শঙ্কর সান্যাল
সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, অর্থনীতির ছাত্র
বাজেট বক্তৃতায় দেশবাসীকে অবাক জলপান করালেন নির্মলা সীতারমন। সুকুমার রায়ের এই অসাধারণ নাটিকাতে তৃষ্ণার্ত পথিক বলছিল, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন? নাটিকার অন্য চরিত্রগুলি তৃষ্ণার্ত পথিককে জলের হদিস তো দেয়ইনি বরং আম, আমড়া থেকে শুরু করে নাকের এবং চোখের জলের গল্প পর্যন্ত শুনিয়ে দিয়েছিল। দেশের মানুষ যখন কাজ এবং জীবনধারণের উপযোগী মজুরির খোঁজে ব্যাকুল, তখন নির্মলা শুনিয়ে দিলেন উন্নয়নের গালগল্প। মোটের ওপরে ২০২১-২২ সালের বাজেট বক্তৃতার সারমর্ম হল— এর কোনও রূপ সারমর্ম নেই।
নোটবন্দি থেকে শুরু করে করোনাজাত লকডাউন— এক গভীর মহামন্দার কবলে ভারত। মন্দার চেহারাটি ২০১৪ সাল থেকেই ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু সেই মন্দা প্রবলতর হয়ে উঠল করোনাজাত লকডাউনে। সাড়ে ১২ কোটি ভারতবাসী কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে গেলেন, ১৩ কোটি ৬০ লক্ষ নেমে গেলেন দারিদ্রসীমার নিচে। অথচ লকডাউনের সাত মাসে ভারতের প্রথম সারির ১০০টি কর্পোরেট সংস্থা ১৩ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর আগে নোটবন্দির ফলে দেশের জনসংখ্যার সাড়ে ৬ শতাংশ কাজ হারায়। যা ছিল তার আগের ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। লকডাউনের পরে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের হিসাবে দেশের গড় জাতীয় উৎপাদন (জিডিপি) নেমে যায় মাইনাস ২৩.৯ শতাংশে। বন্ধ হয়ে যায় যাবতীয় কৃষিকাজ এবং অসংখ্য ছোট ও মাঝারি শিল্প। এই ভয়ঙ্কর মন্দার পরিস্থিতিতে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটে মানুষের প্রত্যশা ছিল সরকার নিদেনপক্ষে কর্মসংস্থানের ওপরে জোর দেবে। কিন্তু সেই পর্বতপ্রমাণ আশার উত্তরে একটি মুষিক ছাড়া অন্য কিছুই প্রসব করল না নির্মলা সীতারমনের বাজেট।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওয়াদা করেছিলেন, বছরে এক কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। অথচ ২০১৭-১৮ সালে কেবলমাত্র অটোমোবাইল শিল্পেই কর্মচ্যূত হন ১১ লক্ষ মানুষ। আগামী অর্থবর্ষষের বাজেটে এমন কোনও ইঙ্গিতই নেই যাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের দরজা খুলে যেতে পারে। যে বিষয়টি নিয়ে বিজেপি প্রবল ঢক্কানিনাদে চতুর্দিক মাতোয়ারা করে দিচ্ছে, তা হল স্বাস্থ্যখাতে বিপুল বরাদ্দ। চলতি অর্থবর্ষের তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে ১৩৭ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু ঝুলি ঝেড়ে দেখলে আসল তথ্যটি বেরিয়ে আসে। নির্মলা স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়বরাদ্দ করেছেন ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। গতবার ব্যয়বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কিন্তু এই বিপুল বরাদ্দের সবটাই কেবল স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নয়। এর মধ্যে রয়েছে আয়ুষ, পরিবার কল্যাণ এবং পানীয়জল ও দুষণ নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রকের বরাদ্দ। সেইসঙ্গে এর মধ্যে ধরা রয়েছে কোভিড প্রতিষেধকের জন্য বরাদ্দ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আয়ুষ্মান ভারতের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে গতবারের তুলনায় এবার বেড়েছে খুবই সামান্য। পানীয় জল এবং স্যানিটাইজেশনের পরিকাঠামো গড়তে যেটুকু কর্মসংস্থান হবে, সেইটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে দেশবাসীকে। বাকিটা তোলা থাকবে স্বাস্থ্য-কর্পোরেট এববং বিমা-কর্পোরেটদের গহ্বরে দেওয়ার জন্য। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে খরচা হয় ৬৫ শতাংশ, বাকিটা সরকার দেয়। এই সাধারণের পকেটখরচ ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য কোথায় গেল? এত বরাদ্দ বাড়িয়েও জিডিপির ১-২ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে। অথচ দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এই বরাদ্দকে আড়াই শতাংশ করতে হবে।
ভারতের মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাটি হল চাহিদাকেন্দ্রিক, জোগানকেন্দ্রিক নয়। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। বিপুল শ্রমশক্তি রয়ে গিয়েছে উৎপাদন ব্যবস্থার বাইরেই। এই বেকারবাহিনীর কর্মসংস্থান করলেই স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে এবং বাজারে চাহিদা হিসাবে তার প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু ২০১৬-১৭ সাল থেকে যেভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই চলতে শুরু হয়েছিল, কররোনাকালে তার ষোলোকলা পূর্ণ হল। এই পরিস্থিতিতে, আমরা আগেই আলোচনা করেছি, বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল কর্মসংস্থানের ওপরে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম মনরেগা প্রকল্প বা ১০০ দিনের কাজে ব্যয়বরাদ্দ গত আর্থিক বছরের তুলনায় ৩৪ শাংশ ছাঁটাই করা হয়েছে। এই প্রকল্পে গত আর্থিক বছরে ব্যয়বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকা। সেই জায়গায় ২০২১-২২ সালে ব্যয়বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে মানুষের কাজের সুযোগ অনেকটাই কমবে। বিশেষ করে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি বড়মাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে মূলত গ্রামীণ কর্মসংস্থানের জন্যই এই ১০০ দিন কাজের প্রকল্প শুরু করা হয়ছিল। এর ফলে একদিকে পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং অন্যদিকে কর্মসংস্থান, দুটি কাজই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু বাজেট বরাদ্দ কমে গেলে স্বাভাবিক কারণেই কাজের সুযোগও কমবে। অথচ এই ভয়াবহ মন্দার মোকাবিলায় কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া উচিত ছিল।
ভারতে কৃষির পরে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় ক্ষু্দ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্পে। এই অসংগঠিত ক্ষেত্রটি প্রাথমিকভাবে ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নোটবন্দির পরে। হাজার হাজার ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্পোদ্যোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং কাজ হারান কয়েক লক্ষ মানুষ। করোনাজাত লকডাউন এই ক্ষেত্রের কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দেয়। এই ক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে ব্যাপক ককর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। নির্মলা এই বিষয়টি নিয়ে যে ভাবেননি, তা নয়। ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেটে এই ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছে আগের বছরের দ্বিগুণ অর্থ। ২০২০-২১ সালে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে সেই বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই ব্যয়বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় এতটাই কম যে কহতব্য নয়। ২০২০ সালের ১৪ মে কেন্দ্রীয় সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ভারতে ক্ষুদ্র শিল্পের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লক্ষটি। ছোট শিল্পের সংখ্যা ৩৩ লক্ষ এবং মাঝারি শিল্পের সংখ্যা ৫ হাজার। এই শিল্পগুলির যা দশা, তাতে এই অঙ্কের অর্থ বরাদ্দে তা সম্ভব নয়। নতুন করে এই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের দিগন্ত উন্মোচিত হওয়া এবং বাজারের সম্প্রসারণ ঘটাও সম্ভব নয়। তদুপরি বরাদ্দকৃত অর্থের সবটাই পুনরুজ্জীবন প্যাকেজ নয়, পরিকাঠামো উন্নয়ন বাবদ খরচও ধরা আছে। অতঃপর আমার আঁধার ভালো!
দেশের কৃষকরা যখন আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলন-অবস্থানে বসে আছেন, তখন সংসদে বাজেট পেশ করে গোটা কৃষক সমাজকে আদ্যন্ত ভাঁওতাই দিলেন নির্মলা। কৃষি আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের অন্যতম দাবি, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক নূন্যতম সহায়ক মূল্য দিতে হবে। সেই ব্যাপারে আইনগত গ্যারান্টি দিতে হবে। বাজেট বক্তৃতায় কৃষি এবং কৃষকদের নিয়ে অজস্র বাক্য খরচ করে, সরকার যে কত কৃষকদরদী তা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু বাজেট বরাদ্দে শেষ পর্যন্ত কৃষকদের হাতে রইল পেন্সিলই। কৃষিক্ষেত্রে মোট বরাদ্দ হয়েছে ১ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এপিএমসি মান্ডিগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য। এমএসপি বা নূন্যতম সহায়ক মূল্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫৫০ কোটি টাকা। এই অঙ্কটি গত আর্থিক বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। দ্বিতীয়ত প্রধামন্ত্রী আশা যোজনা— এটি কেন্দ্রীয় সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী কৃষিজীবী মানুষকে বছরে ৬ হাজার টাকা করে সাহায্যপ্রদান। এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। যা গত আর্থিক বছরের তুলনায় ৮.৫ শতাংশ কম। এই বাজেট বরাদ্দ থেকেই স্পষ্ট আগামীদিনে ভারতীয় কৃষি এবং কৃষকদের সম্পর্কে মোদি সরকারের ভাবনা ঠিক কোন খাতে বইছে।
মজার ব্যাপার হল খাদ্যে ভর্তুকির ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর বরাদ্দ করেছেন ২ লক্ষ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এই টাকাটা পাওয়ার কথা খাদ্য সরবরাহ নিগমের। এই সংস্থাটি কৃষকদের কাছ থেকে নূন্যতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনে এবং তা সরকারি দামে গণবণ্টন ব্যবস্থায় সরবরাহ করে থাকে। এই খাদ্য সরবরাহ নিগমের ঋণ রয়েছে জাতীয় ক্ষুদ্র সঞ্চয় তহবিলের কাছে। এই ঋণ কত? আড়াই লক্ষ কোটি টাকা। এবার এই বাজেট বরাদ্দে এফসিআই ঋণ পরিশোধ, পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল ক্রয়— কোন কাজটা করবে? অর্থমন্ত্রীর নিদান, এফসিআইকে ফের ঋণ নিতে হবে।
পেট্রোপণ্যের, পেট্রোল এবং ডিজেলের ওপরে কৃষি সেস বসানো হয়েছে যথাক্রমে লিটার প্রতি আড়াই টাকা এবং চার টাকা। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন এর ফলে পেট্রোপণ্যের দাম বাড়বে না। কেননা সরকার সমপরিমাণ শুল্ক হ্রাস করবে। এই সেস বাবদ সরকারের আয় হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ভালো কথা। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যগুলির কী হবে? রাজ্যগুলিকে সেসের ভাগ দিতে হয় না। কিন্তু শুল্কের ভাগ দিতে হয় অর্ধেক। অতঃপর প্রশ্ন উঠছে এর ফলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে নাকি?
যারা জানে বেশি, তারা মানে কম। এই প্রবাদবাক্যটি মাথায় রেখেই সম্ভবত মোদি সরকার ২০২১-২২ সালের বাজেটে শিকক্ষাখাতে ৬০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। এমনিতেই করোনাজাত লকডাউনের ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ডকে উঠে গিয়েছে। অনলাইন ক্লাস করা দেশের অধিকাংশ প্রাথমিকস্তরের পড়ুয়ার কাছেই অসাধ্য। এই পরিস্থিতিতে যখন শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর ওপরে জোর দেওয়া প্রয়োজন ছিল, তখন বাজেটবরাদ্দ কমিয়ে কী বার্তা দিতে চাইলেন অর্থমন্ত্রী? প্রবাদবাক্যটিকেই মান্যতা দিলেন?
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র নিয়ে আর কোনও রাখঢাকই রাখলেন না নির্মলা সীতারমন। স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছেন, চারটি কৌশলগত ক্ষেত্র ছাড়া আর কোনও ক্ষেত্রেই সরকার তার নিয়ন্ত্রণ রাখবে না। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়া, পবনহংস এবং জেনেরাল ইনসিওরেন্সের বিলগ্নিকরণ এই অর্থবর্ষেই চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। জীবনবীমা নিগমেরও ৪১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ সরকার হাতে রাখবে, বাকিটা বিলগ্নিকরণ হবে। এয়ার ইন্ডিয়া, বিপিসিএল এবং আইডিবিআই ব্যাঙ্কের বিলগ্নিকরণ ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। আরও দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণের অপেক্ষায়। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রি বাবদ সরকারের আয় হবে এক লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা। বেচারামের এই তৎপরতা শুরু হয়েছিল গত শতকের নয়ের দশকে। প্রবল বিরোধিতা এবং বিরুদ্ধতা সত্ত্বেও বিক্রিবাটা চলছে চলবে।
রাজকোষ ঘাটতি জিডিপির সাড়ে ৯ শতাংশ। বছর শেষে এই অঙ্কটা আরও বাড়বে বলেই ধারণা। অতঃপর নোট ছাপানো, ফলে মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতি অনিবার্য। এছাড়া চলতি পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে উপায় যে খুব একটা আছে, তা বলা যাবে না। কিন্তু গত অর্থবর্ষের বাজেট বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি ছিল আগামী ২২-২৩ অর্থবর্ষের মধ্যে এই ঘাটতি নামিয়ে আনা হবে ৩.১ শতাংশে। কিন্তু নির্মলা জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ২৪-২৫ অর্থবর্ষের আগে এই ঘাটতি কমানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ ঘাটতি কমানোর দায় চাপিয়ে দেওয়া হল পরের জমানার ওপরে। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ প্রভাত পট্টনায়ক একটি নিবন্ধে হিসাব কষে দেখিয়েছেন, সম্পদ কর এবং উত্তরাধিকার কর বসালে সরকারের কতটা কর ঘাটতি মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু নীতিগতভাবে মোদি সরকার কর্পোরেটদের শরীরে আঁচড় কাটতেও নারাজ। তাই ঘাটতির বোঝা বইতে হবে আমজনতাকেই।
অভিবাসী শ্রমিক কারা, কেমন তাঁদের জীবনযাপন, কিছুই জানা ছিল না ভারতের আমজনতার। লকডাউনের দুর্দৈব ভারতকে চিনিয়ে দিয়েছিল অভিবাসী শ্রমিকদের। অভুক্ত, তৃষ্ণার্ত, কপর্দকহীন দলে দলে মানুষ অগম্য জেনেও বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরেন। ভারত দেখেছে তাঁদের হাঁটতে হাঁটতে মরতে আর মরতে মরতে হাঁটতে। সেই অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য এবারের বাজেটে বরাদ্দ একটি পোর্টাল এবং এক দেশ এক রেশনকার্ড। আর সেইসঙ্গে তুলে নেওয়া হয়েছে কেরোসিন তেলে ভর্তুকি।
হায় আমার দরিদ্র ভারত। হায় শাসক!