বাংলায় বহুজন রাজনীতির ভবিষ্যৎ ও আইএসএফ

সৌমিত্র দস্তিদার

 



প্রাবন্ধিক, গদ্যকার, তথ্যচিত্রনির্মাতা

 

 

 

এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেল, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। এখন শপথ নেওয়া, মন্ত্রিসভা গঠন সব একেবারে দুরন্ত গতিতে এগোচ্ছে। এই আট-দশ দিন ধরে রাজনৈতিক মহলে দলগুলির সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে নানারকম বিশ্লেষণও চলছে। দেশবিদেশের রাজনৈতিক পণ্ডিতেরা টিভিতে, খবরের কাগজে সমানে আলোচনা করছেন মমতা ব্যানার্জি-র সাফল্যের পিছনে কারণগুলি কী কী অথবা বিজেপি কেন এবার ক্ষমতায় আসতে পারল না ইত্যাদি ইত্যাদি।

সাধারণভাবে নির্বাচনের সময় যা হচ্ছিল তা হচ্ছে আলোচনার মধ্যে দিয়ে একটি বাইনারি তৈরি করার চেষ্টা যে এ রাজ্যে প্রধান শক্তি দুটি— বিজেপি ও তৃণমূল। সংসদীয় রাজনীতি বহুদলীয় হলেও ভোটের লড়াইয়ে যখন জেতা হারার প্রশ্ন আসে, দেখা যায় লড়াইটা মূলত দুটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে কিছু নেই। ঘটনাচক্রে ভোটে এই প্রথম বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস একটিও সিট না পাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের এই মতটি প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে গেছে। মতটি হল— গণতন্ত্রে লক্ষ লক্ষ ভোটারের মতামত যাই হোক না কেন, বিজেপি ও তৃণমূলের বাইরে অন্য কোনও মতকে গুরুত্ব দেওয়ার আদৌ কোনও দরকার নেই। মিডিয়া নাকি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। অথচ স্রেফ বিজ্ঞাপনের টাকা পাওয়ার আশায় বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার তাগিদে ভিন্ন স্বরকে জায়গা দেওয়া দূরে থাক, তার অস্তিত্বটুকু মানতেও আমাদের মূল ধারার প্রচারমাধ্যমগুলির প্রবল অনীহা। আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, এবারের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ উত্থান নিঃসন্দেহে আইএসএফের। অথচ বাম-কংগ্রেসের বিধানসভায় ‘বিলুপ্ত’ হয়ে যাওয়া নিয়ে তবু কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নিয়ে একটা বিশ্লেষণও এখনও অবধি চোখে পড়ল না। সকলে আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় নীরব আইএসএফ নিয়ে। অথচ সংযুক্ত মোর্চা এবার যে একটিমাত্র আসনটি পেয়েছে তা কিন্তু নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে গড়ে ওঠা একটি নতুন দল আইএসএফ-এর সৌজন্যেই।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আইএসএফ-এর মতো কোনও ছোট দল মূল ধারার রাজনীতিতে এত বিপুল জনসমর্থন এর আগে কখনও পায়নি। মুসলিম লিগ দেশভাগের পর একপ্রকার মুছে যেতে মোটে বছর তিনেক সময় নিয়েছিল। আধিপত্যবাদের দাপটে এলিট মুসলিমদের সবাই কংগ্রেসের পতাকার নিচে জড়ো হয়েছিলেন। কারণ ছিল কোনওরকমে নিজেদের প্রাণ ও মান টিকিয়ে রাখা। মালদা মুর্শিদাবাদ দিনাজপুরে ‘সেকুলার’ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক গড়ে উঠেছিল। কংগ্রেসের স্বার্থ ছিল দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী কোন্দলে মুসলিম প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো। আর মুসলিম এলিটদের স্বার্থ ছিল কংগ্রেসের মধ্যে ঢুকে সাম্প্রদায়িক তকমা গা থেকে মুছে ফেলে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নেওয়া। লিগপন্থী মুসলিম রাজনীতির এই পটপরিবর্তন জাতীয়তাবাদী মুসলিমরা মানতে পারেননি। কিন্তু কংগ্রেস সিন্ডিকেটের চাপে তাদের যাবতীয় ওজর আপত্তি ধামাচাপা পড়ে যায়। তার এতবছর পরে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল এবং বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের বহুজনের রাজনীতির সফল প্রয়োগ আমরা দেখলাম আইএসএফ-এর রাজনীতির মধ্য দিয়ে।

আইএসএফ-এর সংকল্পপত্র দেখুন। পার্টির গঠনতন্ত্রের দিকে চোখ রাখুন। প্রথমেই সেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, পার্টির নাম ‘ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট’, সংক্ষেপে আইএসএফ। এখানে সেকুলার শব্দটি নিছক ধর্মীয় ইনক্লুসিভনেসের জন্য নয়। বরং এই শব্দে ভাষিক, জাতিগত, ধর্মীয় বিভিন্নতা— সব গোষ্ঠীকেই যুক্ত করা হয়েছে। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে যে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের ভাষা, ধর্ম, আর্থিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুরক্ষা পার্টি কর্মসূচির অন্যতম বিষয়। আইএসএফ স্পষ্ট করে বলছে, পুঁজিবাদী ধনতন্ত্রের বিকল্প নতুন এক শোষণহীন, সমাজকল্যাণকামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য। এছাড়াও মাধ্যমিক অবধি শিক্ষা বিনাপয়সায় করা থেকে শুরু করে জল জঙ্গল জমির অধিকার নিয়ে সতত সোচ্চার হওয়ার কথা স্পষ্ট করে আইএসএফ জানিয়েছে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে।

দেশের কৃষি শিল্প স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসংস্থান এমনকি পরিবেশ নীতি নিয়েও আইএসএফ-এর চিন্তাভাবনার যে অভিমুখ তা নিঃসন্দেহে বামপন্থী রাজনীতির থেকে কোনও অংশে কম স্বচ্ছ ও সুগঠিত নয়। যে বামেদের একাংশ ভোটের পরে আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যান্য অনেক দলের মতই সাম্প্রদায়িক বলে আইএসএফ-কে চিহ্নিত করছেন, আইএসএফ-কে মেনে নিতে পারছেন না, তারাই আসলে এদেশে আবহমানকাল ধরে বয়ে চলা মনুবাদী রাজনীতির প্রোডাক্ট। আইএসএফ-এর কর্মসূচিতে যেভাবে বিভাজনের রাজনীতি এবং মনুবাদী-ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয়েছে, তা এ রাজ্যের বর্ণহিন্দু বামুনবাদী রাজনৈতিক মহলকে চিন্তায় ফেলেছে, তা বলাই বাহুল্য। তবে ওই দুঃশ্চিন্তাটুকুই আগামী দিনে আইএসএফ-এর রাজনীতিকে সারা দেশে প্রাসঙ্গিক করে তুলবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ট্র‍্যাডিশনাল বামপন্থার বদলে এ এক নিও-লেফট বা নতুন বামপন্থা। পুরনো বামপন্থা শ্রেণির কথা বলতে গিয়ে দেশের জাতপাতের বাস্তবতাকে স্বীকার করত না। অথচ এই নব্য বামপন্থা আপাত আইডেনটিটি পলিটিক্সের আড়ালে শ্রেণিরাজনীতির কথাই বলে। এদেশের সমাজকাঠামো আজও সামন্ততান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক ও মনুবাদী। আজও সমাজের বড় দ্বন্দ্ব মনুবাদী কাঠামো বনাম মুসলিম দলিত আদিবাসীর বহুজনের রাজনীতি। ভোটের সংখ্যা বা সংসদীয় রাজনীতিতে জয়পরাজয় দিয়ে এই সামাজিক দ্বন্দ্বের টানাপোড়েনে কর্তৃত্ব কার হাতে তা নির্ধারিত হবে না। যতদিন যাবে, এই মনুবাদী কাঠামো নব্য হিন্দুত্ববাদের বিস্তারের পথ প্রশস্ত করবে। আর এই নব্য হিন্দুত্বের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা আছে লগ্নি পুঁজির। নয়া অর্থনীতি এদেশে সবচেয়ে ধাক্কা দিয়েছে সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে। ফলে আইএসএফ যখনই তাদের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে ও হবে, তখনই তা নিছক গোষ্ঠী রাজনীতির বাইরে গিয়ে হয়ে উঠবে ভয়েস অব দ্য ভয়েসলেস বা নীরব জনতার সোচ্চার কন্ঠস্বর।

আইএসএফ-এর বহু মিটিং-এ আমি গেছি। গরিবস্য গরিবের উন্মাদনায় যে কত স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ থাকতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে শহুরে বাবু ভদ্দরলোকেরা কল্পনাও করতে পারবেন না। গ্রামে গ্রামে অজান্তে কত নতুন নতুন রাজনৈতিক পরিভাষা জন্ম নিয়েছে। শাসনের এক গ্রামে তৃণমূল বিজেপি সিপিএম নিয়ে আলোচনার মাঝে দু-তিনজন প্রবীণ বলে উঠলেন, সিপিএম এখানে সেভাবে আর নেই। তৃণমূল আছে প্রবল শক্তি নিয়ে। তবে এখন এদিকের সব জায়গায় দাপট বাড়ছে আব্বাসবাদীদের। মার্কসবাদ লেনিনবাদ শোনা কানে আব্বাসবাদ শব্দটা ধাক্কা দিলেও বুঝলাম শহরের এলিটবৃত্তের বাইরে রাজনৈতিক ডিসকোর্সে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে এক নতুন বয়ান। হাড়োয়ার আইএসএফ প্রার্থী কুতুবউদ্দিন ফতেমির প্রথম তারাবির নামাজের সময় কীভাবে যেন ঢুকে পড়লাম একটা জরুরি কাজে। দোতলা এক বাড়ির ছাদে কুতুবউদ্দিন নামাজ পড়তে পড়তে বলে যাচ্ছেন, হে মহান আল্লাহ্ তুমি গরিব হিন্দু ও মুসলমানদের দেখো। তুমি শত্রু ও মিত্রদের সমান দৃষ্টিতে দেখো। পুঁজির সমর্থকদের ক্ষমা করবে না। কৃষক আন্দোলনের সাথীদের দেখো। আরও কত কত নতুন কথা। কত আকুতি। মরে যাওয়া দিনশেষের আলোয় নতুন এক পলিটিক্যাল বয়ান নির্মিত হচ্ছিল আমাদের কয়েকজনের সামনে।

ফিরে আসি যেখান থেকে কথা শুরু করেছিলাম। মিডিয়া দুই বাইনারির বাইরে এই অন্য কোনও নির্মাণ নিয়ে একটা কথাও বলে না। সামান্য মাথা ঘামাবার যে প্রয়োজন আছে, তাও মনে করে না বঙ্গের সুশীল সমাজ। আইএসএফ তাদের কাছে শুধুই এক পিরজাদার দল। আর কে না জানে সে যখন পিরজাদা যার মাথায় টুপি, তখন সে আর সাম্প্রদায়িকতা হল এলিট বৃত্তের কাছে সমার্থক শব্দ।

কোনও কোনও মহলের সম্মিলিত প্রচার ছিল আইএসএফ-এর একমাত্র লক্ষ্য বিজেপির টাকা নিয়ে সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন। যে বামপন্থী নেতারা এখন আব্বাস সিদ্দিকীর ও তাঁর দলের সঙ্গে জোট নিয়ে সোচ্চার তাদের পদবীর মধ্যেই লুকিয়ে আছে আইএসএফ-এর প্রতি ঘৃণার আসল কারণ। এই কঠিন সময়ে আইএসএফ ভাঙরে জিতেছে আঠাশ হাজার ভোটে। হাড়োয়া দেগঙ্গা অশোকনগর ক্যানিং পূর্ব আমডাঙা এরকম একাধিক কেন্দ্রে বিপুল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। ভোটের আগে জন্ম নেওয়া মাত্র তিন মাস বয়সের একটা দলের পক্ষে এই বিরাট সাফল্য নিয়েই আলাদা গবেষণা করা জরুরি।

কেন জরুরি, কেন আইএসএফ-এর রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি প্যারাডাইম শিফট, তা বুঝতে হলে ইতিহাসের কয়েকটি ঘটনা ও প্রবণতা আমাদের খেয়াল করতে হবে। আমরা জানি, জাতীয় কংগ্রেসের গড় মালদা মুর্শিদাবাদ দিনাজপুরে। সেখানে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু রাজনীতির শুরুটা কিন্তু অভিজাত মুসলিম নেতাদের হাত ধরেই। মুর্শিদাবাদে সৈয়দ বদরুদ্দোজা বা আরও পরে মালদার সুজাপুরে গনি খান চৌধুরির হাত ধরে। এরা সকলেই প্রচলিত অর্থে নীল রক্তের মুসলিম। আর আম মুসলিমদের অগাধ আনুগত্য ছিল এইসব এলিট উচ্চশিক্ষিত প্রভাবশালী নেতাদের ওপর। তাদের পরামর্শ বা আদেশ মেনে চলাই ছিল সে রাজনীতির দস্তুর। কিন্তু আইএসএফ-এর উত্থান একেবারে নিচুতলার থেকে। এবারের যে যে কেন্দ্রে তারা বিপুল জনসমর্থন পেয়েছে তার পুরোটাই এসেছে গরিব মুসলিম, দলিত ও গরিব হিন্দুদের কাছ থেকে। শুধু যদি মূল ধারার রাজনীতিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের কথাই ধরি, তাহলে দেখব আইএসএফ-এর উত্থান চালু নিয়মের এক উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।

দ্বিতীয়ত, তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটের পুরোটাই পেয়েছে এটাও অর্ধেক সত্যি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় অংশ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে সত্যি, কারণ বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তাদের বিপদে পড়তে হবে, প্রাণসংশয় পর্যন্ত হতে পারে এই আশঙ্কায় ভুগছে তারা। অর্থাৎ এটা মূলত নেতিবাচক ভোট। অন্যদিকে ভাঙরে তো বটেই, এমনকি অন্যান্য অনেক বিধানসভায় আইএসএফ যে বিপুল ভোট পেয়েছে তার নব্বই শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট, যে ভোট শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উন্নয়ন, অর্থাৎ যথার্থ প্রগতিশীলতার পক্ষে ভোট। এই বিষয়টাও আলোচনায় আসছে না। এলে পরিষ্কার হয়ে যেত যে আইএসএফ কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে মানুষের ইতিবাচক সমর্থন পেয়েছে। যেখানে যেখানে সে ঠিকঠাক পৌঁছেছে বা প্রচার করতে পেরেছে সেখানেই আইএসএফ গরিব প্রান্তিক মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে।

পাশাপাশি এটাও সত্যি যে আব্বাস সিদ্দিকীকে নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোকজনও তীব্র বিরোধিতায় সোচ্চার। আমার ধারণা সে বিরোধ যত না রাজনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। পিরপন্থী বনাম ওয়াহাবি বনাম হানাফি বনাম আহলে হাদিস কিম্বা জামাতে ইসলামির প্রভাব আব্বাসকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে দিয়ে আর একটা বিষয় খুব স্পষ্টভাবে সামনে আসবে যে একক ও ওয়াটারটাইট মুসলিম কৌম সমাজের প্রচারটাও আজকের দিনে নিছক একটা মিথ।

এই বহুজন রাজনীতির ডিসকোর্সে ঘটনাচক্রে আব্বাস সিদ্দিকী একটি উপলক্ষ মাত্র, কিন্তু ব্যক্তি আব্বাস সিদ্দিকীর ওপর অতিরিক্ত আলো ফেলে মিডিয়া আরও একটা ধারণা সুকৌশলে জনমনে চারিয়ে দিচ্ছে যে ওই আব্বাস ছাড়া দলটার বা ভাবনাটার বা রাজনীতিটার যেন কোনও অস্তিত্ব নেই। ইচ্ছে করে মূলধারার মিড়িয়া বহুজনের রাজনীতিকে গৌণ বা বাতিল প্রতিপন্ন করতে চাইছে। এবং এই মনুবাদী কৌশল নিয়ে কিন্তু কোনও সমালোচনা প্রগতির শিবিরেও আশ্চর্যজনকভাবে দেখছি না।

আইএসএফ-এর উত্থান নিঃসন্দেহে দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে বিরল ঘটনা। অথচ নির্বাচন পরবর্তী আলোচনায় তাদের নিয়ে কেউ একটা কথাও বলছেন না। অদ্ভুতভাবে ইচ্ছে করে তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে। ভাবটা এমন যে ধুর আইএসএফ নিয়ে এত কথা বলার কী আছে। আজ আছে। কাল দলটা উঠে যাবে। এটাও একটা কৌশল। দলটা উঠবে না থাকবে সেটা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু এই ইস্যুগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে মূল ধারার রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হচ্ছে। বামেদের যে অংশ এখন আইএসএফ-এর সমালোচনা করছেন, ভোটের আগে তাঁদেরও মিটিং-এ মিছিলে ভিড় জোগান দেওয়ার কাজ করে গেছে আইএসএফ কর্মী-সমর্থকেরা। যারা সমাজের অত্যন্ত গরিব, খেটে খাওয়া কৃষক মজুর। তারা অনেকটা পুরনো হিন্দু জমিদার সংস্কৃতির লেঠেল বাহিনীর মতো। ওপরতলার বাবুদের ভরসা জোগানো ছিল তাদের একমাত্র কাজ। এই সামন্তবাদী মনোভাব এ রাজ্যের অনেক বাম নেতাদের মধ্যে আজও থেকে গেছে। আগামী দিনে আইএসএফ-এর নতুন বামপন্থাই হবে এ রাজ্যের অন্যতম শক্তি। তবে তাকে দল হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। বহুজনের যে রাজনীতি তার মূল স্পিরিট, আগামী দিনে সেটা বজায় রাখতে পারলে কোনও সন্দেহ নেই যে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট গরিব মানুষের, আদিবাসী দলিত সংখ্যালঘু জনতার সংগঠন হবে। রাজনীতির এই যুগসন্ধিক্ষণে আইএসএফ-কে উপেক্ষা নয়, অ্যাকাডেমিক পরিসরে তাকে নিয়ে চর্চা হওয়া দরকার। স্বাধীনতা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আইএসএফ যে এক নতুন সময়ের প্রতিনিধি, ভবিষ্যতে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4880 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

2 Comments

  1. লেখাটা আপাতদৃষ্টিতে বিশ্লেষণমূলক হলেও অনেক ফাঁক ও ফাঁকি আছে। মনুবাদী রাজনীতির প্রতি ঘৃণা থাকলেও মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রশ্রয় দেখানো হয়েছে। উচ্চবর্ণের বাঙালি হিন্দু পদবিধারীদের প্রতি বিদ্বেষও সংকীর্ণতার নামান্তর। এটাও মনুবাদ বা ব্রাম্মণ্যবাদেরই আরেক পিঠ।

  2. Bortoman Globalization or গ্লোকালাইজেশনের yuge ekjon Bharatiya rupe Super Power Bengal & Indiar chinta niye Rich Middle Poor classes’ er Equitable Powers diye Manabসভ্যতা ke egiye niye jete ISF er jonmo tai amader moto Doctorate। Degree holders der Somorthon peyechhe!
    Ei dol মানবজাতিকে এক নতুন সভ্য scientific Economic welfare religious – spiritual বাঙালি ভারাতিয় & পৃথিবীর জন্ম দিয়েছে n dite thakbe InshaAllah।

    Dr.Hafiz,Author of Allah’s 5 International Democratic Ideas Must…

আপনার মতামত...