পলিফেনলিকস – উদ্ভিজ্জ রাসায়নিকের এই বিস্তীর্ণ ক্ষেত্র ছিল তাঁর গবেষণার কেন্দ্রভূমি। ইন্ডোল অ্যালকলয়েডস বিষয়ে মৌলিক গবেষণায় তিনি কাজ করেছেন রাওলফিয়া, আলস্টনিয়া, কপসিয়া, রাজিয়া ও ভিঙ্কা গোত্রের ওষধিগুণসম্পন্ন গাছগাছড়া নিয়ে। রুটাসিয়া, আম্বিলিফেরা, কম্পোজিটা ও ইউফর্বিয়াসি গোত্রের উদ্ভিদের মধ্যেকার কোমারিনস ও টার্পিনয়েডস নিয়েও তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। দু’ধরনের জলজ ফার্ন, মার্সিলিয়া মাইনিউটা ও মার্সিলিয়া রাজস্থানেনসিস-এর থেকে অ্যালকলয়েড নিষ্কাশন করে মৃগী রোগের চিকিৎসায় তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা প্রমাণ করেছেন অসীমাদেবী। স্নায়ুরোগ ও উচ্চরক্তচাপজনিত অসুস্থতার উপশমে রাওলফিয়া অ্যালকলয়েডের উপকারিতা প্রমাণ করেছেন তিনি। পানপাতা, ব্রাহ্মী, জটামাংসীর আয়ুর্বেদিক গুণাগুণও নির্ণয় করেছেন গবেষণাগারে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে। আয়ুষ-৫৬, আয়ুষ-৬৪ প্রভৃতি আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রত্যক্ষত তৈরি হয়েছে তাঁর গবেষণাজাত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে।
পিতৃপক্ষ শেষ হয়ে দেবীপক্ষ শুরুর দিনদুয়েক আগে, এ-মাসের ১৭ তারিখ তাঁর জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হবে। অথচ ইতিহাসবিমুখতা আমাদের এতটাই যে, পুজোর কেনাকাটার ব্যস্ততার মধ্যে, উৎসবের আয়োজনে মেতে থাকতে-থাকতে আমাদের হয়তো মনেও থাকবে না, একশো বছর আগের এই দিনটিতে সত্যিকারের এক দেবীপক্ষ শুরু হয়েছিল এ-দেশের বিজ্ঞানসাধনার ইতিহাসে।
খুব সুন্দর লেখা । গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে একটা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সভা হয়েছিল । ওনার জীবনী নিয়ে আলোচনা, একটি আলোচনা ভেষজ যৌগ সংশ্লেষন নিয়ে । শেষে ড. অসীমা চাটার্জীর উপর এক তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এটি অসীমা চাটার্জী সোসাইটি থেকে উদযাপন করা হয়েছিলো। কোলকাতর জৈব, অজৈব, ভৌত রসায়নের গবেষক বিজ্ঞানী, শিক্ষকেরা উপস্তিত ছিলেন। আমরা সরাসরি ওনার ছাত্র ছিলাম -তারা অনেকে নিজস্ব পাবলিশিং পোর্টাল- ফেসবুকে ; যে যেমন পারি তা লিখেছিলাম। কলকাতা বিশ্বিদ্যালয় কিছু করেছিল কিনা জানি না ।