শৌভিক দে
গণ-আন্দোলনের কর্মী, কবি, চিত্রনাট্যকার
এই প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে ততদিনে ভয়ঙ্কর শীতের মারণ কামড়, শাসকের রক্তচক্ষু, রাষ্ট্রের মার, বিজেপি আরএসএস-এর অন্তর্ঘাত, ষড়যন্ত্র— সবকিছুর মাঝেই দাঁতে দাঁত চেপে সিংঘু, টিকরি, গাজিপুরের বর্ডারে ৭৫ দিন পার করে ফেলেছে কৃষকদের অবস্থান। রাস্তায় পেরেক, গজাল পুঁতে, কাঁটাতার বোল্ডারের বেড়া লাগিয়ে নয়া সীমান্ত তৈরি করে কিম্বা জল, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলনকারীদের মনোবলে চিড় খাওয়াতে পারেনি মোদি-অমিত শাহদের ফ্যাসিস্ট সরকার।
বরং যত দিন যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী জনসমর্থন আদায় করে নিতে সক্ষম হচ্ছেন জনসমাগমের নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম এই গণ আন্দোলনের মানুষগুলো।
রিহানা, গ্রেটাদের টুইটে কার্যত উলঙ্গ হয়ে যাওয়া সরকার থেকে বাধ্য করা হয়েছে শচীন তেন্ডুলকর থেকে লতা মঙ্গেশকরদের দিয়ে পাল্টা টুইট করিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে। কিন্তু তাতে ড্যামেজ কন্ট্রোল তো দূর কি বাত, ক্রিকেট রাজপুত্রের দিকে ধেয়ে এসেছে বিশ্ববাসীর শ্লেষের বাউন্সার। সুর সম্রাজ্ঞীর কন্ঠ ছাপিয়ে গেছে ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানের সমুদ্র গর্জনে।
কিন্তু কোন জাদুতে এটা সম্ভব হল?
চলুন তা জানার আগে আমরা ফিরে যাই ২০২০-র সেপ্টেম্বর মাসে। তখনও করোনা বিধ্বস্ত বাকি পৃথিবীর মতো দিশেহারা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য মানুষ। বিনা নোটিসের লকডাউনের ফলে ‘পরিযায়ী শ্রমিক’ কথাটা পাকাপাকি ভাবে গেঁথে গেছে আমাদের মস্তিষ্কে। রেললাইনে পোড়া রুটির সঙ্গে চাপ চাপ রক্ত আমাদের মনে করাচ্ছে ‘মেরা ভারত মহান’!
ঠিক সেই সময়, যখন সংসদ বন্ধ। আমাদের মানবদরদী সরকার, কৃষকদরদী গভর্নমেন্ট, শ্রমিকদরদী মোদি-শাহর রাষ্ট্র তিনটি কৃষি বিল আনলেন। বিনা বাধায় সেগুলো পাশও হয়ে গেল কোনওরকম আলোচনা বিতর্ক ছাড়াই। সরকার দাবি করল এর ফলে কৃষকদের প্রচুর লাভ হবে, দারুণ উন্নতি হবে তাঁদের। কিন্তু যাঁদের উপকারের স্বার্থে এই বিলগুলি, তাঁরাই বেঁকে বসলেন। তারপর?
২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ নভেম্বর। টানা রেললাইনের ওপর বসেছিলেন পাঞ্জাবের কৃষকরা।
২৩৫২টা প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল হয়েছিল। বাতিল হয়েছিল ৩৮৫০টি মালগাড়ি। শুধু রেলওয়ের লোকসান হয়েছিল ২২২০ কোটি টাকা। শুধু পাঞ্জাবে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল ৩০ হাজার কোটি টাকার। লুধিয়ানার স্থলবন্দর ধান্ধারিতে আটকে ছিল ১৩৫০০টা কন্টেনার। বন্ধ ছিল পাঞ্জাবের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো, কয়লা আসেনি ট্রেনে। কিসানরা ক্ষেপে গেলে যে বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন ব্যবস্থা, সেটা আরও একবার চোখে দেখা গিয়েছিল।
রেললাইন থেকে তবুও উঠে যাননি পাঞ্জাবের কৃষকরা। ঠিক করেছিলেন যতক্ষণ না পর্যন্ত কৃষি আইন প্রত্যাহার না হচ্ছে তাঁরা চালিয়ে যাবেন সংঘর্ষ।
কাশ্মিরে, লাদাখে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় রসদ পর্যন্ত ট্রেন না চলায় ‘এয়ারলিফট’ করতে হয়েছিল। দফায় দফায় কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল মোদি সরকারের মন্ত্রীদের।
কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবেই মিডিয়ায় দেখা যায়নি এই সমস্ত খবর।
আসলে সরকার আইন বানাতে পারে, সংসদ আইন পাশ করতে পারে, রাস্তায়, ক্ষেতে, খামারে, কারখানায় সেই আইন মানবেন না কৃষকরা, শ্রমিকরা।
সংসদে পাশ হয়ে গিয়েছিল লেবার কোড অর্ডিন্যান্স। পেশ হয়েছিল বিল। ধর্মঘট ডাকা সহজ ছিল না। মোদি সরকারের লেবার কোডকে প্রথম ধাক্কাটি দিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বিদ্যুৎ কর্মীরা। যোগী আদিত্যনাথের মতো গলির গুন্ডা সরকার বোঝেনি। টানা ধর্মঘটে ছিলেন বিদ্যুৎকর্মীরা, বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে। যোগী পিছু হটে বাধ্য হলেন লিখে দিতে— হবে না বেসরকারিকরণ।
লেবার কোড অর্ডিন্যান্স পাশ হয়ে যাওয়ার পরে ধর্মঘট ডেকেছিলেন প্রতিরক্ষা কর্মীরা। কিছুতেই প্রতিরক্ষা কারখানাগুলোকে কর্পোরেটকরণের নামে বেসরকারি করা যাবে না। টানা বারো ঘন্টা দিল্লিতে ধর্মঘটি ইউনিয়নের সঙ্গে মিটিং-এ বসেন কেন্দ্রীয় লেবার কমিশনার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের যুগ্মসচিব। সরকার জানিয়ে দিয়েছে লিখিতভাবে, এখনই কর্পোরেটকরণের পথে হাঁটবে না। ফের বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।
আমাদের এই বাংলায় চোখ রাখুন না। ইছাপুর গান ফ্যাক্টরিতে এসেছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বড় কর্তা সহ ভ্যালুয়ার টিম। লেবার কোড আইন পাশ হয়ে যাওয়ার পর। কারখানা ঘিরে রেখেছিলেন শ্রমিকরা, কর্মচারীরা।
না! গান ফ্যাক্টরির ভেতরে ঢুকতে পারেনি কেউ, ফিরে যেতে হয়েছে ভ্যালুয়ার টিমকে। সঙ্গে হুঁশিয়ারি— পরের বার কারখানার দিকে এলে বিটি রোড ধরে নিশ্চিন্তে ফিরেও যেতে পারবেন না।
কোল ব্লক নিলামের বিরুদ্ধে তির ধনুক নিয়ে, গাইতি শাবল নিয়ে মজদুররা। তিন দিনের ধর্মঘটের পর আবার একদিনের ধর্মঘট হয়। এখনও পর্যন্ত নিলাম করে কোল ব্লক বিক্রিবাটা সহজ হচ্ছে না সরকারের।
লেবার কোড অর্ডিন্যান্স পাশ হওয়ার পরেই ধর্মঘটে ছিলেন বিপিসিএল-এর কর্মীরা, শ্রমিকরা। পাঁচ পাঁচ বার দরপত্র হেঁকেও খরিদ্দার পাওয়া যায়নি। ‘তারিখ পে তারিখ’ গেছে, সরে গেছে রিলায়েন্স থেকে সৌদি আরমাকো। বেদান্ত নাকি কিনতে পারে বিপিসিএল। কিন্তু শ্রমিকরা তো কিনতে দেবেন না! ভ্যালুয়ার টিম বিপিসিএল-এর ধারে কাছে এলে ফিরে যেতে দেবেন না শ্রমিকরা।
‘ডাইরেক্ট কমব্যাট’, সরাসরি সংঘর্ষর পথেই আমাদের রাজ্যে ব্রিজ অ্যান্ড রুফের বিক্রি, অ্যালয় স্টিলের বিক্রি ঠেকিয়ে রেখেছেন শ্রমিকরা। কারখানার দিকে খরিদ্দাররা এলেই ঘিরে রাখো, আর ফিরতে দিও না।
কৃষক আন্দোলনের কথায় ফিরি। জলকামান, ব্যারিকেড, টিয়ার গ্যাসের সেল উড়িয়ে, লাঠি চার্জ করা পুলিশকেই লঙ্গরের খাবার খাওয়াতে খাওয়াতে দিল্লি বর্ডারের দখল নিলেন লক্ষ লক্ষ কৃষক সপরিবারে। চলল একের পর এক ‘সরকারি আলোচনা’!
সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাঝের মধ্যাহ্ন বিরতিতেও সরকারি লাঞ্চ বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের লঙ্গরখানার খাবার মাটিতে বসে খেলেন আন্দোলনকারী চাষীরা। এটাও ইতিহাসে লেখা থাকবে।
সরকার হাজারো সমস্যা করবে, সেটা চাষিরা জানতেন। জানতেন বলেই অন্তত ছ মাসের রসদ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
যথারীতি টালবাহানা চলল। চাষিরা জানিয়ে দিলেন, তিন কালা আইন বাতিল ছাড়া তাঁরা নিজেদের অবস্থান থেকে নড়বেন না। শুরু হল ছাব্বিশে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাস্তায় ট্রাক্টর মিছিলের প্রস্তুতি।
এই ট্র্যাক্টর র্যালি শুরুর আগে দিল্লি পুলিশ সুপ্রিম কোর্টে তা রদ করানোর জন্য একটা পিটিশন দিয়েছিল৷ পিটিশনে লেখা ছিল, ‘ট্র্যাক্টর র্যালি হতে দিলে দেশের অপমান হবে।’ এই শব্দচয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দেশের কৃষকরা রাজধানীর রাস্তায় ট্র্যাক্টর র্যালি করলে দেশের কী অপমান হতে পারত? লজিকটা কী? সেসব জানা যায়নি। শুধু জানা গিয়েছিল, ‘দেশের অপমান হবে’৷ জনজীবন বিঘ্নিত হবে না, প্রজাতন্ত্র দিবস পালনে বাধা পড়বে না, ভুল উদাহরণ তৈরি হবে না— ‘দেশের অপমান হবে’। ঠিক এইটাই বলেছিল দিল্লি পুলিশ, পিটিশনে। সুপ্রিম কোর্ট প্রথামতে সে আর্জি খারিজ করে দেয়। সত্যিই তো! ট্র্যাক্টর র্যালি তো সরকারের বিরুদ্ধে। তাতে দেশের কী অপমান হতে পারে? আদালতের যুক্তি একেবারেই সার্থক, অন্তত এক্ষেত্রে।
কিন্তু, হল। দেশের অপমান হল। যা দিল্লি পুলিশ পিটিশনে বলেছিল, তা দৈববাণীর মত ফলে গেল। ট্র্যাক্টর র্যালি চলাকালীন দীপ সিধু এবং লখা সিধানার যৌথ উস্কানিতে কয়েকটা দল র্যালির রুট ভেঙে বেরিয়ে গেল, সময়ের আগে ব্যারিকেড ভেঙে হুড়োহুড়ি করে এগোল, রেড ফোর্টে পৌছল, এবং ভারতের পতাকার পাশে শিখদের নিশান-ই-সাহিব তুলে দিল৷
রেড ফোর্ট যে ডালমিয়াদের লিজ দেওয়া, এটা মনে রাখার দরকার নেই, যাই হোক।
সঙ্গে সঙ্গে প্রচার শুরু হল, যে ভারতীয় পতাকার অপমান হয়েছে। কিছু ছবিও ভিডিও ছড়িয়ে গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়, যেগুলো খুব স্পষ্ট ছিল না যদিও— এমনভাবে তোলা, যাতে মনে হতে পারে ভারতের পতাকা উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। জনমত ঘুরতে লাগল। জনরোষ তৈরি হতে লাগল। পুলিশ বলল, তিনশো পুলিশকর্মী আহত। খান পঁচিশেক এফআইআর হল প্রায় সমস্ত কৃষকনেতাদের বিরুদ্ধে, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এবং দীপ সিধু যে এরকম ঘটনা ঘটাতে পারে সেটা একমাস আগে থেকে বলছিলেন, এবং পুলিশের কাছে একাধিকবার আর্জি জানিয়েছেন দীপ সিধুকে গ্রেপ্তার করার জন্য। এই কৃষক নেতারা কিন্তু কেউ গ্রাউন্ড ছেড়ে পালাননি। অথচ কে পালাল? সেই দীপ সিধু এবং লখা সিধানা। রিপাবলিক ডে-র পরের দিন, অত হাজার হাজার পুলিশকর্মী এবং সিআরপিএফের নাকের ডগা দিয়ে দীপ সিধুরা পালিয়ে গেল। এই দীপ সিধুকেই আন্দোলন চলাকালীন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি ইনভেস্টিগেট করছিল ‘শিখস ফর পঞ্জাব’ নামক জঙ্গি সংস্থার কাছ থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগে। কিন্তু সেসব ইনভেস্টিগেশন কীভাবে জানি, কোথায় জানি, আটকে গেল। এই দীপ সিধুই, যদিও, আন্দোলন চলাকালীনই বরখা দত্তের সঙ্গে টিভি ইন্টারভিউতে পরিষ্কার জানিয়েছিল, সে খালিস্তানি জঙ্গি আন্দোলনকে খোলাখুলি সমর্থন করে। এই মুহূর্তে দিল্লির ‘স্থানীয় জনতা’-র মধ্যে জনরোষ তৈরি করার কাজ চলছে। তাদের জানানো হচ্ছে, কৃষকরা লাল কিলায় কী করেছে। কীভাবে দেশের অপমান হয়েছে। এটা উহ্য রাখা হচ্ছে, যে ঘটনার নায়ক দীপ সিধু এবং লখা সিধানাকে কৃষক নেতারা বহিষ্কার করেছিল। তাকে মঞ্চে ওঠারও অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ফলে, নেট রেজাল্ট, দেশের অপমান হল। ‘দেশদ্রোহিতা’ হল। একেবারে তাই-ই হল, যা দিল্লি পুলিশ পূর্বাভাস দিয়েছিল।
কিন্তু এই ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দেওয়ার যে খেলাটা অমিত শাহ শুরু করেছিলেন এবার তা কিঞ্চিৎ ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে।
শুরু হয়েছিল জেএনইউ দিয়ে। জেএনইউতে সরকারবিরোধী স্লোগান উঠল, তার মাঝখানে হঠাৎ কেউ বা কারা দেশবিরোধী স্লোগান ঢুকিয়ে দিল। শুধু সেইটুকুর ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হল। জনরোষ তৈরি হল।
ভিডিওটি যে জাল তা প্রমাণিত হবার আগেই ভাইরাল।
শাহিনবাগে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। শার্জিল ইমাম দেশবিরোধী স্লোগান তুলল। ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হল। জনরোষ তৈরি হল। সরকার বিরোধিতা হয়ে গেল ‘দেশদ্রোহ’।
দিল্লির বর্ডারে কৃষকদের সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছিল। দীপ সিধু এবং লখা সিধানা কিছু কৃষকদের উস্কে দেশবিরোধী কার্যকলাপ করল, হিংসা ছড়াল, স্লোগান তুলল। ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হল। জনরোষ তৈরি হল। সরকার বিরোধিতা হয়ে গেল ‘দেশদ্রোহ’।
মোটামুটি, এটাই টেমপ্লেট। যে কোনও সরকারবিরোধিতাই ম্যাজিকের মত পরিণত হচ্ছে দেশদ্রোহে। ফলে আন্দোলনগুলো ভেঙে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কৃষকদের ক্যাম্পে জল ও ইলেক্ট্রিসিটি কেটে দেওয়া হচ্ছে। লোক ঢুকিয়ে তাদের মারধোর করা হচ্ছে, পাথর ছোঁড়া হচ্ছে। পুলিশ বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করতে ব্যস্ত। জনতা দেখছে বাইরে থেকে। তারা ভাবছে, বেশ হয়েছে! এরা দেশদ্রোহী। তাদের তেমনই দেখানো হয়েছে। জনতা কোনওদিনই তলিয়ে ভাবে না।
ও হ্যাঁ, মাঝে দশজনের একটা শার্প শ্যুটার বাহিনী, (যার মধ্যে দুজন মেয়ে ও আটজন ছেলে) ঢোকানো হয়েছিল এই আন্দোলনে। প্ল্যান ছিল মেয়ে দুটির ইভটিজিং করা হবে এবং সেই ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে চারজন কৃষক নেতাকে গুলি করে মারা হবে। কিন্তু ধরা পড়ে গেছে ওই বাহিনী।
অতএব আপাতত ওই পরিকল্পনাও ব্যর্থ।
লেখাটির প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। ‘শ্রেণিবৈষম্য’ মুছে ফেলে কিভাবে কোটিপতি কৃষক সন্তান ট্রাকের পর ট্রাক কমলালেবু বিলিয়ে দিতে দিতেই নড়বড়ে সাইকেলে করে ছোলা আনা ছেলেটির হাত থেকে ছোলা তুলে নিয়ে কমলা দেন, সেইসব স্বপ্নের রূপকথা না হয় পরে কখনও লিখব। লিখব দিল্লির ফুটপাতের বাচ্চাদের জন্য আন্দোলনরত চাষিরা যে অবৈতনিক স্কুল খুলেছেন সেগুলোর কথাও।
শেষ করি গজাল আর গোলাপের প্রেমকাহিনী দিয়ে।
কৃষকদের আটকাতে জল, দুধ, খাবারের সাপ্লাই লাইন কাটার চেষ্টা করে যাচ্ছে রাষ্ট্র। পেরে ওঠেনি এখনও পর্যন্ত। রক্তবীজ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় না থাকার কারণে হয়তো বা।
কিন্তু সরকারি বাহিনী রাস্তায় যে দশ বারো ইঞ্চির ধারালো গজাল, তীক্ষ্ণ পেরেক গেঁথে রাখছে, তার উত্তরে আমাদের কৃষক বাহিনী তার পাশেই, গাছের চারা লাগিয়ে দিচ্ছেন যে।
‘তুম কালা কমল লিখো হাম লাল গুলাব লিখেঙ্গে?’
নাকি ‘মেরেছ কলসীর কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না?’
এনিওয়ে, কৃষক বন্ধুরা, শ্রমিক বন্ধুরা, চাষি ভাইবোনেরা, মজুর ভাইবোনেরা আমাদের রাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে সোয়্যাগ করার অপরচুনিটি দিচ্ছেন।
আসুন লড়ে নিই…
কিছু তথ্যগত দিক ছাড়া বাকিটা ভালো লিখেছেন। বিশেষ করে এই আন্দোলনের পেছনে পাঞ্জাব হরিয়ানায় যে প্রায় দুমাস ধরে লাগাতার আন্দোলনের পটভূমি আছে, এটা বারবার বলা দরকার। ✊