এ ঘৃণ্য প্রতিহিংসা বই কিছু নয়

অশোক মুখোপাধ্যায়

 



প্রাবন্ধিক, বিজ্ঞান ও মানবাধিকার কর্মী

 

 

 

 

শববাহিনী গঙ্গা

রামরাজ্যের সুখবিলাসী রাজা এখন নঙ্গা,
রাম, একবার দেখবে এসো শববাহিনী গঙ্গা!

পারুল খক্কর, গুজরাতের এক বিশিষ্ট কবির একটি সাম্প্রতিক কবিতার শেষ দুটি পংক্তি নিজের মতো ছায়ানুবাদ করে নিলে অনেকটা এমনই দাঁড়ায়। গুজরাতি ভাষায় লেখা মূল কবিতাটি শাসকের ফরমানে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে উধাও হয়ে গেলেও হিন্দি উর্দু ইংরেজি বাংলা অনুবাদে সেই কবিতার এখন লক্ষাধিক অনুলিপি আন্তর্জালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজা যে নাঙ্গা, তা লুকোনোর এখন একটাই উপায়— “নাঙ্গা” শব্দ ব্যবহারের উপর এনএসএ আইনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এই সাহসী বিবেকবান কবি পারুল দেবীকে প্রণতি ও অভিবাদন জানিয়েই কথা শুরু করতে চাই।

চোর ধরার টাইম টেবিল

যখন গঙ্গার স্রোতে ভাটিতে উত্তর থেকে দক্ষিণে গেরুয়াশাসন এলাকা থেকে অগেরুয়া রাজ্যগুলিতে ভেসে আসছে শত শত মৃত মানুষের সৎকার না হওয়া বেওয়ারিশ লাশ, যখন সারা দেশের ইতিহাসে এই প্রথম শ্মশানে কবরে এত ভিড় যে সমস্ত মৃত মানুষকে দাহ বা দাফন করা যাচ্ছে না, যখন এক-একদিন শ্মশানের বাইরের রাস্তায়ও লাশের জমায়েত এমন যে সবাইকে চিতায় শুইয়ে নয়, দাঁড় করিয়ে তবে খাড়া অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে মরা পোড়াতে হচ্ছে, যখন দেশের কোথাও হাসপাতালে আগত রোগীকে নেওয়ার জায়গা এবং ব্যবস্থা নেই, যখন একই অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে রোগীদের মধ্যে সময় ভাগ করে করে নাকে নল গুঁজে দিতে হচ্ছে, যখন সমগ্র ভারতে করোনা সংক্রমণ এক ভয়াবহ মাত্রা অর্জন করেছে, ডাক্তার নার্স থেকে শুরু করে প্রশাসক পুলিশকর্মীরা দলে দলে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, তখন—

যখন সারা দেশের প্রান্তে প্রান্তে অক্সিজেনের সিলিন্ডারের আকাল দেখা দিয়েছে, এবং শোনা যাচ্ছে, এই বিপুল সংখ্যক রোগীর দেশ থেকে দুটো ডলারের সন্ধানে অক্সিজেন বিদেশে রপ্তানি হয়ে গেছে, যখন সকলের তো দূরের কথা, আজ অবধি এক শতাংশ জনগণের কোভিড পরীক্ষা করার মতো ব্যবস্থা পর্যন্ত করে ওঠা যায়নি, যখন প্রচুর টিকা উৎপাদন হয়ে তা বিদেশে চলে যাওয়ার দরুন দেশের সকল নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, যখন এমনকি সেই বাজারে অপ্রতুল টিকা নিয়েও কালোবাজারি ও ফাটকাবাজি জমে উঠেছে, যখন সরকারি চাকুরিজীবী নাগরিকদের থেকে জবরদস্তি টাকা কেটে এবং বিভিন্ন দেশি বিদেশি সংস্থা থেকে অনুদানের মাধ্যমে করোনার জন্য সংগৃহীত টাকা জমে জমে পিএম কেয়ার ফুলে ফেঁপে উঠছে, এবং ঠিক কতটা ফুলেছে তা দেশের সমস্ত আইনি প্রোটোকল ও অনুসন্ধানের বাইরে রেখে দেওয়া আছে, তখন—

হ্যাঁ, ঠিক তখনই— পাঠক বুঝে নিন— একেবারে সেই সময়েই দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে চলেছে জরুরি কাজের ভিত্তিতে। সেই শ্রমিকদের লকডাউন নেই, “দূরী” বজায় রাখার প্রয়োজন নেই, জমায়েতে বাধানিষেধ নেই। একেবারে সেই সময়েই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য দশখানা চারতলা আবাসনও দ্রুত তৈরি হচ্ছে। হ্যাঁ, সম্প্রতি একটাই নিষেধাজ্ঞা সেখানে জারি হয়েছে। সেই সব নির্মাণকাজের কোনও ছবি কেউ তুলতে পারবে না। যাতে লাশস্রোতের পাশে সেই মোগলাই প্রাসাদ শিল্পের ছবি দেশি বিদেশি কোনও সংবাদসংস্থা ছাপিয়ে বা দেখিয়ে না দিতে পারে। আর নির্মিত হচ্ছে সেই আবাসন থেকে নতুন সংসদ ভবনে যাওয়ার জন্য এমন এক ভূগর্ভপথ, যাতে রাস্তার ভিড় মোদির যাতায়াতে সামান্যতমও বিলম্ব ঘটাতে না পারে। কেন না, প্রধানমন্ত্রী দেশের ব্যস্ততম মানুষ, তিনি নানা জরুরি কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তাঁর দেরি হওয়া মানে—

এই মানে বুঝবার চেষ্টা করবার এক ফাঁকেই ঘটে গেছে আর এক নতুন নাটক। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ততা কিসে তা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়ত এই নাটকের মঞ্চায়ন।

সিবিআই কয়েকজন চোর ধরেছে।

এমনিতে এটা কোনও খবর নয়, নতুন খবর তো নয়ই। রাজ্য এবং কেন্দ্রের পুলিশ বাহিনি রয়েছেই তো অপরাধীদের ধরবার জন্য। দেশের করদাতাদের অনেক টাকা এর জন্য ব্যয় হয়। খবরটার মধ্যে নতুনত্ব আছে দুটো জায়গায়।

এক, যে অপরাধের জন্য এই চোর ধরার খেলা, তাতে দুই সম্ভ্রান্ত বড় চোরকে ধরার কোনও চেষ্টা হয়নি। পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে কয়েকজনকে ধরা হলেও বিশ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আছে যার বিরুদ্ধে (জনাব মুকুল রায়), তাঁকে আটক করতে সিবিআইয়ের কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। পুলিশ যখনই চোরদের মধ্যে পছন্দ অপছন্দের বিবেচনা কাজে লাগায় তখনই তাতে কিঞ্চিৎ সন্দেহ উদ্রেক করে ফেলে বৈকি!

চ্যাপলিনের এক সিনেমায় হ্বারদুঁ মশাই (মঁসিয়র দুর্বল বাংলা অনুবাদ) নাকি নেশার ঘোরে বলেছিলেন, দু-পাঁচ জনকে হত্যা করলে তুমি খুনি, দু-পাঁচ লক্ষ মারতে পারলে তুমি হিরো। সেরকম কিছু হল নাকি?

দুই, সদ্য বিধানসভা নির্বাচনের পরে নতুন বিধানসভা বসার আগেই নিষ্ঠাবান পদ্মকর্মী রাজ্যপালের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজটি করে ফেলা হয়েছে। তার মধ্যে এমন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার এখন মন্ত্রীসভার তরফে দায়িত্ব পড়েছিল রাজ্যে কোভিড অতিমারি সংক্রান্ত বিবিধ সমস্যা সামলানোর। বেছে বেছে সময় নির্বাচনের মধ্যে বেশ একটা মুন্সিয়ানা যে রয়েছে তা মানতেই হয়।

পশ্চিমবঙ্গের ভোটে সরকারি মসনদ দখল করতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর দায়িত্ব ভুলে যাননি। রাজ্যবাসীকে কয়েকজন ছোট চোরের হাত থেকে বাঁচাতে খুবই তৎপর হয়ে রয়েছেন বোঝা গেল। বড় চোরটির ব্যাপারেও তিনি নিশ্চয়ই খুবই ব্যস্ত রয়েছেন, তাঁকে কী করে গ্রেপ্তারি জালের বাইরে রেখে পশ্চিমবাংলাকে কিছু সোনা অন্তত দেওয়া যায়।

 

প্রশ্নের পেছনে প্রশ্ন, আরও প্রশ্ন

সিপিআই (এম) থেকে শুরু করে রাজ্যের সমস্ত দল এই ঘটনাকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছে। একে নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিহিংসার রাজনীতি হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্ক তুলে অন্য দিকে অনেকেই অবশ্য এগিয়ে এসেছে সিবিআইয়ের এই চোর বাছাই কাজের সপক্ষে।

স্বাভাবিক। স্বয়ং লেনিন বলেছিলেন, স্বার্থ জড়িত থাকলে লোকে জ্যামিতির স্বতঃসিদ্ধ নিয়েও তর্ক তুলত। আর এ তো সিবিআই কেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন মন্ত্রী এক ঘুষকাণ্ডে স্টিং অপারেশনে হাতেনাতে (আসলে ক্যামেরানাতে) ধরা পড়ে গেস্‌ল। তা তাতে আমরা কেউ যদি সময় নিয়ে এবং বড় মুরুব্বিকে ছাড় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করি, যাঁরা চুরিটুরি একদম সইতে পারেন না (যেমন আমাদের নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি), তাঁরা এই সব প্রশ্নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এগিয়ে আসবেন— এ আর বেশি কথা কী!

প্রতিপ্রশ্ন নং এক: চোর চুরি করেছে, পুলিশ তাকে ধরবে— এর আবার সময় অসময় কী? পাঁজি দেখে পুলিশ চোর ধরবে? খামোখা চোরের পক্ষ নেবেন না তো। আগে কেন ধরেনি, এত দিন কী করছিল, সে কথা বলুন, তাই বলে ঠিক এখনই কেন ধরেছে এই প্রশ্ন তোলার কোনও মানে হয় না।

প্রতিপ্রশ্ন নং দুই: পালের গোদাকে ধরেনি, অধিকারী গ্যাংমাস্টারকে ধরেনি, নিশ্চয়ই তার কিছু কারণ আছে। পদ্মফুলের ছাপ আছে বলেও হতে পারে, আবার অন্য কোনও পুলিশি কারণও থাকতে পারে। আমাদের অতশত দেখার দরকার নেই। যদি আদৌ না ধরে, আমরা পরে সেই প্রশ্ন তোলার অনেক সুযোগ পাব। এখন সেই জন্য এই গ্রেপ্তারিকে সমালোচনা করার কোনও অর্থ হয় না।

প্রতিপ্রশ্ন নং তিন: দলের চোরকটাকে ধরেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে ওখানে ধর্নায় বসতে হবে? নিজের ঘোষিত অতিমারি লকডাউন আইন ভাঙতে হবে? এ কী কথা! কোর্টে জামিনের মামলায় হাজার হাজার লোক নিয়ে জমায়েত করার মানে তো বাইরে থেকে বিচারকদের উপর এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করা। এরকম করলে পুলিশ কখনও তার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারে?

এই জিজ্ঞাসাগুলো ভুল নয়। তর্কশাস্ত্রের ভাষায় এদেরকে বলে ভুল জায়গায় উত্থাপিত প্রশ্ন। সঠিক প্রশ্ন উত্থাপনের পেছনে সাধারণত যে সদুদ্দেশ্য থাকে এদের তা নেই। এই সব প্রশ্ন তুলে আসলে কতগুলো জরুরি জিনিসকে আড়াল করার ব্যবস্থা হচ্ছে। সেগুলো আরও মৌলিক প্রশ্ন।

একে একে বলি।

চোর ধরতে কে পাঠাল?

কেন, কেন্দ্রীয় সরকার! নরেন মোদি এবং অমিত শাহ। তাঁদের নির্দেশ ছাড়া নিশ্চয়ই সিবিআইয়ের এত সাহস হত না যে ঠিক এই সময়কেই চোর ধরার জন্য বেছে নেবে।

তা, সেই চোর সন্ধকগণ রাফায়েল ক্রয় থেকে চুরি (আসলে ভয়ঙ্কর ডাকাতিই বলা যায়) ধরার আয়োজন করছে না কেন? দলিলপত্র উপযুক্ত জায়গায় দেখাচ্ছে না বা দেখাতে পারছে না কেন? যারা জনগণকে ১৯৪৫ সালের কাগজ দেখাতে হুমকি দিচ্ছে, তারা কীভাবে তিন বছরের মধ্যে রাফায়েলের রসিদের ফাইল “হারিয়ে” ফেলল?

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাড়ি দিল নরেন অমিতের যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদল— বিজয় নীরব মেহুল প্রমুখ একজন দুজন নয়, অন্তত ত্রিশ জন— যে লুটের পরিমাণ দেশের এক বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটের চাইতেও বেশি, তাদের বিদেশ থেকে পাকড়ে আনার কী ব্যবস্থা করল এত দিনে সেই চুরি-কাতর কেন্দ্রীয় সরকার? কিংবা আরও মূলে ঢুকলে— তারা দেশ ছেড়ে পালালই বা কী করে? পাসপোর্টে আধার লিঙ্ক থাকা সত্ত্বেও??

আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আম পাব্লিককে যে কড়াকড়ি করে কাস্টমস চেক করা হয়, এদের বেলায় তার কী হয়েছিল?

ব্যাপম দুর্নীতি— যার পরিমাণ সারদার একশ গুণ, নারদ উদ্ঘাটনের কয়েক হাজার গুণ— তাকে নির্মূল করার কোনও চেষ্টা করেছে নাকি এই চোর ধরার সরকার? ব্যাপমের যে মাথা সেই শিবরাম চৌহানকেই আবার মধ্যপ্রদেশের কেনা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বানিয়ে ফেলেছে এই ডাকাত-বন্ধু দলটি। হ্যাঁ সেই ব্যাপমের কথা বলছি, যা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মী সহ অন্তত ৪৯ জনকে “আত্মহত্যা”র ছদ্মবেশে হত্যা করা হয়েছে। শুনেছেন নাকি কেউ, মোদি বা শাহ সাহাবরা সেখানে সিবিআই পাঠাচ্ছেন? বাংলা ভাষায় এরকম গল্প আমরা পড়েছি, কিন্তু এরকম ঘটনার সাক্ষাৎ পশ্চিমবাংলায় এখনও পাইনি।

ছদ্মবেশি জহ্লাদেরা প্রতিহিংসায় জ্বলছে!!

২০১৩ সালে গুয়াহাটি হাইকোর্টের এক বিচারপতি কোনও এক মামলা প্রসঙ্গে তাঁর রায়ে বলেছিলেন, সিবিআই একটি অসাংবিধানিক সংস্থা, এর সমস্ত কার্যকলাপই তাই অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য এর উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছে। ফলে সরাসরি অসাংবিধানিক বলতে না পারলেও এটুকু বলাই যায় যে সংস্থাটির কার্যকলাপ আইনের চোখে যথেষ্ট বিতর্কিত।

সিবিআই তদন্তের ফলে নরেন মোদি গুজরাত দাঙ্গা এবং দ্বিসহস্রাধিক মুসলিম খুনের দায় থেকে এবং অমিত শাহ অসংখ্য খুন ও ধর্ষণের মামলায় ফর্সা কাগজ পেয়ে গেছেন। আরও অজস্র দাঙ্গাবাজ রেহাই পেয়েছে। অমিত শাহর দিল্লি পুলিশ দিল্লির দাঙ্গায় মূল অপরাধীদের একজনকেও এখন অবধি ধরেনি। কিন্তু দাঙ্গার শিকার এবং সন্ধানকারী সৎ সাংবাদিকদের অনেককেই ধরে বিনা বিচারে জেলে পুরে রেখেছে।

পুলিশ কেন দাঙ্গাকারীকে ধরছে না— এই প্রশ্ন তুলেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের এক বিচারপতি। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে পুরস্কৃত করেন অমিত ও নরেন যুগল। রাত বারোটার সময় তাঁর বাড়িতে বিশেষ দূত পাঠিয়ে জানানো হয়, পর দিনই তাঁকে চণ্ডীগড় হাইকোর্টে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।

ন্যায় এবং আইনের প্রতি দায়বদ্ধতার এই যুগল কতই না সুন্দর সুন্দর উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে আইন আদালত, সংবা মাধ্যম, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি, এনএসএ, কেন্দ্রীয় বাহিনি, ইত্যাদি রাষ্ট্রের সমস্ত উপাঙ্গগুলিকে বিজেপি-র দলীয় শাখার মতো ব্যবহার করে, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে অসংখ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, দলের সভাপতি ও সর্ব মোট ৪৩ জন ভিআইপি নেতা রাজ্যে পড়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত বাংলার মসনদ দখল নিতে পারেনি। সমগ্র রাজ্য জুড়ে একটা আওয়াজই উঠে গেল— বিজেপি-কে একটিও ভোট নয়। যে দলটা সমস্ত আসনে প্রার্থী দিতে পারছিল না, অন্য দল থেকে টাকা দিয়ে কিনে অথবা চুরিজোচ্চুরি থেকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে তবে অধিকাংশ প্রার্থী দিতে পেরেছে, যাদের কয়েকজন জেতা এমপি-কেও এমএলএ পদে প্রার্থী করতে হয়েছে, তাদের এই স্বপ্ন দেখার সাহস হয় কী করে— এটাই বাঙালি ভোটারকুল বুঝে উঠতে পারেনি। যারা পেট্রল ডিজেল রান্নার গ্যাস রান্নার তেল থেকে শুরু করে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম প্রতিদিন বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে তুলছে, তারা আশা করেছিল কীভাবে যে গরিব মধ্যবিত্ত মানুষ তাদের সমর্থন করবে ব্যাপকতর সংখ্যায়? স্রেফ মুসলিম বিদ্বেষের সুড়সুড়িতে?

সেই সব ঘৃণ্য ঘৃণার রাজনীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর আমরা আশা করেছিলাম, এই খুনে জুটি এখন অন্তত তাঁরা যে উচ্চপদে আসীন তার মর্যাদা রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন। করোনা রোগের বর্তমান দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে চলেছে, এবং জটিল সমস্যা আক্রান্ত রোগীদের যে হাসপাতাল শয্যা অক্সিজেন ওষুধপত্র ইত্যাদির ব্যাপারে ভয়ানক অসুবিধার সামনে পড়তে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর নামে জমানো সরকারি তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করবেন, দেশের বড় বড় বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের নিয়ে করোনা মোকাবিলায় তাঁর সমস্ত মন (মনের বাত সমূহ নয়) সংযোগ করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা তাঁকে সেই কাজে যৌথ সহযোগিতা করবেন।

ঠিক উলটো। বিজেপি নেতা হিসাবেই মোদি শাহ জুটিকে দেখা গেল নির্বাচনে পরাজয়ের বদলা নিতে, প্রতিহিংসায় মেতে উঠতে, টিকা নিয়ে বাজারি খেলায় মদত দিতে। যারা বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের প্রাক্কালে বলেছিল, জিতে সরকারে এলে তাঁরা বিনা পয়সায় সবাইকে টিকা দেবে (তার মানে দেওয়ার সামর্থ্য আছে), বিহারে জিতেও যেমন সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে যায়নি, বাংলায় হেরে গিয়েও তার ধারে কাছে পা মাড়াচ্ছে না। তাঁরা এখন বরং ব্যস্ত তাঁদের বিলাসব্যসনের প্রকল্পকে সম্পূর্ণ করতে। উন্নয়নের ভিস্তা— যাকে অনেকে বলছেন “উন্নয়নের বিষ্ঠা”—তাঁরা এখন সেদিকে মত্ত।

আজ তাঁদের এই সমস্ত প্রতিহিংসামূলক কাজ দেখতে দেখতে আমাদের মনে প্রশ্ন উঠছে— রাজ্যপালের পদের কী প্রয়োজন? রাজ্যের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করা ছাড়া যার কোনও জনোপযোগী কাজ নেই? একজন নির্লজ্জ কেন্দ্রীয় দালাল হিসাবে একটা বিশাল আয়তনের বাড়ি দখল করে রাজ্যের সর্বনাশ করার বাইরে যার মাথায় কোনও চিন্তা নেই, তাঁকে এখনই পত্রপাঠ রাজভবন থেকে দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে সেই বাড়িটা করোনা রোগীদের নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে ব্যবহার করার দাবি উঠে গেছে। অত্যন্ত ন্যায্যত।

আজকের দাবি:

No space to BJP!
No room to Governor!!
ব্যাপম-রাফায়েল জোচ্চুরি ধরার আগে অবধি সিবিআই বাংলা থেকে দূরে থাকো!!

 

 

 

 

About চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম 4879 Articles
ইন্টারনেটের নতুন কাগজ

Be the first to comment

আপনার মতামত...