পার্থসারথি রায়
“…লকডাউন তখনই কার্যকরী ও সফল হবে যখন সন্দেহভাজন জনসংখ্যার ওপর আপনি রোগের পরীক্ষা করতে পারবেন। লকডাউনের ফলে মানুষ বাড়িতে থাকছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির লোকেরাই এর ফলে সংক্রামিত হচ্ছেন। লক্ষণ চলতে থাকলে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে লকডাউন শেষ হলে এঁরা বাইরে বেরিয়ে অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে মিশে তাঁদের সংক্রামিত করছেন এবং ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যাচ্ছে। ঠিক এমনটিই হয়েছিল ১৯১৮-র স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার সময়ে। প্রচণ্ড প্যান্ডেমিক এই ভাইরাস প্রকৃত H1N1 ভাইরাস ছিল। ভাইরাসটি যখন এভাবে দ্বিতীয়বার ফিরে এল, তখনই অধিকাংশ মৃত্যু ঘটিয়েছিল।...” কথাগুলি বলেছিলেন আইআইএসইআর-এর অধ্যাপক ডঃ পার্থসারথি রায়, গত বছর (২০২০) এপ্রিল মাসে, ‘দি উইক’-এর পক্ষ থেকে রবি ব্যানার্জির নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকারটি আমরা অনুবাদ করে চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করেছিলাম। এই মে মাসে রবিবাবু আবার একবার কথা বলেছেন ডঃ রায়ের সঙ্গে, যেটি পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে ‘দি উইক’-এ ‘Government and scientific establishment have failed’ শিরোনামে। রইল সেটিরও বঙ্গানুবাদ।
দ্বিতীয় তরঙ্গে সমস্যাটা কী হল?
এই বিপর্যয় পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত। সরকারের অযোগ্যতা, অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, এবং এবং করোনার বিরুদ্ধে জিতে গেছি বলে আগ বাড়িয়ে লাফালাফি করা এর জন্য দায়ী।
অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি?
‘দি উইক’-এ গত এপ্রিল (২০২০)-তে দেওয়া ইন্টারভিউতে আমি মিউট্যান্টের সম্ভাবনা এবং তার বিরুদ্ধে প্রস্তুতির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলাম। কিছুই করা হয়নি। ভাইরাসের নমুনা সিকোয়েন্স করার কাজটাও ডিসেম্বরের আগে শুরু করা যায়নি। ততদিনে INSACOG (ইন্ডিয়ান সার্স-কোভ ২ জেনোমিক্স কনসর্টিয়াম) তৈরি হয়ে গেছে। আমি তখনই বলেছিলাম যে এই দ্বিতীয় তরঙ্গে মৃত্যুহারও বেশি হবে।
অনেকেই বলছে গণ-টিকাকরণ হলে এই বিপর্যয় আটকানো যেত…
টিকাকরণের সীমাবদ্ধতা আছে। অল্প সময়ের মধ্যে ১৩০ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়াটা কার্যতই অসম্ভব। আর এটা এখন স্পষ্টই হয়ে গেছে যে টিকার প্রোডাকশনও ভয়ানকভাবে কম করা হয়েছে। যদি ঈপ্সিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়, তবে দুটো ডোজ ভ্যাক্সিন দিতে হবে। সব মিলিয়ে, এ নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয়, যে টিকাকরণ দিয়ে দ্বিতীয় তরঙ্গ ঠেকানো যেত না।
আর তৃতীয় তরঙ্গের সম্ভাবনার বিষয়ে?
সেটাও হবে। কিন্তু যাঁরা এই দ্বিতীয় তরঙ্গের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে— যেটার জন্য তাঁরা কোনওরকম প্রস্তুতি নেননি— তৃতীয় তরঙ্গ নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা স্রেফ নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন।
কিন্তু ভারতে এই দ্বিতীয় তরঙ্গের সম্ভাবনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনও সতর্কবাণী দেয়নি কেন?
সবাই জানত দ্বিতীয় তরঙ্গ আসতে চলেছে। ইওরোপ এবং আমেরিকাতেও দ্বিতীয় তরঙ্গ এসেছে। এটা কোনও রকেট সায়েন্স নয় যে এর জন্য ভারতকে বিশেষ করে সতর্কবার্তা দিতে হবে। আর এর মধ্যেই, ফেব্রুয়ারি মাসে, ভারত সরকার গোটা বিশ্বের কাছে ঘোষণা করে বসল যে তারা কোভিড ১৯-কে পরাস্ত করে ফেলেছে। এই সরকার কারও কোনও সাবধাবাণীকে গ্রাহ্যই করে না।
কিন্তু আমেরিকা বা ইওরোপেও তো দ্বিতীয় তরঙ্গ বেশ বাজেভাবে ধাক্কা দিয়েছে…
ভারতে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর কারণ শুধু এই নয় যে এটা ইওরোপ বা আমেরিকার চেয়ে আলাদা। কারণটা হল ইওরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলি, এবং অন্যান্য দেশও, ভারতের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত ছিল। ভারত আত্মতুষ্ট হয়ে কোনওরকম প্রস্তুতিই নেয়নি। ভারতের মধ্যেও দেখুন না, কেরলের মতো যেসব রাজ্য তুলনামূলক বেশি প্রস্তুতি নিয়েছে তারা এই দ্বিতীয় তরঙ্গকে অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করছে।
কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইতালিতে আমরা ব্যাপক মৃত্যু তো দেখেছি…
দ্বিতীয় তরঙ্গে নয়।
অর্থাৎ তারা তাদের প্রথম তরঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়েছে যেটা আমরা নিইনি…
একদম। আমি নিজের চোখে তাদের প্রস্তুতি দেখেছি। হসপিটালগুলির যন্ত্রপাতি উন্নত করা হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে, ব্যাপক পরীক্ষা চালানো হয়েছে, ভাইরাল স্যাম্পেলগুলিকে ব্যাপক মাত্রায় সিকোয়েন্সিং করে নতুন মিউট্যান্টের আবির্ভাবের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছে।
এই ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট-এর উদ্ভব কী করে হল?
ভাইরাসের বিবর্তনের সাধারণ পথেই বিভিন্ন মিউট্যান্টের উদ্ভব হয়। ভাইরাল আরএনএ যখন নকল হতে থাকে, তখন তাতে ত্রুটিগুলিও ঢুকে পড়ে। এই ত্রুটিগুলিকেই মিউটেশন বলে। এবার কোনও একটা মিউটেশন যদি ভাইরাসের পক্ষে সুবিধাজনক সাব্যস্ত হয়, তখন সেটিই তার পরবর্তী প্রজন্মেও বাহিত হতে থাকে। এবার এই সুবিধার অর্থ হল এর ফলে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াতে সক্ষম হতে পারে, বা সে যে জীবদেহে আশ্রয় নিচ্ছে তার প্রতিরোধ-ব্যবস্থা ভঙ্গ করতে বেশি কার্যকরী হতে পারে। ফলে যে ভ্যারিয়েন্ট এইসব প্রশ্নে কিছুটা হলেও এগিয়ে সে-ই দ্রুত ছড়াতে থাকবে। ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট-ও এইভাবেই তৈরি হয়েছে।
বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট-এর বিষয়টা কী? এটাকে তো ট্রিপল মিউট্যান্ট বলা হচ্ছে…
বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট বলে কিছু নেই। আমরা যেটা দেখছি, সারা বিশ্বে একই বা একই ধরনের মিউটেশনই ছড়িয়ে রয়েছে— হ্যাঁ, কম্বিনেশনটা আলাদা। ভারতে যে কম্বিনেশনটা দেখা যাচ্ছে— B.1.617— সেটা খুবই দ্রুত ছড়াতে সক্ষম, এবং আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও ভেঙে দিতে সক্ষম বলেই মনে হচ্ছে। বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট যেটাকে বলা হচ্ছে সেটা একটা পরিচিত মিউটেশন— E484K— তার সঙ্গে আর কিছু আছে।
তাহলে এই ট্রিপল ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই?
এটাকে ট্রিপল মিউট্যান্ট বলা হচ্ছে কারণ এর স্পাইক প্রোটিনে তিনটে নির্দিষ্ট মিউটেশন দেখা গেছে। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রার ওপর এর আদৌ কতটা প্রভাব আছে তা বোঝার মতো তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই।
ভারতের এরকম অসহায় অবস্থার কারণটা কী?
এই মিউটেশনগুলির প্রকৃত প্রভাব যে কতটা তা বোঝার জন্য ভারতের কাছে কোনও তথ্যই নেই। ভারতের ল্যাবগুলিতে এই ধরনের পরীক্ষা করার কোনও ব্যবস্থাই নেই।
এটা কি সম্ভব যে এই মিউটেশনগুলি ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় যে মিউটেশনগুলি পাওয়া গেছে তার সঙ্গে সদৃশ? আর সেই সূত্রে এরকমও বলা যেতে পারে কি, যে ওইসব দেশগুলিই এই মিউটেশনের উৎস?
সম্ভাবনা তো থাকতেই পারে। তবে যেহেতু এখনও সেরকম মনে হচ্ছে না যে এই মিউট্যান্টগুলি অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আপাতত এটাই ভাবতে হবে যে এই ডাবল মিউট্যান্টগুলির উদ্ভব ভারতেই।
ভ্যারিয়েন্টগুলিকে পর্যবেক্ষণের মানদণ্ডে বিশ্বে ভারতের অবস্থান কী এই মুহূর্তে?
ভারত ভাইরাস নমুনাগুলির ১ শতাংশেরও সিকোয়েন্সিং করে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে ব্রিটেনের মতো দেশগুলি ৫ শতাংশেরও বেশি নমুনার সিকোয়েন্সিং করে ফেলেছে।
ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে এই জিন সিকোয়েন্সিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
জিন সিকোয়েন্সিং দিয়ে একটা ভ্যারিয়েন্ট ছড়াবে, না ছড়াবে না, সে সম্পর্কে আগেভাগে জানা যায়। ফলে তার বিস্তার প্রতিহত করার জন্য ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভাইরাসের জিনে কী পরিবর্তন হয়েছে সেটা যদি জানা যায়, তবে মিউট্যান্ট ভাইরাসের আমাদের ইমিউনিটিকে ভেদ করার ক্ষমতা কতটা সেটাও বোঝা যায়।
কিন্তু ভারতে তো আন্তর্জাতিক মানের অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ল্যাব রয়েছে…
আছে। তাও এটা করা যায়নি। এটা প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানের একটি সামূহিক ক্ষতি।
কোভিড ১৯-এর জন্ম উহানে— চিনে। কিন্তু এই দ্বিতীয় তরঙ্গ চিনে প্রায় কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি। কেন?
ওখানেও দ্বিতীয় তরঙ্গ এসেছে। কিন্তু ওঁরা সেটা অনেক ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে।
ভারত কেমন করে এই দ্বিতীয় তরঙ্গ সামলাতে পারবে?
প্রচুর পরীক্ষা করে এবং চিহ্নিত করে, চিকিৎসাগত প্রস্তুতি ব্যাপক আকারে বাড়িয়ে…
আফ্রিকার মতো জায়গায় নতুন মিউটেশনের বিপদ কতটা?
দেখুন একটা ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীর যেকোনও জায়গাতেই আবির্ভূত হতে পারে, সেটা সমস্যা নয়, সমস্যা হল কিছু দেশকে— না, দেশকে না, বরং কিছু সরকারকে নিয়ে। আমেরিকায় ট্রাম্প ছিলেন, ব্রাজিলে বলসোনারো এবং ভারতে মোদি আছেন। ট্রাম্প ভোটে হারার পর আমেরিকা অনেক ভালোভাবে কোভিড ১৯-এর মোকাবিলা করেছে। এখন সমস্যা মোদি আর বলসোনারোকে নিয়ে। এর মূল কারণটা হল এই মোদি বা বলসোনারোর মতো লোকেরা নিজের দেশের মানুষের জীবনের প্রতি বিন্দুমাত্র দরদি নন।
অনেক ভারতীয় রাজ্যই কেন্দ্রের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে…
আমার মনে হয় এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলির খুব একটা কিছু করারও নেই। ফান্ড সহ কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বেশিটাই কেন্দ্র-নিয়ন্ত্রিত। তবু এর মধ্যেও, যে সব রাজ্যের জনস্বাস্থ্য-ব্যবস্থা তুলনামূলক উন্নত এবং সরকার সংবেদনশীল তারা ভালো কাজ করছে। যেমন, কেরলের কথা বলা যায়। এখানে আক্রান্তের হার অনেক বেশি হলেও মৃত্যুহার সবচেয়ে কম। সরকারের সক্রিয়তা এবং সংবেদনশীলতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
সংক্রমণ রোধ করতে টিকা কতটা কার্যকরী?
টিকা সমস্তরকম ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর নাও হতে পারে। ফলে টিকাগুলিকেও লাগাতার আপডেট করা প্রয়োজন। যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা প্রতি বছর আপডেট করা হয়। টিকার উপকারিতা হল এগুলি রোগ মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছনো ঠেকাতে সহায়তা করে। তবে আমার মনে হয় না ভ্যাক্সিন কোনও মির্যাকল। সরকার এটাই প্রচার করার চেষ্টা করছে যে, ভ্যাক্সিন দিয়ে অতিমারি পুরো নির্মূল করে দেওয়া যাবে।
তাহলে এই কোভিড ১৯-এর টিকা কতদিন পর পর নিতে হবে?
টিকার সুরক্ষা কতদিন পর্যন্ত থাকবে সেটা জানার জন্য এখনও সেরকম তথ্য নেই। অন্য দেশগুলির কিছু স্টাডি রয়েছে এ বিষয়ে। আর এই বর্তমান টিকাগুলি নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধেও কার্যকরী নয়। যেমন এই B.1.617 ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এরা পুরো সুরক্ষা দিতে পারবে না।
কিন্তু কিছু রিপোর্ট যে বলছে এই ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কোভ্যাক্সিন খুবই কার্যকর?
এরকম সিদ্ধান্তে আসার জন্য এখনও সেরকম কোনও তথ্য নেই।
ভারত সরকারের ভ্যাক্সিন রপ্তানি করা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলিতে নতুন ভ্যারিয়েন্ট উদ্ভবের সম্ভাবনার কথা যদি মাথায় রাখা যায়, তবে এটা কি একটা দরকারি পদক্ষেপ বলা যায় না?
নিজের দেশের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট টিকার উৎপাদন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা যদি থাকে তবে যে কোনও দেশেই টিকা রপ্তানিতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা যদি না থাকে, তবে এ নিছকই স্টান্টবাজি।
এইরকম অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভারতের কী করা উচিত?
আমি কোনও সহজ পথ দেখতে পাচ্ছি না। একদম প্রথমেই এই নারকীয় অবস্থার জন্য একদম সর্বোচ্চ স্তরে দায় স্বীকার করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় রদবদল করতে হবে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো আশু প্রয়োজন।
আমেরিকা প্রথম তরঙ্গে এতটাই বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে মার্কিন জনগণ এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক পথ নেয়— তারা ট্রাম্পকে ভোটে উৎখাত করে, অতিমারিকেও আয়ত্তে আনে।
এই দ্বিতীয় তরঙ্গ কতদিন থাকবে?
আমার মনে হয় না শহরে এটা আর বেশিদিন থাকবে বলে। যেহেতু এর সংক্রমণের মাত্রা অত্যধিক, ফলে খুব তাড়াতাড়ি বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠবে। কিন্তু আমার ভয়টা গ্রাম নিয়ে। এই তরঙ্গে গ্রামেও ছড়িয়েছে এবং সেখানে এই ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অগণিত মানুষ পেয়ে যাবে।
তৃতীয় তরঙ্গের জন্য ভারত কীভাবে প্রস্তুত হতে পারে?
এক, চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রস্তুতি, যেমন অক্সিজেন সাপ্লাই, আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর, ইসিএমও (এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন) ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোনওরকম শিথিলতা করা যাবে না। দুই, ব্যাপক মাত্রায় ভাইরাল নমুনার সিকোয়েন্সিং করতে হবে, যাতে নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব এবং বিস্তার সম্পর্কে লাগাতার ওয়াকিবহাল থাকা যায়। তিন, বিজ্ঞানীদের এবং জনগণকেও প্রকৃত স্বচ্ছ তথ্য সরবরাহ করতে হবে, যাতে মানুষ অতিমারির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারেন। চতুর্থত, যত বেশি সম্ভব মানুষকে ফ্রি-ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় আনতে হবে এবং ভ্যাক্সিনের প্রতিক্রিয়া লাগাতার পর্যবেক্ষণ করতে হবে। শেষত, এবং সবচেয়ে জরুরি— সর্বোচ্চ স্তরে দায় নিতে হবে। যদি সেটা না করা হয়, তবে আমরা কোনওদিনই ভুল শুধরাতে পারব না।